জর্জ গোব্বিঃ ভ্রমন ব্লগ আর পথ থেকে অভিজ্ঞতা

আর্জেন্টিনার অভিজাত শহর বুয়েনোস আয়ার্স পর্যটকদের একটি প্রিয় জায়গা। এটি গ্লোবাল ভয়েসেসের আর্জেন্টিনার লেখক জর্জ গোব্বির বাড়ীও, যে এই ঘটনাবহুল শহর সম্পর্কে একটু পক্ষপাতদুষ্ট, “এখানকার রাতের জীবন খুব সুন্দর, অনেক জায়গা দেখার আছে। মাংস খেতে এখানে সবাই আসে কিন্তু পিজ্জা, এম্পানাদাস আর পাস্তার জন্য জায়গা রাখতে হবে।” তিনি অবশ্য বলেন,”এসব জানা এত সহজ না কারন পর্যটকরা যে গাইড নিয়ে আসে তাতে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।”

পর্যটকদের আর একটি জনপ্রিয় ভ্রমণের জায়গা হচ্ছে জর্জের ‘ব্লগ দে ভিয়াজেস’ (ভ্রমণ ব্লগ) যেটি অক্টোবর ২০০৩ থেকে অনলাইন আছে। এই ব্লগে বুয়েনোস আয়ার্স, ল্যাটিন আমেরিকাতে ভ্রমণের জায়গা সম্পর্কে তথ্য ছাড়াও অন্য দৃষ্টিকোন থেকে ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করে।

ভ্রমণ ব্লগ একদিকে চায় ভ্রমনকারীদের সাহায্য করতে তাদের নিজেদের ভ্রমনের অভিজ্ঞতা তৈরি করতে, আবার অন্য দিকে এটা চেষ্টা করে পর্যটন, রাজনীতি আর অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে। এই অন্চলের সব কিছু কিন্তু ভাল না, যেমনটি ম্যাগাজিন বা পত্রিকার ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয়ে বড়াই করা হয়। ভাগ্যক্রমে, আমার স্বাধীনতা আছে আমি যা চাই তা প্রকাশ করার, এটা অমূল্য, কারন আমার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার জায়গা ব্লগ।

এই ব্লগ জর্জের জন্য বেশ কিছু সুযোগ করে দিয়েছে, যেমন এটা তার বেশ কিছু ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখাকে তুলে ধরেছে, কিন্তু এতে পর্যটন শিল্প সম্পর্কে তার জ্ঞান ও ধরা পড়েছে। তাকে দুটি ব্যক্তিগত পর্যটন সংস্থা নিয়োগ করেছে তাদের ব্লগগুলো (ডেস্পেগার আর লজিট্রাভেল) দেখাশোনা করার জন্য। দুর্গম জায়গা থেকে এসে কাজ করার ক্ষমতা জর্জকে সুযোগ করে দিয়েছে রাস্তায় থাকা অবস্থায় কাজ করার জন্যেও যেখানে সে তার ভ্রমণ ভালবাসাকেও কাজে লাগাতে পেরেছে।

তার কিছু স্মরনিয় ভ্রমন হয়েছে উত্তর আর দক্ষিন আমেরিকাতে।

১৯৯৯ এ আরজেন্টিনা, বলিভিয়া, পেরু , ইকুয়েডোর আর চিলি হয়ে আমার ভ্রমণ। এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারন আমাকে প্রমাণ করতে হয়েছে যে আমি দুই মাসের একটা যাত্রা ঠিক করতে পারি, আর সেটা নির্দিষ্ট সময় আর বাজেটে করতে পারি কিনা। আমার আমেরিকার শেষের যাত্রা ( নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি আর ওয়াশিংটন) ও গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারন নিউ জার্সির গ্রামে থাকার অভিজ্ঞতা সব পর্যটকের হয় না। আর নিউ ইয়র্কে আমি সব সময় যেতে চেয়েছি। এখানে বার বার যাওয়া যায়।

তারপরও সব কিছু পরিকল্পনা মতো হয় না, কিন্তু নতুন জায়গায় , নতুন পরিবেশে ভ্রমণ করতে যাওয়ার মজা তো এখানেই।

২০০৫ এ বলিভিয়াতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়েছিল। মেসা সরকার পতনের সময় যে গন্ডগোল হয়েছিল, সেই সময় একদিন পুরো আমরা একটা আটকা পড়া বাসে ছিলাম এল আল্টোর বাইরে। পরে আমরা এল আল্টোতে পৌঁছুতে পেরেছিলাম আর একটা ট্যাক্সি পেয়েছিলাম যেটা আমাদেরকে ডেসাগুয়াডেরোতে নিয়ে গিয়েছিল।কিন্তু রাস্তাতে অনেক সড়ক অবরোধ আর বিক্ষোভ ছিল, তাই বাইরে এসে তাদেরকে কিছু টাকা দিতে হয়েছিল যাতে তারা আমাদের যেতে দেয়। এসব কিছু হয়েছিল একটি নি:সঙ সড়কে  যেখানে পুলিশ বা অন্য কেউ ছিল না। ব্যপারটা মজার ছিল যে প্রত্যেকবার আমরা একটা সড়ক অবরোধের কাছে গেলে ২০-৩০ জন লোক  ট্যাক্সিকে ঘিরে ধরছে, তারা গাড়ি তল্লাশি করে নিশ্চিত হচ্ছে যে কোন পশ্চিমি, চিলিয়ান বা পেরুভিয়ান নেই। সমস্যা হল যে গাড়িতে বসে থাকা ৫ জনের মধ্যে ট্যাক্সি চালক বলিভিয়ান, ৩ জন পেরুভিয়ান যার মধ্যে আমি আর আমার স্ত্রীও পড়ি। তাই সব সময় আমি কথা বলতাম। ঘৃণার মাপকাঠিতে আরজেন্টিনার লোকেরা সবথেকে কম গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারনে আমার প্রতি তারা তেমন আগ্রহী ছিল না। টান টান উত্তেজনার রাত ছিল সেটি কিন্তু আমরা পার পেয়েছি। এই ছোট্ট ঘটনার জন্য আমি এই ধারণা থেকে সরে যাই নি যে বলিভিয়া একটা সুন্দর দেশ আর যেখানে আমি খুব অল্প সময়ে ছয়বার গিয়েছি।

জর্জের জন্য ভ্রমণ নতুন জায়গা আর পরিবেশ দেখার থেকেও বেশী কিছু, কিন্তু অনেকটা ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জের মতো। “ক্রমাগত চলতে থাকা বেশ কৌতূহল উদ্দীপক যেহেতু সব সময় সতর্ক থাকতে তা বাধ্য করে। মাঝে মধ্যে আরআম ও করা যায়, কিন্তু সাথে সাথে এটি একটা কঠিন মানসিক চ্যালেঞ্জ, তিনি বলেছেন।”

জর্জের জন্য ভ্রমণ কখনো পুরানো মনে হয় না, যার কাছে যাওয়ার জায়গার একটা লম্বা লিস্ট থাকে তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে এখন সে কোথায় যেতে চায়।

অনেক জায়গা। একটা আমার দেশে – উশুআইয়া যেখানে আমাকে যেতে হবে। আমি এর মধ্যে উত্তরের শেষ প্রান্তে লা কুইয়াচায় গিয়েছি আর এখন আমাকে দক্ষিণের শেষ প্রান্তে যেতে হবে। আমার দেশের বাইরে, আমি জাপানে যেতে চাই, বিশেষ করে টোকিও, ক্যাম্বোডিয়া আর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ আর আইসল্যান্ড ও স্কান্ডিনেভিয়া। আমেরিকাতে আমার এখনও সান ফ্রান্সিস্কো যাওয়া বাকি। ল্যাটিন আমেরিকাতে, প্রথমে আমার লিস্টে আছে কলোম্বিয়া আর কোস্টারিকা। আর একটি জায়গা হল প্রাগ, আর মনে হচ্ছে আমি সেখানে খুব শীঘ্রই যাব। বাকি গুলো অথনৈতিক কারনে এখনকার জন্য সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।

ভ্রমণ ব্লগ, ব্যক্তিগত ব্লগ আর গ্লোবাল ভয়েসেসে তার কাজের সাথে সাথে তিনি বুয়েনোস আয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্যুনিকেশন সাইন্স ডিপার্টমেন্টে কাজ করছেন আর সেখানেই উনি সোশাল সাইন্সে ডক্টরেট করছেন। তিনি ব্যস্ত আছেন আর ব্যস্ত তাকে রাখা যাবে তার প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা থেকে।

দুই বছর আমি একজন ক্যাশিয়ারের এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করেছি একটা সুপার মার্কেটে, যখন আমি স্কুল শুরু করি। আমি ওই কাজটি ঘৃণা করতাম, আর তখন আমি নিজেকে কথা দিয়েছিলাম যে এখন থেকে আমি যা পড়ছি সেই ক্ষেত্রেই আমি শুধু কাজ করবো, আর আমি সেই কথা রেখেছি।

3 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .