থাইল্যান্ড, ক্যাম্বোডিয়া: প্রিয়া বিহার মন্দির নিয়ে বিতর্ক (দ্বিতীয় ভাগ)

প্রথম ভাগ পড়ুন এখানে

ঐতিহাসিক প্রিয়া বিহার মন্দিরের মালিক কে – ক্যাম্বোডিয়া না থাইল্যান্ড? দুই দেশ মন্দিরের উপর তাদের মালিকানা দাবি করছে যার ফলে গত সপ্তাহে (১৫ই অক্টোবর) সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে। বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য এই সময়ে আহত আর নিহত হয়েছে।

এর পর দুই দেশ আলোচনা করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হতে এখনো অনেক বাকি। থাইল্যান্ড ক্যাম্বোডিয়া থেকে তার নাগরিকদের সরিয়ে আনতে প্রস্তুত। গন্ডগোলের এলাকায় ক্যাম্বোডিয়ার দিকের গ্রাম থেকে লোকজন পালাচ্ছে। তাদের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্যাম্বোডিয়ায় অবস্থিত থাই কোম্পানিরাও চিন্তিত।

সমস্যার মূলে কি? এটা অবশ্যই চার স্কয়ার কিলোমিটার জায়গা দখলের থেকে বেশি কিছু। থাইল্যান্ডের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছেই। প্রিয়া বিহার বিতর্ক কি এক ধরনের চালাকি “(থাই নাগরিকদের) মনোযোগ রাজনৈতিক গোলযোগের সময়ে অন্য দিকে সরিয়ে রাখার”?

থাইল্যান্ডের অনেক সমস্যার জন্য দায়ী করা হয় দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে। প্রিয়া বিহার এর সংকটে তার ভুমিকা কি? দৃশ্যত: ক্যাম্বোডিয়ায় তার বাণিজ্যিক আগ্রহ আছে। প্যাডস ফ্যাক্টস ইনফো জানিয়েছে:

“থাইল্যান্ডের ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী আর বড় ব্যবসায়ী থাকসিন সিনাওয়াত্রা সম্প্রতি ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সাথে একটা অফিসিয়াল চুক্তি করেছেন যেখানে ক্যাম্বোডিয়ার দক্ষিন-পশ্চিম সামুদ্রিক শহর কো কং এর উন্নয়ন করা হবে। থাকসিন চাচ্ছেন ক্যাম্বোডিয়ায় অবস্থিত সুবিধাজনক জায়গা দখল করে থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অঙ্গনে তার ফিরে আসা সুদৃঢ় করতে। প্রিয়া বিহার মন্দির এর সাম্প্রতিক উত্তপ্ত অবস্থার জন্যে কিছুটা দায়ী সীমান্ত পুন:নির্ধারনের ব্যাপারে পূর্বে হুন সেনকে দেয়া থাকসিনের ভ্রান্ত আশ্বাসের জন্য।”

লেখক আরো বলেছেন যে প্রিয়া বিহার এর ব্যাপারটা থাইল্যান্ড আর ক্যাম্বোডিয়ার মধ্যকার অন্যান্য সীমান্ত সংক্রান্ত আলোচনাকে প্রভাবিত করবে:

“কিন্তু দুই দেশের কেউই এই জমি হারানোর সামর্থ রাখে না। এর কারন শুধুমাত্র যে এই এলাকার সাথে জাতীয় সার্বভৌমের ব্যাপার জড়িত তা না, যা যে কোন আধুনিক দেশ হারাতে রাজী হবে না, কিন্তু এই এলাকার শেষ পরিণতির উপর নির্ভর করতে পারে এমন আরো এলাকা যার পুনর্নিধারনী হয়নি তার ভবিষ্যত, বিশেষ করে সমুদ্রের ভূমি।”

প্রিয়া বিহার নিয়ে সংঘর্ষ গাল্ফ অফ থাইল্যান্ডের তেল আর গ্যাসের সঞ্চয় নিয়েও হতে পারে। ব্রেন্ডান ব্র্যান্ডি আর থেট সাম্বাথ ব্যাখ্যা করেছেন:

“থাইল্যান্ড আর ক্যাম্বোডিয়া দুই জনই গাল্ফ অফ থাইল্যান্ডের ২৭,০০০ স্কয়ার কিলোমিটারের বিতর্কিত সমুদ্র সীমানা নিয়ে দাবী করে আসছে যেখানে ধারণা করা হয় যথেষ্ট পরিমানে তেল আর গ্যাসের সঞ্চয় আছে।

অধিক্রমিত দাবী করা এলাকা হিসাবে জলাভূমির অংশ যুগ যুগ ধরে থাইল্যান্ডের সাথে মনোমালিন্যের বিষয় হয়ে রয়েছে কিন্তু সাম্প্রতিক সীমান্ত স:ঘর্ষ নিয়ে সেটা আবার মাথা চারা দিয়ে উঠেছে।

সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে সন্দেহ করা হচ্ছে যে প্রিয়া বিহার এর উপর নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করে ক্যাম্বোডিয়া অফশোরে তাদের বিতর্কিত ব্লকের দাবী শক্ত করতে চাচ্ছে।”

ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন প্রিয়া বিহারের ইস্যুটা ব্যবহার করছেন আরো সামরিক ফান্ড পাওয়ার জন্য। আর দুই দেশের মধ্যে আবার শুরু হওয়া সংঘর্ষ হুন সেনের প্রিয়া বিহারের ‘উন্নয়ন লক্ষ্যের’ সাথে মিলে যায়।

থাইল্যান্ডবাসী ব্লগারের মতামত কি? নারলি কিটি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন:

“বলেন কি? আর একটা যুদ্ধ? ভূমি নিয়ে? ২১ শতকে? দুইজন এরই মধ্যে নিহত হয়েছে। ব্যাস। আমরা পেছনের দিকে যাচ্ছি।”

এক বিদেশী ছাত্র আ মোজাইক থ্রু মাই আইস লক্ষ্য করেছে:

“থাই জাতীয়তাবাদীরা ক্যাম্বোডিয়ার সাথে সীমান্তের ব্যাপার নিয়ে ফুঁসে উঠেছে। ক্যাম্বোডিয়ার সাথে ‘মুখ রক্ষার’ জন্য যা করা দরকার এখন থাইল্যান্ড তাই করছে।”

থাইল্যান্ড ক্রাইসিস ব্লগে চাইনিজ থাই মন্তব্য রেখেছেন। এই পাঠক থাই বাহিনীর সমালোচনা করেছে:

“আমি মনে করি সেনা নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে প্রত্যেক সংঘর্ষ শুধুমাত্র গোলাগুলিতে সীমাবদ্ধ না বরং এর সাথে আছে তথ্যের যুদ্ধ। ক্যাম্বোডিয়ার কতৃপক্ষ যদিও প্রায় ঘন্টায় ঘন্টায় বিদেশী সংবাদ মাধ্যমকে অসংখ্য স্বাক্ষাৎকার দেয় আমরা থাই সেনা থেকে প্রায় কিছুই শুনতে পাইনা। যা জানতে পারি তা মিডিয়া থেকে।”

দ্যা নেশন্স স্টেট দোষ দিয়েছেন ‘বিপদজনক সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ‘ কে:

“জাতীয়তাবাদ একটা বিষ। এটা হয়তো সব সময় এমন ছিলনা যখন দক্ষিনপূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ ঔপনিবেশিকতার অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়েছিল জাতীয়তাবাদের শক্তিতে শক্তিশালী হয়ে।

কিন্তু এখন এটা বিষের মতো হয়ে দাড়িয়েছে যা থাইল্যান্ডে এমন বিপদজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ক্যাম্বোডিয়ার সাথে প্রিয়া বিহার এর মতো ব্যাপার আর দক্ষিণের বিদ্রোহকে জিইয়ে রাখছে থাই জাতীয়তাবাদ।

অবশ্যম্ভাবীভাবে বদ্ধ মনের জাতীয়তাবাদীরা বাস্তব একটা সিদ্ধান্তের পথে দাড়িয়েছে যে থাইল্যান্ড কি আর কাদের এটা প্রতিনিধিত্ব করে। এমন পর্যায়ে যে এই দেশের সংঘাত নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা – যেমন প্রিয়া বিহার আর দক্ষিণের বিদ্রোহ- যৌক্তিকভাবে জোরালোভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।”

এই ব্লগার আন্তর্জাতিক আইনের শক্তি আর দুর্বলতার কথাও বলেছে এই সংকট নিরসনের ক্ষেত্রে:

“আন্তর্জাতিক আইন মানার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হিসাবে যা আছে তা হলো থাইল্যান্ড তার বিশাল আর প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত সেনাবাহিনী নিয়ে মন্দিরটা দখল করে নেয়নি সর্বশেষ বিরোধের সময়ে। উত্তেজনা প্রশমনের জন্যে অবশ্যই আরো বিষয় আছে, যেমন বাণিজ্য আর পর্যটনে বাধা, যা থাইল্যান্ড আর ক্যাম্বোডিয়াকে যুদ্ধে বিরত করতে পারে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে নিরসনের প্রভাব আর বিরোধ মেটাবার উপায় এখানে কাজ করছে না বরং তর্কের দিকগুলো তুলে ধরছে। আসল পরীক্ষা হবে দেখা যে যুদ্ধে আসলে জড়ানো না যাওয়া যায় কিনা না। বরং দীর্ঘস্থায়ী একটা সমাধান বের করা দরকার যা এই দুই সার্বভৌম দেশকে ভবিষ্যৎে সংঘর্ষে যাওয়া থেকে বিরত করবে।”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .