- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

স্লোভাকিয়া: স্বাধীন কসোভোকে স্বীকৃতি দানে অস্বীকৃতি

বিষয়বস্তু: পূর্ব ও মধ্য ইউরোপ, কসোভো, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, জাতি-বর্ণ, দুর্যোগ, মানবাধিকার, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, রাজনীতি, শরণার্থী

ফেব্রুয়ারী ১৭,২০০৮ এ কসোভো প্রজাতন্ত্র [1] স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯২ দেশের মধ্যে ৪৩টি দেশ [2] কসোভোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে যার মধ্যে আছে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া আর বেশীরভাগ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশসমুহ। যারা বিরোধ করেছে তাদের মধ্যে সার্বিয়া ছাড়া উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাশিয়া।

স্লোভাক সরকার কয়েক মাস আগে ঘোষণা করেছে যে তারা কসোভোর স্বাধীনতা স্বীকার করবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে যে তারা স্বাধীন কসোভোর পাসপোর্টসহ কোন নথী স্বীকার করবে না। পিটার মার্টিনোভিচ, একজন স্লোভাক ব্লগার লিখেছেন [3]:

যদি কোন কসোভোর নাগরিক কোনভাবে স্লোভাকিয়া আসে তাকে বেয়াইনি অভিবাসী ধরা হবে তার কাছে কার্যকর (সেন্ঘেন [4]) ভিসা থাকলেও।

তাহলে কি হলো? কেন স্লোভাকিয়া কসোভোর স্বাধীনতা স্বীকার করছে না যখন স্লোভাকিয়ার কাছের পড়শী যেমন চেক প্রজাতন্ত্র, পোল্যান্ড আর হাঙ্গেরি করেছে? কেন স্লোভাকিয়ার মতো একটা দেশ যেখানের মানুষ কয়েক শতাব্দী শক্তিশালি রাজতন্ত্রের অধীনে ছিল আর যাদের নিজেদের স্বাধীনতা মাত্র ১৫ বছর হলো হয়েছে কসোভোর স্বাধীনতা স্বীকার করতে চায়না, যেখানের মানুষ জাতিসংঘের কথা অনুযায়ী বিশাল মানবাধিকার লঙ্ঘনের মুখোমুখি হয়েছে তাদের দেশের সংখ্যাগুরু সরকারের কাছ থেকে?

মারটিনোভিচ নীচের ব্যাখ্যা দিয়েছে:

কয়েকটি প্রশ্নের মধ্যে এটি একটি যেটি স্লোভাক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করে। হাঙ্গেরিয়ান সংখ্যালঘু দল [5] ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক শক্তি (তারা শুধু ইউরোপিয়ান পন্থী হোক বা ভীষণভাবে ইউরোপিয়ান পন্থী হোক) কসোভোর স্বাধীনতার ব্যাপারটা অস্বীকার করছে। এটার মূল শুধুমাত্র ২০ শতকের চলমান ইতিহাসের মধ্যে পাওয়া যায়না, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে গুপ্তভাবে থাকা বোধ এটিই যে দেশের দক্ষিণে থাকা হাঙ্গেরিয়ান সংখ্যালঘুরা আমাদের দেশের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থের প্রতি হুমকি আর তারা বের হয়ে গিয়ে হাঙ্গেরির অংশ হতে চায়।

আধুনিক স্লোভাকিয়া যে ভুমি নিয়ে গঠিত সেটি একসময় বিশাল হাঙ্গেরিয়ান রাজ্যের [6] অংশ ছিল। স্লোভাকরা হাঙ্গেরিয়ান শাসনের অধীনে কয়েক শতক ছিল।এর মধ্যে অনেক বছর ব্যয় হয়েছে জাতিগত গোষ্ঠী হিসাবে অধিকার আর স্বাধীনতা পাওয়ার জন্যে। প্রথম বিশ যুদ্ধের পর চেকস্লোভাকিয়া গঠিত হয়েছিল। নতুন সীমান্ত যখন ঠিক করা হয় কিছু হাঙ্গেরিয়ান দেখলো যে তারা চেকোস্লোভাকিয়াতে আছে। এখন হাঙ্গেরিয়ান সংখ্যলঘুরা স্লোভাকিয়ার ১০% জনসংখ্যা গঠন করে যার মধ্যে স্লোভাকিয়ার দক্ষিনের কিছু এলাকা আছে যাদের জনসংখ্যার ৪০% এর বেশি হাঙ্গেরিয়ান জাতিগত।

মার্টিনোভিচ হাঙ্গেরিয়ানরা যে দেশ থেকে বেরিয়ে যাবে এই চিন্তার ভিত্তি নিয়ে কথা বলেছেন:

এটা ভিত্তিহীন আর কিছু রাজনীতিবিদদের প্রচারিত নোংরা জাতীয়তাবাদ এটা যা তাদের জন্য অল্প শিক্ষিতদের (কিন্তু অনেক) ভোট যুগিয়ে দেয় যদিও কিছু হাঙ্গেরিয়ান প্রতিনিধিদের ব্যবহার পরিস্থিতি শান্ত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করেনি।

মার্টিনোভিচ বলে চলেন যে এই ব্যাপারটা তার ভালো লাগে না যে কসোভো কোন দেশের ভুমির জন্য একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে ‘যারা স্বাধীনতার ঘোষণা দেবে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতি ছাড়া আর তার পরেও আন্তর্জাতিক সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত হবে।’

এখানে বিষয়টার প্রতি অন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গী [7] দেখানো হচ্ছে আস ইউরোপিয়ানস ব্লগে, ২৪ বছরের স্লোভাক ইয়ান যা বলেছেন:

কসোভোর স্বাধীনতা পাওয়ার ইচ্ছা স্লোভাক সরকারের সমর্থন পায়নি। আমরা মনে করি যে কসোভো সার্বিয়ার অংশ আর তার তেমনি থাকা উচিত ছিল। এটা দুই পক্ষের জেতার মতো কোন পরিস্থিতি না। দক্ষিনে আমাদের একই ধরনের পরিস্থিতি আছে কিছু স্থানীয় হাঙ্গেরীয় সংখ্যালঘুর কারনে যারা স্বাধীনতা চায়। আমরা স্লোভাকদের জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহনযোগ্য না। আমরা যেভাবে চেক থেকে পৃথক হয়েছি তার সাথে এর কোন মিল নেই।

রোমানিয়ায় অবস্থিত ব্লগার করিনা মুরাফা [8] মন্তব্য করেছেন:

এটা মনে হয় যেন এইভাবে বলা হচ্ছে ‘অবশ্যই সব মানুষ সমান, কিন্তু কিছু মানুষ অন্যদের থেকে একটু বেশি সমান।’ যখন আমরা বিচ্ছিন্নতাবাদ পছন্দ করি – যে কোন কারনে- অবশ্যই আমাকে বলতে দিন। যখন আমরা পছন্দ করিনা, সাথে সাথে আমরা দাবি করি ‘গল্প আলাদা’ । বিচ্ছিন্নতা গ্রহন করা সম্ভব না, ইত্যাদি।

ইউরোপের অনেক অংশে কসোভোর স্বাধীনতা একটা জ্বালাময়ী বিষয়। সব জাতিগোত্রের পক্ষে তাদের স্বাধীন ভুমি পাওয়া সম্ভব না। প্রশ্ন ওঠে যে সংখ্যলঘুদের সাথে কি ধরনের ব্যবহার করা হয় আর দেশের সরকার তাদের কি ধরনের প্রতিনিধিত্ব করে, যাই হোক: আলোচনা সব সময় একটা ভালো জিনিষ।