- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মালদ্বীপ: ব্লগগুলো নির্বাচন জ্বরে আক্রান্ত

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, মালদ্বীপ, নির্বাচন, প্রতিবাদ, রাজনীতি, সরকার

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হচ্ছে সে দেশের প্রথম বহুদলীয় নির্বাচন। মালদ্বীপবাসী অনেকে মনে করছে যে দেশে গনতন্ত্র আনার এটা একটা উপায় কারন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মামুন আব্দুল গাইয়ুম একে একনায়কতন্ত্র হিসাবে চালাচ্ছেন ১৯৭৮ সালের নভেম্বর থেকে।

গাইয়ুম ছয় দফায় শাসন করেছেন বিরোধীদলের সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেই, শুধুমাত্র পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য তার রাষ্ট্রপতি পদ সংরক্ষণের জন্য হ্যা-না গণভোট নেয়া হয়েছে। ৮ই অক্টোবরের প্রথম দফার নির্বাচনের ফলাফল নিশ্চিত করতে পারে নি যে মালদ্বীপবাসী শেষ পর্যন্ত অন্য ধরনের সরকার পাবে নাকি সপ্তম বারের মতো গাইয়ুম আবার প্রেসিডেন্ট হবে।

যেহেতু ৫০% এর উপর ভোট পেয়ে পরিষ্কারভাবে কেউ জয়ী হয়নি, অক্টোবর ২৮ তারিখের আর একটা নির্বাচন হবে গাইয়ুম (৪০.৬১% ভোট প্রাপ্ত) আর মালদদ্বীপের ডেমোক্রাটিক পার্টির মোহাম্মাদ নাশিদ আন্নির (২৫.০৮% ভোট প্রাপ্ত) মাঝে যে পেয়েছে।

প্রথম দফায় পাঁচজন বিরোধী প্রার্থী ছিল আর মনে করা হচ্ছে যে যারা পরিবর্তন চায় তাদের ভোট এদের মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে। এখন অবশ্য সব বিরোধী দল একজোট হয়ে নাশিদকে সমর্থন করছে। বিরোধী দল তাড়াতাড়ি জানিয়েছে যে যেহেতু গাইয়ুম মাত্র ৪০% ভোট পেয়েছে, তার মানে ৬০% মালদ্বীপবাসী পরিবর্তন চায়।

মালদ্বীপের ব্লগের সব থেকে গরম বিষয় হচ্ছে এই নির্বাচন। বেশীভাগ ব্লগাররা বুঝতে পারছে যে এই নির্বাচন পরিবর্তনের একটা সুযোগ, যেমন বলছেন সিমোন [1]:

পরিবর্তনের জন্য ভোটে কাজ হয়েছে আর যদিও আমি এখনো সন্দেহ করছি আর আমি সতর্ক। কিন্তু আমি খুশী হওয়ার থেকে বিরত থাকতে পারছি না। কেন এই আশাবাদ? প্রথম আর প্রধান কারন হলো ধিভেহীরা পরিবর্তনের চেষ্টায় দৃঢ় আর মরিয়া হিসাবে নিজেকে প্রমান করেছে। আর ভোট গণনায় এটাই দেখা গেছে।

আমি এই অত্যাচারী আর দুর্ণীতিগ্রস্ত শাসন থেকে মুক্তির বাতাস প্রায় বোধ করতে পারছি। চোখ বন্ধ করলে আমি এটা বোধ করতে পারছি। আসুন আমরা একত্র হয়ে পরিবর্তনে আমাদের সম্মিলিত ইচ্ছার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করি। পরের বার আসুন আমরা বলি যথেষ্ট হয়েছে।

আমরা প্রায় ওখানে পৌছে গেছি…

মুইজু [2] একই চিন্তাধারায় লিখেছে:

নির্বাচনের প্রথম ধাপ মানুষকে দেখিয়েছে যে সেই লোক যে পরীক্ষায় ‘প্রশংসনীয় নম্বর’ পেত এইবার শুধু টেনেটুনে কোনরকমে ‘পাশ’ হয়েছে (কথিতভাবে) আর তাও পরীক্ষার আগে আর পরে চুরি করে!

প্রত্যেক মালদ্বীপবাসীর জন্য এটা জরুরি … (আইনগতভাবে) সে যা করতে পারে তার সাধ্য মত তা করা, পরিবর্তনের এই সফরকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে…/blockquote>

কিন্তু এই নির্বাচনে ভোটারদের কেনা একটা ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে কারন জানা গেছে যে সরকার বেশ কয়েকজন ভোটারকে টাকা দিতে চেয়েছে যাতে তারা তাদেরকে ভোট দিতে প্ররোচিত হয়, বলছেন আব্দুল্লাহ ওয়াহিদ [3]:

ধনী গরিবের আয়ের বিশাল ব্যবধানের কারনে … ধনী রাজনীতিবিদরা পারে গরীব ভোটারদেরকে তাদের ভোটের জন্য টাকা দিতে।

শোনা যাচ্ছে যে অক্টোবর ১০ এর নির্বাচনে ভোটের দাম ৫০০ থেকে ২০০০ রুপিয়া পর্যন্ত যা হাত বদল হয়েছে। কিছু দলের জন্য শোনা যাচ্ছে, হেরোইন দিয়ে দাম মেটানো হয়েছে।

ভোট কেনা শুধু একতরফা হয়না। প্রত্যেক দানের সাথে যেমন একটা হুমকি থাকে তেমন এখানেও আছে: ভীতি দেখানো হয় চাকুরিচ্যুতির আর সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের।

মালদ্বীভস ডিসেন্ট ব্লগও নির্বাচনে অর্থের ব্যবহার নিয়ে কথা বলেছে [4] যেখানে কিছু সন্দেহজনক নিয়োগের কথা এসেছে:

অডিটর জেনারেল তার শেষ রিপোর্টে বলেছেন যে গাইয়ুম ‘আটোল প্রধান’, ‘ডেপুটি আটোল’ প্রধান আর ‘সহকারী আটোল প্রধান’ পদে বেশ কয়েকটা নিয়োগ দিয়েছেন নির্বাচনের সময়ে। অডিটর জেনারেলের কথা অনুসারে নিয়োগ করা হয়েছিল ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য'।

পুলিশে কাজ করা একজন ব্লগার লক্ষ্য করেছেন [5] যে মালদ্বীপ পুলিশ সার্ভিসের মধ্যে চেষ্টা করা হয়েছিল পুলিশরা কেমন করে ভোট করবে তা প্রভাবিত করার:

সাম্প্রতিক সময়ে লুকানোভাবে এমনকি খোলামেলাভাবেও চেষ্টা করা হয়েছে অফিসারদেরকে প্রভাবিত করার যাতে তারা একটা নির্দিষ্ট প্রার্থীর দিকে ঝুঁকে পড়ে বা তার বিরুদ্ধে যায়। এটি সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে যে কমিশনের অফিসার কর্তৃক অধ:স্তনদের টেক্সট ম্যাসেজ দেয়া তাদের ভোটাধিকারকে প্রভাবিত করার জন্য.. এর সাথে যুক্ত হয়েছে সামাজিক নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট ফেসবুক, যেখানে পুলিশ অফিসাররা ম্যাসেজ করতে পারে, প্রভাব বিস্তার করতে পারে আর এই ধরনে কাজের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে অপারগ হওয়া প্রমান করে যে প্রচারণা কাজে দিচ্ছে।

ম্যাভারিকের রিপোর্ট অনুযায়ী মালদ্বীপের পুর্বের সব নির্বাচন ভোট কারচুপি আর ভীতিপ্রদর্শন দ্বারা চিহ্নিত।

মানুষকে ভয় দেখানো আর ঘুষের ছড়াছড়ি সত্ত্বেও বেশীরভাগ মানুষ আশাবাদী যে এবারের নির্বাচন তাদের জীবনে পরিবর্তন আনবে। মালদ্বীপ হেলথ [6] ব্লগ বলছে তারা সংস্কারের জন্য তৃষার্ত। অনেক লোক সংস্কারের জন্যে বছরের পর বছর চেষ্টায় ক্লান্ত। লোয়ামাফানু ব্যাখ্যা করেছে [7] গণতন্ত্রের জন্য কর্মীদের ভিতরে যে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি কাজ করে যখন তারা সংস্কারের লম্বা আর কঠিন কাজ নিয়ে সংগ্রাম করে:

যা একটা ধীরগতির, লুকানো আর কষ্টকর প্রক্রিয়া হিসাবে শুরু হয়েছিল এখন তা রুপান্তরিত হয়েছে জনগণের উচ্চকন্ঠের প্রতিবাদ হিসাবে… দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক খেলাড়ী আর জনগণের মধ্যে লোখ দেখানো মমতা। মাঝে মাঝে এটা মিথ্যা, নোংরা, আর একেবারে হতাশাজনক। অন্য সময়ে এটা জীবন পরিবর্তন করার মতো উতসাহব্যঞ্জক। দুইদিকেই আমি এটা থেকে নিজেকে দুরে রাখতে পারিনা। আমি এতে একেবারেই লিপ্ত, আর তাই শারীরিক আর মানসিকভাবে ক্লান্ত।

আমরা পরিবর্তনশীল একটা দেশে আছি, আর একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে যাওয়ার এই প্রক্রিয়ায় সময় লাগে আর লাগাতার সামাজিক পরিবর্তন হয়।

শুধুমাত্র মালদ্বীপবাসী এই নির্বাচন নিয়ে উৎসাহী না। অন্যান্য দেশের লোকও পর্যবেক্ষণ করছে আর তাদের একাত্মতা প্রকাশ করছে মালদ্বীপবাসীর সাথে যারা তাদের স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে, মালদ্বীপ ভোট ব্লগ নোটে পাঠানো একটা চিঠি অনুযায়ী [8]:

আপনার ভোটাধিকার আছে আর আপনার ভোট দেয়া উচিত। এটি কোন যুক্তি হতে পারেনা অনেক বছর পরে আপনার সন্তানদের এটা বলা যে আমার ইচ্ছা করেনি বলে আমি ভোট দেইনি । আপনার ভোট অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।