গুয়েতেমালা: অ্যাক্টিভিস্টরা অদৃশ্যদের স্মরণে সাহায্য করছে

ল্যাটিন আমেরিকার সাম্প্রতিক দু:খজনক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে ‘অদৃশ্য হওয়া’ শব্দটি বেশ ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘অদৃশ্য’ বলা হচ্ছে সংঘর্ষ বা একনায়কতন্ত্রের শিকার যেসব মৃতদেহ খূঁজে পাওয়া যায় নি সেই সব ভুলে যাওয়া নাম কে। এই মাসে গুয়েতেমালায় ব্লগাররা বিভিন্ন কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছে যেখানে তারা জোর করে গায়েব করার অপরাধ সম্পর্কে তাদের অনুভুতির কথা সবাইকে জানাচ্ছে। তারা বলছে কিভাবে তা অনেক গুয়াতেমালার অধিবাসীকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সশস্ত্র সংগ্রামের সময়, আর তার সাথে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন আর চিত্র প্রদর্শনীতেও তারা অংশগ্রহণ করছে।

যারা অদৃশ্য হয়েছে তাদের নিয়ে গবেষণা করে হাভারফোর্ড কলেজের দুইজন শিক্ষার্থী তাদের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন:

যারা এর জন্যে দায়ী তারা যদি সরাসরি সত্যকে অস্বীকার করে তাহলে সেটি সব থেকে বড় অপমানজনক হয় যারা বেঁচে গেছে আর যারা নিহত হয়েছে তাদের উভয় পক্ষের জন্য। সব থেকে বড় অবিচার হলো এই বিভীষিকা থেকে নিরীহ, গরীব আর অপাংকতেয় ব্যক্তিদের বাঁচতে না পারা।

এমন একজন ডন আন্দ্রেজ। ৮২ বছর বয়েসে সে তার দুই মেয়ে আর নাতির কবর খুঁড়ছে যাদেরকে মিলিটারি ১৯৮২ এর জুলাইতে গলায় ফাঁস দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। মাটিতে কোঁদালের শব্দ আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেল আর অবশিষ্ট সবুজ কাপড় বেরিয়ে আসল। সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো আর তার সাথে আমরাও। ডন আন্দ্রেজ তখন যে কষ্টের বহি:প্রকাশ ঘটালো তা তার ২৫ বছরের শোকের বহি:প্রকাশ। ২৫ বছর ধরে সে জানত না তার দুই মেয়ে কোথায়। এই দেশের ইতিহাস দেখে সে নিশ্চিত ছিল যে তারা মারা গেছে। একই কথা তার ৯ মাস বয়সী নাতির জন্যও। এই জীবন যা ২৫ বছরের হতে পারত আজকে, আমাদের থেকে বেশী, তাকে আরম্ভ হতে দেয়া হয় নি। আমরা যখন এই তিনটি ম্মৃতদেহ কবর থেকে তুলছিলাম তখন ডন আন্দ্রেজের জন্য আমাদের খুবই খারাপ লাগছিল। কিন্তু সরে আসার পর আমরা বুঝলাম যে এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। আরও ৫ লাখ ডন আন্দ্রেজ আছে।

অ্যান্টিগুয়া, গুয়েতেমালায় সম্প্রতি একটা চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে ‘দ্যা ডিজএপিয়ার্ড’ নামে যা ‘ফে দে রাতা’ ব্লগ ব্যাখ্যা করেছে:

সচল প্রদর্শনী ‘দ্যা ডিসাপিয়ারড’ ল্যাটিন আমেরিকার ২৫ জন শিল্পীর কাজ প্রদর্শন করছে যারা এই ব্যাপারে তাদের মনোভাব জোরালো চিত্রকর্ম দিয়ে প্রকাশ করেছেন। এটা উত্তর ডাকোটার আর্ট মিউজিয়ামের ডাইরেক্টর লরেল রয়টারের উদ্যোগ আর এখানে সেইসব মানুষের স্মৃতি ধরা হয়েছে যারা আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, গুয়েতেমালা বা উরুগুয়েতে একনায়কতন্ত্রের সময় গায়েব হয়েছে।

প্রদর্শনীর কেন্দ্রে ছিল হরার ভ্যাকুই নামে পারফরমেন্স আর্ট। আর্টিস্ট স্টিফেন বেনকাওম বাইরের একটা রাস্তায় বালিতে একটি পঙতি লিখেছেন: ”যখন কেউ থাকে না, তার উপস্থিতি আর কখনই তত জোড়ালো থাকে না”। বাতাসে আস্তে আস্তে বালি উড়ে যাচ্ছিল। অন্যান্য কাজ সম্বন্ধে প্রদর্শনীর ব্লগে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যেমন জেসিকা লুগানার “১২০ মিনিটের নিরবতা” যেখানে দেখা যায় শিল্পীরা সৈন্যদের ইউনিফর্ম থেকে কাপড়ের টুকরো কাটছে।

উপরের স্লাইডশোটি লোস ডেসপারেসিডোস ব্লগ এর সৌজন্যে

সশস্ত্র সংগ্রামের সময় গুয়েতেমালায় অনেক ভুগেছে, নাগরিদের প্রতি আগ্রাসন, নির্যাতন চলেছে আর ব্লগার লা লাদিলা (স্প্যানিশ ভাষায়) অনুয়ায়ী প্রায় ৪০ হাজার লোক গায়েব হয়ে গিয়েছিল সেনাবাহিনি নিয়ন্ত্রিত সরকারের হাতে। বেশীরভাগ লোকজনকে গায়েব করে দেয়ার জন্যে দায়ী করা হয় সেনাবাহিনীকে। যার ফলে এইচ.আই.জে.ও.এস সংস্থা আর্মি দিবস আর স্বাধীনতা দিবসে সেনাদের প্যারেডের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে যা মিমুন্দো.অর্গ ব্যাখ্যা করেছে:

আমরা জুন ৩০ (সেনা দিবস) আর ১৫ সেপ্টেম্বর ( স্বাধীনতা দিবস) এর সেনা প্যারেডের বিলুপ্তি দাবী করছি। সেনা বাহিনীর শক্তির এমন প্রদর্শনী গুয়েতেমালার সমাজে অপমানকর হিসেবে দেখা যায়। একে পরিষ্কার দণ্ড মওকুফের নিদর্শন মনে হয় যখন এই প্রতিষ্ঠানকে বেশ কয়েক (জাতীয় আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে) মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এটি একটি ধাঁধা যে শান্তি চুক্তির পর (যা ৩৬ বছরের যুদ্ধ শেষ করেছে) এখনো আমরা এই ধরনের প্রদর্শনী করি যা সংঘাত আর সমগ্রতাবাদী প্রতিষ্ঠা করে একটা দেশে যেখানে গণতন্ত্র নির্মানের চেষ্টা চলছে।

এবং তারা সফল হয়েছে। সেনা দিবসের চল শুরু হওয়ার পর গুয়েতেমালায় প্রথমবার এই প্যারেড প্রকাশ্যে হবে না। কিছু ব্লগার এই সিদ্ধান্তে আনন্দিত, অনেক কর্মী এটা থামাতে সই সংগ্রহ করেছেন। ব্লগার হিস্টোরিকা ট্রান্সিটোরিয়া ফলাফল নিয়ে খুশি:

আমাদের ইতিহাস একটি ভীতি আর বর্বরীয় কাজ থামানোর প্রতীক হিসাবে রয়েছে, একসঙ্গে আমরা সেনা প্যারেড থামাতে সমর্থ হয়েছি, তাদের সাহায্যে যারা তাদের নিরবতা ভেঙ্গেছে কাগজে তাদের সই বা আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে। এগুলো এসেছে সান মারকোস, ইক্সকান, পেতেন, এল এস্টর, কোবান থেকে…

তবে সবাই একই অবস্থান নেন নি এবং একে সমর্থন করেন নি। সেনা সদস্য আর ব্লগার পার্স্পেক্টিভা মিলিটার লিখেছেন (স্প্যানিশ ভাষায়):

যারা তদের প্রিয় একজনকে সশস্ত্র সংগ্রামের সময় হারিয়েছেন তাদের মনোভাব বোঝা যায়, তবুও অনেকে যারা তদের আত্মীয় হারিয়েছেন, যারা সেনা সদস্য ছিল, তারা সংঘাতী মনোভাব দেখান না শান্তি চুক্তির ১২ বছর পর।

যদিও অনেক অপরাধের বিচার হয় নি আর সরকার সেই আর্কাইভ বন্ধ রেখেছে যেখানে গায়েব হয়ে যাওয়া লোকদের সম্পর্কে তথ্য আছে। অনেক গুয়েতেমালাবাসী তাদের ইতিহাস জানতে সচেষ্ট হয়েছে আর যারা অপরাধের শিকার হয়েছে তাদের স্মরন করছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .