সাম্প্রতিক একটি মামলা ভারতের গর্ভপাত আইনের দিকে সবার দৃষ্টি ফিরিয়েছে। ভারতের বর্তমান আইন অনুযায়ী ২০ সপ্তাহের গর্ভাবস্থার পর গর্ভপাত করতে দেয়া হয় না, যদি না গর্ভবতীর স্বাস্থ্যের জন্য গর্ভধারণ বিপদ্জনক হয়। এই ক্ষেত্রে এক দম্পতি, যাদের ২০ সপ্তাহের চেয়ে পরিণত ভ্রুণে জন্মগত হৃদ ব্লক দেখা গিয়েছিল তারা ভারতের একটা আদালতে গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে আদালত তার অনুমতি দেয় নি। এই কেস গর্ভপাত সংশ্লিষ্ট একটি বিতর্ক তৈরি করেছে।
অ্যান অরেঞ্জ কোট ব্লগ আদালতের রায়ের পিছনের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
যদি ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত করানো যায় তাহলে তারপর নয় কেন?
২০ সপ্তাহের পর গর্ভপাত করতে দেয়া হয় যদি মার জীবন শংকায় থাকে। কিন্তু কোন ভ্রুণের যতই দোষ থাকুক না কেন ২০ সপ্তাহের পর তা গর্ভপাত করা যাবে না। এটা কি ন্যায়সম্মত যে এটা জানার পরও যে বাচ্চাটা স্বাভাবিক জীবন পাবে না তারপরেও তাকে জন্ম দেয়া? প্রত্যেক বাবা মা চায় তার সন্তান সুস্থভাবে বেড়ে উঠুক। কে চাইবে তার সন্কানকে পেসমেকার আর লাইফ সাপোর্টে থাকতে জন্মের পর থেকে, তাদের উপর সব কিছুর জন্য নির্ভরশীল থাকতে?
একটা এমএসএন ফোরামে বাবা মার ইচ্ছায় গর্ভপাতের বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। একজন মন্তব্যকারী গর্ভপাতকে হত্যার সমতুল্য বলেছেন:
এইক্ষেত্রে এটা স্বেচ্ছায় হত্যা (মার্সি কিলিং)। একটা বিষয় শুধু চিন্তা করেন, কেউ কি জীবন ত্যাগ করতে চাইত যদি পরবতীতে এই ত্রূটি ধরা পড়ত? যদি আমরা ডাক্তারি রিপোর্ট বিশ্বাস করি তাহলে কেন বিশ্বাস করিনা যে ডাক্তারি বিজ্ঞান এর চিকিৎসাও করতে পারবে?
আর একজন মন্তব্যকারী বলেছেন:
যে কোন মহিলার (আর তার সঙ্গীর) জন্য গর্ভপাত একটা কষ্টকর সিদ্ধান্ত। যদি হবু মা মানসিক আর আর্থিকভাবে তার হবু বাচ্চার চাহিদা পূরণে অক্ষম হয় তাহলে তার গর্ভপাত করা উচিত একটা না চাওয়া বাচ্চাকে জন্ম দেয়ার চেয়ে।
সামির আগারওয়াল জানতে চেয়েছে যে ঐ বাচ্চার কি অবস্থা হবে যখন সে জানতে পারবে যে তাকে প্রাথমিকভাবে চাওয়া হয়নি। মামিস ওয়েব্লগ এ অনেকে মন্তব্য করেছে যেখানে তারা বাবা মা, আর যে বাচ্চাটা গুরুতর অক্ষমতা নিয়ে জন্মাতে পারে তাদের প্রতি তাদের সহমর্মিতা জানিয়েছে। চেন্নাই টেলিভিশন দেখার চেষ্টা করেছে যে ধর্ম আর বিজ্ঞান গর্ভপাত আইনে কি ভুমিকা রাখে। এই বিতর্কের আর একটা দিক হলো যে এই দম্পতি বেআাইনি গর্ভপাতে যায়নি, বরং তারা আদালতের সম্মতি চেয়েছে। মুম্বাই মেটব্লগস বলেছে:
প্রথমত: আমাদের এখানে শত শত নিকিতা নেই যারা প্রতিদিন গর্ভপাতের জন্য আদালতের রায় চায়। দ্বিতীয়ত: যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল আর ঠিকভাবে কাজটা করতে চাচ্ছিল তাদের ইচ্ছাকে বাতিল করা হয়েছে। এরপর আমার মনে হয় না যে এই বিষয়ে ন্যায় পাওয়ার আশা মানুষের থাকবে। এই গল্পের শিক্ষা হলো যে এই ধরনের ঘটনা আইন আর বিচারের প্রতি মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করে দেবে।
অন্য ব্যাপার যেটা ফুটে উঠছে তা হলো ২০ সপ্তাহের পরে গর্ভপাতের আইনের অপপ্রয়োগ, যা ইতোমধ্যে থাকা লিঙ বেছে গর্ভপাতের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। তবে মনে হচ্ছে আদালত আইনের ব্যাত্যয় ঘটাতে রাজি না, যা অনেক বছরে পরিবর্তিত হয় নি।
যেমন ডঃ ডাটার পরে বলেছেন এই আইনি লড়াই বর্তমান আইনে যে ফাঁক আছে তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াবে আর এমটিপি অ্যাক্ট ১৯৭১ এর সেকশন ৫ এর সংশোধনীর প্রযোজনীয়তার কথা আসবে। জন্ম পরবর্তী জীবনের মান নিয়ে বিতর্ক চলছে। আইনের সংশোধন দরকার, আর বিধানকর্তাদের তাদের কাজ ঠিক করা দরকার দ্রুত।