লেবানন: ধর্মঘট তিক্ত হয়ে গেছে

৭ই মে দিনটি একটি সাধারণ ধর্মঘটের দিন ছিল যেখানে সরকারের অর্থনৈতিক নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং স্বল্প বেতন নিয়ে মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। ধর্মঘটের কর্মসূচী বলবৎ থাকলেও কর্মচারীদের সংগঠন বিক্ষোভ কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নিয়েছে কেননা লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় সরকার পক্ষের এবং বিপক্ষের মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ছিল। এই ঘটনাবলীর উপর ব্লগাররা দ্রুতই তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এখানে তাদের মন্তব্যের কিছু প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হচ্ছে, যদিও পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাচ্ছে -গতকালের গন্ডগোল খুব দ্রুত বৈরুতের রাস্তায় বন্দুকযুদ্ধে রুপ নেয়। এই সংকট নিয়ে ব্লগারদের কিছু বর্ণনা এবং প্রতিবেদন ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে:

তানতুলাস এর মন্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে-লেবানীজরা কি ভয় পায় ?? “গৃহযুদ্ধ”:

নিজেদের দরজায় ধাক্কা দেখে লেবানীজরা দেখতে গেছে কে? ওহ, গৃহযুদ্ধ?? এই ১৮ বছর কোথায় ছিলে?? আমরা তোমাকে খুব অনুভব করেছি। তোমাকে স্বাগতম।

রামি তার বিরক্তি প্রকাশ করেছে:

যারা নিজেদের ফেরেশতা বলে তাদের নিকুচি করি, যেখানে সবাই জানে একটা যুদ্ধ শুরুর জন্য দুই পক্ষের দরকার এবং ৮ই মার্চ এবং ১৪ই মার্চ দুটিই অলুক্ষুনে ***…আমি এখন কাজে আছি এবং আমি এখনো জানি না বাড়িতে ফিরে যাওয়া নিরাপদ হবে কিনা, ওহ যারা এই অবস্থা সৃষ্টি করেছে তাদের আবারও ***

দ্য ইনার সার্কেল ব্যাখ্যা দিয়েছে কেন সে এখন নিজেকে লেবনীজ ভাবতে লজ্জা পাচ্ছে:

এসব কিছুর মধ্যে যে বিষয়টি সবচেয়ে খারাপ, তা হল লেবানীজরা ভাবে তাদের আশেপাশের প্রতিবেশীদের থেকে তারা একটু উঁচুতে অবস্থান করে। কিন্তু পৃথিবীতে বেশীর ভাগ মানুষই জানে না লেবানন মানচিত্রের কোন কোনায়। আমার জন্য, বর্তমানে লেবানন বেশীর ভাগই নিচু শ্রেণীর বাজে মানুষের দ্বারা ভরে গেছে যারা দেশের এমন কোন ভাল ইমেজই তুলে ধরতে পারে না যা কয়েকজন বুদ্ধিজীবি দেখাতে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে। সব মানুষ আজকের বিক্ষোভের মূল উদ্দেশ্যই ভুলে গেছে এবং তা তাদের ১০ মিনিটের প্রদর্শনীর মধ্যেই দৃশ্যমান।

এ্যাংরি আরব বিশ্লেষণ করেছেন সামাজিক, ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক দৃষ্টিভংগী থেকে লেবানন এর মধ্য দিয়ে কোথা থেকে কি করতে যাচ্ছে:

বৈরুত থেকে আজকে অনেক ইমেইলে আমাকে জানানো হয়েছে লেবাননে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হতে যাচ্ছে কিংবা শুরু হয়েছে। যে বিষয়টি তোমাকে আশ্চর্য করবে, সামাজিক বিজ্ঞান কিভাবে সিদ্ধান্ত নিবে যে গৃহযুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে কখন শুরু
হয়? কুচকাওয়াজ করে কিংবা সংবাদ সম্মেলন করে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় না, আমি নিশ্চিত করতে পারি, আমার অভিজ্ঞতা থেকে, অনেক সময় মানুষ জানেও না যে তার গৃহযুদ্ধের মধ্যে ঢুকে গেছে …

লেবানন এই মুহূর্তে কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, রফিক হারিরীর একটি উত্তরাধিকারী অংশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তার লেবাননের জন্য নকশা (আগে সিরিয়া-সৌদি সমর্থনে,পরে এই সমর্থন বাশার আল আসাদের উত্থানে সিরিয়ার শাসন নিরপেক্ষ হয়ে যাওয়ায় সিরিয়ার একটি অংশের সমর্থনে ) পরিষ্কার ভাবে আমেরিকা-ইসরাইলের এই অঞ্চলের পরিকল্পনার সাথে সম্পর্কিত । […..]
সানিরুয়াও আমেরিকাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে:

তারা মনে করছে সে তাই করবে যা মালিকা ইরাকে বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে: এই অঞ্চলের যে কোন জায়গার বেসামরিক এবং বিরোধী শক্তিধর দল গুলোর উপর জাতীয়তা চাপিয়ে দেবে । আমেরিকা বা ইসরাইলের ইচ্ছার বিরোধিতা করবে না কেউই এই নতুন সময়ে [….]

আজকে লেবাননে যা ঘটেছে তা অবশ্যই বৃহত্তর আঞ্চলিক ষড়যন্ত্র: তুমি কোনভাবেই ইরাক বা পালেস্টাইনের উন্নয়নের থেকে লেবাননের উন্নয়ন থামাতে পারবে না ।[…]

তাই সেখানে যদি গৃহযুদ্ধ শুরু হয়? সেটা অনেক দূরে, কেউ কেউ বলেছে । যে দলটি গৃহযুদ্ধ চায় তার সেটা চাইলেই করতে পারবে না, এবং যে দলটি ইচ্ছা করলেই গৃহযুদ্ধ বাধাতে পারে এবং গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে, তারা সেটা কোন ভাবেই চায় না।….

যেনুবিয়েহ উল্লেখ করেন সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করা মানে অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া:

বি জি স্কেয়িরকের সরানো সিদ্ধান্ত মুসলিম শিয়া সম্প্রদায়ের শক্তিকে বিরোধিতা করতে উদ্দীপ্ত করবে যার ফলে মুসলিম শিয়াদের আনুষ্ঠানিক পদ সুরক্ষিতই থাকবে। ঘণ্টাখানেক আগে, উচ্চতর ইসলাসিম শিয়া কাউন্সিলের সহ সভাপতি শেখ আব্দুল আমির খাবালান বলেছেন, তিনি সানিয়োরাকে এই বার্তাটি দেবেন যে স্কেয়িরকে সরানোর সিদ্ধান্ত দেখা হচ্ছে অন্যরকম অন্যায় যা অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়ার দিকে যাবে।

তার পক্ষে, পরিবর্তন এবং পুন:গঠন ব্লকের প্রধান এমপি মাইকেল এয়োন হিজবুল্লাহর যোগাযোগের নেটওয়ার্ক বন্ধ করেছেন, চাপ দিচ্ছে হিজবুল্লাহর থেকে অন্য বেসরকারী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক আছে, বিমানবন্দর সড়কে ক্যামেরা বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না, এয়োন বলেন। তিনি আরো বলেন, ব্যাকফায়ার রাস্তা ক্যামেরা ভর্তি এবং তারা সার্বক্ষণিক আমাদের পর্যবেক্ষণ করে।

ফ্রাইডে লাঞ্চ ক্লাব একটি চিঠি পাঠিয়েছেন যে নীর রোজেন তাকে লিখেছেন। নীর তার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন যেদিন তিনি একটি ফ্লাসপয়েন্ট থেকে আরেকটিতে দৌড়াচ্ছিলেন:

….আমি সারাদিন বৈরুতের ফ্ল্যাশ পয়েন্ট গুলোতে দৌড়ে বেরিয়েছি। সবখানেই জটলা, গোলগুলি, বিস্ফোরণ। আমি উভয় পক্ষের বেসামরিক অস্ত্রধারীদের হাতে লাঞ্চিত হয়েছি, এই অভিজ্ঞতা লেবাননের সুন্নি এবং তাদের বেসামরিক অস্ত্রধারীদের নিয়ে আমার একটা বড় গল্প লিখতে কাজ করবে। কিন্তু আমি সত্যি মর্মাহত আমলের ব্যবহারে। আমি অনেক সময় কাটিয়েছি মোস্তাকবাল বেসামরিক অস্ত্রধারীদের সাথে, তারা অবশ্যই বর্ণবাদী, হিংস্র এবং তাদের বেসামরিক অস্ত্রধারীরা অনেক সংগঠিত, এবং সবকিছুই খুবই ভয়াবহ কিন্তু যখন আমলের সন্ত্রাসীদের থেকে তুলনামুলক ভাবে তারা দেখতে খুবই রুগ্ন, অনেকখানি কাপুরুষোচিত। তারা খুবই আক্রমণাত্মক।

দ্য হিউম্যান প্রভিন্স প্রশ্ন করে কিভাবে বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন রাস্তায় সংঘাতে রুপ নিল:

অন্যদিকে, আমার বান্ধবী এস, যে কর্ণিচ আল মাজরায় থাকে সেখানে দিনের বেশীরভাগ সময় সংঘাত পূর্ণ ছিল। সে আমাকে বলছে যে তারা কোন নিরাপত্তা বাহিনী এক ঘন্টারও বেশী সময় ধরে দেখি নি, শুধুমাত্র আমাল, মোস্তাকবাল ( ফিউচার মুভমেন্ট) এর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বন্দুক এবং আরপিজি রকেট লঞ্চার নিয়ে ঘোরা ফেরা করছিল। তাদের কোন বিদ্যুত ছিল না এবং তারা সবাই বসার ঘর থেকে অন্য ঘরে চলে গিয়েছিল কেননা বসার ঘরে জানালাটা অনেক বড় ছিল। এছাড়াও যে জায়গাগুলোতে সংঘাত চলছিল তা হলো, কোলা, মুযাইতবাহ, তারেক আল জাদদা, দুতাইনে এবং রাস আল নবীতে। এটা আমাকে হতাশ করেছে যে বেতন বাড়ানোর দাবি যেটা কোন রাজনৈতিক দাবী নয় সেখান থেকে কিভাবে এটা রাজনৈতিক দলগুলোর গুণ্ডাদের রাস্তায় সংঘাতে রুপ নিল!!

মীরভাত এই পরিস্থিতিকে পূর্বপুরুষদের কর্মফলের অভিশাপ হিসেবে দেখছে:

এই অভিশাপ আমাদের পিতাদের যে আমরা কখনও একসাথে থাকতে পারব না, আমরা সব সময় বিভক্ত থাকব। যা আমাদের সব অর্জনকে ধ্বংস করবে। আমরা এক অপরের বিরুদ্ধে: কাজ করে যাবো। যে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গভীর হতাশায় নিমজ্জিত করবে, তাদের কে তাদের দেশ পূন:গঠন করতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ করবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা এটা সম্পূর্ণ রুপে থামাতে পারব।
ফাইরুজ বিমানবন্দরে আটকে ছিল ।
আমরা কি আবার আন্তরিক হতে পারব, নিজেদের সম্মান করতে পারব? যেখানে আমরা নিজেদের বিশ্বাস করতে পারি না, নিজেদের শেষ করে ফেলছি, নিজেরা ধ্বংস হচ্ছি …অবশ্যই….কিছুদিনের মধ্যেই।

লিলিয়ান দেখছেন লেবানন দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ছে:

ভদ্রমহোদয় এবং ভদ্রমহিলাগণ, আমরা লেবানিজরা দুই বৃহৎ খারাপ শক্তি হারিরি এবং হিজবুল্লাহ এর মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ছি। কিছুদিনের মধ্যে আসন্ন যুদ্ধ উন্মুক্ত হবে। আমরা যে গৃহযুদ্ধে অভ্যস্ত সেরকম নয়, যখন আরপিজি, স্নাইপার, বোম “শান্তিপূর্ণ” ভাবে প্রদর্শিত হবে তখন বলা যায় এটা খুব বিভৎস যুদ্ধই শুরু হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ফিউচার মুভমেন্ট এর সদস্যরা সাদনেইল, মাসানার রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। যেটা সিরিয়া এবং লেবাননের পারাপারের সীমানা যার প্রতি উত্তরে হিজবুল্লাহরা বিমানবন্দরের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রথমত: বলা হয়েছে বিমান বন্দরের রাস্তা খুলে দেয়া হলে পরে তারা তাদের রাস্তা গুলো খুলে দেবে।

মার্ক্সিস্ট ফ্রম লেবানন বলেছে যে সকল রাজনৈতিক দল গুলো যুদ্ধের জন্য সংগঠিত হয়েছে:

আজকের ঘটনাটি সবাইকে দেখিয়েছে যে রাজনৈতিক দলগুলো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। আসলে যে বিষয়টি উভয় পক্ষই নিরপত্তার উভয় সংকট নিয়ে বলবে: তারা যেহেতু সশস্ত্র তাই আমাদের হাতে অস্ত্র উঠেছে যদিও আমরা শান্তির পক্ষে । যদি একটি ছোট্ট প্রশ্ন লেবাননের রাস্তায় সাধারণ মানুষদের করা হয় তাহলে সবাই বলেবে তারা যুদ্ধ চায় না, শুধুমাত্র কিছু ক্ষমতালিপ্সু ইঁদুর যুদ্ধ চায়।

ছবি এবং তথ্য সমূহ ব্ল্যাকস্মিথ অফ লেবানন, বিলাদ আস-শাম এবং ফারফাইন থেকে নেয়া ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .