- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মায়ানমার: এখনো সাহায্য দরকার

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, মায়ানমার (বার্মা), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, দুর্যোগ, মানবতামূলক কার্যক্রম, সরকার

পাঁচ মাস আগে, ঘুর্ণিঝড় নার্গিস মায়ানমারকে [1] আঘাত হানার ফলে ৮০,০০০ জনেরও বেশী লোক মারা যায়। ৫০,০০০ জন নিরুদ্দেশ আর ২০,০০০ জন আহত হয়। মায়ানমারের দক্ষিণভাগকে আঘাত করা এই ঘুর্ণিঝড়টি সেদেশের জন্যে সব থেকে খারাপ প্রাকৃতিক বিপর্যয় [2] ছিল।

প্রাথমিকভাবে মায়ানমারের শাসক জান্তা সমালোচনার মুখে পরে ধীর গতিতে ত্রাণ কাজ চালানোর জন্যে [3] আর আন্তর্জাতিক ত্রাণ গোষ্ঠিকে ঢুকতে বাধা দেয়ার জন্য। ক্রমাগত আন্তর্জাতিক চাপের কারনে জান্তা অন্যান্য দেশ থেকে ত্রান সামগ্রীকে শেষ পর্যন্ত স্বাগত জানায়। বেশ কয়েক মাস পর, মানবাধিকার সাহায্যের সমন্বয়ের ফলে মায়ানমারের ভিতরের অবস্থার উন্নতি দেখতে পায় বিভিন্ন ত্রানদল। রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে: [4]

“ত্রাণ এজেন্সীরা আজকে জানিয়েছে যে আয়েইরাবতি ডেল্টাতে তারা অভুতপূর্ব যাতাযাতের সুযোগ আর সচলতা পেয়েছে, যা জাতিসংঘ, আসিয়ান (দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের এসোশিয়েশন) আর আমেরিকার সফল লড়াই এর ফলে হয়েছে। কিন্তু ত্রান সামগ্রী বিতরণে এই সুবিধা, চাহিদা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ আর স্থানীয় গোষ্ঠীকে সমর্থন করা এখন বিপদসঙ্কুল হয়ে পরেছে। কারন লাগাতার খাদ্য সহায়তার অঙ্গীকার নেই, পুনর্বাসনের কাজ আর জীবিকার জন্যে কোনরুপ সহায়তার দেখা নেই।”

এই রিপোর্ট ত্রানকাজ চালিয়ে যাওয়ার দরকারের উপরেও জোর দিয়েছে:

“যদিও সাইক্লোন আক্রান্তদের অনেকেই কোন ধরনের ত্রাণ পেয়েছে, আর বেশীরভাগ এখনও লাগাতার খাদ্য সাহায্য পাচ্ছে, কিন্তু সাহায্য থেকে ব্যক্তিগত স্বয়ংসম্পূর্ণতায় উন্নীত হতে আন্তর্জাতিক সাহায্য লাগবে ২০০৯ সাল বা তার পর পর্যন্ত হয়ত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবাধিকার সাহায্য চালিয়ে যেতে হবে আর জীবিকা নির্বাহ আর অন্যান্য প্রাথমিক পুনর্বাসন কাজ শুরু করতে হবে যার ফলে জরুরী সাহায্য ক্রমে কমানো যাবে।”

কিন্তু ‘কট্টর বিভেদ সৃষ্টিকারীরা’ বৈদেশিক সাহায্য ক্রমাগত আটকিয়েই যাচ্ছে:

“তবুও কট্টর নিভৃতচারীরা বদ্ধপরিকর বার্মার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতাকে রোধ করতে। এই বাধা ত্রাণ কাজে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করছে, যেমন তাদের আন্তর্জাতিক সংস্থার উপর কঠোর কার্যধারা আরোপ করার বৃথা চেষ্টা।”

এইসব “কট্টর নিভ্রতচারীরা” হতে পারে সেইসব নেতা যারা মানবিক কাজে আমেরিকার সংশ্লিষ্টতা ভয় পায় যেহেতু তারা ভয় পায় আমেরিকা জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। একটা সরকারী নথী পাওয়া গিয়েছিল যেখানে আমেরিকাকে দোষ দেয়া হয়েছিল [5] শুধুমাত্র খাওয়ার পানি, ‘ইন্সটান্ট নুডলস’ আর ঔষধ বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে দেওয়ার জন্য।

বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার খবর পড়তে ভালো লাগে [6]:

“যারা সব থেকে বেশী আক্রান্ত হয়েছে তাদের চেষ্টা উৎসাহবোধক। ডেল্টার আশ্চর্যজনকভাবে অনেকটা জায়গা জুড়ে ধান আবার লাগানো হয়েছে সাইক্লোন নার্গিসের ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞের পরও। তারপরেও লাখো লোক মতো বেশ কয়েক মাস ধরে খাদ্য সাহায্যের উপর নির্ভর করবে। কৃষী, মৎস চাষ, স্বাস্থ্য আর শিক্ষার ক্ষেত্রে এক বিরাট ক্ষতি কাটিয়ে উঠে পুনর্গঠণের কাজ পড়ে আছে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আর যারা তাদেরকে সাহায্য করতে চায় তাদের জন্যও।”

শিক্ষা কর্মকর্তারা ছাত্রদের সাহায্য করার চেষ্টা দ্বিগুণ করছে [7]। আন্তর্জাতিক শিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এখনো টাকা ওঠাচ্ছে [8]

সাইক্লোন আক্রান্তদেরকে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া সম্ভব হয়েছিল [9] দান আর সেচ্ছাসেবী ডাক্তারদের কারনে। এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কার্যকর করেছিল যারা সাইক্লোন আক্রান্তদের জন্য সরকারী ডাক্তার, নার্স আর ধাত্রীদের প্রয়োজনটি বুঝেছিল । ডাব্লিউএইচও থেকে একটি মজার প্রস্তাব [10]:

“নার্গিস থেকে একটা শিক্ষনীয় বিষয় হলো মহিলাদের জন্য সাঁতার শিক্ষার ব্যবস্থা করা, আর পরিবারকে দুর্যোগের মুখে নিরাপদ জায়গায় চলে যাবার ট্রেনিং, যেখানে পুরুষদের উৎসাহ দেয়া হবে বড় বাচ্চাদের খেয়াল রাখার জন্য- যাদের জন্য বেশী শক্তির প্রযোজন- আর মহিলারা ছোট বাচ্চাদের খেয়াল রাখবে।”

ডাব্লুএইচও এর এই আশাবাদ গ্লোবাল হোপ নেটোয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল [11] সমর্থন করতে পারেনি:

“আয়েইরাবতি ডেল্টার বেশীরভাগ অন্চলের খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এখনো বিদেশীদের ঢোকা নিষিদ্ধ। এখনও কাজ করার জন্য এ অন্চল বিপদজনক জায়গা। আমাদের জাতীয় কর্মীদের দল তাদের স্বাধীনতা আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে দুর্গত এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে। মানুষ এখনও ক্ষুদার্থ আর সুস্থ্য থাকার মতো যথেষ্ট খাদ্য তারা পাচ্ছে না। সাইক্লোন নার্গিস দ্বারা মায়ানমার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কয়েক মাস পরেও, পরিস্থিতি কঠিন আর বিপদজনক।”

অন্যান্য খারাপ খবর: স্থানীয় কিছু নেতা গ্রামবাসীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে [12]। কিছু জিনিষের দাম, যেমন লবনের [13] দাম, এখনো চড়া। খাদ্য আর চালের ঘাটতি [14] বাড়তে পারে সীমান্তে বেআইনি চাল ব্যবসার জন্য। কয়েক সপ্তাহ আগে প্রায় ৫০০০ শরণার্থীকে বের করে দেয়া হয় (পুন:প্রতিষ্ঠিত করা [15]) মানবাধিকার ক্যাম্প থেকে।

মাত্র ১১২ জন এতিমকে সরকারী এতিমখানায় রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের প্রাথমিক হিসাবে এই সংখ্যা ২০০০। অন্য এতিমরা কোথায় [16]? ভয় পাওয়া হচ্ছে যে অনেক এতিমকে বার্মার সেনাবাহিনিতে (তাতমাদাও) নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

নিউ মান্ডালা [17] একজন ত্রাণকর্মীর স্বাক্ষাৎকার নিয়েছে যা আমাদেরকে মায়ানমারের ভিতরের একটা বিশ্বাসযোগ্য চিত্র দিয়েছে। মানবাধিকার কাজের সব থেকে কঠিন অংশ:

“এজেন্সী আর মাঠের মধ্যকার যোগাযোগ সব থেকে বড় সমস্যা। যোগাযোগের ব্যবস্থা খুবই কম, খুব বেশী নিয়ন্ত্রিত। ক্ষতির ধরণ আর মাত্রা সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পাওয়া খুবই দূরুহ ছিল। অনেক ক্ষেত্রে তথ্য দেয়ার একমাত্র উপায় ছিল অন্য অফিসে গিয়ে কাগজের তথ্য জোগাড় করা বা কম্পিউটারে সরাসরি দেখা। ত্রাণ সংস্থা থেকে সরকারের প্রতি অবিশ্বাস আর সরকার থেকে ত্রাণ সংস্থার প্রতি অবিশ্বাস গোপনীয়তার একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যেখানে অনেকে তার কাজ সম্পকে তথ্য দিতে দ্বিধা করছে।”

একটা উৎসাহব্যঞ্জক অভিজ্ঞতা:

“ক্ষতিগ্রস্তদের থেকে সাড়া পাবার কোন সময়ে আমার অস্বস্তি লাগে নি। সাধারণত: অভর্থনা ভালোই হতো যদিও সাংস্কৃতিকভাবে জনগণ কিছুটা নিয়ন্ত্রিত কোন ব্যাপারে খোলাখুলিভাবে মন্তব্য বা অভিযোগ করার ক্ষেত্রে। আমার মনে হয় প্রাথমিক সাড়ার সময়ে একটি বিষ্ময়কর জিনিষ দেখেছি যে প্রতিক্রিয়া আর সাহায্য করার মনোভাব ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে… বাড়ীর মধ্যে নিজেদের জিনিসপত্র ভাগ করে নেয়া আর একে অপরকে দেখা সেটিও খুব হ্রদয়গ্রাহী ছিল।”

কিইমেকাউং মায়ানমারের উপর দিয়ে ঘটে যাওয়া লাগাতার ট্রাজেডী নিয়ে চিন্তা করেছে: [18]

“আমি দেখেছি যে বার্মিজ সঙ্কট কাছাকাছি আর গুরুতর হচ্ছে, যা আলোয় বা অন্ধকারে বুঝতে শেখায় জান্তার নির্যাতন আর তার সাথে সংশ্লিষ্ট নিয়মতান্ত্রিক সমস্যা, কাঠামো থেকে প্রশাসন আর বিশাল এক সেনাবাহিনী থেকে পরিবেশের ক্ষতি পর্যন্ত।”

এখানে ক্ষতিগ্রস্ত মায়ানমার জনপদের [19] আর এতিম বাচ্চাদের [20] ছবি আছে।