- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

পাকিস্তান: আর একটি ৯/১১, আমরা জ্বলছি

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, তাজা খবর, দুর্যোগ, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ

গতকাল রাত্রে (সেপ্টেম্বর ২০, ২০০৮) স্থানীয় সময় প্রায় রাত ৮টায়, ইসলামাবাদ কেঁপে গেছে পাকিস্তানের ইতিহাসের সব থকে খারাপ আত্মঘাতি হামলায়। ইসলামাবাদের ম্যারিয়ট হোটেলে এই হামলা হয়। বলা হচ্ছে যে প্রায় ১০০০ কেজি বিস্ফোরক এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলে অন্তত ৬৭ জন নিহত হয়েছে আর প্রায় ২০৩ জন আহত হয়েছে। কতৃপক্ষ এই হামলাকে ‘পাকিস্তানের ৯/১১’ বলছে। সব ক্ষেত্র থেকে পাকিস্তানীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে আর এই কাপুরুষোচিত ভয়ঙ্কর হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

পাকিস্তানী ব্লগগুলোও ও নানা ধরনের মতামত জানিয়েছে, কেউ কেউ এই হামলার সাথে যোগসূত্র খুঁজেছে তালেবান, জঙ্গী আর ভারতের সাথে আর অন্যরা এটাকে আমেরিকার রাজনীতির ফল বলেছে।

পাকিস্তানী স্পেক্টেটর [1] ব্লগের ড: হাসান আস্ফাহানি কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন:

এই হামলা যদি তালেবান করে থাকে, তাহলে কি করে সম্ভব যে তারা কোন ধরনের তল্লাসি ছাড়া কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রনে উপজাতীয় অঞ্চল (FATA) থেকে ইসলামাবাদ পর্যন্ত গাড়ী আনলো? এটা সম্ভব না।

তার মানে সন্ত্রাসীদের সাহায্যকারী কাছেই আছে আর ইসলামাবাদ ও এর আশে পাশের এলাকায় তাদের পুরোপুরি কার্যকর একটা নেটওয়ার্ক আছে। গতমাসেই একটা বিভৎস হামলা হয়েছিল ইসলামাবাদের কাছের একটা শহরতলী ওয়াহ ক্যান্টনমেন্টে, যেখানে ২০০ জনের বেশী নিহত হয়। গত বছর রাওয়ালপিন্ডিতে পারভেজ মোশারফের প্লেনে হামলা করা হয়, আর এই সব লোকে ভেতরের কারো সাহায্য পেয়েছে।

মানুষ এই হামলাকে দিল্লীর বিস্ফোরণের সাথেও তুলোনা করছে, এই বলে যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (RAW) এর সাথে যুক্ত থাকতে পারে। ড: আওয়াব আল্ভি টিথ মায়েস্ট্রোতে [2] ব্যাখ্যা করেছেন:

আমার ধারনা হলো যে ভারতে সাম্প্রতিক হামলার বদলায় এই বিস্ফোরণে সেদেশের গুপ্তচর সংস্থা র'র হাত থাকার সম্ভাবনা সব থেকে বেশী। প্রেসিডেন্ট জারদারির যুক্ত সেশনে বক্তৃতার ঠিক আগে এই রকম একটা মারাত্মক হামলা জারদারীর সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ভুলুন্ঠিত করার চমৎকার ফন্দী।

আমরা কি করতে পারি!! বাড়ীতে বসে, ইমেইল লিখে আর এসএমএস পাঠিয়ে কিছু লাভ হবে না আর সন্ত্রাসীরা আমাদের দেশকে মাটিতে মিশিয়ে দেবে। পাকিস্তানে বিশ্বাসী হলে আমাদের একসাথে হয়ে বলতে হবে সন্ত্রাসবাদ থামাও, মনে রাখবেন এই থামাও পুরোপুরি ধিক্কার তালেবানদের উপর, পাকিস্তানে আমেরিকার হামলার উপর আর আমাদের স্থানীয় সশস্ত্র অভ্যুথানের বিরুদ্ধে, এ সব মিলেই।

আদনান সিদ্দিকি [3] কি বলতে চায় তা এখানে দেয়া হলো:

প্রশ্ন হলো, আমরা কি করছি? আমি যা দেখি তা হলো আমরা সব সময় প্রচারণার শিকার হই যা মাঝে মাঝে সত্যি হয় বটে। কিন্তু তখন আমরা অবহেলা করে জানতে চাইনা যে আমাদেরকে যা বলা হয়েছে তা ঠিক কিনা।

গত দুই দশকে যখনই কোন খারাপ দুর্ঘটনা হয়েছে, আমাদেরকে বলা হয়েছে যে অন্য দেশের হাত জড়িত। প্রায় ওই অন্য দেশের হাত ভারতের হতো। আমি বলতে চাই যে ভারত যদি আসলেই জড়িত হয় তাহলে আমাদের সাহস নেই কেন সোজাসুজি তা বলার যখন আমাদের সব কটা সরকার বলে তাদের কাছে প্রমান ছিল? যখন জিজ্ঞাসা করা হয় তখন বলা হয় যে এটা জাতীয় স্বার্থের কারনে করা হয়না।

উই সাইট [4] এটাকে ঘোষণা করেছে যুদ্ধাবস্থার ইঙ্গিত হিসাবে:

“পাকিস্তানের দোরগোড়ায় যুদ্ধ অনেক আগে এসে পৌঁছেছে। এটা খুবি দূর্ভাগ্যজনক যে গতকাল পর্যন্ত, আমরা অনেকে এই বাস্তবতা মানি নি। এখন আর না। যখন যুদ্ধ আমাদের বাড়ীর মধ্যে ঢুকে পড়েছে আর এখন আমাদের বসার ঘর, শোয়ার ঘর, বাড়ীর পিছন আমাদের চার পাশে ঘিরে আছে তখন আর না বলা যায় না।

পাকিস্তানে হামলা করা হচ্ছে!”

প্রায় সব পাকিস্তানী ব্লগ এই সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে লিখেছে, সবকটা থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারলে ভাল হতো। যুগ যুগ ধরে, মানুষ পাকিস্তানকে দোষারোপ করছিল সন্ত্রাসবাদের জন্য। আসলে সন্ত্রাসবাদ থেকে আমরা সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদেরকে লক্ষ্য করা হয়েছে আর পরিশেষে নিরাপরাধ পাকিস্তানীরাই অস্বাভাবিক আর জঘন্য মৃত্যুর [5] কবলে পরে।