বিখ্যাত কারো নামে ফেসবুকে প্রোফাইল তৈরি করা কি অপরাধ? যদিও প্রায় সব নাম করা বিখ্যাত ব্যক্তির জন্য এটা করা হয়েছে ( জজ বুশ নাম দিয়ে খুঁজলে ৫০০ টি উদাহরণ পাওয়া যায়), কিন্তু যখন ফুয়াদ মুরতাদা মরোক্কোর রাজপুত্র মুলে রাশিদের প্রোফাইল তৈরি করেছে তখন সে একটা গর্হিত অপরাধ করেছে।
গত সপ্তাহে সামি বেন ঘার্বিয়া গ্লোবাল ভয়েস এডভোকেসিতে জানিয়েছেন, গত ৫ই ফেব্রুয়ারি মুরতাদাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যখন মরোক্কান কর্তৃপক্ষ ফেসবুকে রাজবংশের একজনের নকল প্রোফাইল পেয়েছে। ২২শে ফেব্রুয়ারি তাকে তিন বছরের জেল (আর ১০০০ ডলার জরিমানা) করা হয়েছে। মরোক্কো আর অন্যান্য অন্চলের ব্লগাররা এতে ক্ষিপ্ত।
লায়লা লালামি যিনি মুরতাদাকে নিয়ে দ্য নেশান পত্রিকায় একটি লেখা লিখেছিলেন, তার ব্লগে আশা প্রকাশ করেছেন যাতে বিচারের সময় সবার মাথা ঠান্ডা থাকে।
মীরটাস, যিনি মুরতাদার জন্য ধর্মঘটে যাওয়া ব্লগারদের সাথে যোগদান করেছেন, বলেছেন:
রায় বেরিয়েছে। মরোক্কো তোমার জন্য একটা বিরাট পিছনের দিকের ধাপ, আমি আশা করি তুমি নিজেকে নিয়ে খুশি আছো!
…
আমি দ্বিতীয় প্রজন্মের মরোক্কান-ডাচ নাগরিক, আর আমি সনাতনপন্থী। আমি সব সময় আমার মরোক্কান ধারা নিয়ে গর্ব বোধ করি আর আমি সব সময় মরোক্কোর সাংবিধানিক রাজতন্ত্রকে আমাদের জাতীয় ঐক্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ধরে নিয়ে সব সময় সম্মান করি। আমি সত্যি করে বলতে পারি যে জীবনে এই প্রথম সেই গর্ব আমার খুব হয়েছে। কিন্তু মরোক্কো নিয়ে আমার অনুভবে এখন শুধু দু:খ আর আশা ভংঙ্গতা।
ফোর কন্টিনেন্ট ব্লগও ঘৃণা বোধ করেছেন আর বলেছেন:
যদি আপনি বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন…তাহলে এটা দেখে খবরটি অন্যকে দেন। ফেসবুকে কাউকে নকল করা অপরাধ হতে পারে না।
তাছাড়া, লো জার্নাল হেব্দোর ওয়েবসাইট আবার বন্ধ করা হয়েছে আর তাদেরকে আরো জরিমানা করা হয়েছে পশ্চিম সাহারা নিয়ে কিছু লেখার জন্য। আমার কাছে বিস্তারিত নেই, কিন্তু স্কারলেট তাদের সাথে যোগাযোগ করছে আর সে কিছু লিখলে আমি লিংকটি দিয়ে দেব।
একজন মন্তব্যকারীর কাছে বিষয়টির আইনগত দিকটি বিস্ময়কর মনে হয়েছে:
যদিও বেশীরভাগ ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ ক্রিমিনাল না হয়ে সিভিল কোর্টের ব্যাপার হিসেবে ধরা হয়, আমার মনে হয় ক্রিমিনাল আইনগুলো যা ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর কার্যকরী সিভিল আইনের চেয়ে বেশী অনমনীয়।
বিশেষ করে ব্যক্তির পরিচয়ের ভুল প্রতিফলনের (পরিচয় রক্ষা করা) জন্য যে অপরাধ করা করেছে তার বদলে কোন আর্থিক লাভের ব্যাপার ছিল না, তাই বিবাদীর ডিফেন্স ছিল এটি অব্যবসায়িক কারণ।
প্রথম সংশোধনী আইন নিয়ে উদাহরণ দেখা যায় যে প্রেস লোকের ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে, আর দেখা যায় যে সরকারী কর্মকর্তা আর জনপ্রিয় লোকেরা তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রতিকার পান না মিডিয়ার এই প্রথম সংশোধনী জনিত সুবিধার কারনে।
এর সাথে তুলনায় , বাক স্বাধীনতা হিসেবে দেখলে মনে হয় এখানে একজন আর একজনের বিরুদ্ধে আছে আর আপনি খবরের জন্য মানুষের যে আগ্রহ থাকে তা হারান। আমি জানি না সরকারি কর্মকর্তা আর জনপ্রিয় লোকদের ব্যাপারে যে প্রিসিডেন্স আছে তা এখান থেকে বাদ দেয়া যাবে কিনা। লোকটার জন্য একটা দু:খজনক পরিস্থিতি, কিন্তু আইনগত দিক থেকে বেশ চিত্তাকর্ষক।
রেব যিনি মরোক্কোর ব্লগ নিয়ে গবেষণা করছেন তার ব্লগে বলেছেন:
আমার খারাপ লেগেছে শুনে যে মরোক্কান ব্লগারদের প্রতিবাদের পরে ও ফুয়াদের ৩ বছরের শাস্তি হল। আমি জানি যে ফুয়াদ জেলে যাচ্ছে আর এইসব কথা তার পরিবার আর বন্ধুদের সান্তনা দেবে না কিন্তু যে সব ব্লগার তার পক্ষে কথা বলেছে তাদের হার মানলে চলবে না। তাদের চেষ্টা স্থানীয় আর আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে প্রতিফলিত হয়েছে আর এর ফলে আরো বেশী লোক যারা নিগ্রীহিত হচ্ছে তাদের মতামতের জন্য তাদের হয়ে প্রতিবাদ করতে পারবে। আমার শুভেচ্ছা ফুয়াদ আর তার মার জন্য ।
মরোক্কোর বাইরে, দ্যা সুদানিজ থিংকার ও অন্য যে কোন মরোক্কান ব্লগারের মতো চমকে উঠেছেন এই খবর শুনে:
কেউ আমাকে দয়া করে বলেন এটা সত্যি না!
এন্দ্রু ব্রেহম মন্তব্য করেছেন:
আমার বিশ্বাস যে মরোক্কান সরকার এটা ভাবেই নি যে এটা একটা মজা , তারা দেখেছে যে একজন রাজপূত্রকে নকল করার চেষ্টা করছে। তিন বছর কম শাস্তি তারা যে দেখেছে বলে ভেবেছে তার জন্য।
কিন্তু তিন বছর ( বা যে কোন জেল) একটা মজার জন্য মেনে নেয়া যায় না, যতই সেটাকে কেউ খারাপ রুচির মনে করুক।
তাই যদিও আমি এটার জন্য মরোক্কর বিচার ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত না, কিন্তু এই একটা উদাহরণ নিয়ে আমি চিন্তিত। আমি মনে করি যে তারা ভুল করেছে আর তাকে মুক্ত করে দেয়া উচিত। ( জরিমানাটি আমার মনে হয় ঠিক আছে)।
আর একজন মন্তব্য কারী মাইক বলেছে:
এন্দ্রু মন্তব্য করেছে “তাই যদিও আমি এটার জন্য মরোক্কোর বিচার ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত না,” আপনার চিন্তা করা উচিৎ। এটা এমন একটা ব্যবস্থা যেখানে নিয়মিত ভাবে বন্দি দের উপর অত্যাচার করা হয় বিচারের আগে। আপনি যখন বিচারের সম্মুখীন হবেন তখন ব্যাপারটা আপনি কাকে জানেন তাই নিয়ে, কি জানেন তা নিয়ে আর না।
জর্ডান থেকে দ্যা ব্লাক আইরিস রেগে বলেছেন:
আমি ঘটনাটি ফেব্রুয়ারীর প্রথম থেকে দেখছি আর ভাবছিলাম কখন মুরতাদাকে মরোক্কোর সরকার তাদের রাজপুত্রের নকল ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করার জন্য দায়ী করে। আমার মনে হয়েছিল যে এমন একটা তুচ্ছ জিনিষের জন্য তাকে ছেড়ে দেয়া হবে, যেহেতু সে রাজনৈতিক ব্যাপার নিয়ে ব্লগ করছিল না। সে তো বলেছেই যে এটা একটা রসিকতা ছিল আর সে একাউন্টটি মুছেও ফেলেছে। কিন্তু মনে হল যে মরোক্কোতে জর্ডানের মতো রাষ্ট্রের সম্মান খুব অল্পেতে খুন্ন হয়। ভেবে দেখেন আপনার জীবন থেকে তিন বছর চলে গেল এই অপরাধের জন্য। আপনার জন্য আমি প্রার্থনা করি মুরতাদা।
মুরতাদার কেসের ব্যাপারে আরো জানতে , লিডিয়া বেয়ুদ ফরাসী ভাষায় মরোক্কান ব্লগের মন্তব্যগুলোর যে সংকলনটি করেছেন তা দেখুন। গওকার ব্লগে একটি চিত্তাকর্ষক রিপোর্ট আছে, হেল্প ফুয়াদ ওয়েবসাইটটি সব সময় আপডেট করা হচ্ছে, আর রয়টার্স এই খবরের পেছনে রয়েছে। আর অবশ্যই গ্লোবাল ভয়েসেস এডভোকেসিতে চোখ রাখবেন আপডেটের জন্য।