দক্ষিণ আফ্রিকা: এইচআইভি/এইডস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের নতুন দিগন্ত?

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি ঝালিমা মোটলানথি নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসাবে বারবারা হোগান কে নিয়োগ প্রদান করেছেন, পূর্বসূরী বিতর্কিত মান্টো শাবালালা-সিমাঙ্গকে উচ্ছেদ করে। এইডস কর্মী সহ অসংখ্য দক্ষিণ আফ্রিকান মনে করেন এই পরিবর্তনের ফলে সরকারের এইচআইভি/এইডস নীতিমালায় পরিবর্তন সূচিত হবে। বর্ণবাদ বিরোধী অগ্রসৈনিক এবং আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের সদস্য হোগান ফাইন্যান্স পোর্টফলিও কমিটির সভাপতি ছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ অলংকারের পরে তিনি বিগত সরকারের অবস্থান ভেঙে এইডসকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদানের শপথ নিয়েছেন। যার ফলে দক্ষিণ আফ্রিকানদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা আশাবাদী যে হোগান নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অধিক বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা সংস্থাপন করে এইচআইভি/এইডসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সংগ্রামকে আরো জোড়ালো করতে সমর্থ হবেন। এই ভিডিওতে দেখতে পাবেন এইডস কর্মীরা হোগানের নিয়োগকে স্বাগত জানানোর দৃশ্য।

অতীতে জনসম্মুখে হোগান প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ঠাবো বেকির এইচআইভি/এইডস বিষয়ক অবস্থান ও নীতির সমালোচনা করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ৫৭ লাখ লোক এইচআইভি ভাইরাস বহন করে এবং গত বছর সাড়ে ৩ লাখ মানুষ এই রোগে মারা গেছে (প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের মত)। শাবালালা-সিমাঙ্গ অভিযুক্ত হয়েছিলে এইচআইভি/এইডস সমস্যা নিয়ে অপ্রতুল সাড়া প্রদানের জন্য। এইচআইভি/এইডসের চিকিৎসার প্রতিষেধক হিসাবে প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিটরুট, রশুন এবং অন্যান্য খাদ্য খেতে জনগণকে উৎসাহিত করতেন যার জন্য তার ডাক নাম হয়ে গিয়েছিল “ডক্টর বিট্রুট”। এন্টি-রেট্রোভাইরাল ড্রাগ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরীর জন্য তিনি অভিযুক্ত হন।

ইররেভারেন্স প্রদত্ত পোস্টে স্টিফেন “জাতীয় লজ্জা” হিসাবে শাবালালা-সিমাঙ্গকে এবং হোগানকে আশার আলো হিসাবে উল্লেখ করেছেন। সিয়ারানস পিকিউলিয়ার ব্লগে সিয়ারান পার্কার শাবালালা-সিমাঙ্গর অগতানুগতিক পদ্ধতির বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন:

ধারবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখার কথা বলে ঝালিমা মোটলানথি বেকির আরো কিছু বিতর্কিত মন্ত্রীদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেলেন। এর মধ্যে বেকির এইডস প্রত্যাখ্যান নীতির প্রধান তাত্ত্বিক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড: মান্টো শাবালালা-সিমাঙ্গ অন্যতম। এইচআইভি ভাইরাস থেকে যে এইডস বিস্তৃতি লাভ করে বেকির সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে এবং তার স্বাস্থ্য মন্ত্রী সেই তথাকথিত এট্রি-রেট্রোভিয়াল ড্রাগ তুলে ধরেছিল এই রোগ মোকাবেলায় প্রভাব বিস্তারকারী বলে। অত্যন্ত দামী ছিল সেই ঔষধ। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা প্রকাশ্যে মন্ত্রীর এই উদ্ভট নীতির সাথে ভিন্নমত পোষণ করায় শাস্তিভোগও করেছে।

এ সপ্তাহের শুরুতে কেপটাউনে আন্তর্জাতিক এইডস ভ্যাকসিন ২০০৮ কনফারেন্সের উদ্বোধনকালে হোগান প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে এইচআইভির কারণে এইডস হয় এবং প্রচলিত ঔষধ দিয়ে এর মোকাবেলা করতে হবে। তিনি আরো বলেন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল মা থেকে শিশুর মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধ কর্মসূচী, এইচআইভি বাহিত গর্ভবতী মা থেকে সংক্রমন প্রতিরোধে থেরাপী পরিমাপের জন্য; একটা কার্যকরী এইচআইভি ভ্যকসিন প্রচন্ডভাবে প্রয়োজন ছিল।

বিজ্ঞানী, কর্মী এবং অসংখ্য ব্লগার হাফ ছেড়েছে এবং উৎফুল্ল হয়ে উঠেছে হোগানের বক্তব্যে। এ্যাডভেঞ্চারস এ্যাজ এ্যান আ্যম্বাসাডোরিয়াল স্কলার ব্লগে হ্যালি লিখেছেন:

বেশীরাভাগ মানুষের সাথে কথা বলে আমি বিষ্মিত – বর্তমান বিশ্বে গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারী লোকজন এইচআইভির কারণে এইডস হয় এটাকে অস্বীকার করে! দুঃখজনক হলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় সেটাই সত্যি – কিন্তু আর নয় বন্ধু, আর নয়”।

দি টাইমস, সাউথ আফ্রিকায় প্রদত্ত পোস্টে রে হারটলে লিখেছেন:

“আমরা জানি যে এইচআইভির কারণে এইডস হয়।’’

এই ঘোষণার মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বারবারা হোগান এইডস প্রত্যাখ্যানের এক লজ্জাস্কর বিতর্কের অবসান ঘটালেন। ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার অগণিত প্রাণ ঝরে গেছে এবং দীর্ঘকাল মানুষজনকে ভাইরাসসহ অন্ধকারের মধ্যে বাস করতে বাধ্য করা হয়েছে।

পূর্বের এইচআইভি/এইডস নীতির কারণে কত মানুষের প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে তা নির্ধারণ করা কঠিন হলেও ট্রিটমেন্ট এ্যাকশন ক্যাম্পেইন (টিএসি) উল্লেখ করেছে বেকির শাসনামলে এইডসে বিশ লাখেরও বেশী দক্ষিণ আফ্রিকান মারা গেছে। এরমধ্যে কমপক্ষে ৩ লাখ মানুষকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করা যেত যদি তাদেরকে মৌলিক চিকিৎসা দেয়া হত। কিছু ব্লগার মনে করেন বেকি এবং শাবালালা-সিমাঙ্গ এর হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে। থিংকস দ্যাট মেক ইউ গো মমম! এর ব্লগার সোনেকা কামুহুজা বেশী দায়ী করেছেন বেকীকে:

তাদের [বেকি এবং শাবালালা-সিমাঙ্গ] বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা, ক্ষীণদৃষ্টি ও নির্ভেজাল অসততা দেশ ব্যাপী বিস্তৃত এ ব্যাধী প্রসারে নিষ্ঠুরভাবে সহায়তা করেছে। যেখানে দরকার সর্বমুখী পরিকল্পনা তা যদি এককভাবে প্রয়োগ করা হয় তা ভাইরাসের চিকিৎসায় কার্যকরী হতে পারে না। সর্বগ্রাসী ও সমষ্টিক অজ্ঞতা দিয়ে তারা জাতিকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করেছে। এখন এটা হিসাব করা হয় দক্ষিণ আফ্রিকাতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি এইচআইভি আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর বাস। যেভাবেই হোক না কেন এসবের পেছনে বেকির হাত সুস্পষ্ট, এইডস বিরোধী সংগ্রামের সঙ্কটাপন্ন প্রধান… সে প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ একটা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনাময় জনসম্পদের সাথে প্রতারণা করেছে।

অনেকেই আশা পোষণ করে এই ক্ষতির কিছুটা মেটাতে সক্ষম হবে হোগান। পেরিফেরিতে প্রকাশিত একটা পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে অনেক মানুষই আশা করে দক্ষিণ আফ্রিকায় রাজনৈতিক সমর্থিত এইডস প্রত্যাখ্যান নীতিমালার সময় শেষ হয়েছে। তথাপি দক্ষিণ আফ্রিকার দি টাইমসের একটা ব্লগ পোস্টে বিলিসি উল্লেখ করেছেন:

মান্টোর হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সেবার প্রান্ত থেকে বারবারা হোগানকে একটা পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে। কর্মীদের যোগ্যতা, নৈতিকতা এবং মানের সাথে সাথে স্বাস্থ্য নীতির পরিবর্তন এবং আইন সব দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ভুডু ঔষধের প্রসার ও পশ্চিমা বিজ্ঞানকে অমঙ্গল ভাবা মানুষের মনস্তত্ত্বে গভীরভাবে প্রোত্থিত হয়ে গেছে। বছরের পরে বছর পরিশ্রমী, সাহসী এবং নিরবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকতে হবে স্বাস্থ্য সেবার উপরে শ্রদ্ধা জাগ্রত করতে এবং ও কার্যকর অবস্থানে নিয়ে যেতে। আমরা কেবল আশা করতে পারি ইশ্বর বারবারা হোগানকে দ্রুত কাজ করার শক্তি দিক। তার এখন সেটাই দরকার।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .