- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মরোক্কো: ফেজে বিশ্ব ভক্তিমূলক সঙ্গীতের মেলা

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., মরোক্কো, আদিবাসী, ধর্ম, শিল্প ও সংস্কৃতি, সঙ্গীত

মরোক্কোর ফেজে অনুষ্ঠানরত ১৪তম বিশ্ব ভক্তিমূলক সঙ্গীত ফেস্টিভাল [1] প্রায় শেষ হয়ে আসছে। এবছরের ফেস্টিভাল সম্পর্কে মরোক্কোর স্থানীয় ও অতিথি ব্লগাররা তাদের অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। দ্যা ভিউ ফ্রম ফেজের ব্লগাররা যাদের অনেকে এই ফেস্টিভালের সাথে জড়িত ছিলেন, তাদের স্মরণীয় মূহুর্তগুলো লেখায় প্রকাশ করেছেন [2]। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মারি বোঁয়া সম্পর্কে লেখাটি [3]:

পুরো ফোস্টিভালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কনসার্টটির জন্য ভেন্যু হিসেবে আমরা বাথা জাদুঘরকে নির্বাচিত করেছিলাম এবং এটি আমাদের আশাহত করে নি। মারি বোঁয়া একজন অসাধারন শিল্পী এবং তার সামি [4] গানের নির্বাচনগুলো চমৎকার ছিল।

তার ব্যান্ড ও সহযোগী শিল্পীদের পরিবেশনা ও তেমনই চমৎকার ছিল। গেয়র্গ বুলজোর গিটার গানগুলোকে ভাল সঙ্গ দিয়েছে এবং ব্যাসে স্বেইন শুল্জ, ট্রাম্পেটে ওলে উয়র্ন মিকেলবাস্ট এবং পার্কাশনে গানার অগল্যান্ড স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন। প্রকাশিত অনুষ্ঠান সূচী থেকে বেরিয়ে গিয়ে বোঁয়া তার প্রথম দিককার গান যেমন গুলা গুলা এবং ঐতিহ্যবাহী জইক কন্ঠসঙ্গীতের মূর্ছনায় সবাইকে মাতিয়েছেন। যারা এটি দেখে অভ্যস্ত যে উচ্চস্বরে গান করার সময় শিল্পীরা মুখ যতটুকু সম্ভব খুলে থাকেন তারা নিশ্চয়ই অশ্চর্য হবেন যে বোঁয়া এটি সম্ভব করেছেন মুখ বন্ধ রেখে। তার ড্রাম বাঁজানো একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে পরিবেশনায়। কিন্তু তিনি যেমন বলেছেন “আমার ড্রাম ঠান্ডা আবহাওয়া সইতে পারে” – তিনি এক বোতল ‘সিডি আলী’ ড্রামের চামড়ায় ঢেলে বাজিয়েছেন।

ফেস্টিভ্যালের শেষে দ্যা ভিউ ফ্রম ফেজ কয়েকটি কথায় একে সংকলিত করেছে [5]:

মদিনা এবং অন্যন্য শহরে নয়দিন ব্যাপী বিকেল ও সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সঙ্গীতানুষ্ঠান, সুফি নাইট, শিল্পকর্ম প্রদর্শনী, বাচ্চাদের জন্যে পরিবেশনা ও বিনামূল্যে কনসার্ট ছাড়াও ছিল ভক্তিমূলক সঙ্গীত নিয়ে বিতর্ক, প্যালে জ্যামা তে আরও আলোচনা, দার বাথাতে আরও সহযোগী পরিবেশনা এ সব মিলে খুবই ব্যস্ত সময় গেছে আমাদের। আপনাদের কেমন লেগেছে?..

এবছরের অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু সমালোচনা ও ছিল:

২০০৮ সালের ফেস্টিভ্যালটি মনে রাখার মত কিছু ছিল না কারন মনে হয়েছে সব কিছূই স্বল্প বাজেটে করা হয়েছে। সবার একই অনুভুতি যে সঠিক শিল্পী নির্বাচন করে তাদের এই ফেস্টিভ্যালে আনার জন্যে শিল্প নির্দেশককে আরও বাজেট দেয়া উচিৎ। এর আগে আমরা ইওসু এনদুর বা রবি শন্করের মত নামী-দামী শিল্পীদের পেয়েছি যদের ইদানিং এখানে দেখাই যায় না।

তবে সামগ্রিকভাবে এর আয়োজন সম্পর্কে সবাই সন্তুষ্ট ছিল:

এই রকম বড় ফেস্টিভাল আয়োজন করা খুবই দুরূহ কাজ এবং দ্যা ভিউ ফ্রম ফেজ টিমের সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।


(ছবি: দ্যা ভিউ ফ্রম ফেজের [6] সৌজন্যে – ইসমাইল লো এবং হামাচা ব্রাদারহুডের পরিবেশনা)

এভরিথিং মরোক্কো [7]ও এই ফেস্টিভালে যোগ দিতে ফেজে গিয়েছিল এবং জানাচ্ছে:

ফোজ ফেস্টিভালে এ সপ্তাহে কয়েকটি চমক ছিল যার মধ্যে ছিল ফাদেল জাজিরির পরিবেশনা ‘হাধরা’ এবং বাব মাকিনায় আব্দেল ওয়াহাব দুক্কালীর বৃহস্পতিবার রাতের বিশেষ পরিবেশনা। আমরা শুনেছি ইলেক্ট্রিক গিটারে তুয়ারেগ, আরব অর্কেষ্ট্রায় স্যাক্সোফোন এবং বিশ্বের সব অন্চলের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যের ব্যবহার। এবং ফেজ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও একসাথে এই সকল বাদ্য দেখা যায় না।

দ্যা আর্ট অফ ড্রাম [8] যে এই সময় ঘটনা চক্রে সেখানে ছিল এই ফেস্টিভালের বাণিজ্যিকী করন সম্পর্কে বলেছেন:

অতি সাধারণ চিন্তায় ভক্তিমূলক সঙ্গীত স্বর্গের সাথে আত্মার একটি সম্পর্ক ঘটাতে চেষ্টা করে। ধর্মীয় (ভক্তিমূলক) সঙ্গীত অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন চার্চ বা মন্দে ইত্যাদির চত্বরে পরিবেশিত হয় যাতে জাগতিক প্রভাব কম থাকে। ভক্তিমূলক সঙ্গীত পরিবেশনার সময় মনচটি কি পবিত্র মন্দিরে পরিণত হয় না। সব ধর্মেই কি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের চত্বরের মধ্যে বাণিজ্যিকি করনে নিরুৎসাহ করে না? (হ্যা আমি জানি যে অনেক হিন্দু মন্দিরেই স্যুভেনির বেঁচে এবং ভ্যাটিকানেও উপহারের দোকান রয়েছে) নিশ্চয়ই জন ২:১৬ (বাইবেলের উদ্ধৃতি) খ্রীষ্টনদের জন্যে শুধু প্রযোজ্য নয় – মসজিদ, সিনাগগ বা যে কোন পবিত্র স্থানেই বস্তুবাদের কোন স্থান নেই। স্বর্গীয় সঙ্গীতের প্রতি কিভাবে মনকে সমর্পন করা যায় যদি মন্চের ১০০ ফুটের মধ্যে হকারের চিৎকার শোনা যায়? আমরা কোথায় ভক্তি এবং বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য করি?

তিনি এই ফেস্টিভালে প্রাচ্যের ধারণা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন:

আরেকটি বিষয় আমার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে যে ওরিয়েন্টালিজমের ধারণা কে জোড়ালো করা হয়েছে এই ফেস্টিভালে। বিখ্যাত জ্ঞানী এডওয়ার্ড সাঈদ ওরিয়েন্টালিজম সম্পর্কে বলেছেন যে পশ্চিমা দেশগুলোতে পূর্বের সংস্কৃতিগুলো সম্পর্কে বেশ ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়ে কিছু পশ্চিমাদের ধারণা যে পূর্বের ধর্মগুলো পশ্চিমা ঐতিহ্যগুলো থেকে আরও মিস্টিক (রহস্যময়) এবং তাই সেগুলো শ্রেয়তর। (ভারত সম্পর্কে এই ধারণা বেশী দেখা যায় কারন পশ্চিমারা মনে করে হিন্দু ধর্ম মিস্টিক ব্যাপারগুলোতে ভর্তি)

এই ব্লগার আরও যোগ করেছেন:

স্পষ্টত:ই আমার ফেজের বিশ্ব ভক্তিমূলক সঙ্গীত ফেস্টিভাল সম্পর্কে বেশ আবেগ কাজ করেছে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন আমার বেশ কিছু আপত্তি থাকা সত্তেও আমি অনুষ্ঠানটি সত্যিই উপভোগ করেছি এবং আমার পরবর্তী লেখাগুলোতে তা বোঝা যাবে। আমার সমালোচনাটুকু খোলা মনেই বিবেচনা করুন নতুবা অগ্রাহ্য করুন আর ম্যান রয় তো বলেছেনই “সব সমালোচকদের মেরে ফেলা উচিৎ”