রাশিয়া: পরিবার, ভালবাসা এবং বিশ্বস্ততা দিবস


জুলাই ৮, দম্পতির ভালবাসা এবং পারিবারিক সুখের দিবস, মস্কো, রাশিয়া (ছবি তুলেছেন ভেরোনিকা খখলোভা)

রাশিয়া একটি নতুন ছুটির দিন পেয়েছে: পরিবার, ভালবাসা এবং বিশ্বস্ততা দিবস যা এখন থেকে ৮ই জুলাই পালন করা হবে। এনবিসি টিভি সংবাদের পরিচালক ইওনাতান পমরেন্জে “রাশিয়া থেকে (পরিবারের) ভালবাসার সাথে” শিরোনামে একটি লেখা লিখেছেন যেখানে বুঝিয়েছেন যে এই নতুন ছুটির দিনের মানেটা কি:

নতুন করে ভালবাসার জন্যে নয়, মানুষকে তাদের ভালবাসার মধ্যেই আবদ্ধ রাখতে জোর দেয়া হচ্ছে।

মস্কো অবস্থানরত লাইভজার্নাল(এলজে) ব্যবহারকারী ইপিআরএসটি২০০০ এর এই ছুটির দিন সম্পর্কে একটি লেখা লিখেছেন যা অনেক পাঠকদের চোখে জল এনে দিয়েছে এবং ইয়ানডেক্স ব্লগ পোর্টালের সেরা ৩০ লেখায় স্থান পেয়েছে:

দেখা যাচ্ছে আজ একটি বিশেষ ছুটির দিবস, যার দীর্ঘ নামের শেষ শব্দটি হচ্ছে বিশ্বস্ততা।পরিবার, ভালবাসা এবং বিশ্বস্ততা দিবস অথবা এরকম কিছু একটা।

আজ টিভির সব টক শো বেশী সন্তানওয়ালা পরিবারদের বিশেষ করে দেখিয়েছে। এদের কোন কোনটির নয়টি সন্তান বা এগারোটি সন্তান রয়েছে।

এবং আমার মা (যিনি একটি মাতৃসদনে কাজ করেন) আজ বলেছেন: “আমাদের হসপিটালে একজন মহিলা জমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। হ্যা। তার বয়স ৩৬। এবং ইতিমধ্যেই তার একটি আট বছর বয়সী মেয়ে রয়েছে। আমার মা জানেন এইসব সদ্যপ্রসুতদের কি করে দেখভাল করতে হয় যারা মুখ ফুঁটে বলতে পারে না যে তাদের কোথায় ব্যাথা। এবং আমার মা জানেন। ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে তার দায়িত্ব রয়েছে সেইসব মহিলাদের সাথে কথা বলার যারা তাদের সন্তানকে অন্যকে দিয়ে দিচ্ছে। তার নিজস্ব কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যা কথায় প্রকাশ করা কষ্টকর।  তবুও আমি মাকে জিজ্ঞেস করি এবং তিনি বলতে থাকেন – কিভাবে তোমরা এদের দুর করে দিতে পার? দেখ, সেই মহিলাটি বলে, আমি তাকে খাওয়াতে পড়াতে পারব না। কেউ হয়ত তাদের দত্তক নেবে এবং স্বাভাবিক ভাবেই তাদের বড় করবে, আমরা তাদের সন্তান হিসেবেই তাদের মেনে নেব এবং ভালবাসব। আমার মা জিজ্ঞেস করে:”তুমি কি জান যে তারা দুইটি শিশূকে একসাথে দত্তক নেয় না? শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে একজন দম্পতি একটি শিশূকেই দত্তক নেয়। এবং বর্তমান আইন অনুযায়ী জমজ বাচ্চাকে আলাদা করা যাবে না। বিশেষ করে যদি একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে জমজ হিসেবে জন্মায়। কারন তারা ভবিষ্যতে হয়ত পরিচয় না জেনে একসাথে হতে পারে এবং তাদের মধ্যে নিষিদ্ধ বিবাহ হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। ঐ মহিলা কয়েক দিন চিন্তা করল। এবং আজও সে বলছে যে সে এই জমজ সন্তানদের কাছে রাখবে না। সে বলেছে সে আশা করেছিল যে ঐ লোকটি (সন্তানদের বাবা) তাকে বিয়ে করবে, কিন্তু লোকটি রাজী হয় নি। সে নাকি বলেছে এগুলো তার সন্তান নয়। আমাদের পরিবারে কখনও কোন জমজ সন্তান হয় নি।

আমার মার কথাগুলো শোনার সময় আমার মুখে কোন কথা আসছিল না।  তিনি বলতে থাকলেন: “সম্প্রতি, একজন ১৮ বছরের বালিকা তার সন্তানকে দিয়ে দেয়। আমি তাকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, কিন্তু সে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছে: “তুমি কি জান যে আমার পিতা এই সেই অঞ্চলের প্রধাণ? এবং আমার মা অমুক তমুক প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে।  তারা খুবই সম্মানিত ব্যক্তি। আপনি দেখছেন আমি এটি পারব না। “তোমার বাবা-মা কি জানে যে তুমি তোমার বাচ্চা অন্যকে দিয়ে দিচ্ছ?” – “মা জানে।” – “এবং তোমার বাবা?” “..” “তাহলে তোমরা দুজন তোমার বাবকে জানাতে ভয় পাচ্ছ? কি করে এই মেয়ে বিবাহ বহির্ভূত গর্ভধারণকরে সন্তান জন্ম নেয়ার সাহস করে? -“..” -“আমাকে শুধু একটি কথা বল কেন তুমি অ্যাবরশন (গর্ভত্যাগ) কর নি? – “আমি কি বোকা নাকি? এটি স্বাস্থের জন্যে খারাপ। আমি যদি ভবিষ্যতে সন্তান ধারনের ক্ষমতা হারাই এতে?”

আমার মা বলে চলেন। তার ডিপার্টমেন্টে সম্প্রতি  আরেকটি মেয়ের সন্তান হয়েছে।  মেয়েটির বয়স ২৫ এবং সে মানসিক প্রতিবন্ধী। তার পিতা-মাতা এসেছিল সাথে তারা তার বর্তমান অভিভাবকও বটে। মাটি কাঁদছিলেন, আর বাবাটি চোয়াল নাড়িয়ে প্রাণপনে না কাঁদার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। তারা স্বাভাবিক, স্বাস্থবান শরীরের, তাদের মেয়ে এমনভাবে জন্মেছিল। সে প্রতিবন্ধীদের এক স্কুলে পড়ত, সেখানে এক ছেলের সাথে পরিচয়। তারা উভয়ই ছিল ২৫ বছরের, কিন্তু তাদের মানসিক বুদ্ধিবৃত্তি ১০ বছর বয়সীদের মত। সবাই জানত যে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক আছে। ডাক্তাররা বলেছিল যে তাদের এই শারীরিক অবস্থায় সন্তান হবার সম্ভাবনা নেই, কাজেই চিন্তার কোন কারন নেই। তবে তারা বলেছিল যে কনডমের ব্যাপারটি জানাতে।

তার একটি ছেলে হয়েছিল। বড় নয়, কিন্তু স্বাস্থ্যবান। এরকম ক্ষেত্রে ৯০% সম্ভাবনা থাকে বাবা মার অস্বাভাবিকতা পাবার। নতুন নানা-নানীরা এলেন। কাঁদতে কাঁদতে। কাগজ পত্রে সই করল যে তারা এই ছেলেসন্তানটিকে দিয়ে দিতে চায়। তারা অচিরেই অবসরে যাচ্ছে, এই মেয়ের দেখভাল করে তারা নি:স্ব, তারা সাধারণ মানুষ, হাজারো লাখ কামাই নয় তাদের। এই মেয়েটি শুধু প্রতিবন্ধি ভাতা (প্রায় ১০০ ডলারের মত) পাচ্ছে সরকারের কাছ থেকে। অতিরিক্ত টাকা তারা কোথায় পাবে? তারা মরে গেলে এদের দেখভাল করবে কে? এই মেয়ে তো তার ছেলেটিকে কোলেও নিতে পারে না, কাপড় পরাতে পারে না। আমাদের কাছে এই বাচ্চা আরও বোঝা হয়ে দাড়াবে। আমরা আমদের সমস্ত জীবন এভাবে কাটিয়েছি!!!…আমরা কি করে তাকে বাসায় নিতে পারি?

তবুও তারা শেষ পর্যন্ত ছেলেটিকে রাখল।

আমার মা বলেছে যে তারা প্রথমে বাচ্চাটি দিয়ে দেবার জন্যে কাগজে সই করেছিল। তারপর সেই মেয়েটি নবজাতকদের ডিপার্টমেন্টে ঢোকার মুখে দাড়িয়ে হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগল। তার বলার তো বোধগম্য ভাষা নেই, তাই  কেঁদে তার মনের ভাব প্রকাশ করতে লাগল। তার বুকের দুধ খাওয়াতে লাগল তার সন্তানকে। সে তাকে ছাড়তে চাইছিল না। নিয়ম লঙ্ঘন করে, বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, তারা বাচ্চাটির বাবাকে নিয়ে আসল।  আমার মা বলল যে তারা দুজন বাচ্চাটির কাছে দাড়িয়েছিল, তাকে স্পর্শ করছিল, এবং তাদের নিজস্ব ভাষায় কিছূ বলছিল। নার্সেরা ঐ রুম থেকে বের হবার সময় অশ্রুসম্বরণ করতে পারছিল না।

তারা যখন শিশূটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যাচ্ছিল, তারা ম্যাটারনিটি ওয়ার্ডের সব ডাক্তারদের একটি কেক উপহার দিল। যার উপর লেখা ছিল: “ইশ্বর আপনাদের সহায় হউন”। যার উপর লেখা ছিল: “ইশ্বর আপনাদের সহায় হউন”। আমার মা বলেছে: “এরকম কিছু একটা কিভাবে কাটা যায়?”

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .