আরবদেশ: মাহমুদ দারভিশের জন্যে শোকগাথা

ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারভিশ আজ (৯ই আগস্ট, ২০০৮) মারা গেছেন তাই বিশ্বব্যাপী আরব ব্লগাররা শোক পালন করছে। তার মৃত্যু সরকারীভাবে ঘোষণার আগেই আরবী ও ইংরেজী ভাষায় প্রচুর পোস্ট লেখা হয়েছে।

মাহমুদ দারভিশএই পুরস্কার প্রাপ্ত কবি, যার রচনা ২২টি ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে, সবার কাছে পরিচিত ফিলিস্তিনি জনগণের দু:খ দুর্দশার উপর লেখা তার কবিতাগুলোর জন্যে। তার কবিতায় উঠে এসেছে ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমির জন্যে হাহাকার এবং বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সংঘাতের কথা। তিনি ঐতিহাসিক প্যালেস্টাইনে জন্মগ্রহণ করেছেন যা বর্তমানকালের ইজরায়েল। তিনি ৩০টি কবিতার বই এবং ৮টি গদ্যের বইয়ের সাথে লাখো পাঠককে রেখে গেছেন। 

জেরুজালেম থেকে দ্যা আনট্রুথ ব্লগের মারিয়ান হুক বলছেন দারভিশের মৃত্যুর সংবাদ যেন:

আজকের সবচেয়ে প্রধান সংবাদ। অলিম্পিকস কিংবা জন এডওয়ার্ডসের কেলেন্কারী নয়।

তিনি আরও বলছেন দারভিশের কবিতা কেন আলাদা:

এটি হয়ত সত্যি যে আপনাকে প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল সংঘাতের ইতিহাস জানতে হবে মাহমুদ দারভিশের সু্ক্ষ্ণ ও তীব্র দৃষ্টিতে ফিলিস্তিনিদের বাস্তবতা দেখার জন্যে।

এই ব্লগার, যিনি বেশ কয়েকবার দারভিশের সাথে দেখা করেছেন, বলছেন যে এই কবি ছাড়া বিশ্ব আর পূর্বের মত হবে না:

আমি গত দুই দশকে বৈরুত, দামাস্কাস, ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস, জেনেভা এবং গত মাসে রামাল্লায় মাহমুদ দারভিশকে দেখেছি। তিনি আমার জীবনের একটি অংশ ছিলেন, এবং জেরুজালেম, রামাল্লা বা অন্য যো কোন যায়গায় অবস্থিত ফিলিস্তিনিদের জীবনের অংশ। এবং এখন তিনি চলে গেছেন এবং বিশ্ব আর পূর্বের মত নেই।

তিনি দারভিশের লেখা তার পছন্দের এক কবিতা আমাদের কাছে উপস্থাপন করছেন – ইউসুফের একটি বাইবেলের কাহিনী:

ও আমার পিতা, আমি ইউসুফ
ও পিতা, আমার ভ্রাতারা আমাকে ভালবাসে নি ও চায় নি
তারা আমাকে নিত্য পাথর ও কটুবাক্য দ্বারা লাঞ্ছিত করে
আমি মরে গেলে হয়ত তারা আমাকে ভাল বলবে
তারা তোমার ঘরের দরজা বন্ধ করে আমাকে বাইরে রাখে
তারা আমাকে ক্ষেত থেকে বের করে দেয়
ও আমার পিতা, তারা আমার আঙ্গুর ক্ষেতে বিষ দেয়
তারা আমার খেলার বাগান ধ্বংস করে
যখন মৃদু হাওয়া আমার চুলগুলোকে বুলিয়ে যায়, তারা ঈর্ষান্বিত হয়
তারা তাদের সমস্ত ক্রোধ নিয়ে তোমার এবং আমার পেছনে লাগে
আমি তাদের কি ক্ষতি করেছি, ও আমার পিতা?
প্রজাপতিরা আমার কাঁধে এসে বসত
পাখীরা আমার মাথার উপর দিয়ে উড়ে যেত
আমি কি করেছি, ও আমার পিতা?
কেন আমি?
তুমি আমাকে ইউসুফ নাম দিয়েছ তাই তারা আমাকে কুয়ায় ফেলে দিয়েছে
তারা নেকড়ের মত আমাকে ছিঁড়েখুড়ে খেয়েছে
নেকড়েও আমার ভ্রাতাদের চেয়ে দয়ালু
ও, আমার পিতা
আমি কি কারও ক্ষতি করেছি যখন বলেছি
আমি দেখেছি এগারোটি তারা এবং সূর্য ও চন্দ্র
দেখেছি তাদের আমার সামনে হাঁটু গেড়ে থাকতে?

জর্দানের সামের মারজুক জারাহ ব্লগে লিখেছেন যে দারভিশের মৃত্যু আরব বিশ্বের জন্যে এক বড় ক্ষতি।

খারাপ খবর, সবচেয়ে সেরা আরব কবি, ফিলিস্তিনি মাহমুদ দারভিশ আজ আমেরিকার হিউস্টনের এক হসপিটালে মারা গেছেন। আরব সংস্কৃতির জন্যে এটি একটি বড় শুন্যতা, শান্তিতে থাকুন মাহমুদ দারভিশ, শান্তিতে থাকুন।

তিউনিশিয়ান ব্লগ খিল উই লিল দারভিশের মৃত্যুকে এভাবেই স্মরণ করছে (আরবী ভাষায়):

عملاق آخر يمضي

আরেকজন বড়কবি চলে গেল।

মিশর থেকে রাদওয়া ওসামা এই সংবাদে শোকাহত এবং আরেকজন কবির মাধ্যমে তার শেষ বাণীটির জন্যে প্রতীক্ষা করছেন:

يخبرنى عمرو منذ قليل بلهجة حزينة – محمود درويش مات -أكدت عليه أكثر من مرة أن لا يخبرنى بأخبار الموت مرة واحدة – بعدها بقليل يدير صوت محمود درويش على الكمبيوتر – أسمعه بحزن صافى – لا أجد كلاما كثيرا يمكننى أن أضيفه مرة آخرى – لكنى عن جد حزينة – حزينة جدا – كنت أفكر فى المرة القادمة لزيارة محمود درويش الى القاهرة ، تخيلتها فى الجامعة المريكية ، كنت أحضر نفسى لتلك النشوة – ياااااه منذ وقت طويل لم اسمع درويش – كلما ضاقت روحى ، استمعت الى صوته ، فهو قادر على تهدئتى دوما-يسألنى عمرو “تفتكرى محمود درويش بيعمل ايه دلوقتى”-أفكر بمنطقية شديدة فيما يفعله محمود درويش الأن -ربما يتأمل التجربة بعمق ، ليكتب قصائد عديدة ليرسلها إلينا نحن المشتاقين دوما إلى كلمة حقيقية – بعد قليل سأفقد مذاق الشعر -محمود درويش أمازلت ترى أن الموت يخطئنا؟! -أنتظر منك ان ترسل بقصيدة مع أول عابر عندك – فالشعراء لا يموتون

শোকাতুর কন্ঠে, আমর আমাকে জানাল যে মাহমুদ দারভিশ মারা গেছেন। আমি তাকে বহুবার বলেছি যে এমন সংবাদ ঠাস করে না দিতে। এর কিছু পরে আমরা কম্পিউটারে মাহমুদ দারভিশের কন্ঠ শুনলাম। আমি যেন তার শোকাতুর কন্ঠ শুনতে পেলাম। আমি বলার জন্যে তেমন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না তবে আমি খুবই দু:খভারাক্রান্ত। আমি ভেবেছিলাম পরেরবার তিনি যখন কায়রো আসবেন আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ত তার সাথে দেখা হবে। আমি সেই দেখার জন্যে তৈরি হচ্ছিলাম। আমি দারভিশের কন্ঠ শেষবার সামনাসামনি শোনার পর বেশ অনেকদিন গত হয়েছে। আমি যখনই বিরক্ত হতাম তার কন্ঠ শুনতাম।  তিনি আমাকে প্রশান্ত করতে সাহায্য করতেন। আমর আমাকে জিজ্ঞেস করল: “তোমার কি মনে হয়? মাহমুদ দারভিশ এখন কি করছেন?” আমি যুক্তি সহকারে চিন্তা করে বলি: “মাহমুদ দারভিশ এখন মৃত্যুর অভিজ্ঞতা নিয়ে চিন্তা করছেন, যা নিয়ে তিনি একটি কবিতা লিখবেন, এবং আমরা যারা পৃথিবীতে তার পানে চেয়ে বসে আছি তাদের কাছে পাঠাবেন।” মনে হয় অচিরেই আমি কবিতা পড়া বন্ধ করে দেব। মাহমুদ দারভিশ, আপনি কি এখনও মনে করেন যে মৃত্যু অনেক সময় ভুল করে আসে? আপনার একটি কবিতার প্রতীক্ষায় আমি থাকব, যার সাথে আপনার প্রথম দেখা হবে তার মাধ্যমে পাঠাবেন। কবিরা কখনও মরে না।

2 টি মন্তব্য

এই জবাবটি দিতে চাই না

আলোচনায় যোগ দিন -> পান্থ রহমান রেজা

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .