- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ব্লগিং বিপ্লব: ইরান থেকে কিউবা

বিষয়বস্তু: ল্যাটিন আমেরিকা, ইরান, কিউবা, চীন, মিশর, সিরিয়া, সৌদি আরব, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নতুন চিন্তা, প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, ভ্রমণ, মানবাধিকার, রাজনীতি, লিঙ্গ ও নারী, সরকার

সিডনী ভিত্তিক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ব্লগার এ্যান্থনি লোয়েনস্টাইন [1] সম্প্রতি “ব্লগিং বিপ্লব [2]” নামে একটা বই লিখেছেন। ইরান, সিরিয়া, সৌদি আরব, মিশর, চীন ও কিউবা – এই ছয়টি দেশে ব্লগিং কি কি প্রভাব ফেলছে তা সুনিপুণভাবে উঠে এসেছে এই বইটিতে।

তিনি বলেছেন:

বইটির জন্য উপরোক্ত ছয়টি দেশকে বেছে নেয়ার কারণ হলো যেহেতু তারা পশ্চিমে নিয়মিত ওয়াশিংটনের শত্রু বা মিত্র হিসাবে উপস্থাপিত হয় এবং সন্ত্রাসের গল্প ছাড়া এই দেশগুলোর সাধারণ মানুষের অভ্যন্তরীণ খবররাখবর আমরা খুব কম জেনে থাকি। প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টকোণ ছেড়ে ব্লগার, লেখক, বিপ্লবী, রাজনীতিবিদ, জনগণের সাথে আমি কথা বলতে চেয়েছিলাম।

এ বছর বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ভয়েস সামিটে [3] এ্যান্থনি একজন প্যানেলিস্ট হিসাবে অংশ নিয়েছিলেন। তার বইয়ে গ্লোবাল ভয়েসেসের বেশ কিছু তথ্যনির্দেশ পাওয়া যাবে।

ইউটিউবে এ্যান্থনি তার বই তুলে ধরেছেন:

আমি এই বই উপলক্ষ করে তার একটা সাক্ষাৎকার নেই।

প্রশ্ন: ইরানের ভ্রমণ শুরুর আগে, আপনি লিখেছিলেন যে আপনি আশাবাদী যে ইন্টারনেট স্বয়ং এই দেশে সত্যিকারের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করতে পারে। বৈপ্লবিক পরিবর্তন বলতে আপনি কি বুঝিয়েছেন? এবং এখন আপনি কি মনে করেন?

বিপ্লবের ধারণাটি কিন্তু খুব স্বচ্ছ নয়। আমি আমার ভ্রমণে খুব কম লোক পেয়েছি যারা তার দেশে বড় একটা পরিবর্তন চায়। আমার বইতে এমন অনেক প্রতিবাদী এবং ব্লগারদের তুলে ধরা হয়েছে বিশ্বের যারা রাজনৈতিক, সামাজিক এবং নৈতিক পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করছে – যার মধ্যে সৌদি আরবের বিখ্যাত ব্লগার ফুয়াদ আল-ফারহান [4], যিনি কয়েকদিন হলো জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন [5] তার দেশের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে অবরুদ্ধ থাকার পরে – কিন্তু তারা স্বীকার করে যে খুব কম সংখ্যক লোক তাদের সাথে প্রতিবাদে যোগ দেবে।

কেবলমাত্র ইন্টারনেট বড় কোন পরিবর্তন বয়ে নিয়ে আসতে পারবে না, কিন্তু এটা মানুষকে তাদের বক্তব্য প্রকাশে সুযোগ দেয় এবং কার্যকারনে সহায়তা ও শক্তি প্রদান করতে পারে। ওয়েবের আগে এমন কোন প্রযুক্তি তা করতে পারতো না। আমি ইন্টারনেটের আদর্শবাদ তৈরী করছি না – অথবা বিশ্বাস করি না যে পাশ্চত্য-ঘেঁসা গণতন্ত্রও আমার ভ্রমণকৃত দেশগুলোর লক্ষ্য। বৈদেশিক মধ্যস্ততা সবজায়গাতেই বিরক্তিকর, যদিও পাশ্চাত্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন সবজায়গাই স্বাগত জানানো হয়েছে।

ইরানে বিপ্লবের ত্রিশ বছর পরেও, বেশীরভাগ তরুণ যাদের সাথে আমার দেখা হয়েছে তারা ক্লান্ত; কেউই আমেরিকা বা ইজরায়েল এর বোমার শিকার হতে চায় না।

প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার সাথে কাজ করেছে এমন একজন ইরানী সাংবাদিকের উদ্ধৃতি করে আপনি বলেছেন যে বৈদেশিক মিডিয়া ইরানে পরমানু আর আল কায়েদার বিষয়ে শুধু আগ্রহী। আপনার কি মনে হয় অন্য সব দেশেও এটা সত্য? সর্বপরি, ইরানীরা আমেরিকান হেল্থ কেয়ার সিস্টেমের চেয়ে নির্বাচনের বিষয়ে বেশি আগ্রহী। ইরানের কম গুরুত্বপূর্ণ চাঞ্চল্যকর সংবাদ ব্লগে উঠে আসার বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন?

পাশ্চাত্য মিডিয়া এখন বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্কটে রয়েছে। জনসম্পদ কমে যাচ্ছে, কম সংখ্যক সাংবাদিক নিয়োগ হচ্ছে এবং স্থানীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা হচ্ছে। যার জন্য এটা এটা নতুন নয়, যদিও হতাশাব্যঞ্জক, যে আমাদের প্রচার মাধ্যমের অনেক গল্প যেমন ইরান সম্বন্ধে কেবল আহমাদিনেজাদ, সন্ত্রাস, ইরাক অথবা মানবাধিকার বিষয়ে বুঁদ হয়ে আছে। এগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু তা ঐ অঞ্চলের সমস্ত ঘটনা ব্যাখ্যা করে না।

আমার বইয়ে ইরানের একটা অংশ তুলে ধরা হয়েছে যা খুব কমই আমাদের সন্ত্রাস নির্ভর মিডিয়াতে দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে বসবাস করে আমি দেখি প্রতিদিন আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে মাতামাতি, এমন মনে হয় যে আমাদের সবার বারাক ওবামা বা ম্যাকেইনের ক্যাম্পেইনের উপরে সত্যিই কোন প্রভাব আছে।

এই তথাকথিত নিপীড়ক শাষিত দেশে ব্লগ এমন সব বিষয় তুলে ধরে যা সময়ের সংকটে ভোগা ও সংকীর্ণ পাশ্চাত্য মিডিয়া তুলে ধরে না। শুধু মাত্রই এই একটা কারণে তাদের নিয়ে আলোচনা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।

প্রশ্ন: ইরান, মিশর, সিরিয়া এবং সৌদি আরবের ব্লগোস্ফিয়ারের মধ্যে আসলে কোন সত্যি মিল রয়েছে অথবা পার্থক্য?

ইরানী ও এবং মিশরী ব্লগস্ফিয়ার বৃহৎ ও সম্প্রসারণশীল এবং তারা রাজনৈতিক পদ্ধতির উপরে প্রভাব ফেলছে। শাষকবৃন্দ তা টের পেয়ে ব্লগার ও মানবাধিকার কর্মীদের আটকাচ্ছে তাদের মুখ বন্ধ করার জন্য। অন্যান্য ব্লগার ও কিছু দেশের সরকারের থেকে প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক একাত্মতা নিপীড়ক শাসকদের কাজকে কঠিক করে ফেলছে। বন্দী ব্লগারদের ভোলা সম্ভব নয়।

মিশর ও ইরানের উচ্চারিত কণ্ঠের গভীরতা ও বিচিত্রতা দেখে আমি মুগ্ধ, কিছু আমার বইয়ে ব্যাপক মাত্রায় তুলে ধরেছি, বাম থেকে ডান, নারী, মানবাধিকারকর্মী ও ইসলামবাদী। সত্যি কথা বলতে কি, অনেক পশ্চিমা সমাজের এই অংশের লোকের থেকে এরা বেশী মাত্রায় উচ্চকন্ঠ।

সৌদি আরবে ব্লগস্ফিয়ার অনেক কম অগ্রগতি লাভ করেছে যদিও এখনও তা সক্রিয়। পর্নোগ্রাফিক সাইটের উপরে বিধিনিষেধ আরোপ কম, যদিও শাষকরা মানবাধিকার কর্মীদের শক্তিকে ভয় পেতে শুরু করে আছে। আপনি যদি পূর্বে নীরব থাকা এই দলটির সম্বন্ধে জানতে চান তাহলে সমাজে চরমভাবে অবহেলিত নারী ব্লগারদের লেখা পড়লে মন সজীব হয়ে যাবে।

প্রশ্ন: এই বই ও গবেষণা করতে গিয়ে আপনি বড় কি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন?

কিছু দেশে পূর্ণ প্রবেশাধিকার পাওয়াতে বেশ বাধা ছিল। গুগল, ইয়াহু, মাইক্রোসফ্ট এবং অন্যান্য পশ্চিমা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা ও ওয়েব বিধিনিষেধ আরোপে তাদের ষড়যন্ত্র চীনের মতই রয়েছে। আমার উৎসগুলোকে রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বেশীরভাগ দেশের ব্লগারদের সাথে যোগাযোগ এবং সেখানে পৌঁছার আগে আমি পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েছি।

এই বইয়ের প্রধান লক্ষ্য ছিল পশ্চিমা সাংবাদিকদের গতানুগতিক ভূমিকা থেকে মানের দিকে পরিচালিত করা। উপস্থাপিত প্রত্যেকটা দেশে আমার অবস্থান অনিবার্য ছিল বটে, কিন্তু আমি যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে তাদের সাথে আমার অবস্থান নির্দিষ্ট করতে দৃঢ় ছিলাম। আমার বক্তব্যের চেয়ে তাদের কণ্ঠ অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

প্রশ্ন: অশ্রুত কণ্ঠ জানার বিষয়ে মানুষকে সহায়তা দিতে গ্লোবাল ভয়েসের ভূমিকা নিয়ে আপনি কি মনে করেন? গ্লোবাল ভয়েসেসকে আরো কার্যকরী করার বিষয়ে আপনার মতে আর কি কি করা প্রয়োজন?

গ্লোবাল ভয়েসেসের শক্তি এই যে তাদের বিশ্বব্যাপী পাঠকদের বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে শিক্ষিত করে তোলার সক্ষমতা আছে। প্রায়শই তারা সেই সব বিষয় ও দৃষ্টিকোন তুলে ধরে যা একচোখা দৃষ্টিসম্পন্ন পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমে উপেক্ষিত। তথাপি, ভাষা থেকে যায় প্রধান সমস্যা হিসাবে। পশ্চিমা দেশগুলো ও বাকী বিশ্বের সাথে সংযোগ খুঁজে নিতে আরো মনযোগ দিতে হবে যেহেতু ইন্টারনেটে বর্তমানে এমন একটা জায়গা যেখানে এই দুই জগতের মধ্যে খুব কমই যোগাযোগ হয়।