ভ্যালেট বা ভ্যালে পার্কিং এমন এক ধরণের সেবা যা সাধারণত অভিজাত রেস্তোঁরা ও ক্লাবের খদ্দেরদের প্রদান করা হয়ে থাকে যেখানে একজন ব্যক্তি, যাকে ভ্যালে বলা হয়, খদ্দেরদের গাড়ি পার্ক করে দেয়। এটি নিজেই নিজের গাড়ী পার্ক করা থেকে ভিন্নতর। খদ্দেরদের অভিজাত সেবা ও ভিআইপি আচরণ প্রদর্শন এর অভিপ্রায়। কিন্তু লেবাননে এখন সেটা খাটছে না। এখানে ভ্যালে পার্কিং এত বিস্তৃত হয়ে পড়েছে যে সাদামাটা সস্তা ফাস্ট ফুডের দোকান থেকে শুরু করে তরুণ বেকারদের কর্ম সংস্থান মেলাতেও এর দেখা মেলে। ব্লগাররা এ বিষয়টি তুলে ধরেছেন নানা ভাবে। কেউ অনুমান করছেন অচিরেই মুদির দোকানে এ সেবা পাওয়া যাবে। এছাড়া গুজব রয়েছে যে এই বিস্তৃত ভ্যালেরা আসলে একটা ছদ্মবেশী মিলিশিয়া চরমপন্থী দলের সদস্য এবং দ্বন্দ্বসঙ্কুল সময়ে ভয়াবহ একটা বিস্ফোরণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে। দুজন ব্লগারের এ সম্পর্কিত বক্তব্য তুলে ধরা হলো:
বিষয়টি নিয়ে জামাল লিখেছেন “এ বিষয়ে অনেক লিখিত বা মৌখিক আলোচনা হতে পারে”। তিনি আলোকপাত করেছেন, উদাহরণস্বরূপ, “চাবি ছোড়ার অভিজ্ঞতা থেকে কেউ কেউ উল্লাস বোধের ফ্রয়েডিয়ান ব্যাখ্যা গবেষণা করতে পারে” এবং এরপরে তুলে ধরেন কোন কোন অদ্ভুত জায়গায় ভ্যালে পার্কিং খুঁজে পেয়েছেন:
লেবানন ব্যাপক ব্রেনড্রেনের সম্মুখীন হচ্ছে বিপক্ষ দল চেপে বসতে শুরু করায়, অথবা জুলাই যুদ্ধের পর থেকে? হারিরি হত্যাকান্ড? অথবা হারিরি যখন ক্ষমতায় যাচ্ছিল? লউসেন? ১৯৮২? ১৩ই এপ্রিল? কায়রো সন্ধি থেকে? অথবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে? আমার প্রপিতামহ এই শতাব্দীর শুরুতে কিউবা গিয়েছিলেন সুতরাং বলা যায় মানুষ জন বহু দিন আগে থেকেই এই পার্বত্য অঞ্চল ছেড়ে যাওয়া শুরু করেছে।
এই তরুণদের মধ্যে থেকে অনির্দিষ্টভাবে কাউকে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় যে এদের বেশীর ভাগ দেশ ছেড়েছে উপার্জনক্ষম কোন কর্মসুযোগের অভাবে।
গত সপ্তাহে বিআইইএল এ ফরওয়ার্ড ফোরাম নামে একটা কর্মসংস্থান মেলা অনুষ্ঠিত হল। হাজারো কর্মহীন যুবক একটি চাকুরীর প্রত্যাশায় ভীড় করেছিল যেন তারা দেশেই বৃত্তি খুঁজে নিতে পারে। এসব চাকুরি হয়তো তাদের অগ্রিম কোন সুবিধা দেবে না, কিন্তু কলেজ স্নাতকদের নিরীহ উচ্চাভিলাষ এমন যে হয়তো খাদ্যের সংস্থান হবে। বিশোর্ধ্ব বয়সী কিছু যুবক ফরোয়ার্ড ফোরামে ভ্যালে পার্কিং সেবা প্রদান করেছিল এবং প্রায় একশ'র বেশী চাকুরি প্রত্যাশী যুবক পঞ্চাশ মিটার হন্টন এড়াতে গাড়ির চাবি ছোড়ার বিলাসিতায় অর্থ খরচ করেছিল।
জোসেফ আল খৌরি আরো গভীর পর্যবেক্ষণ করেছেন লেবাননে উত্তরোত্তর বেড়ে চলা ভ্যালে পার্কিং শিল্প, ভ্যালে ও তাদের বিস্তৃতি এবং ইউনিফর্ম সম্পর্কে:
বিশ্ব অর্থনীতি যখন পতনম্মুখ তখন সেডারের দেশে একটা শিল্প ক্রমশ উন্নতিলাভ করছে। জেমায়েজের বৈরুত কোয়ার্টারের নিশিজীবন নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কিভাবে কালো ইউনিফর্ম ও বেসবল ক্যাপ পরিহিত এক দঙ্গল যুবক আপনার গাড়ি পার্ক করার উদ্দেশ্যে একটা এলাকা দখলে নিতে পারে।
সামান্য মদ্যপানের পরে গাড়ির হুইলের পেছনে বসতে সাহস না পাওয়া বিদেশীদের কাছে অভূতপূর্ব ঘটনা হয়তো অপরিচিত লাগবে। কিন্তু সাধারণ যানবাহনের অপর্যাপ্ততা এবং আইন প্রয়োগের অব্যাহত অনুপস্থিতিতে রাত্রিবেলা মদ পান করতে করতে গাড়ি চালানো এক প্রকার রীতি হয়ে গেছে। এবং আপনি দেখবেন যে মাত্র সতের বছর বয়সেই একটা গাড়ির গর্বিত মালিক হয়ে ওঠা লেবাননী যুবকদের বৈরুতের বিভিন্ন স্থাপনায় নিশি জীবনের উদ্দাম পরিবেশে সহজে প্রবেশ করতে দিতে পার্কিং সুবিধা প্রদান অগ্রাধিকার পেয়েছে।
ভ্যালের কাছে সমর্পন করো! কয়েক ডলারের বিনিময়ে আশা করা যায় এই তরুনদের (নারী-পুরুষকে সমানভাবে এই পেশায় এখনও দেখা যায় না তবে সাম্প্রতিক গতি প্রকৃতি দেখে অনুমান করা যায় অচিরেই দেখা যাবে) সঙ্গ জীবনের চমৎকার মুহূর্ত গুলো উপভোগ করার জন্য আপনার মনে প্রশান্তি ও সম্মান বোধ এনে দেবে।