বাহরাইন: বাংলাদেশীরা নিষিদ্ধ

বাহরাইন কিছু দিন আগের এক বিয়োগান্তক ঘটনার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশী নাগরিকদের কাজের অনুমতি প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে। একজন বাংলাদেশী মেকানিক একটা কাজের জন্য একজন বাহরাইনীর কাছে অতিরিক্ত ৫০০ ফিল (১.৩ ডলার) দাবী করে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাকে খুন করে। এক দল সংসদ সদস্য প্রায় ৯০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিকদের বহিস্কার করার একটা প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছে সংসদে কারন তারা নাকি অন্য সম্প্রদায় থেকে সবচেয়ে বেশী “মর্মঘাতী ও বিভিষীকাময় অপরাধ” সংগঠিত করে থাকে।

মাহমুদ এই ক্রোধান্বিত প্রতিক্রিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হন নি। এবং তিনি বলেছেন:

কিছু বিষয় আছে যা প্রমাণ করে যে আমাদের সমাজ একটা বেপরোয়া অবস্থার মধ্যে আছে। আমাদের সংসদ সদস্য ও তাদের নির্বাচকমন্ডলী নেয়া বর্জনীয় মানদণ্ড তেমন নির্দেশনার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। এরা উভয়ই বিচ্ছিন্ন ঘটনার কারনে চটজলদি একটা জনগোষ্ঠী, জাতি এবং এমনকি সভ্যতাকে দোষী বানিয়ে ফেলে এবং এক মুহূর্ত খরচ করে আমাদের দূর্বলতা এবং মৌলিক মানবীয় মূল্যবোধে সংকীর্ণতা বিবেচনা করে না…আপনি যদি সত্তুর দশক বা তার আগে বসবাসকারী সৌভাগ্যবান কোন বাহরাইনীর সাথে কথা বলেন, তার স্পষ্টভাবে বলবে যে তাদের এমন কোন অভিজ্ঞতা জীবনে হয় নাই, তারা নিশ্চিত করবে যে তারা তাদের প্রতিবেশীদের বর্ণ ও ধর্মকে বেশী গুরুত্ব দেয় নি। তারা আরো বলবে যে তারা অভ্যাসগত ভাবেই একে অপরের সাথে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মিথস্ক্রিয়া করত, দেখা সাক্ষাৎ করত, ব্যবসা করত, এমনকি সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ বহুজাতিক ফ্রন্ট তৈরি ও পরিচালনা করে বৃটিশ আধিপাত্যের বিরুদ্ধে একত্রে যুদ্ধ করেছিল।

বিভাজকদের মধ্যে বেশীরভাগ বাহরাইনি সমস্ত চিন্তা তখন উত্তীর্ণ করেছে। ভিন্নতাকে তারা উদযাপন করেছে, প্রানান্তকর চেষ্টায় একে অন্যের ছিদ্র অন্বেষণ করে একে অপরের নিরাপত্তাকে ঘায়েল করার চেয়ে। বিশাল পার্থক্য সেই সময় এবং বর্তমানের মধ্যে আর স্পষ্ট হতে পারে না। এখন আমাদের অপ্রতিরোধ্য দেয়ালের কঠোরভাবে সীমায়িত সমাজ যেখানে অন্যদের প্রতি সন্দেহ ও ঘৃণা কেবল বিরাজ করে।

এই “আমরা এবং তাহারা” অবস্থা সরকারের চোখে পড়ে না – তাদের ঊর্ধ্বতন স্তর থেকে যত অস্বীকার আমরা শুনি না কেন – বৈষম্যমূলক কর্মসংস্থান নীতির প্রমাণ – সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত নাগরিক সুবিধার শর্তসাপেক্ষে পুরস্কার এবং অর্থনৈতিক অবস্থার অসমতা থাকা সত্ত্বেও। চলুন আমরা তাদের মনে করিয়া দেই যে তাদের দায়িত্ব পার্থক্যসমূহ দূরীভূত করা এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা, এবং অব্যাহত ও অহেতুক ভাবে তাদেরকে হেয় না বানানো। একজন মানুষের রাগের মুহূর্তের অস্বাভাবিক পরিণতিতে বাংলাদেশীদের বহিস্কার ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার অর্থ হচ্ছে আমাদের প্রধান বাহরাইনী বৈশিষ্ট্যে বর্ণবাদের তৈরি ও রপ্ত করার অঙ্গীকার।

রিশিয়েজ ঐ পোস্টে মন্তব্য করেছেন:

আমার শোনা সবচেয়ে হীন বিষয় হচ্ছে এটা এবং স্পষ্টভাবেই এটি বর্ণাবাদী বৈষম্য। আমি বিশ্বাস করতে পারি না যে আমাদের সরকার এমন করেছে এবং অনেক মানুষ এই আইনকে সমর্থনও দেয়। আপনি সমস্ত জাতিকে শাস্তি দিতে পারেন না তাদের কয়েকজন নাগরিকের বিচ্ছিন্ন কর্মকান্ডের জন্য। বাহরাইনীরা কেমন বোধ করবে যদি একজন বাহরাইনী কর্তৃক একজন আমেরিকানকে খুনের কারণে সমস্ত আরবরা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা ভোগ করে? আমি ভীষণ ভাবে ক্ষুব্ধ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .