একজন শিল্পী, পোগ্রামার এবং প্রযুক্তি অন্বেষক, গিলাদ লোটান ২০০৭ এর মে থেকে হিব্রু ব্লগস্ফিয়ারের নিত্যনৈমিত্তিক আভ্যন্তরীণ সংবাদ গ্লোবালভয়েসের পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করে যাচ্ছেন, যেখানে ইজরায়েল প্রসংগের যুক্তিতর্ক চরম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং ইজরাইল-প্যালেস্টাইন কোন্দল নিয়ে আবেগের চূড়ান্ত অবস্থান অনুভূত হয়। ত্রিশ বছরের এই মানুষটি কিভাবে এই কাজ করে থাকেন? তুলে ধরা বিষয়গুলো তিনি কিভাবে নির্বাচন করেন এবং কেনই বা করেন? এবং আর কি কি রয়েছে তার আগ্রহের বিষয়? ইত্যাদি জানার জন্য চলুন আমরা গিলাদকে নিচের প্রশ্নগুলি করিঃ
কতদিন যাবত ব্লগিং করছেন এবং গ্লোবালভয়েসঅনলাইনে কেন যোগ দিয়েছিলেন?
২০০৫ সাল থেকে আমি ব্লগিং করছি। প্রথমদিকে আমার প্রকল্পগুলো ও স্কুলের পাঠ্য সংরক্ষণের জন্য ব্লগকে ব্যবহার করতাম। কিন্তু যে কারণে লেখালেখিতে ঢোকা তা হচ্ছে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির আইটিপিতে করা আমার স্নাতকোত্তরের অভিসন্দর্ভ। ইনডিজি-নেট নামে একটা প্রকল্প তৈরীতে কাজ করেছিলাম যা ভ্রমণকারীদের বিশ্বব্যাপী স্থানীয় নানাবিধ উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত ও অংশগ্রহণ করতে সাহায্য করবে। এই ধারণাটি এখনও প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে রয়েছে যা আমি সত্যিই লালন করি। ভ্রমণ করো বিশ্বব্যাপী, কাজ করো স্থানানুসারে এই হচ্ছে এর মোদ্দাকথা এবং এর উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে সচারচর শোনা যায় না এমন স্থানীয় সংবাদকে তুলে আনা। বড় সুযোগটা ছিল ব্যাকপ্যাকার্সের ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করা যারা ক্যামেরা ও ফোনে সজ্জিত হয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল ভ্রমণ করে থাকে। এইসব অঞ্চল থেকে সংগৃহিত তথ্য ধারাবাহিকভাবে সমৃদ্ধ করার একটা পদ্ধতি হিসাবে এটা কল্পনা করা হয়েছিলো। এমন সময় আমার স্কুলের উপদেষ্টা পরিচয় করিয়ে দেন ইথান জুকারম্যানের সাথে। পরবর্তীতে যার মাধ্যমে পরিচয় হয় ডেভিড সাসাকির সাথে – যিনি জিভিওর জন্য হিব্রু ভাষার দায়িত্ব নেবার পরামর্শ দেন।
প্রথমত, লেখালেখির ধারণা নিজের কাছে সমস্যাজনক মনে হতো, কিন্তু যখন আমি ঢুকে পড়লাম, বুঝতে পারলাম ব্লগিং এ সম্পৃক্ত হতে দুই স্তরের অংশগ্রহণ পদ্ধতি আছে। একটা সফল প্রকল্প বা এপ্লিকেশনের মতই একজন ব্লগারের কিছু অভ্যন্তরীণ সুবিধা রয়েছে। প্রকল্পের প্রমাণপত্র, প্রযুক্তিগত অনুমান এবং কল্পিত বিষয় ও ধারণার মধ্যে থেকে উদ্ভূত নতুন চিন্তা-ভাবনাগুলো নিজের জন্য সংরক্ষণ করতে পারি। এছাড়া আলোচনায় অংশ নিতেও লিখে থাকি। পছন্দনীয় কোন বিষয়ে ব্যক্তিগত অভিমত জুরে দেয়া গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে, কেবল গুটিকতেক বন্ধুই পড়ুক না কেন।
জিভিওতে আপনার কাজের আবশ্যকতা কি?
জিভিওর চমৎকার কমিউনিটিতে অন্তর্ভুক্তির পর থেকে এর অনন্যসাধারণ গুরুত্বের কথা অনুধাবন করতে শুরু করি। বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষের নিকট থেকে স্থানীয় ঘটনা জানা খুবই দুরূহ কর্ম। প্রত্যেকেই তার কাজের বিষয়ে এত নিবেদিত যে মুগ্ধ হতে হয়। বিশ্বব্যাপী সংবাদ পরিবেশনযোগ্য ঘটনার স্বতন্ত্র অবস্থান চিহ্নিত করে জিভিও অত্যন্ত শক্তিশালী পোর্টাল হিসাবে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরী করেছে।
যদিও ইজরায়েল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী প্রধান প্রধান প্রচারমাধ্যমগুলোতে কভারেজ পেয়ে থাকে, তারপরেও আমি জানি যে বেশীরভাগ মানুষ এই অঃনিশেষযোগ্য ইজরাইল-প্যালেস্টাইন সংঘর্ষ বোঝার চেষ্টা বাদ দিয়েছে। অনেক মানুষের দৃষ্টিতেই ইজরাইল হচ্ছে যুদ্ধ, বোমা আর চলমান সংঘর্ষের স্থান। তবে সত্য যে বিগত দিনগুলোতে অনেক সংঘর্ষই ভীষণভাবে দেশটির ক্ষতি করেছে। কিন্তু এছাড়াও আরো অনেক বিষয় রয়েছে যার কিছুতো ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণও বটে অথচ বৃহৎ সংঘর্ষের আড়ালে চাপা পড়ে যায়। জনগণ বুঝতে পারে না অভ্যন্তরীণ কোন কোন আন্দোলন ইজরাইলী সমাজে বিস্তৃতি লাভ করছে। এমন কিছু বিষয়ের মধ্যে আছে ইজরাইলীদের আত্মপরিচয়ের ব্যাখ্যা, গোড়াবিশ্বাসী ও ধর্মনিরপেক্ষদের কোন্দল, স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ভিন্নতা এবং অভিভাষণ আইন। আরো আছে নানাবিধ সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গ যাদের মধ্যে নাম করা যায় বেদুইন, ড্রুজ এবং ইজরাইলী আরবদের।
গ্লোবাল ভয়েস কমিউনিটির অংশ হবার দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে নিঃসন্দেহে ইয়াজান বাদরানের সাথে অদ্ভুত চুলের প্রতিযোগীতায় অবতীর্ণ হওয়া। যদিও আমি আরো কিছু পথ পেয়ে গেছি…..
হিব্রু ব্লগস্ফিয়ার সন্বন্ধে আপনার ধারণা কি? এর বিশেষত্ব কি?
হিব্রু ব্লগস্ফিয়ারে নানাবিধ ইজরাইলী বৈশিষ্ট্য বিবর্ধন লাভ করতে দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে যাই। যখন আপনি তেলআবিবের রাস্তায় হাঁটবেন দেখবেন মানুষজন কোলাহলমুখর, অতিরিক্ত মাত্রায় বাচাল এবং বেশ সামাজিক। লজ্জাপ্রকাশ এখানে অপরিচিত ধারণা। হিব্রু পোস্ট ঘেটে প্রতিক্রিয়াশীল মানুষের বহর দেখে অভিভূত। এরা একে অপরের পোস্টে প্রচুর মন্তব্য করে এবং অনেকে কমিউনিটি কর্তৃক নির্বাচিত “দিনের নির্বাচিত বিষয়ে” জোরালো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে থাকে। হিব্রু সংবাদের সাইটগুলোর প্রতিবেদনগুলোতেও প্রচুর মন্তব্য হয়। অনেকেই কেবল মাত্র মন্তব্যগুলো পড়ে থাকে যেহেতু সেখানে উত্তপ্ত আলোচনা সংগঠিত হয় এবং বৈচিত্রময় ভিন্ন বিষয়ও উঠে আসে।
এর আরেকটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কেন্দ্রমুখী অত্যধিক জনপ্রিয় ব্লগিং পোর্টালগুলো। ব্যবহারকারীরা নিয়মিত পোস্ট লিখে থাকে এবং সমৃদ্ধ করে থাকে ইজরাব্লগ, টাপুজ অথবা ক্যাফে.দিমার্কার নামের পোর্টালগুলোর মধ্যে। আলোচনায় উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়ে বেশ শক্তিশালী একটা কমিউনিটির ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে সাইটগুলোর কর্তৃপক্ষও যথাযথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইজরাইলী সমাজের এটা হচ্ছে একটা আদর্শ প্রতিচ্ছবি – হিব্রি অথবা গ্যাং এর বাইরে উঠে একটা উৎসাহব্যঞ্জক আলোচনার জায়গা তৈরী হয়েছে। প্রায়শই শোনা যায় কেউ না কেউ বলে থাকে, যে কোন ইজরাইলীর সবসময় কিছু বলার থাকে। অনলাইনে যার প্রমান পাওয়া যায়।
আপনার পোস্টের অনুবাদ এবং বিষয় নির্বাচনের জন্য কোন বিশেষ দিকগুলোর দিকে নজর দেন? নির্বাচিত বিষয়গুলোর উপর আপনার ধারণা ও উপলব্ধি প্রভাব ফেলে?
সবাইকে সন্তুষ্ঠ করা কঠিন। আমার বেশীর ভাগ পোস্ট কমপক্ষে একজনের উত্তপ্ত মন্তব্যে শেষ হয়। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘর্ষ বিষয়ক বেশীরভাগ বিষয় এত বেশী স্পর্শকাতর যে দুইপক্ষই আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রধান প্রচারমাধ্যমগুলোর নজর এড়িয়ে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়ের উপরে হিব্রু মতামত তুলে ধরা। অনেক সময়ই এটা একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ যার জন্য প্রয়োজন প্রচুর সময় ধরে পোস্টে বিচরণ ও খনন করা। বিশেষত উগ্রপন্থী বক্তব্য সম্পর্কে আমি ভীষণ সতর্ক যা আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি জিভিওতে স্থান পাওয়া উচিত নয়।
ব্লগিং ছাড়া অন্য কি কাজের সাথে আপনি সম্পৃক্ত?
আমি নতুন মিডিয়া হ্যাকার বা চিত্রশিল্পী এবং আমার কাজ হচ্ছে প্রযুক্তি ও শিল্পের মধ্যে সমন্বয় সাধন। স্ক্রিন নির্ভর উপস্থাপনা এবং নেটওয়ার্কের অবকাঠামো নির্মাণ করে থাকি। আমার বেশীরভাগ প্রকল্পের সাথে অন্যতম সংযুক্ত বিষয় হচ্ছে সংবাদ। সংবাদ পঠনে পাঠকের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় নিয়ে আমি গবেষণা করি। কখনও আবেগীয় সম্পর্ক বৃদ্ধি করে আবার কখনও একটা স্মরণীয় মুহূর্তের রূপ প্রদান করে যেন শেষপর্যন্ত কিছু পাঠকের মধ্যে অবশিষ্ট থাকে। তিব্বতীয় প্রার্থনা চাকার দ্বারা উৎসাহিত হয়ে গত বছর আমি নিউজ হুইলস ইনস্টলাশেন তৈরী করেছি। একটা চাকা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে একটা মহাদেশ থেকে সংগৃহিত সংবাদ-চিত্র । এজন্য একটা কাস্টম সফটওয়ারও বানিয়েছি যা প্রদর্শনের জায়গায় এইসমস্ত চিত্রাবলী তুলে ধরে এবং চাকার ঘূর্ণন ও গতিতে সেগুলো সচল হয়ে ওঠে। প্রদর্শনী থেকে সরে গেলে এ মুহূর্তের বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহের একটা অনুভূমিক চিত্র দর্শকদের প্রদর্শন করবে। আফ্রিকা থেকে আগত সংবাদের সাথে সেখানের চিত্রসমূহ দেখা রোমাঞ্চকর বটে। তদ্রুপ উত্তর আমেরিকার ক্ষেত্রেও।
এছাড়া কিবোর্ড-মাউস-স্ক্রিনের বাইরে সম্পর্কগুলো তুলে আনতে আমি কাজ করতে পছন্দ করি। এই পাগলাটে বস্তুটি ইমপালস নামে পরিচিত – একটা হৃদকম্প বিনিময়ের যন্ত্র। সৌহৃদ্য ও উপস্থিতি অন্বেষণে এটা কাজ করে। ইমপালস পডের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা দূরবর্তী স্থানের সাথে হৃদকম্প বিনিময় করতে পারে। এই প্রকল্পের পেছনে উদ্দেশ্য ছিল একটা অভ্যন্তরীণ নিজস্ব পদ্ধতির উদ্ভাবন এবং পরবর্তীতে বিনিময়ের মাধ্যমে দেয়ালের বিভিন্ন পাশের মানুষের মধ্যে আবেগঘন মুহূর্ত তেরী করে সংযোগ স্থাপন করা যেন তা যেকোন অবকাঠামোগত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়। কারণ দুঃখজনকভাবে আমাদের চারপাশে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশী দেয়াল বিদ্যমান।
আপনার যেকোন একটা আগ্রহের কথা বলুন।
আমি ভ্রমণ করতে ভালবাসি এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে থাকার সৌভাগ্য লাভ করেছি। আমার জীবনের তৃতীয়াংশ কেটেছে পূর্ব এশিয়ায়, সিংগাপুর, তাইওয়ান এবং অতি সম্প্রতি হংকং বসসাব করে। ওই অঞ্চলের বেশীরভাগ দেশ ভ্রমণ করেছি এবং ভালবাসি নিজেকে নতুন সংস্কৃতি, ভাস্কর্য ও খাদ্যের মধ্যে নিমজ্জিত করতে। আমি একজন উৎসুক আলোকচিত্রী, এবং নিয়মিত আমার ফ্লিকর একাউন্ট সমৃদ্ধ করে থাকি (সম্প্রতি খুব বেশী ভ্রমণ করি নি, যদিও…)