- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ম্যাককেইন-ওবামা বিতর্ক নিয়ে পাকিস্তানী ব্লগারদের আলোচনা

বিষয়বস্তু: উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নির্বাচন, রাজনীতি

[1]পাকিস্তানী ব্লগাররা গতরাতে টেলিভিশনে সরাসরি প্রদর্শিত আমেরিকার রাষ্টপ্রতি প্রার্থী বারাক ওবামা এবং জন ম্যাকেইনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিতর্ক বিশ্লেষণ করার অনেক উপলক্ষ্য পেয়েছেন।

সাম্প্রতিক কালে পাকিস্তানকে নিয়ে ব্যাপক নিরীক্ষা শুরু হয়েছে এবং একটা উত্তপ্ত অঞ্চল হিসাবে বিবেচিত হওয়ায় পরে এখানে আমেরিকার ভূমিকা কি হবে এটা ছিল আলোচনা প্রধান অংশ।

প্রায় ৩৭ দিন পরে আমেরিকার ৪৪তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবে। যদিও নির্বাচন কেবলমাত্র আমেরিকাতে সীমাবদ্ধ কিন্তু এর ফলাফল সমস্ত বিশ্বে প্রভাব ফেলবে।

হক'স মিউজিংস ব্লগে [2] রিয়াজ হক লিখেছেন:

ফ্লোরিডা এবং মিশিগানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম ভোট রয়েছে। ধারাবাহিক দৃষ্টান্ত অনুযায়ী ওবামা যদি আমেরিকার বেশীরভাগ মুসলিম ভোটারের সমর্থন পায়, ক্ষুদ্র মার্জিনে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হতে পারেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ওবামার বিজয় কি মুসলিম আমেরিকান বা পাকিস্তানী আমেরিকানদের জন্য সুফল বয়ে আনবে?

ম্যাকেইনের পক্ষে বিতর্কের ফলাফলের একটা সংক্ষিপ্তসার তৈরী করেছেন তিনিঃ

এটা স্পষ্ট যে সিনেটর ম্যাকেইন পাকিস্তান প্রসঙ্গে ওবামার চেয়ে অনেক বেশী বিজ্ঞ। ম্যাকেইন বারবার পাকিস্তানের সাথে কুটনৈতিক এবং ঘনিষ্ঠ কাজের সম্পর্ক বজায় রাখতে জোর দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি তার প্রতিশ্রুতি প্রমাণও করেছেন, ইতোমধ্যে কয়েকবার পাকিস্থান সফর করেছেন এবং পাকিস্থানের প্রাক্তন ও ক্ষমতাসীন বেশ কিছু নেতৃবৃন্দের সাথে ফোনে কথাও বলেছেন। অন্যপক্ষে, ফাটাতে পাকিস্তানীরা আসলে কিসের সম্মুখীন হচ্ছে সে বিষয়ে সম্যকভাবে অবগত হবার প্রচেষ্টা ব্যাতিরেকেই ওবামা পাকিস্তান সম্বন্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য রেখেছেন।

পাকিস্তান পলিসি ব্লগ বিস্তারিত আলোচনা করেছে [3] উভয় প্রার্থীর পক্ষে ও বিপক্ষে:

ওবামা সাধারণের জন্য ভাল, সেনাবাহিনীর জন্য খারাপ:

পাকিস্তানের সবেমাত্র উড়তে শেখা গণতন্ত্রের বিষয়ে ওবামার সমর্থন এবং উন্নয়নের তহবিল ব্যাপকমাত্রায় বৃদ্ধির জন্য নিরাপত্তা কমিটি গঠনের বিদেনের পরিকল্পনা – দুটোই চমৎকার। একটা পরিপূর্ণ পাকিস্তান-নীতিতে পৌঁছানোর জন্য ইহা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু মনে হচ্ছে ওবামা পাকিস্তানের স্পষ্ট ও সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বিপদসমূহ সম্বন্ধে সচেতন নন।

ম্যাকেইন সেনাবাহিনীর জন্য ভাল, সাধারণের জন্য খারাপ:

ম্যাকেইনকে পাকিস্তানের একটা বেসরকারী, গণতান্ত্রিক সরকারের অস্তিত্বের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করতে হবে। তার প্রস্তাবিত গণতন্ত্রের লীগে পাকিস্তানকে অন্তর্ভূক্ত করতে সে ব্যর্থ হয়েছে। তাকে মনে হলো অস্বীকার করতে – অথবা তার আলোচ্য বিষয় এখনও আপডেট করতে হবে – সে এত বেশী দ্বিধাগ্রস্থ যেমন রাষ্ট্রপতির নাম কারদারী উচ্চারণ করেছেন… ম্যাকেইনের পাকিস্তান পলিসিতে এটা অন্যতম একটা ত্রুটি হিসাবেও প্রতীয়মান হয়: মোশাররফ পরবর্তী পাকিস্তানে এটা আরোপ করতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

বেশ চমৎকারভাবে পাকিস্তান পলিসি ব্লগ [3] ম্যাকবামা নামে একটা শব্দ তৈরী করেছে যেটা দুই নীতির একটা চমৎকার মিশ্রন হতে পারে:

ম্যাকবামা সমন্বিত আমেরিকা-পাকিস্তান সম্পর্কের জন্য ভাল:

না কোন প্রার্থী, না যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের কেউ সত্যিকার অর্থে জানে আফগানিস্থানে সমন্বিত ব্যার্থতার কারণ। পাকিস্তান নীতি অনুসারে, ওবামা অনেক বেশী প্রতিশ্রুতিশীল। ম্যাকেইন প্রস্তাব করছে শক্তি অনুপাতে সম্পর্ক পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সাথে এবং এর সার্বভৌমত্বকে সম্মান দেখিয়েছে যেদিকে ওবামা দুঃখজনকভাবে অগ্রসর হচ্ছে।

বৈঠকে টেমপোরাল তার হতাশা [4] ব্যক্ত করেছেন ম্যাকেইনের প্রতি নামের ভুল উচ্চারণের জন্য।

জন ম্যাকেইন, আন্তর্জাতিক নীতির বিশেষজ্ঞ আহমাদিনেজাদের নাম চারবার ভুল উচ্চারণ করেছেন একই সাথে এবং জারদারীর নাম জুতার তলে ফেলে নিষ্পেষিত করেছেন।

আমার নিজের ব্লগ টিথ মায়েস্ত্রোতে [5] আমিও ভুল উচ্চারণের জটিলতা নিয়ে মন্তব্য করেছি:

সম্ভবত সবচেয়ে মজার বিষ্ময় ছিল যখন ম্যাকেইন সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারলো না আমাদের রাষ্ট্রপতি আসিফ আল জারদারীর নাম এবং বললো কিরদারী, এটা কোনভাবেই অন্যায় নয় কঠিন একটা উচ্চারণকে গুলিয়ে ফেলা, কিন্তু যখন বৈদেশিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা করেন তখন আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকা চাই তার নাম সঠিক ভাবে উচ্চারণ করার জন্য, যেন তারা কম আহত হয়। যদি এই হয় শুরু তবে ইরানীরা তো তাকে মাঠে একেবারে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে যেহেতু কয়েকমিনিট পরেই সে আহমাদিনেজাদ এর নাম পুরো কেটে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে আহমাদিনিনিনি বলে – নিঃসন্দেহে একটা কুটনৈতিক গণসংযোগ বিপর্যয় ঘটার অপেক্ষায়।

ডিসি তে দেশী [6] লিখেছেন:

কে ভেবেছিলো যে আজ আমি বলবো গতকালের আমেরিকার রাষ্ট্রপতি প্রার্থীদের বিতর্কের পরে মনে হচ্ছে ম্যাককেইন পাকিস্তানের জন্য ভাল হতে পারে। আমি তার বেশীরভাগ নীতির সাথে একমত নই কেবলমাত্র তার বৈদেশিক নীতি ছাড়া, ওবামার ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে তার অভ্যন্তরীণ নীতির একটা মানে আছে কিন্তু তার বৈদেশিক নীতি দেখে মনে হয় তার অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে।

চেঞ্জিং আপ পাকিস্তান [7] বিতর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে বলেছেন:

ডেমোক্রেটিক প্রার্থী সিনেটর বারাক ওবামার জন্য তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক একটা বিজয়। রাজনৈতিক বক্তৃতায় যাই থাকুক না কেন আমেরিকা সবসময় তাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করবে। যদি মিলিশিয়াদের হাতে যৌথবাহিনীর সদস্য নিহত হতে থাকে সীমান্তের আক্রমনে, এটা অবশ্যই আমেরিকার নিরাপত্তাকে হুমকীগ্রস্থ করে, এটা যেকোন দেশের জন্যই সত্য। এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে ওবামা প্রকাশ্য এটা স্বীকার করেছেন, ওদিকে ম্যাকেইন এটাকে পাকিস্তানী সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আঘাত হিসেবে তুলে ধরেছেন। শেষাবধি তারপর, এই বিষয়ের কোন সহজ সমাধান নেই এবং পরবর্তী রাষ্ট্রপতি বাস্তবতা অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেই বাধ্য হবেন। সেজন্য, তাদের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানের চেয়ে তারা কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সাড়া দিতে কিভাবে হাজির হন সেটা দেখাই জরুরি।

প্রোকাস্টিনেশন [8] তার লাইভব্লগিং এ পুরো সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বলেছেন, “আমি এটাকে একটা ড্র হিসাবে ধরবো। ওবামা কোন ঘুসিই মাটিতে পড়তে দেন নি”। পরে সিবিএসের [9] একটা জরিপের সাথে গাঁট বেধে বলেছেন, “ওবামার জন্য ভাল শোনাচ্ছে এবং সিএনএন [10] এর জরিপ এর চেয়ে ভাল”।

টিথ মায়েস্ত্রোতে [5], আমার বিশ্লেষণ ওবামা-বিদেনের জয়ের দিকে:

পাকিস্তান দ্বিধাবিভক্ত, যদি সেই পুরাতন রাজনীতিই চালু থাকে, সেই একই অন্ধ সম্পর্ক যদি পালন করে বাঁকা ও একনায়কদের পরিচালিত আমাদের রাষ্ট্র, তবে সন্ত্রাসের ভীতিকর যুদ্ধ আরো খারাপ হবে যা আমেরিকা বা পাকিস্তান কারোই প্রত্যাশিত হবে না। অন্যদিকে ওবামা একটা স্বচ্ছ পরিবর্তনের প্রতিনিধি, বিতর্কের উপরে আমার নিরপেক্ষ পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে এটা আমার অভিমত যে যদি তারা উভয়েই পাকিস্তানের ক্ষেত্রে প্রায় একই ধরণের পন্থা অবলম্বন করে, আমি আমার বলটি ওবামার কোর্টে রাখবো সতর্কতার সাথে, তিনি সামনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় অনেক বেশী প্রতিশ্রুতির সাথে কথা বলেন একই সাথে দিকনির্দেশনা দেন এবং পাকিস্তানের জন্য শক্ত হবেন। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধের একটা সামধান চান এবং এটাকে প্রয়োজনের চেয়ে দীর্ঘ করতে চান না। সিনেটর বিদেন এর সাথে যিনি একমাত্র আমেরিকার একমাত্র আমলা যিনি পাকিস্তানের সমস্যা সম্বন্ধে সম্যক অবগত, আমি মনে করি ওবামা-বিদেন রাষ্ট্রপতি জোট পাকিস্তানের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে আসবে।

উপরের ছবিটি ক্যাপটেইন আলকোহোলিকার [11] তোলা। তিনি টেলিভিশনের স্ক্রিন থেকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থীদের বিতর্কের এই ছবিটা নিয়েছেন।