কোরিয়ার নাটক এখন কোরিয়ার বাইরেও জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তা নাটকের একটি চালু নাম আছে, হালিয়ু (কোরিয়ান ঢেউ)। সুন্দরী তরুণী আর সুসজ্জিত তরুণ, তাদের মধ্যে ভালোবাসা বা ত্রিমাত্রিক ভালোবাসা… এরাই কোরিয়ান নাটকের মুখ্য চরিত্র। বিদেশে কোরিয়ার নাটক রপ্তানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
হালিয়ুর সাফল্যের ফলে কোরিয়ায় চ্যানেলরা নিজেদের মধ্যে কঠিন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে আর নাটক তৈরির বাজেট ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রোগ্রামের রেটিং ঠিক করে নাটক কত লম্বা হবে আর তার গল্প কি হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বোঝা যায় দর্শক প্রত্যেকবার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায়। ভক্তরা নাটকের ওয়েবসাইটে যে মতামত রাখে তা নাট্যকার বা প্রযোজকের মতামতের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি কোরিয়ার নাটকের বেশ সমালোচনা হয়েছে। একটি নতুন নাটক যা নাটক নির্মাতা ও কলা কুশলী নিয়ে কথা বলে তা বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। আর এই নাটকের লেখক ও প্রযোজক বলেছে যে তারা দর্শকের মতামতের ভিত্তিতে নাটকের শেষ অংশটি পরিবর্তন করবে না। তারা আরও বলেছে যে গতানুগতিক ভালবাসার গল্প নয় বরং কর্মজীবিদের জীবন তাদের নাটকের মূল উপজীব্য হবে।
কিন্তু ব্লগার তারা কোরিয়ার নাটকের বিশেষত্ব আবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন:
কেন কোরিয়া ভালোবাসার নাটক করতে পাগল?
২১ শতকে কোরিয়া নাটকের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই নাটকের রাজ্য এখন ধ্বংসের পথে। যারা নাটককে বিপদে ফেলছে তারা তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে না কেন? কত নাটক হয়েছে যেখানে কর্মজীবি, যেমন নাটকের প্রযোজক, লেখক, পরিচালক, অভিনেতা আর অন্যান্য দের দিয়ে প্রধান চরিত্র করা হয়েছে। কিন্তু শেষে প্রেমের গল্পই হয়।
আমি সম্প্রতি একটা নাটক দেখা শুরু করেছিলাম। মজার ছিল তাই তা দেখে যাচ্ছিলাম আর তাদের হোমপেজও দেখছিলাম দর্শকদের মতামত দেখার জন্য। আর তার পরে এই ধরনের সাইট আর না দেখার সিদ্ধান্ত নেই। এর আগে আর একটা নাটকের ওয়েবসাইটে দেখেছিলাম অভিনেতাদের ভক্তরা একে অপরের সাথে অশোভন ভাবে কথা বলছে। আমি ওখানে আর সময় ব্যয় করা ঠিক মনে করি নি। কিন্তু মনে হল অভ্যাস পাল্টায় নি। আমি শুনেছি যে মাত্র ১% দর্শকরা হোমপেজে তাদের মতামত দেয়।
আমি আসলে সেই সব নাট্যকারদের পছন্দ করি যারা এই ১% দর্শকের চাপে পড়ে নাটকের শেষ পাল্টায় না। আসলে তারা কেন গল্পটা লিখেছিল তা ভুলে গিয়ে কিছু লেখক পরগাছার মতো এদিক ওদিক মানুষের কথায় দুলতে থাকে। এদের কে মেরুদন্ড বিহীন মনে হয়।
আমি যে নাটক এখন দেখছি তার তৈরির উদ্দেশ্য টা দেখি। এটা কোরিয়ার নাটক যা প্রেম সর্বস্ব তাকে তিরস্কার করে তৈরি হচ্ছে। আর তার পর তারা দেখিয়েছে যে তারা এমন নাটক করতে চাচ্ছে না যা আগে হয়েছে। তারা চাচ্ছে এই নাটকের মাধ্যমে কর্মজীবিদের কথা বলতে। কিন্তু গল্পের ধারণা আর দর্শকদের মতামত দেখে মনে হচ্ছে মূল ধারণা থেকে নাটকটা পালটিয়ে যাবে। আমি হতাশ হচ্ছি। ”এটা এমন যে তারা যে উদ্দেশ্যে শুরু করেছিল তা বেশ বড় ছিল … মনে হচ্ছিল অন্য প্রেম কাহিনী থেকে তাদের টা আলাদা হবে। যাদের চাকরি আছে, যেমন অভিনেতা, প্রযোজক, ম্যানেজার, শুধু একটা প্রেম কাহিনী যারা তৈরি করাতে ব্যস্ত এই। তারা কিন্তু প্রেম কাহিনী দিয়েই শেষ করতে পারে।” আমি চিন্তিত।
ঔষধ বিক্রেতাদের তাদের কাজ করতে দাও … ডাক্তারদের তাদের কাজ … লেখকদের তাদের গল্পের কাজ করতে দাও…
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল যে লেখকরা তারা হয়ত গল্প পাল্টাতে চায়না.. তবে দর্শকরা চাপ দিতে থাকলে, তারাও তো মানুষ আর সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে যায় তারা, তাই… আমি ভীত যে এই নাটকের শেষ অন্য দিকে যাবে। নাটকের একটা লাইন বলে, “দর্শক? তাদের মান তত উঁচু না।” এটা উত্তর হতে পারে। অবশ্য অনেকে আছে যারা অন্য আরও ভালো গল্প দেখতে চায়। কিন্তু তারা সংখ্যালঘু। বেশীর ভাগ চায় মূল চরিত্ররা প্রেম করুক আর তাদের ইচ্ছা মতো গল্প শেষ হোক। ৫-১০ বছর আগের তুলনায় অবস্থা পাল্টায় নি। আর গল্পের মাধ্যমে তারা নিজেদের সন্তুষ্টি পেতে চায়। কিন্তু তিন জনের মধ্যে সম্পর্ক থাকলে, একই গোত্রের দুইজনের সমর্থকদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। এক পক্ষ গল্পের শেষে জিতলে অন্য পক্ষ আহত হয়।
দয়া করে একঘেয়ে প্রেমের গল্প বন্ধ করুন
মনে হয় যারা নাটক দেখে তারা সনাতন প্রেমের গল্প না দেখালে রেগে যেতে পারে। সত্যি বলতে কি, যারা এই নাটক দেখে আর মজা পায়… আমার মনে হয় তারা ভালোবাসা খুঁজছে না, কিন্তু তাতে দেখা যায় যে মূল চরিত্ররা তাদের গন্তব্য খুঁজে পায় আর সঙ্গীও। এটাই শেষ হতে হবে যেমন প্রযোজক মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বলেছিলেন…
কোরিয়ার নাটকের গোপন রোগ; চিকিৎসা কি আছে?
নাটক আমাদের দেশের- অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত – ডাক্তারি নাটকে তারা ডাক্তার নিয়ে কথা বলে না, বরং প্রেমের উপর জোর দেয়। আইনজীবিদের নাটকে সব উকিল প্রেমে পড়েছে… পুলিশ, পাইলট, হোটেল, প্রচার মাধ্যম, ব্যবসায়ী, খেলোয়াড় আর রাজনৈতিক ইতিহাস…সব নাটক প্রেমের কথা বলছে। আসল তৈরির কথা ভুলে যায় এমন কোন নাটক আমি দেখতে চাই না। আমেরিকা, জাপানে অনেক নাটক আছে প্রেমের নাটকের বাইরে। আমরা এই একঘেয়েমির বাইরে কেন যেতে পারি না? আমরা এমন আটকিয়ে আছি কেন?
কোরিয়ার নাটকের প্যারোডি ও আছে যা আমেরিকার কৌতুকাভিনেতারা করে। তারা মজা করে কোরিয়ার নাটকের বৈশিষ্ট্য দেখায়।