পাকিস্তানে আবার রক্তক্ষরণ

গতকাল হোটেল ম্যারিয়টের বাইরে একটি বিশাল বিস্ফোরণের ফলে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ কেঁপে উঠেছিল। স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে ১০০০ কেজি (১ টন) বিস্ফোরণ নিয়ে একটি ট্রাক ম্যারিয়ট হোটেলে প্রবেশ করে। চালক প্রথমে নিজেকে উড়িয়ে দেয় আর তারপর বিশাল এক বিস্ফোরণে ট্রাকটিও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এক বছরের কম সময়ে এই হোটেলে এটি দ্বিতীয় বোমা বিস্ফোরণ

চৌরঙ্গীতে ইয়াসির খান খবরটি দেন:

“বোমা বিস্ফোরণ ১০০ ফুট চওড়া আর ২০ ফুট গভীর একটা গর্ত তৈরি করে এবং তার আগুণ আর ধ্বংসজজ্ঞ চারিদিকে ছড়িয়ে পরে। বিস্ফোরণের মাত্রা এমন ছিল যে ৫০০ মিটার রেডিয়াসের মধ্যে সব বাড়ী কিছু না কিছু পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর পুরো ইসলামাবাদে এর শব্দ শোনা যায়।”

marriott
হোটেল ম্যারিয়ট জ্বলছে। ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা: শাদা-ই- শাহিদ

শাদা-ই- শাহিদশাহিদ জাভেদ রিপোর্ট করেছেন:

গোপন তথ্য ছিল যে গতকাল এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে যার জন্য সংসদ ভবন, চিফ মিনিস্টারের সেক্রেটারিয়াট আর প্রেসিডেন্সীতে জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। আত্মঘাতী বোমাবাজ বুঝতে পারে যে সে এইসব এলাকায় ঢুকতে পারবে না তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় ম্যারিয়ট হোটেলে বিস্ফোরণ ঘটানোর যেখানে শত শত পাকিস্তানী আর বিদেশীরা একত্র হয়েছিল ইফতারের জন্য।

সিএনএন এর কাছে এই সিসিটিভি ফুটেজ আছে (‘ট্রাক বোম্বিং ইন পাকিস্তান’ ভিডিওতে ক্লিক করেন) যেখানে দেখানো হচ্ছে যে অন্তত ৩ মিনিটের ব্যবধান ছিল প্রথম বিস্ফোরণ আর বিশাল বিস্ফোরণের মধ্যে। আসমা মির্জা আর আদিল নাজাম বিস্ফোরণের ছবি আর ভিডিও পোস্ট করেছেন অল থিংস পাকিস্তানে। তাদের ব্লগে পাকিস্তানে এই বছরের এরুপ বড় আক্রমনের তালিকাও দেয়া আছে।

পাক টি হাউসের হামিদ মির হামলার কিছু বিভৎস জিনিষ জানিয়েছেন:

“আমি ম্যারিয়ট হোটেলের খুব কাছে ছিলাম আর বিস্ফোরণের কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছাই। সে সময়ের মধ্যে ফ্রন্টিয়ার হাউস আর বালুচিস্থান হাউস থেকে কয়েকজন মাত্র পুলিশ কন্সটেবল এসে হোটেলের বাইরে আগা খান রোডে গাড়ীর পার্কে গাড়িতে বসে থাকা বিস্ফোরণের কারনে আহত/নিহত চালকদেরকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিল। রাস্তা সম্পূর্ণ অন্ধকার ছিল যেহেতু বিস্ফোরণের জোরে রাস্তার সব বাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।”

অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এখানে পড়ুন

টিথ মায়েস্ট্রো নিহতদের ব্যাপারে সর্বশেষ খবর দিচ্ছে আর জানাচ্ছে যে পাকিস্তানে চেক রাষ্ট্রদূত নিহতদের মধ্যে ছিলেন:

izo zdarek(পাকিস্তানে চেক রাষ্ট্রদূত ইভো দারেক। ছবির জন্যে কৃতজ্ঞতা: টিথ মায়েস্ট্রো)
সংবাদে জানা যাচ্ছে যে মৃতের সংখ্যা ৬০ এর কাছাকাছি আর আহত ২০০ জনের বেশী হবে। দু:খজনক হলো যে এর মধ্যে কয়েকজন বিদেশী আছে আর সব থেকে উচ্চপদস্থ যিনি নিহত হয়েছেন তিনি হলেন পাকিস্তানে চেক রাষ্ট্রদূত ইভো দারেক আর তার ভিয়েতনামী সঙ্গী এখনো নিখোঁজ। রাষ্ট্রদূত দারেক পাকিস্তানে একমাস আগে এসে এই হোটেলে অবস্থান করছিলেন।

টিথ মায়েস্ট্রো আরো জানিয়েছেন যে এই বিস্ফোরণ সাধারণ কোন দৈব আক্রমন না বরং নতুন প্রেসিডেন্টকে হত্যার সম্ভাব্য চেষ্টা হতে পারে:

পাকিস্তানী দৈনিক দ্যা নিউজ জানচ্ছে যে সেপ্টেম্বর ২০ তারিখে হোটেলে যখন বোমা মারা হয় তখন পাকিস্তানের জাতীয় এসেম্বলীর স্পিকার ফেহমিদা মির্জা প্রেসিডেন্ট আসিফ আল জারদারির সম্মাণে ম্যারিয়ট হোটেল ইসলামাবাদে একটি ইফতার পার্টি দিয়েছিলেন। জারদারি নৈশভোজে ছিলেন না, কিন্তু জানানো হয়েছে যে অন্য গুরুত্বপূর্ণ লোক ছিল, নাম না দিয়ে।

এই ব্লগ দোষারোপের খেলা নিয়েও মন্তব্য করেছে:

সব দিক দিয়ে বিবেচনা করে এই আক্রমণের দোষ যে কোন সন্ত্রাসী দলের উপর দেয়া যায়, কেউ হয়ত উপায় খুঁজে পাচ্ছে তালেবানদের বৃদ্ধির দিকে আঙ্গুল তুলে দেখাতে, কেউ কেউ তপ্ত রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতাকে দোষ দিচ্ছে আর কেউ মনে করছে যে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার হাত এতে থাকতে পারে। কারন যাই হোক পাকিস্তানকেই ভুগতে হচ্ছে।

জাহানে রুমির রাজা রুমি খুবই ক্ষিপ্ত:

কি জিহাদ, কি ইসলাম আর কি ধরনের মুসলিম এই কসাইরা- নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করে, ইসলামাবাদের অভিজাত হোটেলের বাইরের গরিব শ্রেণীকে মেরে তারা মনে করছে যে কোন উদ্দেশ্য সফল করলো।

চুপ! কিছু উপযোগী প্রশ্ন করেছে:

ম্যারিয়টের বিস্ফোরণকে ‘পাকিস্থানে ৯/১১’ নাম দেয়া হয়েছে। এটা কি পরিশেষে একটা স্বীকারোক্তি যে পাকিস্তান একটা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে যা থেকে তারা ‘এটি আমেরিকার যুদ্ধ’ বলে রেহাই পেতে পারবে না?

প্রেসিডেন্ট জারদারীর নিউ ইয়র্ক যাওয়ার প্রাক্কালে, এই বিস্ফোরণ মনে করিয়ে দেয় যে পাকিস্তান সরকার একটা যুদ্ধের হারার প্রান্তে যা পাকিস্তান সমাজের অস্তিত্বকে নাড়া দিচ্ছে।

এইসব দু:খজনক ঘটনার জন্য আমাদের সমাজ, সরকার আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আত্মপ্রসাদ দায়ী। হতে পারে যে একা কোন জঙ্গী ট্রিগার টেনেছে, কিন্তু শেষ পযন্ত সমাজ আর রাষ্ট্র একসাথে জঙ্গীদেরকে এই ক্ষমতা দিয়েছে যার ফলে একটা শহরকে হাঁটু গেড়ে বসাতে পারে তারা।

আমেরিকা সীমান্ত লঙ্ঘণ করে পাকিস্তানের ভৌগোলিক স্বাধীনতা হয়ত খর্ব করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাহলে কোন স্বাধীনতার কথা তারা বলছে? ফ্রন্টিয়ার প্রভিন্স আর বালুচিস্তান সারা বিশ্বের চরমপন্থীদের পছন্দের ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। কেন সরকার আর জনগণ পাকিস্তানের স্বাধীনতার ব্যাপারে অস্ত্র ধরছে না যখন চরমপন্থীরা তা খর্ব করছে?

আমাদের সরকারকে কে জবাবদিহী করতে বলবে?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .