রবিবার মিশরে ৫০০ লোক গ্রেপ্তার হয়েছে যখন পুলিশ একটা সাধারণ ধর্মঘট দমন করার চেষ্টা করে যা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের মূল্য বৃদ্ধি আর ভাল বেতনের জন্য ডাকা হয়েছিল।
আর যেমন ধর্মঘটের কথা টেক্সট মেসেজ, ই মেইল আর জনপ্রিয় স্যোশাল নেটওয়ার্কিং প্লাটফর্ম ফেসবুক মারফত প্রচারিত হয়েছে তেমন ব্লগার আর অনলাইন কর্মীরা সবাইকে জানিয়েছে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে যা ঘটেছে সারা দিন ধরে।
সমগ্র মিশরে ডাকা এই ধর্মঘট, মতামতের পার্থক্য গড়ে তুলেছে যারা এর সফলতা চেয়েছে আর যারা এটার সমাপ্তি এমনকি ব্যর্থতা আশা করেছে তাদের মধ্যে। অনেকে বাড়ি থেকেছে ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে, অথবা দিনের ধুলি ঝড় থেকে বাঁচার জন্যে বা এই ভয় থেকে যে রাস্তায় সংঘর্ষ ছড়াতে পারে।
সাক্ষীরা রাস্তায় কম যানবাহনের কথা বলেছেন যেখানে পুলিশের গাড়ি আর সাদা পোশাকের পুলিশ ভরা ছিল। সারাদিন ব্যাপী টুইটার, ফেসবুক আর ব্লগের মাধ্যমে খবর আসছিল যে কত জন বিক্ষোভকারী, রাজনীতিবিদ, জনতা আর ব্লগার গ্রেপ্তার হয়েছে।
এস এ লিখেছে,”আজকের ধর্মঘটে কি হয়েছে?”
“আমি দীর্ঘ দিন শেষে ফিরেছি। আর আমি প্রায় গ্রেপ্তার হয়ে যাচ্ছিলাম, মিশরীয় নিরাপত্তা কর্মীরা ধর্মঘটীদের ত্যক্ত বিরক্ত করা থামায় নি। গতকাল রাত থেকে অনেক কর্মী গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে তারা অভিযান শুরু করেছে আর আজকেও তাই করছে। আমি সকাল ১১টা থেকে তাহরির স্কোয়ারে ছিলাম আর সেখানে অনেক সৈন্য আর সাদা পোশাকে পুলিশ ছিল, তারা সবাইকে বিরক্ত করছিল, পরিচয় পত্র চাচ্ছিল আর ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে বলছিল।
আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো থেকে তিনটি মেয়ে রুটি নিয়ে প্রতিবাদ করতে এসেছে কিন্তু সৈন্যদের তাদের প্রতিবাদের ধরন পছন্দ হয় নি আর অনেকে তাদেরকে আক্রমণ করছিল।
একজন মহিলা তার দুই বাচ্চাসহ মেয়েদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। বাচ্চা দুটি একা কাঁদছিল কারন তাদের মাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা তাহরির স্কোয়ারে আরও বেশ কিছু মহিলাকে গ্রেপ্তার করেছে আর তাদেরকে ঘিরে ছিল কিন্তু আমি আর আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় কিছু ছাত্র ওই অবরোধের সামনে ছিলাম আর পুলিশকে বলছিলাম তাদের ছেড়ে দিতে আর তাদেরকে না ছাড়া পর্যন্ত আমরা নড়ি নি।”
সে আরও বলেছে:
“শহরতলীতে আইনজীবিদের সিন্ডিকেটের সামনে রাস্তার লোক ভেতরের প্রতিবাদের সাথে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে আমরা “হোসনি মোবারক নিপাত যাক” বলে স্লোগান দিচ্ছিলাম, কিন্তু শ'য়ে শ'য়ে সৈন্য লাঠি নিয়ে আমাদের তাড়া করে আক্রমণের জন্য।আমি ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছিলাম যখন একজন অফিসার আমাকে গ্রেপ্তার করে ক্যামেরা আর মোবাইল ফোন নিয়ে নিতে চায়, তবে আল্লাহকে ধন্যবাদ একজন ফরাসি সাংবাদিক এসে আমাকে তার সহকারী বলে আর ১৫ মিনিট আলোচনার পর আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এখন পর্যন্ত ১০০ জনের বেশী গ্রেপ্তার হয়েছে, কিন্তু অনেক মিশরী বাড়ি থেকে হরতালে অংশগ্রহণ করেছে। শাসক গোষ্ঠীর বাণী পরিষ্কার ছিল “ কোন স্বাধীনতা না, অভিব্যাক্তির স্বাধীনতা।” আমি ভাবছি আজকে স্বৈর শাসক মোবারক কোথায় লুকিয়ে আছে? পুলিশ খুব মারমুখী ছিল আজকে কিন্তু আমরা প্রতিরোধ করেছি, আর আমি মনে করি আজকের দিন দুর্নীতি, অবিচার, নির্যাতন আর স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জয়।”
হোসসাম এল হামালাওই আর স্যান্ডমাঙ্কি নিয়মিত আপডেট দিয়েছে কিন্তু সব থেকে ভালো করেছে একটা নতুন ব্লগ (আরবী ভাষায়) যেখানে সবাইকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে তাদের গল্প, ছবি আর ভিডিও দেয়ার জন্য যাতে দিনের ঘটনাটির দলিল রাখা যায়। তাদামোন মাসর ও নিয়মিত আপডেট দিয়েছে যেমন তা দিনব্যাপি হচ্ছিল। দুটি ব্লগ দিনের ঘটনা আপডেট করছে যখন এই রিপোর্ট লেখা হচ্ছে তখনও।
ঘারিবা ঘটনাটির বিস্তারিত লিখেছেন, বিবিসি অ্যারাবিক এর উদ্ধৃতি দিয়ে আর আল মাহালার একটি সংঘর্ষের ভিডিও দিয়ে, যেখানে কাপড়ের মিল আর ধর্মঘটের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, অরাজকতার দৃশ্য দিয়ে:
ব্লগার আরো লিখেছেন:
বিবিসির সংবাদ দাতা আজ্জা মুহিদিন নিরাপত্তা কর্মীদের বরাত দিয়ে বলেছেন যে আজকে গ্রেফতারের সংখ্যা ২০৭ এ পৌঁছেছে, কায়রো, গিজা, আলেকজান্দ্রিয়া, আল বুহায়রা আর কানাতে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আল ঘাদ, আল নাসেরিয়া, আল তাজামুয়া আর কিফায়া মুভমেন্টের সদস্য আর লেবার পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল মাদি আহমেদ হুসেন রয়েছেন।
মাহালায় পরিস্থিতি গরম ছিল। কায়রোর মতো বড় শহরের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের বদলে যেখানে শুধু অবরোধ আর রায়ট পুলিশের সাথে মাঝে মাঝে ঝামেলা ছাড়া যা আইনজীবি সিন্ডিকেটের সাথে হয়েছে , মাহালায় জনগণ আর পুলিশের মধ্যে জোরালো সংঘর্ষ হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী দুইজনের মৃত্যুর কথা বলেছে, তার মধ্যে একজনের বয়স ৯ বছর। ইলেক্ট্রিসিটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, পেট্রল পাম্পে আগুন লাগানো হয়েছিল আর কয়েকটা দোকান ভাঙ্গা হয়েছে।
জেইনোবিয়া তার ‘মাহালায় আগুন’ লেখায় লিখেছেন:
“বর্তমানে মাহালায় আগুন জ্বলছে, মধ্য প্রাচ্যের বস্ত্র কারখানার সব থেকে বড় শহরে সব রাস্তা অবরুদ্ধ আর বন্ধ আর ওখান থেকে যাওয়ার ট্রেন ও উত্তর ডেল্টার অন্য শহরে সরানো হচ্ছে। আমরা সন্ধ্যে ৬টা থেকে শুনতে পাচ্ছি যে মাহালায় আসলেই আগুন লেগেছে, একজন নীচের ছবিসহ ইমেইল করেছে যে শহরটা মিশরের গাজায় পরিণত হয়েছে। বাহিনী হুশিয়ারি মূলক গুলি আর কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে লাঠি ব্যবহারের সাথে সাথে আর লোক খারাপ ভাবে আহত হয়েছে। ব্যাপারটা না ফেরার পর্যায়ে পৌঁছেছে যখন দুইজন নিহত হয় একজন ২০ বছরের যুবক আর ৯ বছরের ছেলে “আজকে গাজাতেও একটা ছেলে মারা গেছে!!” হ্যা, এটা সত্যি ছিল দুর্ভাগ্যজনকভাবে। লোক রেগে যায় আর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে, তবে যারা সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল তারা ১১-১৬ বছরের মধ্যে, স্থানীয় ছোট তলোয়ার ব্যবহৃত হয়েছে, রাস্তায় আগুন জ্বলছে। এখন নিরাপত্তা বাহিনী শহরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।”
অবরোধ সত্বেও একটা নতুন ফেসবুক গ্রুপ গত রাত থেকে চলছে, জনগণকে মে ৪ এ আর একটা ধর্মঘটে আহ্বান করছে তারা, যেটা মিশরের প্রেসিডেন্টের জন্মদিন। এ পর্যন্ত তারা ১৩০০ মেম্বার পেয়েছে, আর নীচে তাদের প্রাথমিক দাবীর একটা খসড়া দেয়া হল:
১) মে ৪ এ শান্তিপূর্ণ ধর্মঘট আর বিক্ষোভ।
২) মে'র প্রথম সপ্তাহে কেউ মাংস কিনবে না।
৩) বিক্ষোভে অংশগ্রহণ কিছু গোপন জায়গায় হবে।
৪) মসজিদ আর চার্চে সবাই সমবেত হবে আর তার পর আমরা বড় চত্বর আর রাস্তায় যাবো।
যদিও এখনও ৬ এপ্রিল এর ধর্মঘটের সফলতা নির্ণয়ের সময় হয় নি আর তার ফল, এটা অবশ্য ঠিক যে এটা একটা শিরাকে ছুঁয়ে গেছে, যেখানে হাজার হাজার লোক সমবেত হয়েছে আর মুক্ত অনলাইন যন্ত্র ব্যবহার করেছে তাদের স্বাধীনতা, সমতা, গণতন্ত্র আর তাদের ও তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মিশরে সম্মানজনক জীবন দাবি করতে।