বলিভিয়া: স্বায়ত্তশাসনের গণভোট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে

আজকে বলিভিয়ার সান্তা ক্রুজে বিতর্কিত স্বায়ত্তশাসনের সংবিধান নিয়ে ডিপার্টমেন্ট (প্রদেশ) ব্যাপী গণভোট হবে যা প্রাদেশিক সরকারকে বেশী প্রশাসনিক আর অর্থনৈতিক ক্ষমতা দেবে। ক্রুসিনোর (ডিপাটমেন্টের বাসিন্দা) সবাই অংশগ্রহণ করবেন না এবং অনেকে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে একমত যে এই গণভোট বেআইনি আর অসাংবিধানিক। ডিপার্টমেন্টের নির্বাচনী আদালত এই গণভোটকে এগিয়ে নিতে চাচ্ছে রাষ্ট্রীয় নির্বাচনী আদালতের সমর্থন ছাড়াই আর এর ফলে ফলাফলের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যদিও আশা করা হচ্ছে যে গনভোটটিতে হ্যা ভোট পাশ করবে।

এই গণভোটের নেতারা, যারা প্রাথমিকভাবে ডিপার্টমেন্টের গভর্ণর, সিভিক কমিটির সদস্য আর ব্যবসায়ী নিয়ে তৈরি, মনে করেন যে এই গণভোট দরকারী। আর তাদের পেছনে জনগণের একটা বড় অংশের সমর্থন আছে। বলিভিয়া সরকারের নতুন সংবিধানে স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারটি অন্তর্ভুক্ত না করার জবাব এটা। আগের একটি গণভোটে সান্তা ক্রুজসহ আরো তিনটি ডিপার্টমেন্ট স্বায়ত্তশাসনের ব্যাপারে হ্যা ভোট পাশ হয়েছিল। কিন্তু ওই গনভোটের ফলাফলের মানে অস্পষ্ট ছিল যা ভুল ব্যাখ্যা করা যেত আর যা তাত্তিকভাবে কনস্টিটিশন এসেম্বলীর অংশ হওয়া উচিত ছিল। দেশের নতুন প্রস্তাবিত সংবিধান সুশীল সমাজের নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী এইসব দাবি নিয়ে খুব বেশী কথা বলে না। আর তাই প্রদেশগুলো তাদের নিজেদের শর্ত অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে।

গণভোটের হ্যা ভোটের জন্যে প্রচার – ছবি তুলেছেন আকা_লুসি (ক্রিয়েটিভ কমন্সের আওতায় ব্যবহৃত)

সমালোচকেরা বলেন যে এই নতুন স্বায়ত্তশাসনের জন্য গণভোট ধনী আর ক্ষমতাশালীদের আরো ক্ষমতা পাবার আর প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে রেভিনিউ পাবার উপায়। এ ছাড়া এই সংবিধান পরবর্তীতে জমির আরও পুন:বন্টন থামাবে যেহেতু বেশীর ভাগ গণভোটের নেতারা জমিদার। অন্যরা বলেছেন যে এই সংবিধান সেই আদিবাসী অভিবাসনকারিদের সনাক্ত করে না যারা ডিপার্টমেন্টের উন্নয়নে বড় ধরনের কাজ করেছে। পরিশেষে অনেকে ডিপার্টমেন্টের গভর্ণর রুবেন কোস্টাসের বক্তব্য তুলে ধরেছেন  যিনি বলেছেন যে গণভোট একটি নতুন প্রজাতন্ত্রের জন্ম দেবে।

এই দুই বিপরীত ধর্মী অবস্থানের কারনে ভয় হচ্ছে যে গণভোটের দিনে জাতীয় সরকার আর স্বায়ত্তশাসনের সংবিধানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। কিন্তু ব্লগারদের ব্যক্তিগত মতামত যত ভিন্নই থাকুক তারা শান্তির প্রত্যাশী।

প্রোন্টো ব্লগের মিগুয়েল সেন্টেলাস গণভোটের ব্যাপারে কিছু মতামত দিয়েছেন, আর এর পেছনের কিছু ইতিহাসও তুলে ধরেছেন। গুচিও ব্লগের কার্লোস গুস্তাভো মাচিকাদো স্বায়ত্তশাসন কথাটি ব্যবহার করতে চান না কারন এটি তাকে বিশ্বদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের কথা মনে করিয়ে দেয় যা একটি কাজই করেছে আর তা হল “অযোগ্যতা ও  আমলাতন্ত্রের প্রসার ঘটিয়ে জনগণের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে দুর্নীতি জন্ম দিয়েছে।”

আবার বেশ কিছু ব্লগার আছেন যারা এর খোলাখুলি সমর্থন করছেন আর তাদের ‘হ্যা’ ভোট দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করছেন। আন্দ্রে পুচ্চি স্বায়ত্তশাসন সংবিধানের কিছু কিছু বিকেন্দ্রীকরনের পক্ষে:

যদি কোন ইউনিয়ন আইনী প্রতিনিধিত্ব চায়, তাদের সব কিছু তাহলে লা পাজ এ পাঠাতে হবে, যদি কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের অভ্যন্তরীণ আইন পাশ করাতে চায় তাহলে তাদের সব কিছু লা পাজ এ পাঠাতে হবে, ছাত্র যদি তার থিসিস সমর্থন করতে চায় তাকে সব কিছু লা পাজ এ পাঠাতে হবে আর ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে থিসিস পর্যালোচনা কারীদের দ্বারা পাশ হওয়ার জন্য; একজন যদি ডিপ্লোমা চায় তাদেরকে লা পাজ এ যেতে হবে, ৪ মাসের নুন্যতম বেতন দিতে হবে। ৬ মাস অপেক্ষা করে তার পর ডিপ্লোমা নিতে হবে।

স্বাত্ত্বশাসন সংবিধানের বিপক্ষে একটা বিতর্ক হল যে এটা দেশের মধ্যে বিভাজন তৈরি করবে আর এর ফলে বিচ্ছিন্নতাও হতে পারে। প্লান বি এর সেবাস্টিয়ান মোলিনা এই অভিযোগ অস্বীকার করে সিএনএন এ সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের স্বাক্ষাতকারের কথা বলেন। মোলিনা বলেছেন যখন ‘প্যাট্রিসিয়া জ্যানিয়ট’ (সিএনএন উপস্থাপক) তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তার কাছে কি প্রমাণ আছে সান্তা ক্রুজে বিচ্ছিন্নতাবাদের, প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে তার কাছে আছে কিন্তু এটা নিয়ে তিনি কথা বলতে চান না। স্বাক্ষাতকার এখানেই শেষ হয়, তার পক্ষে বিপক্ষে কোন যুক্তি ছিল না।’

যদিও ধারণা করা হচ্ছে যে সান্তা ক্রুজে ‘হ্যা’ ভোট জিতবে সান্তা ক্রুজের অনেক ব্লগার পদ্ধতিটার আর গনভোটের নেতাদের মতামতের সমালোচনা করছেন। লো ডিগো য়ো ব্লগের আন্দ্রিয়া সিভিক কমিটির প্রেসিডেন্ট ব্রাঙ্কো মারিঙ্কোভিচের কথায় সন্তুষ্ট নন যিনি সান্তা ক্রুজের মা'দের বলেছেন যে তারা তাদের ছেলেদের রক্ত ‘দায়িত্বের সাথে’ বইতে দেবেন। অন্যরা স্বায়ত্তশাসন সংবিধানের মূল জিনিষে ভুল দেখেছেন, যেমন কেচা আর আয়মারা আদিবাসী গোষ্ঠীরা যারা সান্টা ক্রুজে অভিবাসনের জন্য এসেছে আর এর উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছে তাদেরকে স্বীকৃতি না দেয়া। কোমিউনিদাদ এস্পারতাকো বলিভিয়ানা লিখছে:

প্রত্যেক সাংস্কৃতিক আর সামাজিক দলের প্রতীক আছে। এমন আইনের কি মানে যা কিছু প্রতীককে স্বীকার করে আর কিছুকে না? এই ভাবে ১৯৫২ এর আন্দোলনের পর গণহারে এখানে আসা কেচা আর আয়মারার লোকরা বাদ যাবে? তারা তো  একই ক্রুসিনো পরিবার আর ক্রুসিনো অভিবাসিদের অংশ। এরা তো কাজ করেছে সব কার্যক্রমে অন্য সবার সাথে।

খুব কম লোক জানে ৪ঠা মে বা গণভোটের পরের দিন পাঁচই মে কি ঘটবে। হুগো মিরান্দা লিখেছেন:

৪ঠা মে তে কি ঘটবে? ৫ই মে তে কি ঘটবে? অনেকে এটা জিজ্ঞাসা করছে বা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। এই দেশে রাজনীতি, জল্পনা আর মুখোমুখি হওয়া এক ধরনের ফ্যাশান, যার ফলে উৎপাদনশীলতা বেশ কমে যায়, টেলিভিশন, রাজনীতির বিশ্লেষক আর বোদ্ধারা পত্রিকার হাজার হাজার পাতা ভরিয়ে ফেলেন আর টেলিভিশনের কয়েক ঘন্টা এই জিজ্ঞাসা করতে যে পরের দিন কি হবে।

গুয়ারামেরিন আনালিটিকা ব্লগের কলুম্বা মনে করেন যে প্রত্যাশিত ‘হ্যা’ ভোট অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট (প্রদেশ) বিশেষ করে বেনি, পান্দো আর তারিজা কে তাদের নিজেদের গণভোট নিয়ে অনুসরণ করতে সুযোগ করে দেবে।

সব শেষে ব্লগার মারিয়া এস্কান্দালো মনে করেন যে পরের দিন অন্য যে কোন দিনের মতই হবে যেখানে হাজারও মানুষ বাঁচার চেষ্টায় লিপ্ত থাকবে:

৪ঠা মের পরের দিন… ৫, ৬ বা ৭… এই দিন গুলো অন্তত আমার জন্য আলাদা কিছু হবে না, আর এই শহরের গরিবদের জন্যেও যারা হাটে, যারা বাজারে ঠেলা ঠেলে নিয়ে যায়, যারা দেশের অভ্যন্তরিন থেকে ভালো কিছুর খোজে এখানে এসেছে… তারা একটা জিনিষেই বিশ্বাস করবে যাতে বিশ্বাস করে লাভ আছে: তাদের নিজেদের কাজ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .