- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

আরবদেশ: ফুয়াদ আল ফারহানের মুক্তি

বিষয়বস্তু: বাহরাইন, মিশর, সিরিয়া, সুদান, সৌদি আরব, আইন, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, প্রযুক্তি, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, ব্লগার প্রোফাইল

বিনা বিচারে জেদ্দায় ১৩৭ দিন আটক [1] থাকার পর সৌদি আরবের ব্লগার ফুয়াদ আল ফারহান [2] ছাড়া পেলেন [3]। ফারহানকে এই সুদীর্ঘ সময় ধরে বন্দী করে রাখার কারণ যে কী, তা নিয়ে অন্যান্য ব্লগারদের জল্পনা কল্পনার শেষ ছিল না। তাঁরা সবাই কিন্তু আজ ফারহানের মুক্তির খবরে আনন্দিত ও উত্তেজিত। তাঁরা আশা করছেন, আরো যে সকল ব্লগার বন্দী আছেন, তাঁদেরও মুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

গ্লোবাল ভয়েসেস এডভোকেসী অনুসারে, ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর অনির্দিষ্ট “নন-সিকিউরিটির নিয়মকানুন লঙ্ঘনের” অভিযোগে আল ফারহানকে গ্রেফতার করা হয়। ‘নন-সিকিউরিটির নিয়মকানুন’ ব্যাপারটা যে কী, তা কিন্তু স্পষ্ট নয়।

সৌদি আরব:

সৌদি জিন্সের [4] কাছে ফারহানের মুক্তির খবরটা একটা দারুণ দিন শুরু করবার পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত খবর। তিনি লিখছেন:

‘ভোর সাড়ে পাঁচটায় আমার আই-ফোনে মেসেজ আসার বিপ বিপ শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেল। মেসেজটি পাঠিয়েছেন আমার বন্ধু ফুয়াদ আল ফারহানের স্ত্রী। তিনি লিখেছেন, ফারহান ছাড়া পেয়েছেন এবং বাড়ি ফিরে এসেছেন। এইরকম দুর্দান্ত খবর দিয়েই তো আমি আমার সকাল শুরু করতে চাই।’

আল ফারহানের বন্ধু-ব্লগার সৌদি আরবের মাশি ৯৭ [5], মোট ১৪০টি অভিনন্দন বার্তা পেয়েছেন যখন তিনি এই ঘোষণাটি করেন (মূল ঘোষণাটি আরবীতে) –

“মাত্র কয়েক মিনিট আগে সৌদি ব্লগার ফৌয়াদ আল ফারহান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তাঁর বাড়িতে ফিরেছেন।

আল্লাহকে ধন্যবাদ, ধন্যবাদ, ধন্যবাদ।”

আরেকজন সৌদি ব্লগার ইব্রাহিম [6], ফারহানকে কেন আটক করা হল তার ব্যাখ্যা দাবী করেছেন। তিনি লিখেছেন (মূল লেখাটি আরবীতে),

ফুয়াদ আল ফারহানের মুক্তির খবরে গতকাল আমরা দারুণ খুশি ছিলাম।
আমরা আজও খুশি।
কিন্তু আমার প্রশ্ন, মুক্তি তো হল…কিন্তু এরপর কী?
চার মাস সে হাজতে বা প্রহরায় (আমরা এ দুয়ের মধ্যে তফাত করি না) কাটাল, যেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
কারণ দেখানো হয়েছে নন-সিকিউরিটি সম্পর্কিত অভিযোগ এবং কিছু আইন ভাঙা।
এসব উদ্ভট কথায় আমি হতভম্ব।
একজন ব্লগার হিসেবে আমি জানতে চাই, কোন্‌ আইন সে ভেঙেছে আর নন-সিকিউরিটি সম্পর্কিত কী অপরাধ সে করেছে। এই একই আইন যেন আমরাও না ভেঙে ফেলি, একই অপরাধ আমরাও না করে বসি, সে জন্যই জানাটা জরুরী। তারা যদি ‘আইন ভাঙা হয়েছে’ এই তকমা লাগাতে পারে, তাহলে আমাদেরও জানা প্রয়োজন, কোন্‌ আইন ভাঙা হয়েছে।

রশীদ আবু আলসামহের [7] মাথাতেও কিছু প্রশ্ন এসেছে, এবং তিনি লিখেছেন:

২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ফুয়াদকে জেদ্দায় গ্রেফতার করা হল আর চার মাস ধরে হাজতে রাখা হল কারণ তার ব্লগে এমন কিছু এন্ট্রি ছিল, যা সৌদি আরবে দুর্নীতি কমিয়ে জবাবদিহিতার কথা বলে।

মুক্তি পাবার পর সে কি আবার ব্লগ লিখবে? একমাত্র ফুয়াদের কাছেই এ প্রশ্নের জবাব আছে। আমি নিশ্চিত যে খুব শীঘ্রই এর উত্তর আমি পাবো। তবে এই মুহূর্তে ফুয়াদ নিশ্চয়ই সমস্ত কঠিন পরীক্ষাকে ভুলে তার পরিবারের সাথে সময় কাটাতে চায়।

মিশর:

মিশরের আল আনানী [8]ও ফারহানের মুক্তির খবরে উত্তেজিত। তিনি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন (মূল আরবী ভাষায়):

আজ আরব ব্লগারদের দারুণ আনন্দের দিন। ফুয়াদ আল ফারহানের মুক্তির পর সৌদি ব্লগারদের নিশ্চয়ই খুশির সীমা নেই। আমরা, সিনাই [9] থেকে আমাদের নিজেদেরকে এবং সেই সমস্ত মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, যাঁরা কঠিন সময়ে ফৌয়াদের পাশে ছিলেন। আমরা আল্লাহ্‌-এর কাছে সমস্ত আরব ব্লগারদের মুক্তি প্রার্থনা করি, বিশেষত সিনাই-এরই ছেলে মুসাদ আবু ফজরের মুক্তি, যার ব্লগের নাম আমরা বাঁচতে চাই (উই ওয়ন্ট টু লিভ [10])।

সিরিয়ায় বন্দী আছেন, এমন একজন ব্লগারের মুক্তির জন্য অপেক্ষা করে আছেন মিশরের জেইনোবিয়া [11]। তিনি লিখছেন:

‘ফুয়াদ ও তার পরিবারকে উষ্ণ অভিনন্দন। আশা রাখি, আরবে যে সমস্ত ব্লগার বন্দী আছেন, বিশেষত, সিরিয়ার তারেক [12] খুব শীঘ্রই মুক্তি পাবেন এবং পরিবারের সাথে মিলিত হতে পারবেন।’

বাহরাইন:

বাহরাইনের ব্লগার মাহমুদ আল ইউসিফ [13] সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত জানতে চেয়ে লিখেছেন:

আমরা তার মুক্তির বিস্তারিত খবর জানি না…ফুয়াদকে যে কী কী ত্যাগ স্বীকার করতে হল আর কর্তৃপক্ষ তাকে কোন্‌ কোন কাগজে সই করিয়ে মুক্তি দিলেন, সবই আমাদের অজানা। তবে আশা করি, সব কাহিনীই খুব তাড়াতাড়ি শুনতে পাবো।

যাই হোক, ফুয়াদের মুক্তির খবরে আমি সত্যিই খুব খুশি।

সুস্বাগতম ফুয়াদ !!

বাহরাইনের এসরা [14] ভাবছেন যে ফুয়াদ আল ফারহান আদৌ আর ব্লগ লিখবেন কিনা। তিনি লিখছেন:

‘ফারহানকে মুক্ত এবং নিরাপদ দেখতে পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত। কিন্তু তার সাথে যা ঘটল, তারপর সে কি আর ব্লগ লিখবে? আশা করি, গত কয়েক মাসে যা ঘটেছে, তা সে কখনই সহ্য করবে না।’

সুদান:

দ্য সুদানীজ থিঙ্কার [15] নিচের ঘোষণাটি করেছেন,

১৩৭ দিন হাজতবাসের পর সৌদি ব্লগার ফুয়াদ আল ফারহান মুক্তি পেলেন। তাঁকে বন্দী থাকতে হল কারণ তিনি তাঁর মনের কথা অত্যন্ত নম্রভাবে এবং চারুশীলতার সাথে জানিয়েছিলেন। অথচ, ধর্মীয় নেতাদের মৃত্যু ঘোষণা করে গালভরা চেঁচানি আর অসার বক্তৃতা মেনে নিতে সৌদি-সরকারের কোনো সমস্যা হয় না।

বাহ !! চমৎকার !!

এদিকে মানবাধিকার তথ্যের যে আরবী নেটওয়ার্ক [16] আছে, তারা দাবী করেছে, ফুয়াদের সমস্ত ব্লগ থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। এরা বলছে:

‘ফুয়াদ আল ফারহান-এর মুক্তি নি:সন্দেহে খুব আনন্দের খবর। কিন্তু এই আনন্দের পাশাপাশি আমরা এটা জানার জন্য উদগ্রীব অপেক্ষায় আছি যে সৌদি সরকার কবে ঘোষণা করবে, ফারহানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল কেন, আর কেই বা তাকে গ্রেফতারের আদেশ দিয়েছিল। আমরা এও দাবী করছি যে ফারহানের সমস্ত ব্লগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক।’