বরফ গলে যাওয়া, সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি আর চরমভাবাপন্ন আবহাওয়াই শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে পরে না। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিচ্ছে যে জলবায়ূর পরিবর্তনের কারনে বিশ্বব্যাপী মানুষের স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হবে কারন রোগের বিস্তার আর অন্যান্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা বাড়বে।
স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সাম্প্রতিক একটা বহুল আলোচিত বিষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই ব্যাপারে গবেষণা শুরু করেছে আর এই বছর মেডিকাল জার্নাল আর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মূল আলোচনার বিষয় এটি। গবেষকরা ভয় পাচ্ছে যে সাম্প্রতিক উষ্ণায়নের ধারা অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে অনেক অংশে বাড়িয়ে দেবে। এই সব স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে উচ্চ তাপমাত্রা আর প্রাকৃতিক কারন থেকে মৃত্যু আর যে সব রোগ তাপমাত্রা আর বৃষ্টিপাতের পরিমানের কারনে বেড়ে যায় যেমন ম্যালেরিয়া আর ডেঙ্গু সেসব রোগের ধরনের পরিবর্তন হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আমরা এরই মধ্যে এই প্রভাবের উদাহরণ দেখেছি, বাংলাদেশে কলেরা মহামারি আর আফ্রিকায় রিফট ভ্যালি জ্বর থেকে।
ট্রীভলিউশন এ লেখেন লরা গ্রান্ট; তিনি যোগ করেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কেনিয়াতেও লক্ষ্য করা গেছে:
“জলবায়ু পরিবর্তনের উপর আন্ত:সরকার প্যানেল আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছে যে ভেক্টর বাহিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে পরিবর্তিত হবে। কেনিয়া এরই মধ্যে যেসব এলাকায় এই রোগ ছিলনা সেখানে এর অস্তিত্বের কথা জানিয়েছে।”
যদিও জলবায়ু পরিবর্তন একটা বৈশ্বিক ব্যাপার, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে যে এর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ক্ষতিকর প্রভাব দরিদ্র দেশের সব থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে আগে ছড়াবে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংক্রান্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারনে গত নব্বুইয়ের দশকে প্রায় ৬ লাখ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এবং এর প্রায় ৯৫% দরিদ্র দেশে ছিল। এছাড়াও ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া আর প্রোটিনজনিত অপুষ্টি যার সবই জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত এসবের কারনে ২০০২ সালে ৩০ লাখ লোক মারা গেছে, এর এক তৃতীয়াংশ মৃত্যু আফ্রিকায় ঘটেছে। এই ফটো গ্যালারী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ব্যাখ্যা করে।
কিন্তু গ্লোবালাইজেশন এন্ড দ্যা এনভায়রনমেন্ট ব্লগ উল্লেখ করেছে যে জলবায়ু পরিবর্তন আর দারিদ্রের কারনে স্বাস্থ্যের উপরে এর প্রভাবকে পৃথক করা খুবই কঠিন:
“রোগ ছড়ানোর সাথে সাথে এর উপর বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। মনে রাখার চেষ্টা করবেন যে দারিদ্র আর রোগের মধ্যে যেমন সম্পর্ক আছে তেমনি রোগ আর জলবায়ুর মধ্যেও সম্পর্ক আছে। এছাড়া একজন বিষন্ন বিজ্ঞানীর জন্য এটা সব সময় আগ্রহের বিষয় যে অন্য কি কি ভাবে আমরা মারা যেতে পারি।”
বিশ্ব সংরক্ষণ সোসাইটির (ডাব্লিউসিএস) বিজ্ঞানীরা ঠিক এই কাজটা করেছেন- তারা এই মাসের প্রথমে একটা রিপোর্ট দিয়েছে যেখানে তারা ১২টি পশু- মানব রোগের কথা বলেছে যা পৃথিবীর নতুন এলাকায় ছড়াতে পারে তাপমাত্রা আর বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনের কারনে। এই ‘ভয়ঙ্কর ডজনখানেক’ রোগের মধ্যে আছে এভিয়ান ফ্লু, কলেরা, ইবোলা, লাইম রোগ, যক্ষা আর ইয়োলো ফিভার। বড় ধরনের মহামারি এড়ানোর জন্য, ডাব্লুসিএস পরামর্শ দেয় জীবজগতের স্বাস্থ্য আরো ভালো পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে যাতে বোঝা যায় যে এইসব রোগ কি করে ছড়াচ্ছে।
ত্রিমুরতুলু, যিনি মেডিক্যাল জিক এ লিখেন, তাদের পরামর্শকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন:
“লেখকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে নিজেদের সব থেকে খারাপ প্রেক্ষাপট থেকে বাঁচানোর উপায় হলো পর্যবেক্ষন করা যে জীবজগতে এই রোগ কি করে ছড়াচ্ছে একটা গ্লোবাল পর্যবেক্ষন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করে যা পশ্চিমা বিজ্ঞান আর স্থানীয় লোকের জ্ঞানের সংমিশ্রনে হবে।”
কিছু ব্লগার এই রিপোর্ট থেকে ভয় পেয়েছেন, যেমন একজন যিনি থিংকিং শিফট এ লিখেন, চিন্তা করছেন রোগ আর জলবায়ুর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে। তিনি বলেছেন:
“এই মুহুর্তে যে অর্থনৈতিক ঝঞ্ঝা চলছে তা নিয়ে আমরা এতো ব্যস্ত যে আমরা যদি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তা করি, আমরা ভাবি যে সব এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, সমুদ্র সীমা বেড়ে যাওয়া, বেচারা পোলার বেয়াররা বরফ খুঁজে পাচ্ছে না বিশ্রামের জন্য ইত্যাদি। কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করি যে মারাত্মক রোগের সম্মুখীন আমরা হতে পারি? যাই হোক, এই রিপোর্ট সেই ব্যাপারে আমাকে চিন্তা করিয়েছে বিশেষ করে প্যাথোজেনের ব্যাপারে যেটা মানব জাতির জন্য একটা ভীতি আর যা এরই মধ্যে যথেষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতির কারন হয়েছে। উদাহরণ স্বরুপ সার্স ভাইরাস আর এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা এরই মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে ১০০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলারের ক্ষতি করিয়েছে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে যে যদি খাপ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না নেয়া হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাহলে বলা যায় যে ২০৫০ সালের মধ্যে ক্ষুধা আর সংশ্লিষ্ট রোগের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যার সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। বারাজা তে ব্লগ করা মায়না এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য বহুমুখী একটা সমাধান প্রস্তাব করেছেন:
“প্রথমত: আমাদের জীবন যাপনে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে হবে, দ্বিতীয়ত: এখন আগের থেকেও বেশী আমাদের জীবজগতকে সংরক্ষণ করতে হবে কারন তারা আমাদের আগে সাবধান করে এইসব ভয়ঙ্কর রোগের বিস্তার সম্পর্কে।”
কিন্তু লেগ-আয়রন ডাব্লুসিএসর রিপোর্ট সম্পর্কে অভিযোগ করেছে যে এটা কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়া ভয় ছড়াচ্ছে। পেরি আরবান আরবান ব্লগে লিখেছেন যে এই ব্যাপারে খুব কম গবেষণা হয়েছে আর জলবায়ু পরিবর্তন আর স্বাস্থ্যের মধ্যকার যোগাযোগ এখনো প্রমাণিত হয় নি।
“আমাদের জানা এমন কোন বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয়নি যা থেকে হু আমাদেরকে বাঁচাচ্ছে। আর একটা বিষয় যা এখনো গবেষণাই হয়নি তা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করাও সম্ভব না, যদি না আপনার লক্ষ্য থাকে যে সমস্যা আছে আগাম এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করার, যাতে আপনি টাকা পেতে পারেন। বিজ্ঞানীদের আমাদের সবার মতোই জীবনযাপনের খরচ চালাতে হয়।”