কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি আলভারো উরীবের ছবি
এ লুক আসকান্সের সৌজন্যে
কলম্বিয়ার ব্লগাররা খুব গুরুত্ব সহকারে কলম্বিয়ার সেনাদের ইকুয়েডরের ভূমিতে আকস্মিক ঢুকে পরার ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছে। এই আক্রমনের বৈধতা নিয়ে আলোচনার সময় এর ফলাফল আর যুদ্ধের সম্ভাব্যতা নিয়ে সবার ভীতি দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার কম্পিউটারে পাওয়া ফাইলে ইকুয়েডর আর ভেনিজুয়েলার সরকার এবং ফার্ক এর মধ্যে সম্পর্কের দলিল পাওয়া গিয়েছে আর ফার্ক যে ৫০ কেজি ইউরেনিয়াম রেখেছে তার ব্যাপারেও বলা আছে।
ইকুইনোজিও, একটা দীর্ঘদিনের স্বাধীন এবং নির্দলীয় অনলাইন ডিজিটাল ম্যাগাজিন (যারা সম্প্রতি ইংরেজী সংস্করণ শুরু করেছে) তাদের স্প্যানিশ সংস্করণে এই ঘটনার খুব ভালো কাভারেজ করেছে, যার মধ্যে কয়েকটা লেখা ইংরেজীতেও ভাষান্তর করা হয়েছে।
তাদের ‘ফার্ক এর ২ নং (নেতা) কলোম্বিয়া- ইকুয়েডোর বর্ডারের কাছে সংঘর্ষে নিহত’ নামক লেখায় তারা লিখেছে:
কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জুয়ান ম্যানুয়াল সান্তোস শনিবার সকালে জানিয়েছেন যে ফার্ক (রেভল্যুশনারী আর্মড ফোর্সেস অফ কলম্বিয়া) এর দ্বিতীয় প্রধান কমান্ডার জুইস এডগার দেভিয়া সিলভা ওরফে রাউল রেয়েস নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। সান্তোসের কথা অনুযায়ী ‘লোক মুখে পাওয়া তথ্য বিচার করে’ রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা কলম্বিয়ার কতৃপক্ষকে জানিয়েছে যে কলম্বিয়ার সাথে ইকুয়েডোরের সীমান্তের কাছে গ্রানাডাতে ফার্ক এর ৪৮ তম দলের গেরিলা যোদ্ধারা রেয়েসের সাথে দেখা করার কথা ছিল শুক্রবার রাতে। কলম্বিয়া মিলিটারি আর জাতীয় পুলিশ মিলে স্থানীয় সময় রাত ১২:২৫ এ অভিযান শুরু করে।
কলম্বিয়ার বিমান বাহিনী কলম্বিয়ার আকাশ সীমা থেকে একটা গেরিলা ক্যাম্পে বোমা ফেলে, যেটা সীমান্তে ১.৮ কিমি ভিতরে ইকুয়েডরে ছিল সান্তা রোসার কাছে। গেরিলারা এর জবাবে গুলি ছোঁড়ে যার ফলে একজন কারলোস হেরনান্দেজ লিও নামে এক কলম্বিয়ার সেনা মারা যায়। সান্তোসের কথা অনুযায়ী রাউল রেয়েস আর জুলিয়ান কোর্নাডো সহ ১৫ জন গেরিলা মারা গেছে। তাদের মৃতদেহ কলম্বিয়ার কর্তৃপক্ষ নিয়ে আসে ইকুয়েডরের সেনা বাহিনী এসে ক্যাম্প ঘিরে ফেলার পর।
ইকুইনোজিও অন্য আর এক লেখা ‘কলোম্বিয়া, ইকুয়েডোর আর ভেনেজুয়েলার সীমান্তে সেনা পাঠাবে না‘ তে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখেছে যাতে ব্লগাররা মন্তব্য করছে ইকুয়েডরে অভ্যুত্থানের যথার্থতা নিয়ে, এই বিশ্বাস নিয়ে যে তারা ফার্ক এর সন্ত্রাসীদের সাহায্য করছে:
প্রায় এক ঘণ্টা পর, কলম্বিয়ার জাতীয় পুলিশ ডিরেক্টার, জেনারেল অস্কার নারাঞ্জো বলেছেন রেয়েস, যার কাছ থেকে উদ্ধার করা দলিল পত্রে, প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে কুইটো আর ফার্কের মধ্যে সম্পর্ক আছে (গুস্তাভো লাররিয়া, ইকুয়েডরের অভ্যন্তরীণ আর বহি নিরাপত্তা মন্ত্রীর মাধ্যমে)। এই দলিল, যেখানে ফার্ক সচিবালয়ে লেখা রেয়েসের চিঠিতে ইকুয়েডর আর ফার্ক এর মধ্যে কিছু কথিত অঙ্গীকারের কথা বলা আছে, সেখানে কথা দেয়া আছে কোররিয়ার আর্মি কর্পোরেল পাব্লো এমিলিও মঙ্কায়োকে ফেরত দেয়ার কথা যাকে ১৯৯৭ এ অপহরণ করা হয়েছে, যাতে কোররিয়া আর একজন মধ্যস্থতা কারী হতে পারেন সন্ত্রাসী আর কলম্বিয়ার সরকারের মধ্যে। ইকুয়েডর কর্তৃপক্ষ এই দাবি অস্বীকার করেছে।
আলেজান্দ্রো পেলাজ কলোম্বিয়াকে ইজরায়েলের সাথে তুলনা করেছে (স্প্যানিশ ভাষায়):
এখনকার জন্য সবই অলঙ্করণ আর দেখানোর বিষয়। রাজ্যের প্রতি চিৎকার করেন, লাল পোশাক পরেন, সবাইকে অনুচর বলে ডাকেন, রাশিয়া থেকে অস্ত্র আর ইরান থেকে ট্রাক কেনেন। কিন্তু শাভেজ যখন নিজেকে ভুরাজনীতির বিষয় দিয়ে সাজাচ্ছেন কলম্বিয়া তখন কাজ করেছে আর তাদের সীমান্তের বাইরে ইজরায়েলের মতো করে একটা গেরিলা ক্যাম্পে বোমা হামলা করেছে।
এখন এটা ঝুঁকি কৌশল ছেড়ে সত্যিকারের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। কলম্বিয়া – শাভেজের কল্পনায় হচ্ছে ইজরায়েল আর ভেনেজুয়েলা বলা যেতে পারে অনেকটা ইরানের মতো। আর এর পরে কি হবে? এখনের জন্য কিছু না।
পালা লাব্রা অন্যান্য কলোম্বিয়ার ব্লগারদের দেয়া মতামতের সাথে একমত হয়েছেন (স্প্যানিশ ভাষায়)যেখানে তারা মনে করেছে যে ইকুয়েডরের সাথে রাজনৈতিক মতপাথর্ক্য ঠিক করা যাবে যদি হুগো শাভেজ, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট এর বাইরে থাকেন:
সত্যি কথা হচ্ছে যে আমি সমাজতন্ত্রের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী না, আমি উরাইবের পক্ষে না বা অন্য কিছু। আমি মনে করি যে পৃথিবীর যে কেউ ঠিক হতে পারে যেমন ফিতো বলেছেন,”আমি কোন মতবাদে বিশ্বাসী না।” কিন্তু কিছু জিনিষ আছে যাতে আমার খুবই রাগ হয়… গতকাল আমি শাভেজের কথা শুনছিলাম, কারন আমার বাবা টিভি চালিয়ে রেখেছিল, আর আমি কল্পনা করছিলাম যে আমার প্রতিবেশী মরিয়াম আমার পরিবারকে তুলো ধুনা করছে কারন সে মনে করে যে আমাদের নাস্তায় সিরিয়াল খাওয়া উচিত না, সে একটা যুদ্ধ বাধাতে চাইছে যখন অন্যান্য প্রতিবেশীরা তালি দিচ্ছে। আসলে মরিয়াম জানে না আমরা নাস্তায় কি খাই আর এটা তার দেখার ব্যাপারও না, অন্তত এত ঝামেলা করার মতো ব্যাপার না। আমি জানি আমার উদাহরণ খুব সাধারণ, কিন্ত আমার মাথায় এটাই প্রথমে এলো। কারন আমার এটা খুবই অপছন্দ যে কেউ কোন কারন ছাড়া আর একজনের ব্যাপারে নাক গলাক।
মরিশিও ডুকু আররুব্লা ব্লগে এই ব্যাপারে কে কি বলেছে তা পড়ে দেখে কিছু জিনিষ পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছে (স্প্যানিশ ভাষায়):
মনে হচ্ছে বেশীর ভাগ বিদেশীদের জন্য কলম্বিয়ার সমস্যাটা হচ্ছে যে ওখানে কোন মানবাধিকার চুক্তি আছে কি নেই।
যারা জিম্মি তাদের আর তাদের পরিবারের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি বলতে চাচ্ছি যে এটা সমস্যা না। বন্দি মুক্তির আগে আরো অনেক সমস্যা আছে (ফার্ক, প্যারামিলিটারি দল, ক্ষুধা, অসমতা, দুর্নীতি)। এর মানে এই না যে এই ধারাবাহিকতায় তাদের সমাধান করতে হবে আর যদি আমরা বন্দি মুক্ত করতে পারি সেটা রাউল রেয়েসের মৃত্যু সংবাদের থেকে ভালো খবর। কিন্তু আমি যেটা দেখছি সেটা হল ইউরোপের বেশীর ভাগ লোক মনে করছে যে এই খুনির না থাকার সাথে এই চুক্তিও শেষ হয়ে গেছে। বাকি সব কিছু তাহলে কি? এটার অস্তিত্ব তাদের জন্য নেই। আর খারাপ লোক সবসময় দেখা যায় সরকারকে হতে হয়, কখনো অন্য দিকের কাউকে না।
সমানুপাতের ধারনা একেবারেই হারিয়ে গেছে। যদিও কলোম্বিয়ার সরকারের যথেষ্ট কারন আছে যে করেছে তার পেছনে, কিন্তু সেটা অন্যায়ভাবে করা হয়েছে। শেষ, পন্থাকে সংগতি দেয় না। কিন্তু যা হয়েছে তা খুব ভালো খবর, এটা আমি অস্বীকার করতে পারি না। যা আসছে তা খুব ভালো না, কিন্তু আমাদের দেখতে হবে।
ভিক্টর সোলানা ক্রমান্বয়ে এই ঘটনা ঘটার পিছনের কথা গুলো তুলে ধরেছে যার ফলে কলম্বিয়ানরা তাদের নখ কাটছে। তবে এই লেখার থেকেও বেশী চোখ খোলার জিনিষ আছে মন্তব্য সেকশনে যেখানে সবাই তর্ক-বিতর্ক করছে আর ৫০ কেজি ইউরেনিয়ামের দোষারোপ নিয়েও যা ফার্ক ভেনেজুয়েলা থেকে পেয়েছে। ইউরেনিয়ামের সূত্র এর মধ্য একটি বিষয়।
ক্যামিল আন্দ্রিয়াজ রাজনৈতিক ব্লগার আত্রাবিলিওসোর ব্লগে করা এই ঘটনার ৩ ভাগের রিপোর্ট তার ব্লগে তুলে ধরেছেন যেখানে তার বিশ্বাস যে মেডিকাল যন্ত্রপাতির চুরি থেকে এই ইউরেনিয়াম এসেছে:
মূলত:, ফারক এর হাতে থাকা ইউরেনিয়াম মেডিকাল যন্ত্রপাতি তৈরি করতে ব্যবহৃত রেডিও এক্টিভ জিনিষ যেটা বেশ কিছু বছর আগে রহস্যজনকভাবে চুরি হয়েছিল। কতৃপক্ষ তখন জনগণকে সাবধান করেছিল এর সংস্পর্শে আসলে যেসব স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে সেই বিষয়ে।
ভেনেজুয়েলা থেকে কারলা মারিয়েলা আর একটি তত্ত দিয়েছেন, যে এটার উৎস ভেনিজুয়েলা নিজেই:
ইউরেনিয়ামের ব্যাপারটায় আমার আগ্রহ হয়েছে। আমি মেডিকাল যন্ত্রপাতি চুরির ব্যাপারটা জানতাম না, কিন্তু আমি জানি যে কয়েক বছর ধরে ভেনেজুয়েলার দক্ষিণ দিকে সেররো ইম্পাক্তো এলাকায় ভুমি সঞ্চারণ হচ্ছে। এখানে ইউরেনিয়ামের অনেক মজুদ আছে। ভেনেজুয়েলা এটা সরকারিভাবে রপ্তানি করে না আর এটা প্রক্রিয়া করার অফিসিয়াল উপায় ওদের কাছে নেই, কিন্তু এখন এই যোগসূত্র আমাকে ভাবাচ্ছে।
আর একটা মন্তব্যে ব্লগার লিওনার্দো বেনেভাইডস ভিলা নোটিসিয়াস ব্লগে বলেছে যে ভেনেজুয়েলার সীমান্তে ভিলা দেল রোসারিওতে কলোম্বিয়ার লাইসেন্স প্লেট থাকা গাড়িকে যেতে দেয়া হচ্ছে না আর ভেনেজুয়েলিয়ান মিলিটারিরা সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে। তার ব্লগে, সে মিলিটারির একটা ছবি দিয়েছে তাদের পাশের তাছিরা নদীর তীরের সীমান্তে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ধর্মী ব্লগ কলম্বিয়া হোয় তে তারা একটা উপসংহারে পৌছেছে: যেটা প্রথমে মনে হচ্ছিল একটা সাধারণ ব্যাপার একজন সন্ত্রাসী নেতাকে হত্যা করার যেটা এখন মনে হচ্ছে ফার্ক যে রাজনৈতিক সহায়তা পাচ্ছিল অন্যান্য দেশ থেকে তা ফাঁস করার একটা উপায়:
দ্বিতীয় নজরে মিলিটারির এই অভিযানের একটা বিস্তৃত দিক ছিল। আসলে ইকুয়েডোরে রেয়েসের ক্যাম্প ধ্বংস করে আন্তর্জাতিক সমাজের সামনে তুলে ধরা হল প্রথমত: সেই দেশে ফার্ক এর অবস্থান, আর দ্বিতীয়ত: ফারক আর এলাকার অন্য দেশের সরকারের সাথে ফার্কের সম্পর্ক।
এটাই অপারেশনের সুবিধা জনক কারন ছিল: রাজনৈতিকভাবে শাভেজ আর কোররিয়াকে ছুঁয়ে যাওয়া আর ফার্ক এর সাথে তাদের সম্পর্ককে ধীক্কার করা।