পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো, চীনের দুধের ভেজালের ঘটনা দক্ষিনপূর্ব এশিয়ার দেশসমূহকেও আতঙ্কিত করেছে। এসব দেশের ব্যবসার বৃহত্তম অংশীদার চীন এবং চীনের সামগ্রী এই অঞ্চলে জনপ্রিয় আর সহজলভ্য। এটা জানা আশ্চর্যজনক কিছু না যে চীনের যেসব দুগ্ধজাত পণ্য মেলামাইন দ্বারা দূষিত তা এখানের স্থানীয় বাজারে ইতোমধ্যে বিক্রি হয়েছে।
এই সমস্ত দেশের সরকাররা এই ব্যাপারে কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে? চীনের দুগ্ধজাত পণ্য পরীক্ষা, শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ আর নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি জনপ্রিয় সাদা খরগোশ ক্যান্ডিকেও বিপদজনক খাদ্যের মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ চীন থেকে আগত নিরাপদ জিনিষের একটা তালিকা প্রকাশ করেছে।
দুগ্ধ ভীতির কারনে ক্রেতারা তাদের খাদ্যাভ্যাস পাল্টাচ্ছে, আর অনেকে দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকছে। যেমন আশা করা হচ্ছিল, দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানীরা তাদের ক্রেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করছে যে তাদের পন্য নিরাপদ। ব্রুনাই এর একজন ক্রেতা চায় যে তাদের সরকার যেন দূষিত দুগ্ধজাত পন্যের তালিকা আবার পরীক্ষা করে। নাউ এ মাম্মী এখন চিন্তিত যেহেতু সে চীনে অবস্থিত একটা কারখানায় তৈরি বিস্কিট কিনেছে।
ব্লগারদের প্রতিক্রিয়া কি? একজন সিঙ্গাপুরিয়ান একে বর্ণনা করেছে “মরনঘাতী অস্ত্র- দূষিত দুধের উপাখ্যান।”
ব্যাঙ্কক পন্ডিত তার সরকারকে মাত্রারিক্ত প্রতিক্রিয়া না দেখানোর পরামর্শ দিয়েছে:
“সরকারের তার নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দরকার, কিন্তু একই সাথে তাদের উচিত হবে না অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করার- সরকার যদি বাড়াবাড়ি করে, চীন পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে যা থাই রপ্তানীকারকদের জন্য ক্ষতিকর হবে।”
তার ব্লগের একজন পাঠক চীনের দুগ্ধজাত পণ্য থাইল্যান্ডের সুপারমার্কেটে বিক্রি করতে দেখে বিষ্মিত হয়েছে:
“আমার বিশ্বাস যে থাই সরকারের অবস্থান একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, এটা শুধুমাত্র জনসংযোগের ব্যাপার না। কিভাবে এইসব জিনিষ সুপারমার্কেটের শেলফে এখনো আছে? সরকারের দরকার জনগনের নিরাপত্তার জন্য শক্ত অবস্থান নেয়া আর আমাদেরকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়া যে কোন কোন জিনিষ দূষিত এবং তা সরিয়ে ফেলা।”
ব্যাঙ্কক থেকে আলেক্সিস দা টাইনি এখন থেকে আরো বেশি স্থানীয় আর অপ্রক্রিয়াজাত জিনিষ কিনবেন:
“মেলামাইন বিষাক্ত হওয়ার কথা, ঠিক? তাহলে কি করে ওই জিনিষের গ্রহণযোগ্য মাত্রা আমাদের খাদ্যে আমরা পাই? আমি ধারনা করছি যে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এত ক্ষতিকর একটা জিনিষের জন্য ‘গ্রহণযোগ্য মাত্রা’ শূন্য হবে। ইশ্বর। আমরা কি করে এই পর্যায়ে পৌঁছেছি যে এমন জিনিষ আমাদের খাদ্যের সাথে দেয়া হচ্ছে? আসলে আমরা এই পর্যায়ে কি করে পৌঁছেছি যে করপোরেশনরা আমাদেরকে বলবে যে খাদ্যে কি ঠিক আছে যদিও তা আমাদের ঠিক বলে না মনে হয়? একটা জিনিষ নিশ্চিত, এটা আমার বাজার করার অভ্যাস পাল্টাবে। এখন থেকে এটা স্থানীয় আর প্রাকৃতিক (অপ্রক্রিয়াজাত) হবে যতদূর পাওয়া সম্ভব।”
মালয়েশিয়া থেকে মাই ফুড ফর থটস চীনের সাথে ব্যাবসায়িক নিষেধাজ্ঞার অসুবিধার কথা বলেছে:
“কিন্তু চীনে কি তৈরি হয়না? এমনকি নাইকি জুতাও চীনে তৈরি হয়! তার মানে কি চীনে তৈরি না এমন জিনিষ শুধুমাত্র কেনা নিরাপদ? যার মানে শুধুমাত্র দামী, ব্রান্ডের জিনিষ যার ফলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে? যার মানে আমাদের বেতনে কুলাবে না? হায়…”
পূর্ব তিমোর থেকে টাম্বেলউইড ইন স্পেস লিখেছে যে দুধের এই কেলেন্কারীর ঘটনা আধুনিক জীবনযাত্রা সম্পর্কে কি প্রকাশ করেছে:
“চীনের সাম্প্রতিক দুধের ভেজালের ঘটনা আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে জীবনের প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে কত দূষণ আছে। এবার এটা মেলামাইন, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা দেখিয়েছে যে পলিকার্বনেট, যা দুধের বোতলে সাধারণত ব্যবহার করা একপ্রকার প্লাস্টিক, তাতে হরমোন বিনষ্টকারী ‘বাইফেসোনোল এ’ আছে।”
মিয়ানমারের উপর এই ঘটনার সম্ভাব্য প্রভাব কি? ফিয়ার ফ্রম ফ্রিডম ব্যাখ্যা করেছে:
“মিয়ানমারে চীনা দুধ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কফি আর চা মেশানো প্যাকেটও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যেহেতু এইসব প্যাকেটে গুঁড়োদুধ আছে কর্তৃপক্ষের উচিৎ দুধের উৎস পরীক্ষা করা। চায়ের প্যাকেটে সিঙ্গাপুর দূষিত দুধ পেয়েছে আর আমাদের আমদানী সিঙ্গাপুর থেকে। এটা জরুরী মানুষকে জানানো যাতে তারা পরবর্তী পরীক্ষা না করা পযন্ত চীন থেকে আগত যে কোন রুপ গুঁড়ো দুধ কেনা থেকে বিরত থাকে।”
ফিলিপাইন থেকে হাউস অন আ হিল সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছে এমন কোন বাণিজ্য নীতি না প্রয়োগ করতে যা দরিদ্রদের ক্ষতি করবে:
“সানলু দুধ আসলেই দেশের মধ্যে চোরাই পথে এসে বিক্রি হয়েছিল কিনা তা কষ্ট করে না দেখে, আমরা দেখছি সরকারী কমকর্তারা বেশী মাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আমদানি বন্ধ করে সুপারমার্কেট থেকে চীনের তৈরি প্রায় সব দুধ আর দুগ্ধজাত পণ্য সরিয়ে ফেলছে। এটা কি ধরনের সমাধান? এটা তো দ্বৈত বিপদ। এটা তো সঠিক চীনা উৎপাদনকারী আর দুধ আর দুগ্ধজাত পণ্যের রপ্তানীকারকদের সাথে অবিচার করা। আরো খারাপ যে এতে দরিদ্র ফিলিপিনোরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যারা ভয়ঙ্কর দামে বিক্রি করা বহুজাতিক কোম্পানির দুধ আর দুগ্ধজাত পন্য কিনতে পারে না।”
তারপর সে ক্যালসিয়ামের বিকল্পের কথা বলেছে:
“আমাদের একটা সরকার আছে যে বারবার ব্যর্থ হয়েছে মানুষকে লেবেল ছাড়া খাদ্য কেনার ঝুঁকি বোঝাতে। সেই একই সরকার সস্তা দুধের উৎস বন্ধ করে দিচ্ছে যেহেতু তার চোরাচালান থামাতে পারছে না। ভোক্তাদের এটা কোথায় দাঁড় করায়, বিশেষ করে দরিদ্রদের? দুই বছরের কম বয়সী বাচ্চা যাদের আছে তাদেরকে বুকের দুধ খাওয়ান। অন্যদের জন্য, যদিও দুধ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস কিন্তু বুঝে নেন এটা ক্যালসিয়ামের একমাত্র উৎস না। সারডিন, ওক্রা, টোফু আর সীমে অনেক ক্যালসিয়াম আছে।”
ফিলিপিন্স থেকে দ্যা কিউরিয়াস লাইফ অফ এ কুইরকি শেফ জিজ্ঞেস করেছে: “চীন কি পৃথিবীর এক একটা করে বাচ্চা হত্যা করতে চাচ্ছে?” এই ব্লগার আরো যোগ করেছে:
“প্রথমে বিশ্বে বিতর্ক ছিল বাচ্চাদের খেলনা নিয়ে যাতে পারদের বিষক্রিয়া ছিল। তারপর চীনের ক্যান্ডি আর বিস্কিটের ব্যাপার যেখানে ফরমাল্ডিহাইড থাকার অভিযোগ আছে। আজকে, সারা বিশ্বের ম্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আর তার সাথে কোটি কোটি দুগ্ধজাতপণ্যের ভোক্তারা আতঙ্কে আছে চীনা দুগ্ধজাতপণ্যের জন্য যা কারখানার রাসায়নিক মেলামাইন দারা দূষিত।”