আরবদেশ: মরোক্কোর মহিলাকে ফরাসি নাগরিকত্ব দেয়া হয় নি বোরখার কারনে

গত সপ্তাহে একজন ফ্রান্সের অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি এই কারনে যে সে উক্ত দেশের সাথে যথেষ্ট সম্পৃক্ত নয়। সংবাদপত্রে এই মহিলার নাম ‘ফাইজা এম’ হিসেবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি একজন মরোক্কান নাগরিক কিন্তু ফ্রান্সে আছেন ২০০০ সাল থেকে তার ফরাসী নাগরিক স্বামী আর তার তিন বাচ্চার সাথে, যারা সবাই ফ্রান্সে জন্মিয়েছে। যদিও বেশিরভাগ লেখায় ফাইজার বোরখাকে এর কারন হিসেবে বলা হয়েছে  (বা যেহেতু সে মরোক্কো থেকে এসেছে তাই এখানে নেকাব এর ব্যাপারও হতে পারে)। পোস্ট গ্লোবালের থমাস ক্লাইন – ব্রোখভ ইঙ্গিত করেছেন যে এর সাথে অন্যান্য ব্যাপার যেমন ফাইজার মহিলা অফিসারকেও তার চেহারা না দেখানো, আর তার বক্তব্য যে শুধু পুরুষদের ভোটাধিকার থাকা উচিত এগুলোও ভূমিকা রেখেছে।

বোরখা

তা সত্তেও এই ঘটনা একটি চিহ্ন রেখে গেছে এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ব্লগারদের অনুভূতিকে আলোড়িত করেছে। দ্যা অ্যাংরী আরব এই ঘটনার ব্যাপারে মন্তব্য করেছে এটা ব্যাখ্যা করে:

সমাজ কল্যান সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ফাইজা এম পুরোপুরি তার পুরুষ আত্মীয়দের অনুগত। ফাইজা এম বলেছেন যে তিনি কখনও ফ্রান্সের মৌলিক মূল্যবোধ গুলোকে আপন করতে চাননি ।

এই লেখা বেশ কিছু মন্তব্য পেয়েছে যার মধ্যে একটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:

নেকাবের ব্যাপারটা যতদুর বুঝি, একজন যে তার জীবনের বেশীরভাগ সময় একটা বস্তার ভিতর কাটাতে চায় কেন সে পশ্চিমা দেশে থাকতে চাইবে? কেন? কেন?

যে মনে করে যে একটা মহিলাকে সারাদিন নেকাবের মধ্যে চলাফেরা করতে হবে, আমার চোখে তার কোন সম্মান নেই। এটা মানবাধিকারের লন্ঘন। মানুষের সূর্যের আলো আর বাতাস দরকার হয়। সিরিয়ার এক সমুদ্র সৈকতে গরমের দিনে আমি দেখেছিলাম এক বাবা আর তার ছেলেরা ঠান্ডা পানিতে মজা করছে। কি্তু মা আর মেয়েরা! সৈকতে, বালির মধ্যে ওই ভয়ন্কর নেকাব পরে ছিল। কি করে কোন ভদ্র মানুষ, বিশেষ করে কোন ভদ্র পিতা তার পরিবারের শুধু এক অংশকে সমুদ্রের সৌন্দর্য আর ঠান্ডা উপভোগ করতে দেয়? আমি সেই বেচারীদের কথা ভেবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম যে তারা কি শিখছে নারী হওয়া সম্পর্কে। কেন বাবা আর তার ছেলেদের শার্ট ছাড়া শর্টস পরে সাঁতার কাটা ঠিক? আর আমি শুনতে চাইনা যে এটা একটা সাংস্কৃতিক জিনিষ, বা মহিলারা নিজেরা এমনভাবে থাকতে চায়। যদি সে এটা চায় তাহলে তার ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে। এটা একটি ঘৃণ্য অত্যাচারী প্রথা। যদি বন্দীদের মাথা মুড়ে রাখা অত্যাচার হয়, তাহলে এটা অবশ্যই অত্যাচার, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, নিজেকে বড় একটা বস্তায় ভরে দিনের আলো না দেখা।

ইন্টারনেশন মিউজিং (বেশীরভাগ তুরস্ক আর গ্রীসে থাকা লেখকদের গ্রুপ ব্লগ) এই ব্যাপারে জোরালো মত দিয়েছে:

তাদের দুই বাচ্চার ফরাসী নাগরিকত্ব আছে, তার নেই। আপীল সম্ভব না: সাবাস !
কিন্তু আসলে সে একটা পিন খোলা টাইম বোমা। আর এটা ভীতিকর।

নুসাইবার মত এসব থেকে বেশ আলাদা:

এই সংকীর্ণ ব্যাখ্যা আমি আর এক লেখায় জানাবো, কিন্তু এখন আমি এই মহিলার দিকে নজর দিতে চাই যাকে সাংস্কৃতিক আর ধর্মীয় মতামত দেয়ার জন্য নিষেধ করা হয়েছে। আমি বলতে চাই যে আমি বোরখা সমর্থন করিনা কারন এটা ইসলাম সমর্থিত না, আর যে মহিলারা তা পরে তা বিনা কারনে পরে। তবে একজন নারীর এটা পড়ার অধিকার আমি সমর্থন করি – তা সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় কারনে হোক।

এই ব্লগার শেষ করছেন এই বলে:

আমি আগেও বলেছি, লেসিটের ধারণা যার উপর এই রুলিং দেয়া হয়েছে , আজকে ফ্রান্সের সব নাগরিকের উপর একভাবে প্রযোজ্য না, কারন অনেকে ইসলামে বিশ্বাস করে, যারা বোরখা, হিজাব বা পাগড়ী পড়ে, ইহুদীরা তাদের বিশেষ টুপী পড়ে, এদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রথা আছে যা ঘরের মধ্যে প্রকাশ করা যায়না ( ফরাসিরা যেভাবে ধমর্কে বোঝে)। তাই আমরা যা দেখছি তা মূল্যবোধের সংঘর্ষ, ফ্রান্স তার সমতা আর ন্যায়ের চিন্তা ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দিচ্ছে যারা এটাকে রাষ্ট্রের অন্যায় জোর খাটানো ছাড়া আর কিছুই দেখছে না।

আরাবিস্তোর জন্য সাব্রিয়া জাওহার লেখেন, তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বলেছেন:

মাবচুর সম্পর্কে ফরাসি সরকারের প্রতিনিধি ইমানুয়েল প্রাদা- বোর্দেনাভ বলেছেন: “তার নিজের ঘোষণাতেই সে সবার থেকে পৃথক, ফ্রান্সের সমাজ থেকে আলাদা জীবনযাপন করছেন।”
ধর্ম নিরেপেক্ষতা বা ভোটাধিকার সম্পর্কে তার কোন ধারণা নেই । তার পরিবারের পুরুষ কর্তৃক সে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনাধীন। তার কাছে এটাই স্বাভাবিক।
স্বাভাবিক?

ক্ষমা করবেন। কিন্তু কোনটি স্বাভাবিক তা বলার জন্যে প্রাদা- বোর্দেনাভ কে? পশ্চিমা ধাঁচে স্বাভাবিক? মাবচুরকে কি ফরাসি নাগরিক হতে হলে তাদের প্রত্যেকটি সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে চুলচেরাভাবে মেনে নিতে হবে?
ফরাসী ভাষা বলাইতো তাদের সমাজে মিশে যাওয়ার একটা লক্ষণ। মাবচুরের একজন পুরুষ গাইনোকলজিস্টও আছে, যেটা বেশীরভাগ মুসলিম মহিলার মানতে কষ্ট হবে। এটা বেশ অনেকটা একিভুত হওয়া বোঝায়।

আমি জানিনা মাবচুর স্বামীর পদানত হয় কিনা। হযতো তার নিজের হিসাবে এটা তার কাছে ঠিক আর এই বিয়ে সে মেনে নিয়েছে। আমার সত্যি মনে হয় যে এটা তার নিজস্ব ব্যাপার।

ছবি -ফ্লিকার ব্যবহারকারী জানজখেমো -ক্রিয়েটিভ কমন্সের আওতায় ব্যবহৃত

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .