পাকিস্তান: জারদারির ছিনালপনা এবং ব্লগজগতের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জনাব আসিফ আলী জারদারি সম্প্রতি নিউইয়র্কে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সারাহ পলিনের সাথে দেখা করেন এবং আলোচনার সময় মেয়ে পটানোর জন্যে প্রচলিত শব্দাবলী উচ্চারণ করেন। ওটাকে তাই রাজনৈতিক সাক্ষাতের চেয়ে প্রণয়প্রার্থনা বলেই বেশী মনে হচ্ছিল। জারদারি নিম্নরূপ মন্তব্য পেশ করেন:

“আপনি তো বাস্তব জীবনে আরও বেশী আকর্ষনীয়…”

“এখন আমি জানলাম কেন পুরো আমেরিকা আপনার ব্যাপারে উন্মত্ত”

যখন একজন চিত্রগ্রাহক দ্বিতীয়বারের জন্য সারাহ পলিনের সাথে করমর্দন করতে বললো, জারদারি অকপটে সাড়া দিয়ে বললেন:

“যদি সে জিদ করত, আমি হয়তো আলিঙ্গনই করতাম..”

পাকিস্তানী ব্লগজগত বিষয়টির তীব্র সমালোচনা করেছে; কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে মজা করার প্রয়াস খুঁজেছে আর অন্যরা হয়েছে ক্ষিপ্ত। সেদিকে একটু দৃষ্টি ফেরাই:

আলতাফ খান পাকিস্তানী স্পেকটেটর এ লিখেছেন:

প্রয়াত স্ত্রী বেনজির ভূট্টোর গুপ্ত হত্যার জন্য (মলিন চেহারায়) গভীর শোকপ্রকাশের পরেই, আসিফ আলী জারদারি দেখা করেন আলাস্কার বিউটি কুইন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান দলের প্রার্থীর সাথে এবং দুইদুইবার তার চমৎকার চাহুনীর প্রশংসা করেন। যৌনআবেদনময়ী এবং আকর্ষণীয় পালিন ছিলেন বেশ উৎফুল্ল, যা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের জন্য তর্ক করার নতুন সুযোগ করে দিয়েছে কারন তিনি ডেমোক্রেটদের কাছে বিদেশী প্রেসিডেন্টদের জন্য বারবী পুতুল রূপেই পরিগণিত। […]

সাকির লাখানি চৌরঙ্গি তে উল্লেখ করেছেন যে প্রেসিডেন্টের আচরণ ইসলামিক মূলনীতির খেলাফ:

আমি বিস্মিত হই কিভাবে একজন মুসলীম প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট একজন নিকট সম্পর্কহীন মহিলাকে আলিঙ্গনের চিন্তাও করেত পারে। কিন্তু জনাব জারদারি এমন কথাও বলেছেন যে তিনি তাকে আলিঙ্গন করতেন যদি তার সহযোগী জিদ করতেন (সহযোগী তাকে কেবলমাত্র করমর্দন করতেই বলেছিলেন). […]

ড: আওয়াব আলভী টিথ মায়েস্ট্রো তে লিখেছেন:

এটা মনে হচ্ছে সেই পরিপূর্ণ আলোচনার স্ক্রিপ্ট যা লোকজন সারাহ পালিন আর আসিফ জারদারি সাক্ষাৎ করার বহু পূর্বেই ভবিষ্যৎবাণী করে রেখেছিল। পাকিস্তানে সম্ভবত এমনও গোঁড়া ধার্মিক রয়েছে যারা একজন নারীর সাথে করমর্দন করতে দেখেও বিব্রত বোধ করেন, কিন্তু যতই বাধা থাক আর আমরা পছন্দ করি বা নাই করি এটি পশ্চিমা জগতে সাক্ষাতকালীন এক প্রথা হয়ে আছে এবং আমি হয়তো এমনও বলতাম যে ছিনালীপনা মন্তব্যগুলোও সৌজন্যতা কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে সেরকম বলতে ভীত অন্তত ক্যামেরার সামনে তো নয়ই। যথাসম্ভব সারাহ পালিন এটাকে একটা তেল মারা মন্তব্য হিসেবেই নিয়েছেন, কিন্তু যদি তাদের সৌজন্য বিনিময়ের ভিডিও ফুটেজ ভালভাবে দেখেন তাহলে তাকে একটু যেন অপ্রস্তুতই মনে হবে (আপনার কাছে)।

আদনান সিদ্দিকী তার বক্তব্যে জারদারির প্রতি অতটা ভদ্রতা দেখাননি:

আমাদের অবশ্যই জারদারিকে ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ যেহেতু সে পাকিস্তান রাষ্ট্রের, বিশেষ করে আমেরিকানদের সামনে একজন পাকিস্তানী হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করেন। গতকাল যখন জারদারি সারাহ পলিনের সাথে দেখা করেন তখন তিনি তার অনুভূতিকে কাবু করতে পারেননি এবং তার সব দাঁত (জানিনা সেগুলো আসল কিনা কারন শুনেছি জেলে থাকার সময় সেগুলো উঠিয়ে ফেলা হয়েছে) দেখিয়ে ভালবাসা প্রকাশ করলেন এমন স্বাভাবিক (..) ভাবে যা পাকিস্তানীদের মাঝে খুবই প্রচলিত.[…]

সাক্ষাতকালীন পুরো সময়ে জারদারি বিবির জন্য কোন শোক প্রকাশের অবকাশ খুঁজে পাননি যেভাবে পাকিস্তানে প্রতিটি সাংবাদিক সম্মেলনে করেন।

আমার নিজ ব্লগে একটি কৌতুকপূর্ণ ভিডিও তে আমি ঐ সাক্ষাতের এবং প্রেসিডেন্ট জারদারির ভালবাসাময় জীবন চিত্রায়িত করেছি। মূল খবরের [উর্দু ভাষা] ভিডিও পাবেন এখানে [উর্দু ভাষায়].

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .