- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মিশরীয় নারী ও শিশুরা প্রতিহিংসার শিকার

বিষয়বস্তু: মিশর, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, ধর্ম, মানবতামূলক কার্যক্রম, মানবাধিকার, লিঙ্গ ও নারী

ফানটাসিয়া [1]একজন বালিকা যে মিশরীয় নারীদের একটা চমৎকার ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। তার নিজের সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে বলেছে:

“একটা মেয়ে হতে পেরে আমি গর্বিত এবং সব নারীর মধ্যে আমি এই কথাটি ছড়িয়ে দিতে চাই। নারীর বিরুদ্ধে ইতিহাস বাহিত সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ খণ্ডন করে নারীর শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস করি। বিশেষ করে আমাদের দেশে আমি চাই মেয়েরা নিজেদের বিশ্বাস করতে শুরু করবে এবং সক্রিয় ভাবে নানা কাজে যোগ দিয়ে সমাজকে ইতিবাচক পরিবর্তন অর্জনে সহায়তা করবে এবং মূল্যবান নাগরিক হিসেবে পরিগণিত হবে।”

মিশরীয় সমাজের সর্বত্র বিরাজিত কিছু জটিল বিষয় তুলে ধরেছে ফ্যানটাসিয়াজ ওয়ার্ল্ড ব্লগ যেমন নারীর অধিকার, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং মিশরীয় ও আরব সমাজে নারী-পুরুষ সম্পর্ক বিষযে সাধারণ ভুল ধারণাগুলো। সাম্প্রতিক একটা পোস্টে তিনি একটা বিষয় তুলে ধরেছেন কিভাবে মিশরীয় নারী ও শিশুরা ঐতিহ্য, আইন ও মুসলিম ব্রাদার্সদের [2] প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে।

তার পোস্টে ফ্যানটাসিয়া মিশরে শিশুর অধিকার সংশ্লিষ্ট আইনের ভিত্তি তুলে ধরেছেন যা বিতর্কের এক ঘূর্ণিঝড়ের ফলাফল স্বরূপ সংশোধন করা হয়েছে। মিশরীয় সংসদে ৮৮টি আসন প্রাপ্ত মুসলিম ব্রাদারহুডের (এমবি) হিংস্র প্রতিবাদের কারণে ধারাগুলো পুন:লিখিত হয়েছে। ফ্যানটাসিয়া লিখেছে: “যে সমস্ত মানুষ মুসলিম ব্রাদারহুডের তথ্যসূত্র ও তাৎক্ষণিক বিচারে আস্থা রাখে তাদের কাছে এমবি বিরোধীতার বিষয়গুলোকে বিকৃত করে ভয়ংকর পোষাকে উপস্থাপন করে”।

অনেক গভীর পর্যবেক্ষণসহ মিশরীয় একজন সাধারণ জননীর জীবন্ত নরকের জীবন চিত্রিত করেছে ফ্যানটাসিয়া; যতক্ষণ পর্যন্ত তার স্বামী সন্তান জন্ম দিতে চাইবে ততক্ষণ পর্যন্ত নারীটির বলার থাকে না কতটা সন্তান সে ধারণ করবে, তার দায়িত্ব কেবল একজন বাধ্যগত স্ত্রী হিসেবে স্বামীর সন্তান উৎপাদনকে অনুমোদন দেয়া।

“ তারপরে, সে সেই শিশুদের যত্ন নেবার দায়িত্ব পায়, একাকী বড় করে তোলে (ঠিক একজন একাকী মায়ের মত), তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখে, স্কুলে নিয়ে যায়, বাড়ীতে স্কুলের পড়া তৈরীতে সাহায্য করে (যদি মা শিক্ষিত হয়ে থাকে)। দৈনন্দিন ক্লান্তিকর সাংসারিক খুঁটিনাটি কাজগুলো এবং স্বামীকে পরিতৃপ্ত করার সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বনের পাশাপাশি সে এগুলো করতে থাকে। যার অর্থ, মূলত এই নারী তার নিজের দিকে তাকানোর মত কোন সময় পায় না” ফ্যানটাসিয়া বলেন।

মিশরে এটা খুব বিরল দৃশ্য নয় যে পুরুষটি ইচ্ছেমত নির্দয়ভাবে তার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে পিটানোর অধিকার সংরক্ষণ করে এবং তা অপরাধ বিবেচনা করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা যায় না – যদি না এই মারের কারণে তাদের কেউ মরে গিয়ে থাকে। কেন?

ক্রুদ্ধ ফ্যানটাসিয়া ব্যাখ্যা করেছেন, “কিছু উন্মত্ত নিষ্ঠুর মানুষ দাবি করে যে পুরুষদের স্ত্রী ও সন্তাদের নিয়মানুবর্তি করার জন্য ইসলামে এটা একটা স্বীকৃত পন্থা”।

২০০৮ সালে, সর্বপ্রথম, মিশরীয় শিশুদের রক্ষা করার জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। ফ্যানটাসিয়ার মতানুযায়ী, ঐ আইনগুলোতে আছে:

১. নারীদের খৎনা বা ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন [3] (এফজিএম) চর্চা বন্ধ করা এবং এটাকে একটা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে আইনত দণ্ডনীয় ঘোষণা করা।

২. পিতা-মাতা কর্তৃক তার সন্তানকে নিষ্ঠুরভাবে মারাকে শিশু অধিকার লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করা, যদি এতে তাদের মারাত্মক জখম বা অঙ্গহানি ঘটে পিতামাতার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের অভিযোগ দায়ের করার অধিকার থাকবে।

৩. মেয়েদের বিবাহের বয়স ১৮ তে উন্নীত করা এবং এর কম বয়সী কোন মেয়ে বিবাহের বৈধ সনদ পাবে না।

৪. বিবাহ বহির্ভূত গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্ম দেয়ার ক্ষেত্রে মাতার নামে সন্তানের নাম নিবন্ধন করার অধিকার প্রদান।

মুসলিম ব্রাদারহুড এই বলে বিরোধিতা করেছে [4] (আরবীতে) যে:

১. নারীদের খৎনা যার যার পছন্দ হিসেবে রাখতে হবে। যদি পিতামাতা এই পদ্ধতি অনুসরণ করে তাদের কন্যাদের কুমারীত্ব সংরক্ষণ করতে চায়, তবে তা কন্যাকে রক্ষা এবং তার ভালমন্দের সিদ্ধান্ত নেবার নিজস্ব ধরণ বিবেচনা করতে হবে!

২. দি মুসলিম ব্রাদারহুড মনে করে অধীনস্তদের শাস্তি প্রদান বন্ধ করার বিধান পশ্চিমা সমাজ থেকে আমদানীকৃত এবং সন্তানদের নিয়মানুবর্তি করার জন্য ইসলামের মতানুযায়ী এটা একটা স্বীকৃত পদ্ধতি।

৩. কুমারীত্ব বজায় রাখার নামে শিশুদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া এবং তরুন একটা পরিবার গঠনের ধারণাকে মুসলিম ব্রদারহুড পছন্দ করে।

৪. পাপের ফসল সন্তানেরা তাদের ব্যাভিচারী মায়ের মতই নিন্দিত হবে। যদি এই আইন গৃহিত হয়, তবে সমাজ ও পারিবারিক বন্ধন ধ্বংস হবে এবং নারী-পুরুষকে অবৈধ যৌনতা থেকে ফেরানোর আর কোন উপায় থাকবে না।

“ ঠিক ঠিক, মহান পৌরুষত্ব দেখানো পুরুষ! তো, এই হচ্ছে ধর্ম, হাহ? আমাদের মনে হয় এটা কিনতে হবে, ঠিক নয় কি? আপনাদের কাছে ইসলাম হচ্ছে এমন একটা ধর্ম যা নির্যাতনকারী, মনোবৈকল্যগ্রস্থ ও নিষ্ঠুরদের পুরস্কৃত করে, যখন তা নারী ও শিশুদের শাস্তি দেয়ার অধিকার দেয়, মানে পৃথিবীর জঞ্জালদের, ঠিক? আমাকে এখন স্পষ্টভাবে বিষয়টি দেখতে দিন। আপনাদের মতানুযায়ী আমরা আকাশে অবস্থিত একজন অসুস্থ্য মানুষের পূজা করছি …. এজন্য যে আপনি যার পক্ষ হয়ে কথা বলার দাবী করছেন সে কোনভাবেই একজন ইশ্বর হতে পারেন না, সে এমনকি একজন মানুষ হবার যোগ্যতাও রাখেন না! কি ভয়ংকর এক দঙ্গল মনোবৈকল্যগ্রস্থ! আমি বাজি ধরতে পারি শয়তানেরও এর চেয়ে বেশী নৈতিকতা আছে” – শেষ করেন ফ্যানটাসিয়া।