জর্জিয়া, রাশিয়া: তিবলিসি থেকে রিপোর্ট

দক্ষিণ ওসেটিয়া সংকটের বিস্তারিত ও তাজা খবরের জন্যে গ্লোবাল ভয়েসেস বিশেষ কাভারেজ পাতা দেখুন।

নীচে তিবলিসি, জর্জিয়াতে থেকে কয়েকজন ব্লগারের লেখা থেকে উদ্ধৃতি আছে:

লাইফ জার্নাল (এল জে) ব্যবহারকারী মেরিয়েন গত ১১ আর ১২ আগস্টে তিবলিসি থেকে এটা লিখেছেন:

আগস্ট ১১, ২০০৮ – সকাল ১০.৪৬:

আজ সকাল ৬টায় মারিনা ফোন করেছিল, ভয়ে প্রায় অর্ধমৃত হয়ে: একটা বিষ্ফোরন হয়েছে, আর গ্লাদানিতে তাদের বাড়ীর জানালা প্রায় ভেঙ্গে গিয়েছে। দেখা গেল যে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যে রাডার তাতে বোমা মারা হয়েছে।

গতকাল বাতুমির একটা শহরতলী খেলভাচাউরিতে বোমা মারা হয়েছে, সান্দ্রো সেখানে তার দাদা দাদীর সাথে আছে কারন গ্রামে আমার বাবা মার কাছে সে যেতে চায় নি।

[একটা পার্কে ] খাতুনা আর আমি বাচ্চাদের সাথে হাঁটছিলাম, এটা প্রায় ফাঁকা, আর আমরা তাদেরকে ম্যাকডোনাল্ডস এ নিয়ে গেলাম – শান্তির সময় যা নিষিদ্ধ ছিল.. যুদ্ধের সময় কি আকর্ষনীয় মনে হয়।

গতকাল দলে দলে লোক শহরে হাতে পতাকা নিয়ে ঘুরছিল, ‘সাকারতভেলো’ বলে – মিশকা বুঝতে পারেনি যে কি হচ্ছে।

– এখন যুদ্ধ চলছে, আর আমাদেরকে বোমা মারা হচ্ছে, আর এরা দাবী করছে এসব থামানোর।
– আর কারা বোমা মারছে? – মিশকা দ্য অ্যান্ট জানতে চাইল [বিষ্ময়ে বড় বড় চোখে তাকিয়ে]।

আমি তাকে বলিনি কে আমাদের বোমা মারছে।

ওরা নিজেদের উপর ওই বোমা ফেলুক, আমি ওদেরকে ঘৃণা করি – মিশকা খুব কৌতুকপূর্ণভাবে রেগে গেল।

এক সপ্তাহ আগে আমরা মিস্টি কোন সাধারণ ব্যাপার নিয়ে কথা বলছিলাম- কোথায় তারা ফ্রেঞ্চ ম্যানিকিউর ভালো করে, আর কোথায় আমি সাঁতারের পোশাক রেখেছি, আর কি করে স্বামীকে তার ভিজা টাওয়েল দড়িতে শোকাতে শেখানো যায়।

এখান আমরা আমাদের মাথা ভাংছি [বোঝার চেষ্টা করে] কি করে বাতুমিতে বাচ্চাদের নিয়ে গুলি না খেয়ে যাওয়া যায়, কোথায় আশ্রয় নেয়ার নিরাপদ জায়গা আছে, কে কি বলেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে, এটি সত্যি কিনা যে পতি শহরে মানুষ মারা গেছে…

কোন আতঙ্ক নেই… প্রথম দিন হতবিহ্বল ছিল সবাই, আর তারপর মনে হলো এই ভাবে আমরা একশো বছর ধরে আছি। দলে দলে লোক রক্ত দান করছে। আমরা জানতাম যে এমনি হবে।

আমরা কোথাও জাচ্ছি না। [কারন] তারা অপেক্ষা করছে আমাদের সবার চলে যাওয়ার জন্য।

***

আগস্ট ১১, ২০০৮, সকাল ১১.৫৪

[…]কোন ধরনের রাশিয়া ভীতি নেই- আমি একাধিকবার বলেছি যে আমাদের খুব পরিষ্কার ধারণা আছে রাশিয়া রাষ্ট্রের সীমানা আর লোকদের মধ্যকার সম্পর্কের মধ্যে।[…]

আমি একটা ব্যাগ তৈরি করে রাখবো, যদি লাগে – গরম কাপড়, পানি, কাগজপত্র। শরণার্থীরা আমাদের তাই শিক্ষা দিয়েছে- অন্য কিছুর মূল্য নেই।

যদিও এটা পরিষ্কার না যে আমরা কোথায় যেতে বাধ্য হবো- আমার দেশের কোন একটা জায়গা নেই যা সাহসী ফাইটার জেট এর নাগালের বাইরে।

তারা আবার গোরিতে বোমা ফেলেছে। কাখেতিয়াতেও বোমা ফেলেছে।

জর্জিয়ার কিছু সাইট হ্যাক করে ধ্বংস করা হয়েছে, রাশিয়ার সাইটে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই, তাই লাইভ জার্নাল পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের আমার একমাত্র মাধ্যম।

***

আগস্ট ১১, ২০০৮, সন্ধ্যা ৭.০০

আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখনো বাইরে না যাওয়ার কারন এটা বিপদজনক। বাড়ীতে দেয়াল সাহায্য করে (গুলি থেকে সুরক্ষিত রাখতে)…

যা আপনার আছে তার মূল্য বুঝুন। আপনি যে সুস্থ্য আর জীবিত আছেন তার মূল্য বুঝুন, আপনি যে সংবাদের বদলে একটা চলচ্চিত্র দেখতে পারছেন, যে আপনি টিকিট কিনে যে কোন পছন্দের জায়গায় যেতে পারছেন…

***

আগস্ট ১২,২০০৮, সকাল ০১.৩৮

কাল সকালে কি হবে আমি জানি না। হয়তো শহরে ট্যাঙ্ক ঢুকবে। আমার ছোট ছেলে মিশকা ঘুমাচ্ছে, সে ঘুরে ঘুরে জিজ্ঞেস করছিল তারা বাতুমিতে বোমা ফেলেনি তো, নাকি ফেলছে? সে তার ভাই এর অভাব বোধ করে। গতকাল তাকে বলা উচিত হয় নি। কিন্তু এইভাবে সে অন্তত প্রস্তুত থাকবে।

সারকোজীকে নিয়ে সব আশা, হয়তো সে তাদের বোঝাতে পারবে- কিন্তু এটা সম্ভবপর মনে হয়না, কেউ এখন পিছিয়ে যাবে না- তারা আমাদের খেয়ে ফেলবে।

তিবলিসিতে থাকা এলজে ব্যবহারকারী ডিজেভিরপাসো আগস্ট ১১ তারিখে লিখেছে:

আমি এখনি জর্জিয়াতে ইউক্রেনের কন্সালকে ফোন করেছিলাম, তাকে আমি ভালো করে চিনি। তিনি বললেন যে তার পরিবারসহ (স্ত্রী আর দুই বাচ্চা) এখানে আছেন। তিনি বললেন যে যারা যাওয়ার তারা যাচ্ছে, কিন্তু আমাকে সান্তনা দিলেন যে পরিস্থিতি ঠিক আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম যে তার কি মনে হয় চলে যাওয়া উচিত কিনা, আর তিনি বললেন যে এই পর্যায়ে দরকার নেই, সব কিছু ঠিক আছে আর শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে। যদি কিছু হয় তাহলে উনি আমাকে অবশ্যই ফোন করবেন।

এল জে ব্যবহারকারী ওলেগ_ পানফিলোভ আজকে রাতে তিবলিসির পরিস্থিতি জানিয়েছেন:

আমি এখনি শহরে ঘুরে এলাম – সব কিছু চুপচাপ আর শান্ত। মানুষ ফোনে পরিস্থিতি আলোচনা করছে আর তাই গত দুই তিন ঘন্টায় বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। কেউ কেউ পাচ্ছে [আমার নম্বর] , জিজ্ঞেস করছে কি করবে, আর তারপর ফোন আবার চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে।

আতঙ্ক অবশ্যই আছে, কিন্তু এখন তা শুধু কথা আর আলোচনায়। যদিও কেউ কেউ চলে গেছে- বিশেষ করে পূর্ব জর্জিয়ায়, আজারবাইজানের দিকে।

আমি এই চিন্তা বাদ দিতে পারছি না যে এরা দখলকারী সেনাদের ফুল আর মদ দিয়ে অভ্যর্থণা জানাতে চাচ্ছে না- যদিও তাদের জন্য এমন একটা চেষ্টা করা হচ্ছে, সাকাশভিলির পালানোর জন্য সব ধরনের দাবী…

আর একটা লেখায় ওলেগ_পানফিলোভ যোগ করেছেন:

কালকে অনেক রাজনীতি হবে।

লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম যে জর্জিয়ার পরারষ্ট্র বিষয়ক ডেপুটি মন্ত্রী একা গুলাডজে আমাকে নিশ্চিত জানিয়েছেন যে আগামীকাল দুপুরে লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া, পোল্যান্ড আর ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতিরা তিব্লিসিতে আসবেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .