- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মায়ানমার: ধীরগতিতে চলছে ত্রাণ কার্যক্রম

বিষয়বস্তু: মায়ানমার (বার্মা), আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, তাজা খবর, দুর্যোগ, নাগরিক মাধ্যম, মানবতামূলক কার্যক্রম, রাজনীতি, শরণার্থী, সরকার, ব্লগার প্রোফাইল

প্রথমতঃ কয়েকদিন আগে ঘূর্ণিঝড় নার্গিসে আক্রান্ত মায়ানমারের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাচ্ছি । মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। রাষ্ট্রীয় তথ্যসূত্রে হতাহতের সংখ্যা আন্তর্জাতিক আনুমানিক হিসেব থেকে অনেক কম। সরকার এখনও মৃতের সংখ্যা ২৩,০০০ এর মত বলছে যেখানে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা গুলো বিশ্বাস করে এই সংখ্যা এখন ১ লাখের কাছাকাছি ।

গ্লোডেন কালার রেভল্যুশন আভাস [1] দিয়েছে যে সরকারের মৃতের সংখ্যা হিসাব সঠিক হবে না:

“নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা সাক্ষাতকারে বলেন, মৃতের সংখ্যা ৬ লাখে পৌঁছেছে যেখানে এখনও ১ লাখ মানুষ নিখোঁজ। তার গণনা অনুযায়ী ১,৮০,০০০ মানুষ মারা গেছে লুটবুট্টা শহরতলীতেই । ৯০,০০০ মানুষ মারা গেছে ফিয়ার পোন শহরতলীতে, ৮০,০০০ বগালয় শহরতলীতে, কিয়োনগানকোন, দেদাইয়া, মাওকেন শহরতলীর প্রতিটিতে মারা গেছে ৫০,০০০ করে মানুষ। কর্তৃপক্ষ, সেনাবাহিনী এবং এদের সহযোগী গুণ্ডারা আশেপাশের নদীতে মৃতদেহ ফেলে দিচ্ছে। এমন কি ইয়াংগুন শহরের ইয়া ওয়ে সমাধি স্থলে মৃতদেহের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত না করেই শবদাহ হচ্ছে। বিশেষ করে ফিয়ার পোন শহরতলীতে কর্তৃপক্ষ জরুরী অবস্থা জারি করেছে।”

ব্যাংকক ডেজ মায়ানমারের ইয়াংগুনে বসবাসরত এক বন্ধুর ইমেইল পেয়েছেন । নিচে সংক্ষিপ্ত বিবরণ [2] দেয়া হল কিভাবে আবাসিক নগরীগুলোর মানুষ এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে:

“২০০ থেকে ২৪০ কি.মি. বেগে ঝড়ের পর ১১ ঘণ্টা আমরা আমাদের বাড়িতে আটকে ছিলাম কেননা আমাদের বাড়ি উপর গাছ ভেঙ্গে পড়েছিল। সর্বত্র ভয়ংকর বিশৃঙ্খলা, সব খানে বিদ্যুত চলে গেছে, কোথাও খাবার পানি নেই কয়েকদিন ধরে। আমাদের বাসা, অফিসের ফোন সহ সকল বিদ্যুত লাইন বিচ্ছিন্ন। আজকে এই মুহুর্তে আমি একটি ইন্টারনেট ক্যাফেতে। এই এলাকাটি ইয়াংগুন শহরতলী মহাবানদোল সড়কে যেখানে সকল তার এবং সংযোগ মাটির নিচ দিয়ে সংযুক্ত, (তাই বেঁচে গেছে)। এছাড়া বাকি আমরা যারা আবাসিক এলাকা এবং শহরের অন্যান্য এলাকায় বসবাস করি তারা সবাই বিদ্যুতহীন। আমরা হয়তো আবার বিদ্যুত পাবো ৩ কি ৬ মাস পর কিংবা একবছরও হতে পারে। এর সাথে আরো কষ্টকর, সকল খাদ্যদ্রব্য এবং পানির দাম তিনগুণ হয়েছে । প্রতিদিনই জেনারেটরের দাম বাড়ছে । আমরা এখন দিচ্ছি প্রতিটি জেনারেটরের জন্য ২০০০ মার্কিন ডলার যেখানে আগে দিতাম ৯০০ থেকে ১২০০ মার্কিন ডলার। এটা আসলে খুব খারাপ সময়। আমরা সবাই অক্ষত আছি, কিন্তু আমরা এখন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি।”

এখন আমরা আলোচনা করব মায়ানমারের ত্রাণ কার্যক্রমের অবস্থা নিয়ে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর চলাচল ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা এখনও সীমাবদ্ধ রেখেছে। সো মো এক এক করে উল্লেখ করেছে [3] যে এ মুহূর্তে মায়ানমারের জন্য কোন দ্রব্য এবং সাহায্যের প্রয়োজন:

“ঘূর্ণিঝড় নার্গিস আক্রান্ত হবার পর ৬ দিন পার হয়েছে এবং পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে কেননা আক্রান্ত এলাকা গুলো মানুষ এবং পশু-পাখির ছড়িয়ে থাকা মৃত দেহগুলোতে পচন ধরেছে । সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি পৃথিবীর উদারতা , লক্ষ লক্ষ টাকার মানবিক সাহায্য । কিন্তু এটা খুবই দু:খজনক যখন দেখতে পাচ্ছি বার্মার সরকার রাজনীতির নামে জাতিসংঘ সাহায্য কর্মীদের এবং এনজিওদের ভিসা প্রদানের বিষয়ে দ্বিধান্বিত। এটা রাজনীতির সময় নয় অন্তত যখন মানবিক বিপর্যয় চলছে। এবং এই সংবাদ শুনে খুব দু:খ পেলাম, ঘূর্ণিঝড় নার্গিস আক্রান্তদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে পশ্চিমা দেশ গুলো ইচ্ছা পোষণ করছে আর বার্মার সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে ।”

“ভিসা জটিলতার কারনে ২ দিন পরে আজকে প্রথম জাতিসংঘ ত্রাণবাহী বিমান ইয়াংগুন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করেছে। এবং আরো বিমান ইয়াংগুনে অবতরণের জন্য বার্মা সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় আছে। ইতালি, থাইল্যাণ্ড, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার ত্রাণবাহী বিমান ইয়াংগুনে অবতরণের অনুমতি পেয়েছে। আমরা খেয়াল করলাম একদিনে নাটকীয়ভাবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে গেছে।”

“আমাদের যে বিষয়টি ভয়াবহভাবে প্রয়োজন তা হল, অভিজ্ঞ ত্রাণকর্মী, উদ্ধারকারী দল যারা বেচে আছে তাদের উদ্ধারের জন্য, সঠিকভাবে মৃতদেহগুলোর সৎকার এবং প্রাণঘাতী রোগ জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করা। আমাদের হেলিকপ্টার প্রয়োজন যার সাহায্যে আমার দূরবর্তী জায়গাগুলোতে ত্রাণ পাঠাতে পারব যেখানে ত্রাণ সবচেয়ে বেশী দরকার। বার্মা বিমান বাহিনীর সীমিত সংখ্যক হেলিকপ্টার আছে যা দিয়ে ওইসব দূরবর্তী এলাকায় সাহায্য পাঠানো সম্ভব নয়। আমেরিকার সেনাবাহিনী আমাদের সাহায্যের জন্য এইড মিশন পাঠানোর প্রস্তাব করেছে। আমেরিকার এয়ারবাস থাইল্যান্ডে প্রস্তুত আছে, বার্মায় হেলিকপ্টার এবং জাহাজ দিয়ে নিখোঁজদের খোঁজার জন্য উদ্ধারের জন্য। এবং আবার ও বার্মার জেনারেল এই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি কেননা তারা আমেরিকান। এখন পছন্দ কিংবা অপছন্দের সময় নয়। এখন সময় আমাদের চেষ্টা করা যত মানুষকে আমরা বাঁচাতে পারি।”

এই ব্লগারও নদীতে মৃতদেহের স্তূপ দেখে আতংকিত:

আমি খুবই আশ্চর্য হয়েছি যে মৃতদেহগুলো নদীতে স্তূপ করা হচ্ছে। আমি হতাশ আসলে তারা নিজেদের কি ভাবে ? নদীতে মৃত দেহগুলো ফেলে সমস্যার সমাধান হতে পারে না। আসলে, এভাবে নদীতে রাশ ফেলে নদীর ধারে বসবাসকারীদের বিপদে ফেলা হচ্ছে যারা প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
একদিনের মধ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এই সময় ঘূর্ণিঝড় নার্গিসের ধ্বংসলীলার শক্তি দেখাতে নয়, হতে পারে দুর্বল স্বাস্থ্য সেবা এবং বার্মা জেনারেলের বিশ্বের ত্রাণকর্মীদের সাহায্য নেবার অনিচ্ছা । বার্মার ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য বার্মা সরকার দায়ী থাকবে। তাদের ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সংবাদ অগ্রাহ্য করে এবং সারা বিশ্বের ত্রাণ সাহায্য নিতে অস্বীকৃতি জানানো দেশের মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ হবে। এবং আমরা কোন দিন ভুলব না কিভাবে মানুষ হত্যা করা হয়েছে ১৯৮৮ সালে, ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এবং ২০০৮ সালের মে মাসে।

ব্যাংকক ডেজ পরামর্শ [3] দিয়েছে যে ত্রাণসাহায্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়:

“যদি আমেরিকা কিংবা অন্য যে কোন দেশ মানবিক সাহায্য করতে চায় আমি মনে করি সেটা খুবই ভালো। কিন্তু সাহায্য কোন শর্তসাপেক্ষে নয় কিংবা গালভরা কথা দিয়ে নয়। শুধুমাত্র জনগনকে সাহায্য করে যা তাদের দরকার। এবং তোমার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কিংবা ধর্মীয় উদ্দেশ্য তোমার কাছে। কিন্তু সেটা নাক উঁচু গোষ্ঠীগুলোর জন্যে মনে হয় অসম্ভব। আপনি ভাবতে পারেন বুশ প্রশাসনের গর্দভরা এখনই সেটা চায়। কিন্তু না, তার তাদের এই উদ্দীপনাময় কৌশল, হাস্যকর কূটনৈতিক কৌশল চালিয়ে যাবে, আন্তরিক ভাবে কোন গঠনমূলক আলোচনার পদক্ষেপ নেয়ার বদলে অন্যান্য দেশের সমালোচনা এবং উপহাস করবে। অর্থাৎ অন্যান্য দেশের সাথে বসা এবং আলোচনা করা, তাদের বাজে নামে না ডেকে কিংবা কোন উপদেশ না দিয়ে।”

বিয়ন্ড এসজি সামরিক জান্তাকে চীনের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের উপদেশ [4] দিয়েছে:

“সারা বিশ্ব থেকে ঢালাও ভাবে সাহায্য আসছে। সারা দেশের কাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে যেটা ভালো নয়। শুরুতে বিদেশী সাহায্য নিয়ে চিন্তিত বার্মা সরকার সাবধানতার সাহায্যে বাইরের সাহায্য নিচ্ছে। এটা সামরিক সরকারের জন্য বড় পরীক্ষা। এটা যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়, ভোটারদের এর উপর তা নির্ভর করছে। এই বছর চীনা নেতৃত্ব চীনা নববর্ষের সময় অস্বাভাবিক শীতের আবহাওয়ায় যেভাবে সাড়া দিয়েছে তা সবার কাছেই প্রশংসা পেয়েছে।”

এশিয়াজ পারফেক্ট ১০ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংস্থা আসিয়ানের হস্তক্ষেপ কামনা করছে: [5]

“ঘূর্ণিঝড় নার্গিস আক্রান্ত হওয়ার ৫ দিন পরেও আসিয়ান কোন ত্রাণ সামগ্রী মায়ানমারে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে থাইল্যাণ্ড এবং ইন্দোনেশিয়া কিছু অনুদান দিয়েছে। তাদের জন্য ভালো কিন্তু আসিয়ান দেশগুলো তাদের একটি সদস্য রাষ্ট্রের সাহায্যের জন্য খুব ধীরগতিতে সাড়া দিচ্ছে। ”

আসলে সামরিক জান্তা সুনামের অভাবে ভুগছে । আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রচারণা গুরুত্বপূর্ণ দাতাদের নিশ্চিত করতে বলেছে যে ত্রাণ যেন কোনভাবে মায়ানমারের সরকারের কাছে না যায় । মেলোডী ত্রাণ প্রচারণার একটি উক্তি [6] উদাহরণস্বরূপ দিয়েছেন:

“আপনি এই মুহূর্তে সরাসরি বার্মার ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করুন। এ ত্রাণ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে যাবে । এটা সরকারের সংস্থা, রাজনীতি কিংবা আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যাবে না।”

স্ট্রেইট টক মালয়েশিয়া থেকে আসা ত্রাণের বিস্তারিত জানিয়েছে [7]বিজি ডেজ সিংগাপুরের অনুদান সংগ্রহ পর্যবেক্ষণ [8] করছে । ব্লগাররা লিখেছেন:

“মায়ানমারের ইয়াংগুন থেকে একজন পরিচিত আঞ্চলিক মায়ানমারের ব্লগার নী লীন সেক নিজ উদ্যোগে ইরাবতী ব-দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বিতরণ করেন।”

কো টিকেজ প্রসাইক কালেকশন জানান [9] যে সামরিক সরকার এতোই নির্লজ্জ যে তারা থাইল্যাণ্ডের সাহায্যের বাক্সে লেবেল পরিবর্তিত করে ধরা পড়ে।

দ্য বার্মিজ রুবী ডাইরি খুব ক্ষুব্ধ হয়েছেন [10]যে কিছু ধারাভাষ্যকারী লিখেছেন যে ঘূর্ণিঝড় মায়ানমারের জন্য শাস্তি স্বরূপ। লিটল মায়ানমার আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রদানকারীদের তালিকা প্রনয়ন [11] করেছেন।