ভিয়েতনাম: সাংবাদিককে আটকের ঘটনা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে

মনে হতে পারে যে ভিয়েতনামের প্রচার মাধ্যম ক্রমান্বয়ে আরও স্বাধীন হচ্ছে, কিন্তু সম্প্রতি দুইজন সাংবাদিক আর একজন নামকরা তদন্তকারীর গ্রেপ্তার দেখিয়েছে সাম্প্রতিক এই অগ্রগতি স্থায়ী নয়।

২০০৬ সালে বিশ্ব বানিজ্য সংস্থায় ভিয়েতনামের ঢোকার চেষ্টায় সংবাদপত্র প্রচন্ড উৎসাহে রিপোর্ট করেছে যা আগে দেখা যায় নি। অপরাধী চক্রের নেতা নাম কান এর গ্রেপ্তার আর শাস্তির পর দেশের বড় গল্প হলো ২০০৬ সালের মাঝামাঝি প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট ১৮ (পি এম ইউ ১৮) এর কেলেন্কারী। বিষয়টি ছিলো যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ আর বিদেশী অর্থে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ক্ষতির অভিযোগ নিয়ে সংবাদপত্রের রিপোর্ট। এইসব রিপোর্ট আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমেও এসেছিল আর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পাটি বিব্রত হয়েছিল।

এই কেলেন্কারীর কেন্দ্রে ছিলেন কেসের তদন্তকারী সিনিয়র পুলিশ অফিসার, মেজর জেনারেল পাম জুয়ান কুয়াক, যিনি এখন অবসরপ্রাপ্ত। তাকে নায়কের মর্যাদা দেয়া হয়েছিল যোগাযোগ মন্ত্রানলয়ের দুর্ণীতি উন্মোচনের জন্য। তদন্তের এক সময় তিনি থান নিন পত্রিকার সাংবাদিক নুয়েন ভিয়াত চিয়েন কে একটি স্বাক্ষাৎকার দেন, যার উপর ভিত্তি করে নুয়েন পিএমইউ ১৮ এর ম্যানেজার বুই তিয়েন দুং এর ঘুষ নেয়ার চেষ্টার উপর লেখেন। দুংকে যোগাযোগ মন্তানলয়ের ডেপুটি মন্ত্রী নুয়েন ভিয়েন তিয়েন এর সাথে গ্রেপ্তার করা হয়। এই মন্ত্রীর বিরুদ্দৈ অভিযোগ আছে যে তিনি মন্ত্রানলয়ের ৭০% টাকা দুনীতিগ্রস্ত পি এম ইউ ১৮ প্রকল্পে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যোগাযোগ মন্ত্রী দাও দিন বিন পদত্যাগ করেন কিন্তু তাকে আটক করা হয়নি।

সংবাদপত্র জনগনের ক্ষোভ কে উসকে দিল আর দুং, তিয়েন আর বিন কে দুর্ণীতিগ্রস্ত ভিলেন হিসেবে দেখালো। রিপোর্টে তাদের বিচারের দাবী দেখা গেল যা শক্তভাবে নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াতে একটা সাহসী পদক্ষেপ। পশ্চিমে মিডিয়া কোন ব্যক্তিকে দোষী বা নির্দোষ বলতে পারে না বিচারের আগে, তাই মনে হয় ভিয়েতনামি মিডিয়া একটু বেশী করে ফেলেছিল।

কিন্তু এই বছর পেন্ডুলাম ঘুরে গেছে। ২০০৮ এর প্রথম দিকে পিএমইউ ১৮ এর কর্মকর্তাদের বিচার শুরু হয়েছে আর নুয়েন ভিয়েত তিয়েন যার বিরুদ্ধে পিএমইউ ১৮ এর যানবাহণ ব্যক্তিগত ব্যবহারের আর ভূমি মামলায় একজন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার অভিযোগ ছিল তাকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এপ্রিলে তাকে কমিউনিস্ট পাটির সদস্য হিসাবে আবার নেয়া হয়। মে মাসে তদন্তকারী পাম জুয়ান কুয়াক আর সাংবাদিক নুয়েন ভিয়েত চিয়েন ও গুয়েন ভান হাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার আর দুং কেলেন্কারীতে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে ঘুষ নেয়ার মিথ্যা তথ্য ছাপার অভিযোগ করা হয়।

ইন্টারনেটে এ নিয়ে অনেক বিতর্ক হচ্ছে এবং চিয়েন আর হাই এর সহকমীরা তাদেরকে সমর্থন করছে ছাপানো প্রচার মাধ্যমে আর অনলাইনে। থান নাইন সংবাদপত্রের সম্পাদক নুয়েন চং খে সাংবাদিক চিয়েনকে সমর্থন করেছেন:

“Phóng viên của tôi không bao giờ bịa đặt, mà làm báo không cho phép chúng tôi bịa đặt. Chúng tôi chống tham nhũng hay chống tiêu cực phải dựa trên cơ sở của sự thật và được cơ quan chức năng chính thức cung cấp.

Ngay như bài “Bùi Tiến Dũng đã khai đưa tiền chạy án cho gần 40 nhân vật quan trọng” đăng trên Thanh Niên có đến hai vị tướng xác nhận, và chúng tôi có băng ghi âm. . . Chúng tôi thông tin là có nguồn tin cung cấp, chứng cứ.”

“আমার সাংবাদিক কিছু বানিয়ে লেখেনি, আমরা সাংবাদিক আর কিছু বানানোর অধিকার আমাদের নেই। আমরা যারা অর্থ আত্মসাৎ আর এইসব অনৈতিক ব্যাপারকে সমর্থন করি না তাদেরকে আমাদের প্রতিষ্ঠানকে সত্যের ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর চেষ্টা করতে হবে।

যেদিন ‘বুই তিয়েন দুং বলেছেন যে তিনি ৪০ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে ঘুষ দিয়েছেন’ এই সংবাদ ছাপা হলো থান নিয়েন সংবাদপত্রে তখন আমাদের কাছে দুইটা প্রমান আর একটা স্বাক্ষরিত বক্তব্য ছিল। আমরা আপনাদের জানাতে চাচ্ছি যে আমাদের কাছে সঙ্গত খবরের সুত্র আর প্রমান আছে (এবং রিপোর্ট ভিত্তিহীন নয়)।”

সাইগন গিয়াই পং এর সাংবাদিক দোয়ান হীপ মনে করেন যে শুধু একটি রিপোর্টের জন্য চিয়েন এর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্যের অপলাপ আর অবাস্তব:

“Họ bị khởi tố về tội lợi dụng chức vụ quyền hạn trong khi thi hành công vụ nhưng cụ thể là lợi dụng thế nào thì chưa ai biết cả. Nếu theo báo Thanh Niên, sai phạm của anh Nguyễn Việt Chiến ở chỗ đưa tin Bùi Tiến Dũng khai đã đưa tiền chạy án cho gần 40 nhân vật quan trọng, thì không đáng phải xử lý hình sự. Hẳn bên trong đó phải còn điều gì khuất tất.”

“তাদেরকে তাদের কাজের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য বন্দী করা হয়েছে, কিন্তু আসলে তাদেরকে একটা ব্যাপারে ব্যবহার করা হচ্ছে যা কেউ বুঝছে না। আমরা যদি থান নাইন সংবাদপত্রের রিপোর্টটি দেখি দেখব যে নুয়েন ভিয়েত চিয়ানের রিপোর্টটিতে যা ভুল রয়েছে তা খুবই নগন্য। তাহলে সেটাকে কিভাবে একে ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে দেখা যায়? এর অভ্যন্তরে কিছু একটা আছে।“

হ্যানয় থেকে লাই থং মনে করেন যে এই অবস্থা সরকারের ভিতরের বড় ধরনের সংঘর্ষের আভাস। গত ২০শে মে এশিয়া সেন্টিনেলে প্রকাশিত একটা লেখার উপর লাই মন্তব্য করেছেন:

“এটা কমিউনিস্ট পাটির ভিতরের দলের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই এর ফলে যে অসহযোগ তার আভাস। শক্তিশালী রক্ষণশীল চীন ঘেঁষা (আর রাশিয়া ঘেঁষা) অংশ নং দুক মান চায় দলের রেডিকাল অংশকে একটা কঠিন আঘাত করতে যারা দুনীতি রোধ করে পশ্চিমা গনতন্ত্রের দিকে যেতে চায়…”

চুয়ং, একজন ভিয়েতনামী-কানাডীয় ওন্টারিও থেকে ভিয়েতনামী সরকারের সমালোচনা করেছেন:

“Các nhà báo viết về vụ PMU 18 đều bị bắt, cộng thêm thiếu tướng Nguyễn Xuân Quắc cũng cùng chung số phận, tôi càng không biết Việt Nam nằm đâu trên thước đo công lý, công bằng xã hội và tự do dân chủ của người dân…”

“যেসব সাংবাদিক পিএমইউ ১৮ নিয়ে লিখেছে সবাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এমনকি তদন্তকারী নুয়েন জুয়ান কায়াকের একই পরিণতি হয়েছে, আর আমি আরো বেশী প্রশ্ন করি যে ন্যায় বিচার, সামাজিক সমতা আর মানুষের জন্য গনতন্ত্রের ব্যাপারে ভিয়েতনাম কোথায় দাড়াচ্ছে…”

ভিয়েতনাম নিউজ এজেন্সির একজন সাংবাদিক, হুই মিন সবকিছু অভ্যস্তভাবে নিয়েছে:

“Khi ông Nguyễn Việt Tiến còn bị giam giữ, tôi đã đọc một bài báo đăng tải hình ảnh ông Tiến cầm guitare và hát. Hình ảnh đó làm tôi chững lại và suy nghĩ, ông Tiến, trước hết cũng là một con người, với biết bao vui buồn của ông ấy…. Tôi chỉ có một câu hỏi thế này thôi: ‘Tại sao, trong vụ án này, lại có quá nhiều, quá nhiều người buồn đến vậy?. Tôi cũng đang như anh Việt Chiến, “bất lực trong cách giải thích” và cũng chẳng có gì cả, “ngoài những nỗi buồn”.’”

“যখন নুয়েন ভিয়েত তিয়েনকে বন্দী করা হয়, আমি একটা খবর পড়েছি যেখানে তার ছবি ছিল গিটার হাতে গান গাওয়া অবস্থায়। এই ছবির কারনে থেমে ভাবতে হয় যে তিয়েন সব কিছুর উপরে একজন মানুষ আর আমি জানি সে কি দু:খ ধারণ করছে… আমি শুধু একটা প্রশ্ন করতে চাই কেন এই সময়ে আমাদের এত এত মানুষ এ নিয়ে মুষঢ়ে আছে? আমি এখনো বলব যে ভিয়েত তিয়েন তার ব্যাখ্যায় নিরুপায় ছিল, আর শোকাহত হওয়া ছাড়া তার কোন মানে নেই।”

মিন একটি জিনিষ ঠিক বুঝেছেন, যদিও না বুঝে। ভিয়েতনামে প্রচার মাধ্যমকে কঠিন হস্তে দমন করা হয়, কিন্তু হঠাৎ করে একজন সাহসী রিপোর্টার পরিবর্তন আনতে চান জোর করে। এরা সবার থেকে বেশী ভালো করে জানতো তাদের বিপদজনক অবস্থান আর তারা বুঝে শুনে এই ঝুঁকি নিয়েছে। যারা পরিবর্তন আনতে চেয়েছে তাদের পরিণতি ভিয়েতনামের প্রেসের সত্যিকারের অবস্থার কথা জানাচ্ছে আর সত্য রিপোর্ট প্রচার করা সাংবাদিকদের আরও ভীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .