জর্জিয়া: দক্ষিণ ওসেটিয়ার সাম্প্রতিক খবর

দক্ষিণ ওসেটিয়া সংকটের বিস্তারিত ও তাজা খবরের জন্যে গ্লোবাল ভয়েসেস বিশেষ কাভারেজ পাতা দেখুন

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমে রিপোর্ট আসছে যে জর্জিয়ার কেন্দ্রে সংঘাত ছড়িয়ে পরেছে। বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ দক্ষিণ ওসেটিয়া নিয়ে রাশিয়ার সাথে সর্বশেষ সামরিক সংঘাত ক্রমান্বয়ে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রুপ নিচ্ছে। তিবলিসি থেকে উ ওয়েই রিপোর্ট করছেন যে জর্জিয়ার রাজধানী তিবলিসির ঠিক বাইরে অবস্থিত ভাজিয়ানী সামরিক স্থাপনাতে বোমা ফেলা হয়েছে। এটি বেশ অশুভ লক্ষণ:

আরও সংবাদে জানা গেছে যে রাশিয়ানরা তিবলিসির কাছে মারনেউলি বিমানবন্দরের রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমরা ভাবছি জর্জিয়ার বিমানবাহিনী কি করছে।

কোন পক্ষই এখনও যুদ্ধ ঘোষণা করে নি এবং রাশিয়ানরা আক্রমণ করেই যাচ্ছে, তবে যখন সব কিছু বিবেচনা করা হয় তখন বোঝা যায় এটি যুদ্ধই বটে।

দেখা যাচ্ছে কয়েকজন সম্মানিত নেতা অগ্রসর হয়েছেন মধ্যস্ততা করতে, যেমন লিথুয়ারিয়ার রাষ্ট্রপতি এডামকাস। তাদের দ্রুত পৌছানো হওয়া উচিৎ।

একই ব্লগ জানাচ্ছে যে বিভিন্ন  দেশের দুতাবাস তাদের নাগরিকদের সরানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে, তারা এখনো নিশ্চিত নয় যে এর প্রয়োজন হবে কি না:

মনে হচ্ছে সেরকম কোন উদ্বাসন করা হলে আর্মেনিয়ার স্থলপথ ব্যবহার করা হবে। আমাদের গ্রীক নাগরিকদের সেরকমই বলা হয়েছে। মনে হচ্ছে এ সপ্তাহের প্রারম্ভে সমস্ত দুতাবাসের এক সম্মিলনে এমনই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তবে, কেউ আশা করছে না যে এর প্রয়োজন হবে। আমি আগামী বৃহস্পতিবার লিথুয়ানিয়া ছাড়ছি এমনিতেই।

আজ বিকেলে কুটনীতিকদের আরেকটি মিটিং ডাকা হয়েছে যেখানে রাশিয়ান ছাড়া অন্য সব দেশের কুটনীতিকরা গিয়েছেন।

এ ফিস্টফুল অফ ইউরোজ ব্লগ জর্জিয়ার এই পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে, তবে প্রশ্ন করছে যে রাশিয়া দক্ষিণ ওসেটিয়ার জন্যে এই যুদ্ধের ঝুঁকি নেবে কি না। এটি আরও চিন্তা করছে তিবলিসি এই আক্রমণের জন্যে আমেরিকা ও ইউরোপের মৃদু সমর্থন পেয়েছে কি না:

প্রথমে, রাশিয়ার কর্ণধাররা কি করবে? তারা গত সপ্তাহে সংঘাতের তু্ঙ্গে জর্জিয়ার আকাশ সীমান্তে তাদের প্লেন চলার নির্দেশ দিয়েছিল এবং খবর এসেছে যে জর্জিয়ার শহর গোরি এবং কার্টভেলিতে একটি করে বোমা পরেছে। তবে মনে হচ্ছে এটি একটি প্রতীকি আক্রমণ ছিল। তাদের যদি শহর দুটোয় বোমা মারার ইচ্ছা থাকতো তারা সানন্দেই তা করত। রাশিয়া হয়ত পরিস্থিতি খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে দায়ী তবে শাকাস্ভিলির সরকার জুয়া খেলছে এই ভেবে যে রাশিয়া হয়ত ৭০,০০০ দক্ষিণ ওসেটিয়াবাসীদের জন্যে এতবড় ঝুঁকি নেবে না। রাশিয়ার মুদ্রা (রুবল) এবং স্টক মার্কেট উভয়ই বড় পতন দেখেছে আজ, হয়ত এই অনিশ্চয়তামূলক পরিস্থিতির কারনে। 

দ্বিতীয়ত: আমেরিকান এবং ইউরোপীয়ানরা এখন কি করবে? (আমেরিকান) স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা গত সপ্তাহে তিবলিসি সফর করেছিলেন, এবং আমি আশা করছি যে জর্জিয়ান কর্তৃপক্ষ তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছে। বর্তমান ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি হয়ত এটি অস্বীকার করবেন। আমরা ধারনা করতে পারি যে আমেরিকানরা তাদের সাবধান করে নি। জার্মানীর পররাষ্ট্র মন্ত্রীও এখানে এসেছিলেন আবখাজিয়া অঞ্চল সম্পর্কে আলোচনা করতে। মনে হয় না তাকে কিছু জানানো হয়েছিল, কিন্তু তার সফরের মূল কারন জর্জিয়ার একত্রীকরন এজেন্ডার পরবর্তী লক্ষ্যের (আবখাজিয়ার) দিকে আঙ্গুল দেখায়। 

এই একই ব্লগ আরও রিপোর্ট করছে যে রাশিয়ার জেট বিমান জর্জিয়ার রাজধানীর (তিবলিসি) ধারে কাছে বোমা ফেলেছে। বিদ্যুৎ কিছু সময়ের জন্যে চলে গিয়েছিল এবং ইন্টারনেট কানেকশন এবং মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বিপর্যস্ত হয়েছিল। ওদিকে অন্যান্য ব্লগ, যেমন রয়টার্সের একটি, বিশ্লেষন করছে সেই সম্ভাবনা যে কসোভোর স্বাধীনতার সাথে এর সম্পর্ক আছে কি না

দক্ষিণ ওসেটিয়ার এই সংঘাতের জন্যে কসোভো কি দায়ী?

গত ফেব্রুয়ারীতে যখন সার্বিয়ার এই প্রদেশটি বেলগ্রেডের সাথে সম্পর্কে ছিন্ন করে স্বাধীন হয়, সাথে সাথেই দক্ষিণ ওসেটিয়া তার বিচ্ছিন্নতাবাদের আকাঙ্খার জন্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চায়।

বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এডুয়ার্ড ককোতির এক মুখপাত্র রয়টার্সকে তখন জানিয়েছিলেন: “কসোভোর এই স্বাধীনতা আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আরও শক্তি এনে দিয়েছে”।

তিবলিসিতে নিশ্চয়ই এটি শোনা গেছে এবং হয়ত জর্জিয়াকে প্রবৃত্ত করেছে দক্ষিণ ওসেটিয়ার উপর তাদের শাসন আরও শক্ত করতে। 

দ্য উইল টু একজিস্ট ব্লগ ও এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে তবে বলছে যে দুই পরিস্থিতি এক নয়:

দক্ষিণ ওসেটিয়া আরেকটি কসোভো হতে যাচ্ছে। ৯৮-৯৯% ওসেটিয়াবাসী স্বাধীনতা চাইবে যদি একটি গণভোট চাওয়া হয়।  কিন্তু দু:খজনকভাবে বিশ্বের বাস্তবতা এত সহজ নয়। দক্ষিণ ওসেটিয়ার স্বাধীনতা আমেরিকার (কানাডা ও আমেরিকান সীমান্ত অবস্থিত ছোট) ভারমন্ট প্রদেশের  স্বাধীনতা চাওয়ার সমতুল্য সুদুর ভবিষ্যতে এই অঞ্চল জর্জিয়া অথবা রাশিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।

আউটসাইড দ্যা বেল্টওয়েতে জেমস জয়নার তার লেখায় কসোভোর সাথে এর তুলনা করছেন এবং তিনি এতে উদ্বিগ্ন। তিনি ভাবছেন ন্যাটোর এতে নাক গলানো ছাড়া উপায় থাকবে না

এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে আলাদা হওয়ার একটি প্রক্রিয়ায় রয়েছে। দক্ষিণ ওসেটিয়া জর্জিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে ১৯৯০ এর দশকের প্রথম দিকেই এবং তার অধিকাংশ অঞ্চলের উপর তার স্বায়ত্বশাসন রয়েছে। জর্জিয়া বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেউই এই বিচ্ছিন্নতাবাদ স্বীকার করে নি এবং রাশিয়া তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল।

কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। জর্জিয়ার উপর চাপ আসে ন্যাটোর সদস্যভূক্ত হবার জন্যে। রাশিয়া সাথে সাথেই দক্ষিণ ওসেটিয়া এবং অপর বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ আবখাজিয়াতে তার প্রভাব খাটানো শুরু করে। এখন মনে হচ্ছে রাশিয়া তার খেলাই খেলছে।
কিছু মাস আগে বুখারেস্ট সামিটে জর্জিয়াকে ন্যাটোর সদস্যপদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ন্যাটো কাজেই রাশিয়ার বর্তমান আগ্রাসনকে উপেক্ষা করা চিন্তার বাইরে।[…]

পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .