প্রায়ই যেখানে বলা হয় যে নারীদের দাবিয়ে রাখার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করা হয়, অনেক মহিলা আছে যারা তাদের বিশ্বাস থেকে ক্ষমতার স্বাদ পায়। এই লেখায় আমরা একজন সৌদি ব্লগার এর কাছ থেকে শুনব যে বলেছে যে সে মনে করে সে জানে কেন অনেক মহিলা বিবাহের পরে ধর্মের দিকে ঝুকে যায়, আর একজন ব্লগার ব্যাখ্যা করে যে সে তার সহকর্মীর কাছ থেকে কি অনুপ্রেরণা পেয়েছে।
আয়েশা আল্কুসায়ের, যিনি ইন দ্যা মেকিং এ ব্লগ করেন, একটি তত্ত্বে বলছেন যে সৌদি মহিলারা বিয়ের পর কেন আরো বেশী ধর্মীয় হয়ে ওঠে। তিনি শুরি করেছেন তার দেখা বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের ধরন সম্পর্কে ব্যাখ্যা করে:
আমার বন্ধু ‘ওয়াই’ বিবাহিত। তার স্বামী চায় রিয়াদে সে
আবায়া আর মুখে কাপড় দিয়ে সম্পূর্ণ ঢেকে চলবে, আর
দাহরানে [সৌদি আরবের পূর্বের কম গোড়া অংগরাজ্য] অর্ধেক ঢেকে চলবে। তার মুখ ‘এ’ আর ‘বি’ বন্ধুর কাছে দেখানো যাবে কিন্তু ‘সি’ এর সামনে না। ভ্রমণের সময় সে চায় বউ সম্পূর্ণ খোলামেলা ঘুরুক, যদি আত্মীয় সংগে না থাকে। তার স্বামী চায় সে তার শশুর বাড়ীর লোকের সামনে রক্ষণশীল পোশাক পরুক (যেমন লম্বা স্কার্ট), কিন্তু ‘এ’ ‘বি’ বা ‘সি’ বন্ধুর পরিবারের সামনে প্যান্ট বা অরক্ষণশীল পোশাক পরবে। বাড়ীর বাইরে স্বামী চায়না যে সে কোন মেক আপ করুক, কিন্তু ঘরের ভিতরে সম্পূর্ণ সেজে থাকবে। সে তার জীবনের প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি ঠিক করে রেখেছে তার জন্য। সৌদি আরবের অনেক মহিলার থেকে আমার বন্ধুর বিবাহিত জীবন খুব একটা অভিনব না, আর আমি এখানে ঢাকা না ঢাকার কথা বলছি না, আমি কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলছি… এত ছোট খাটো জিনিষ নিয়ন্ত্রণ করা সাধারণভাবে খারাপ বলা হয় না বরং প্রায়ই এটাকে দায়িত্বশীল লালন পালনের নিদর্শন হিসেবে ধরা হয় – হ্যা, স্ত্রীকেও বাবা মার মতো লালন পালন। স্বামী-স্ত্রীর এই সম্পর্কের সাথে কোন কোন স্ত্রীরা খাপ খাইয়ে নেয় – কিন্তু সম্পর্কের মধুরতা অদৃশ্য হয়ে গেলে অনেক মহিলা নিজেকে স্বামীর সমকক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখে আর নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সংবেদনশীল হয়ে পড়ে।
আয়েশা এর পরে কি ধরনের পরিবর্তন হয় তা ব্যাখ্যা করেছে:
রিয়াদে আসার পর থেকে যে সব মহিলা হঠাৎ করে ধার্মিক হয়েছে তাদের একটা ধরন দেখছি, কেউ কেউ কারো বাড়ীতে মেহমান হওয়া থেকে পরিবর্তিত হয়ে কোন গৃহসমাবেশের প্রধান হয়ে বসে তার সঙ্গীদের কাছে আল্লাহ, রসূল আর
সাহাবাদের কথা বলার মানুষে পরিণত হয়। এইসব মহিলা আলাদা কোরান তেলাওয়াত কেন্দ্র স্থাপন করে। এদের সাথে আকস্মিক আঘাতপূর্ণ বা বিষ্ময়কর কিছু হয় নি, তারা ভালোবাসার কাউকে হারায়নি কোন দুর্ঘটনায় বা কোন মানসিক আঘাতের ভিতর দিয়ে যায়নি। তাহলে কি হয়েছে যা এই বিশাল চারিত্রিক আর ব্যবহারিক পরিবর্তন এনেছে?
এই পরিবর্তনে অবশ্য অনেক কিছুই অবদান রাখতে পারে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি পরিবর্তনের যে ফল তার থেকেই বোঝা যায় কি কারনে এটা ঘটেছে। যেসব মহিলা ধার্মিক হওয়ার ফলে ক্ষমতা, নেতৃত্ব আর খ্যাতি পেয়েছে কিছু দিন অপাংতেয় থাকার পর, হয়তো এই তার এই ক্ষমতার অভাব ছিল ও তার জন্য প্রবলভাবে মুখিয়ে ছিল। আর ইশ্বরকে নিজের দিকে পেয়ে, এই মহিলারা অবশেষে তাদের স্বামী, সন্তান আর বৃহত্তর সমাজের উপরে কথা বলতে পেরেছে। যে সমাজ তাদের কথা আগে খুব বেশী শুনতো না এখন তাদেরকে এরা চুপ করাতে পারে।
ইমান কে নামক সৌদি ব্লগার যে দ্যা সৌদি সোয়ান ব্লগে লিখেন তার সহকর্মীর কাছ থেকে শেখা একটা বিষয় তুলে ধরেছেন:
প্রথম থেকেই সে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। যেভাবে সে প্রার্থনা করে তা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আমরা যেখানে তাড়াতাড়ি প্রার্থনা শেষ করতাম যেন আমাদের খুব জরুরী কিছু করতে হবে, সে নিষ্ঠার সাথে সময় নিয়ে প্রার্থনা করতো। আর আমরা যেখানে উদ্দেশ্যহীনভাবে গল্প করে কালক্ষেপন করতাম, সে তার কোরান বের করে পড়া শুরু করতো, চারপাশের শব্দকে গ্রাহ্য না করে। পুরুষ সম্পর্কে তার খারাপ ধারনা ছিল, আমাদের বেশীরভাগের মতো, কিন্তু মাঝে মাঝে তার দৃষ্টিকোন চরমপন্থীর মত হতো। সে আমাদেরকে ভালোবাসার গান শুনতে নিষেধ করতো যেহেতু এটা তরুনদের মধ্যে অবাস্তব ভালোবাসা জাগিয়ে তোলে। “কখনো এই জন্জাল বিশ্বাস করো না। এই ভালোবাসার অস্তিত্ব নেই।” “আমার জীবন থেকে রোমান্স গায়েব হয়ে গেছে,” মাঝে মাঝে হেসে সে বলতো, বিশেষ করে আমাদেরকে বিয়ের কথা বলতে শুনলে।
ইমান জানতে পারে যে এই মহিলা তালাকপ্রাপ্ত আর তার মানিয়ে নিতে পারার সফলতায় সে অনুপ্রাণিত হয়েছে:
দীর্ঘ লড়াই এর পর সে তার তালাক জিতেছে আর তাও একজন অকৃতজ্ঞ স্বামীর হাতে ভয়ঙ্করভাবে নির্যাতিত হওয়ার পর। সেটা তার জন্য একটা কঠিন সময় ছিল বিশেষ করে যেহেতু এই সময় তার মার মৃত্যুর হয়। এই লড়াই এ সে অনেক কিছু হারিয়েছে। কিন্তু তার ভেতরের একটা জিনিষ খুবই শক্ত ছিল। তার আত্মা। সে তখন তার অবসর সময় কাজে লাগায় পিএইচডির জন্য কঠোরভাবে পড়াশোনা শুরু করে, যা তার তালাকের দুই বছর পর সে অর্জন করে। কিন্তু এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইশ্বরের সাথে তার সম্পর্ক যা এই সময়ে একটা বিরাট পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে যায়। আর অন্যান্য মহিলাদের মতো মানুষের কাছে লাগামহীন অভিযোগ না করে, সে তার কষ্ট আর হতাশার কথা ইশ্বরকে জানাতো। কিছু দিন পরে আমি তার মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখি। আগের থেকে তাকে আমার এখন বেশী খুশি মনে হয়। তখন আমি জানতে পারলাম যে সে আবার বিয়ে করছে। কিন্তু এবার তার আগের স্বামীর চেয়ে অনেক ভালো একজনকে। তাছাড়া পশ্চিমে সে সম্মানজনক পদে আছে। কলেজে তার শেষ দিনে আমরা বড় একটা পার্টি দিয়েছিলাম তার জন্য। সে সেদিন এতো খুশী ছিল যেন অতীতের সব যন্ত্রণা সে কবর দিয়ে নতুন একটা পৃথিবীর দিকে সে প্রথম যাত্রা করছে। এটা সত্যি যে সে সৌদি আরব একেবারের মত ছেড়ে গেছে, কিন্তু সে পেছনে একটা ভালো শিক্ষা রেখে গেছে। ধৈর্যের শিক্ষা, ইশ্বরে আস্থা রাখা আর আমাদের যা আছে তার সর্বত্র ব্যবহার করা।