- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

পাকিস্তান: বিদায় মুশাররফ?

বিষয়বস্তু: পাকিস্তান, দেশান্তর ও অভিবাসন, নির্বাচন, রাজনীতি

পাকিস্তানে নির্বাচনের ফলাফল যখন আরো পরিষ্কার হয়ে এলো তখন তার সাথে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে এসেছে, এবার পাকিস্তান থেকে মুশাররফকে বিদায় নিতে হবে। প্রতিশ্রুতি সত্বেও তিনি ভোটারদের বিশ্বাস জিততে পারেন নি। ক্রো'স নেস্ট [1](কাকের বাসা) লিখছে যারা মুশাররফের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাদের কথা:

নির্বাচনের ফলাফল দেখাচ্ছে যে মুশাররফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন ৩৩ মন্ত্রী নির্বাচনে তাদের আসন হারিয়েছেন। পিএমএল (পাকিস্তান মুসলিম লীগ)-কিউ, সে সমস্ত আসন গুলো হারিয়েছে সেই আসনের প্রার্থীরা পূর্ববর্তী প্রশাসনে ক্ষমতাবান ছিলেন এবং রাষ্ট্রপতি মুশাররফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্ক যুক্ত ছিলেন। যারা তার কাছের মানুষ তাদের জন্য এই নির্বাচন ছিল কঠিন এবং বেদনাদায়ক ।

অপরদিকে যেমনটা ভাবা হয়েছিল, নির্বাচন প্রক্রিয়া তার চেয়ে তুলনামূলক ভাবে স্বচ্ছ ছিল যদিও কিছু ভুলত্রুটি পাওয়া গেছে। কেও ব্লগ লিখছে [2]:

মনে হচ্ছে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক ভাষ্যকারের ( যাদের বেশীর ভাগই পাকিস্তানী) নির্বাচন সম্বন্ধে ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তারা ধারণা করেছিলেন যে নির্বাচনে প্রচুর কারচুপি হতে পারে। সত্যি করে বললে কারচুপির এক ভয়াবহ ও পরিষ্কার চেষ্টা নেওয়া হয়েছিল এবং এটাই যথেষ্ট হত যদি নির্বাচনের ফল খুব কাছাকাছি হত। কিন্তু নির্বাচনে সত্যিকারের ভোট লাভের পার্থক্য এত বেশী ছিল যে তা ফলাফল পাল্টে দেবার মতো বা কারচুপি করার মতো যথেষ্ট ছিল না।

পিকল্ড পলিটিক্স [3],একজন ব্রিটিশ নাগরিকের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছে:

আমি সারাদিন রাস্তায় কাটিয়েছি। বিভিন্ন নির্বাচনী কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। ভোট গ্রহণের হার ছিল ধীর কিন্তু কিছু নির্বাচনী কেন্দ্রে আমি বেশ ভীড় দেখেছি। আমি,আমার মতো কিছু ব্রিটিশ পাকিস্তানী অধিবাসীদের সাথে মিশে দেখেছি। তারাও ভোটের উপর নজর রাখছিল। রাস্তায় কিছু পাকিস্তানী আমেরিকান এবং পাকিস্তানী অস্ট্রেলিয়ান ভোটার ছিল।

তাদের দেখে এবং তাদের সাথে কথা বলে ভালো লাগল। এটা কোন বিস্ময়কর বিষয় নয় যে বিগত বছর গুলোতে পাকিস্তানী রাজনীতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারা আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমের খবর হয়েছে। সারা বিশ্বের চোখ এখন পাকিস্তানের উপর। ইউরোপীয় এবং আমেরিকান যাদের আদিপুরুষ পাকিস্তানী তারাও একটা ভিন্নতা তৈরীতে আগ্রহী।

মেট্রোব্লগিং লাহোর [4] ব্লগ, লাহোর শহরের নির্বাচনে কারা জিতল এবং হারল সে সম্বন্ধে আলোচনা করেছে:

দ্যা পাকিস্তানী স্পেক্টেটর [5] ব্লগ ভাবছে যে এই নির্বাচন এক বিশেষ সঙ্কেত দিচ্ছে যে এবার পাকিস্তান থেকে একনায়কতন্ত্রের বিদায় ঘটবে। পাক টি হাউজ [6] বিশ্লেষণ করছে যে নির্বাচনের ফল পরিষ্কার সঙ্কেত দিচ্ছে যে পাকিস্তানের জনগণ যে কোন চরমপন্থী ধারার বিপক্ষে:

তারা মুশাররফের মতবাদকে অকার্যকর করে দিয়েছে। এই মতবাদটি ছিল পাকিস্তানের প্রধান দুটি রাজনৈতিক ধারাকে রাজনীতি থেকে অদৃশ্য করে দেওয়া এবং প্রকৃত গণতন্ত্রকে ছদ্ম ইসলামপন্থী এবং স্থানীয় জরাজীর্ণ জমিদারদের দিয়ে চালানো। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অরাজনৈতিক দল দিয়ে স্থানীয় সরকার তৈরীর মাধ্যমে।

এই নির্বাচনের ফলাফল ছিল বিশ্ব কর্পোরেট গণমাধ্যমের গালে এক ধরনের চপেটাঘাত (এবং যারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে, সেই বিশ্ব সামরিক শক্তির জন্যেও বটে)। যারা পাকিস্তানকে ইসলামী চরমপন্থীদের উৎপাদন ক্ষেত্র বলে মনে করে এবং কি বলব সন্ত্রাসবাদও।

সেপাহি মিউটিনি [7] ব্লগ বলছে কিছুটা সর্তকতার সঙ্গে সংবাদটিকে অভিনন্দন জানানো যাক। ভাবা যাক আসলেই কি এটি পাকিস্তানের জনগণের বিজয়।

তাহলে আমরা পাকিস্তানে কি দেখলাম? কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা উৎসব উদযাপন। সকলে বেশ যৌক্তিক কারনে মুশাররফের সমালোচনা করছে। এরপর জনগণ দেখবে তাদের নতুন গনতন্ত্র। সম্ভবত একটা দুর্বল এবং ধারাবাহিকভাবে ভঙ্গুর কোয়ালিশন বা জোট তৈরী হবে। এটাই শেষ নয়,তাদের নেতার আগের মতেই দুর্নীতি পরায়ণ রয়ে গেছে। ঘটনা যা ঘটবে তা হল নতুন সামরিক প্রধান ক্ষমতা নিয়ে নেবে, যেমনটা মুশাররফ করেছিল আট বছর আগে।