- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ব্রাজিল: বিতর্কমূলক পারমাণবিক প্রকল্পকে এগিয়ে নেয়ার সংকেত

বিষয়বস্তু: ল্যাটিন আমেরিকা, ব্রাজিল, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, পরিবেশ, প্রতিবাদ, সরকার

গত ২৩শে জুলাই ব্রাজিলের পারমাণবিক শক্তি প্লান্ট এর জন্যে বিতর্কমূলক অ্যাংরা ৩ রিএক্টর প্লান্টের [1]এর প্রি লাইসেন্স [2] দিয়েছে ব্রাজিলিয়ান ইন্সটিটিউট অফ এনভায়রমেন্ট এন্ড রিনিউবেল নেচারল রিসোর্সেস (আইবিএএমএ)। কিন্তু তার আগে পরিবেশ মন্ত্রী কার্লোস মিঙ্ক বেশ কিছু শর্ত দিয়েছেন- মোট ৬০টি যার মধ্যে আছে বর্জ্যের স্থায়ী ব্যবস্থা করা, বিকিরণ এর মাত্রা মনিটর করা, শিক্ষামূলক বিষয়ে লগ্নি করা আর পরিবেশ রক্ষা। যদি প্রি লাইসেন্সে আইবিএএমএ আর ইলেট্রোনিঊক্লিয়ার [3] এর স্বাক্ষরিত এই শর্তগুলো পূরণ করা হয় আংরা ৩ শেষ করার জন্য, তাহলে সেপ্টেম্বর এর মধ্যে কাজ শুরু হতে পারে।


ছবি: উইলসন ডিয়াজ/এবিআর [4] এর সৌজন্যে

কিছু ব্লগার এই সিদ্ধান্তে বিচলিত হয়েছিল, কারন ব্রাজেলিয়ান গ্রিন পাটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, মন্ত্রী কার্লোস মিঙ্ক যিনি মারিনা সিল্ভার পদত্যাগের পর গত মে মাসে পরিবেশ মন্ত্রী [5] হন, তিনি পারমানবিক শক্তির বিরোধিতার জন্য পরিচিত। তিনি বলেছেন যে তার সময়ের আগের একটা এজেন্ডা তিনি পুরণ করছেন, আর এটাও মনে হচ্ছে যে মিঙ্ক আর প্রেসিডেন্ট লুলা, যিনি পারমানবিক শক্তির ব্যাপারে তার অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করেছেন, এই ব্যাপারে খুব একটা একমত না। এটা সব সময় এমন ছিলনা, যা জর্জ হেনরিক কর্ডিয়োরো [6] দেখিয়েছেন, এদের দুইজনের ১৯৮৯ এর একটা ছবি প্রকাশ করে, এই একি আংরা ৩ নির্মানের সময় বিক্ষোভে অংশগ্রহণের সময়। ব্লগার বিশ্বাস করেন যে দেশটার উচিত পরিষ্কার শক্তির জন্য তাদের বিশাল, ধনী সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো:

শক্তির ব্যাপার যখন আসে, ব্রাজিলের বৃহৎ হাইড্রো, সোলার আর বায়ু শক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর অপেক্ষায় আছে। উত্তরপূর্বের বায়ু একাই ৭৫ গিগাওয়াট শক্তির যোগান দিতে পারে। এর থেকে আমি একটা সাধারণ গণনা করেছি: ধরে নিয়ে যে আংরা ৩ এর ১৩৫০ মেগাওয়াট (১ গিগাওয়াট= ১০০০ মেগাওয়াট) উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে আর এটা নির্মাণে আনুমানিক ৮ বিলিয়ন ডলার ব্যায় হবে (প্রায় ৫.০৮ বিলিয়ন মাকিন ডলার), তাহলে এই ধরনের ৫৬ টা পাওয়ার প্লান্ট এর দরকার হবে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের অসম্ভব ব্যায় (মার্কিন ডলার ২৮৫.৮ বিলিয়ন) এই একই পরিমান শক্তি (৭৫ গিগাওয়াট) পারমাণবিক রিয়াক্টর দিয়ে তৈরি করতে। আর এর পরেও তাদের বলার সাহস আছে যে পুন:ব্যবহার করার শক্তি সুত্র ব্যায়বহুল!

অন্যদিকে এলোন ফয়ারভেরকার [7] বিশ্বাস করেন যে লাইসেন্সের জন্য যা দরকার তা ‘ব্রাজিলের পরিবেশবাদীদের অকালপক্ক সময় উত্তীর্ণ হয়ে গেছে’ আর মনে করেন যে এই প্রকল্পের জন্য হ্যা বলা ঠিক পদক্ষেপ হয়েছে:

যে কোন ভাবে এই সিদ্ধান্ত দেশের জন্য ধণাত্মক, যতক্ষণ না লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিল্ভার যে পরিবেশ বিষয়ক উগ্রতা আছে যা তিনি হাউজ অফ মিনিস্টারের উপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন তা কাজের অগ্রগতি থামিয়ে কাজ শুরুর লাইসেন্স বাতিল না করে দেয়। আসলে ব্রাজিলিয়াতে সবাই এটা নিয়ে কথা বলছে: যে আইবিএএমএ এখন নরম হচ্ছে পরে শক্ত হওয়ার জন্য। তারা কি তাই করবে?

প্রোয়েতো ইয়োগো লিম্পো [8] ( ন্যায় খেলার প্রোজেক্ট) একটা জনমতের অযোজন করেছে জানতে যে তাদের পাঠকরা এই ব্যাপারে কি মনে করে। কিছু ব্লগার ইমেইলের মাধ্যমে পাঠানো গ্রীনপিস ব্রাজিল [9] এর নীচের বাণীটা আবার প্রকাশ করছেন [10], যা লোকদের অনুরোধ করে যাতে তারা তাদের অভিযোগ সরাসরি আইবিএএমএ এর প্রেসিডেন্টকে জানায়:

এটা উপেক্ষা করবেন না! আপনারা এস এম এস পাঠিয়ে সরাসরি রোবার্তো মেসিয়েসের কাছে অভিযোগ করতে পারেন যিনি আইবিএএমএ এর প্রেসিডেন্ট এই নাম্বারে ০৬১ ৯৯৮২ ৪৪০৯। আপনার নাগরিক অধিকার ব্যবহার করেন, আপনার বিরক্তি দেখান আর দাবি করেন লুলার সরকারের কাছ থেকে এর ব্যাখ্যা!

উপরের প্রচারকাজকে ‘ইশ্বরদুত এসেছেন আর খারাপ খবর এনেছেন [9]‘ অভিহিত করা হচ্ছে এবং ব্রাসিলিয়া আর রিও ডি জেনেইরোর রাস্তায় বিক্ষোভ হচ্ছে। গ্রীনপিস ব্রাজিলের শক্তি ক্যাম্পেইনের রিকার্দো বাইটেলো আফসোস করেছেন [11]:

“আংরা ৩ প্রোজেক্ট এর অনুমোদন দেশটার জন্য একটা পিছু হটা আর আইবিএএমএ এর জন্য লজ্জা। রোবার্তো মেসিয়া ইতিহাসে স্থান পাবেন সেই ব্যক্তি হিসাবে যিনি একটা সাদা হাতি তেজস্ক্রিয় প্লান্টের লাইসেন্সে স্বাক্ষর করেছেন আর মিঙ্ক, যিনি পারমানবিক শক্তির বিরোধী, সেই মন্ত্রী হিসাবে যিনি এই ব্যাপারে তাদের হাত ধুইয়ে দিয়েছেন।”


ছবি: উইলসন ডিয়াজ/এবিআর [4] এর সৌজন্যে

এই লেখার সাথে যেসব ছবি আছে তা আংরা ৩ নির্মাণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় তোলা যা গ্রীনপিস ব্রাজিল জুলাই ২৩ এ আয়োজন করে যখন চুক্তিটা স্বাক্ষরিত হয়। এজেন্সিয়া ব্রাজিলের [4] একজন আলোকচিত্রী এগুলো তুলেছিলেন আর এখানে একটা ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধিনে পুণ:ব্যবহার করা হয়েছে।

ব্রাজিলের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিকেন্দ্রের তৃতীয় রিএক্টরটি তাদের শেষ পর্যায় সমাপ্ত করেছে। এর কাজ ১৯৮৪ সালে শুরু হয় কিন্তু ২২ বছর আগে দেশের আর্থিক সংকটের কারনে তা বন্ধ হয়ে যায়। এর বেশীরভাগ জিনিষ ক্রয় করে জমিয়ে রাখা হয়েছে ১৯৯৫ থেকে, যার ফলে বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার রক্ষণাবেক্ষনে ব্যায় হয়। এই প্রোজেক্ট পরিবেশবাদি আর সাধারন জনগনের কাছ থেকে বিরোধিতারও সম্মুখীণ হয়েছে।