সার্বিয়া: কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষনা নিয়ে অবিশ্বাস আর রাগ

অর্থোডক্স চার্চ: ডেকাফিনাটার ছবি ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহৃত

কসোভোতে অবস্থিত প্রাদেশিক সংসদ সার্বিয়া থেকে একতরফা ভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে । সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভজিস্লাভ কস্তুনিকা তার প্রতিক্রিয়ায় আমেরিকার সমালোচনা করেছেন একটি সার্বভৌম দেশের বিরুদ্ধে এমন কাজকে উৎসাহিত করার জন্য । তিনি বলেছেন:

“আমেরিকা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকেও বিব্রত করেছে আর তাদেরকে বাধ্য করেছে তারা যে মূল্যবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত তা থেকে বিচ্যুত হতে।” তিনি আরও বলেছেন আর সাবধান করে দিয়েছেন যে ইউরোপ ”যারা নিজেদের মাথা হেট করে দিয়েছে,” দায়ী থাকবে ”সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্য যা কসোভোর স্বাধীনতার সাথে আসবে।”

দক্ষিণ সার্বিয়ার একটি অঙ্গরাজ্য কসোভো আর মেতোহিজামেতোহিজা মানে উপাসনালয়ের শহর। এ শহরে প্রচুর ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে যার মধ্যে প্রায় ২০০০টি খ্রীস্টান অর্থোডক্স উপাসনালয় উল্লেখযোগ্য।

গতকাল দক্ষিণ ইউরোপ ছড়িয়ে পড়া সব খবরের ইভান ইয়ানকোভিচ সারমর্ম করেছেন:

প্রিস্টিনার রাস্তায় আর অন্যান্য শহরে ঘোষণাকে আতশবাজি আর বাজনা বাজিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছে। অন্য দিকে সার্বিয়ার দিকে সব কিছু এত সুখের না। কসোভস্কা মিতরোভিচার (যেখানে সার্বরা সংখ্যাগুরু) ইউ এন মিক ভবন এর সামনে কিছু বোমা বিস্ফোরণ ছাড়াও বেলগ্রেড, নোভি সাদ আর অন্যান্য শহরে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। গণ্ডগোল সৃষ্টিকারীরা পাগল হয়ে গিয়েছে, তাই তাদের সামনে যা পড়েছে সব চুরমার করে দিয়েছে। তারা স্লোভেনিয়া আর আমেরিকার দূতাবাসে আর ম্যাগডোনাল্ডসে ঢিল মেরেছে। এর ফলে অনেক ক্ষতি হয়েছে।

পেতার্জ স্থানীয় সংবাদপত্র আর সার্বিয়ার সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি ইভিকা দাসিক এর উদ্ধৃতি দিয়েছেন:

(১০০ জনের কম) জনগণ আর পুলিশ রাস্তায় সংঘর্ষে আহত হয়েছে যা কসোভোর একতরফা স্বাধীনতার ঘোষণার পর ছড়িয়ে পড়ে। আমেরিকান আর স্লোভেনিয়ান দূতাবাসের সামনে তারা পুলিশকে আক্রমণ করে.. ”বেলগ্রেডের সব দূতাবাসকে আমাদের রক্ষা করা উচিত কিন্তু তাদের নিজেদের ব্যবহার চিন্তা করা উচিত। তারা আমাদের কাছ থেকে ১৫% ভূমি নিয়ে নিয়েছে । আমরা কি করবো? তাদেরকে বাহবা দেব? খবর ছিল যে জনতা একটা কিওস্ক ধ্বংস করেছে । কিওস্ক প্রতিদিন ধ্বংস করা হয় কিন্তু আমাদের কাছ থেকে কসোভো একবারই নেয়া হবে ..

পপকিচেন তার লেখার নাম দিয়েছে ’কনফিউজড’ । তিনি আরও বলেছেন:

কোন কারন নেই যে যা আছে তার থেকেও কোন ছোট দেশ আমরা আশা করবো। এটি যে আন্তর্জাতিক আইন অবজ্ঞা করে হচ্ছে তাই প্রমাণ করে যে আমরা কত অনুল্লেখ্য ..

জিভোট বলেছেন:

অবশ্যই আমি স্বাধীনতার বিরোধী। ব্যাপারটি বোঝা খুবই সহজ। ভেবে দেখুন, আমার বাসায় একজন এসে আমার একটা কামরা নিয়ে গেল। এখন সে ওখানে দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে ওই কামরা নিজের বলে দাবি করল। আমার এই সহজ তুলনা অদ্ভুত কারন এর তুলনায় কসোভোর সমস্যা অনেক বড়।

তিনি তার পরে মধ্য যুগের সার্ব সম্ভ্রান্ত জন স্টেফান নেমানিয়ার কথা বলেছেন:

” .. যেখানে আমাদের কথা শোনা হয় যেন সেটা তখনও আমাদের ভূমি, যে কেউ সেটা শাসন করুক। সম্রাট পাল্টায়, রাজ্য হারিয়ে যায়, কিন্তু মানুষ আর তার ভাষা থাকে, তাই জয় করা মানুষ আর তাদের ভূমি তাদের কাছে আর তারা যে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ফেরত আসবে.”

সিকা মিলজো বি৯২ ব্লগ এ লেখা স্বাধীন কসোভো নামক লেখার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এভাবে:

“১৩ শতকে কসোভোর যুদ্ধের পর কসোভো তুরস্কের শাসনে ছিল বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত। এবার আমরা অপেক্ষা করব যতদিন না পর্যন্ত মুসলমানরা আমেরিকার সাথে বড় কোন বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। তাইওয়ান আমেরিকার সৃষ্টি যাতে এটি চীনদেশ থেকে তাদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে। তবে চীন এবং তাইওয়ানের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন হচ্ছে এবং দুই দেশের অর্থনীতি এক হতে হয়ত আরও কয়েক যুগ লাগবে। পূর্ব জার্মানী জার্মানীর কাছ থেকে অপহৃত হয়েছিল। একটি পুতুল রাষ্ট্র বসানো হয়েছিল। ৫০ বছর পরে আবার জার্মানী এক হয়েছে। আমি জানি যে এই সর্ব শেষ সংবাদ আমাদের কাছে শয়তানের খেলা বলে মনে হচ্ছে । কিন্তু ইতিহাস একটি সুদূর প্রসারী পদ্ধতি এবং সব কিছুরই পরিবর্তন হয়।”

মারিওপান ওই একই পোস্টে এই একতরফা সিদ্ধান্তের পরিণতি সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন:

এটিই সব শেষ নয়…মাত্র তো শুরু। কাল বা পরশু থেকেই বিশ্বের সব জাতিগত সংখ্যালঘুরা অন্যদের আতন্কগ্রস্ত করে কোন অন্চলের স্বাধীনতা ঘোষণা করবে। আমি খুব আনন্দিত যে বিশ্ব জুড়ে এই সার্কাস চলতেই থাকবে (এবং এর পরিণতি সবাই বুঝতে পারবে দেরীতে)। এটি ঘটানোর জন্যে (আন্তর্জাতিক কমিউনিটি কর্তৃক) একটি মডেল খোঁজার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। অবশেষে তারা এটি করেছে এবং তাদের সমস্ত পরিণতির জন্যে প্রস্তুত থাকা উচিৎ।

আভরাম তার ব্যক্তিগত ব্লগে বলছেন:

আমার কাছে সবই এক। আমি ততটা দেশ প্রেমিক নই (এ নিয়ে সার্বক্ষণিক শোরগোল করার মত)। “কসোভো হচ্ছে সার্বিয়ারই অংশ কিন্তু আমি এ নিয়ে দ্বৈত নীতি অবলম্বন করতে দেখছি পশ্চিমা দেশ গুলোকে, বিশেষ করে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে। তারা সব আন্তর্জাতিক দেশ সমুহের সার্বভৌমত্ব রক্ষা সংক্রান্ত জাতিসংঘের সনদকে ভূলুন্ঠিত করেছে। সত্যি বলতে কি কসোভোর এই স্বাধীনতা ঘোষণার পর আমি চাইব পৃথিবী ব্যাপী সব স্বায়ত্ত শাসিত অন্চলই স্বাধীনতা ঘোষণা করুক, যেমন স্পেনের (বাস্ক) অন্চল। সার্পস্কা রিপাবলিক (বসনিয়া হার্জেগোভিনার অংশ) এর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছু জানি না। এটি কসোভোর মতো স্বায়ত্ত শাসিত অন্চল নয়, তবে এটিও যদা স্বাধীনতা ঘোষণা করে তাহলে ভালই হয়। কসোভো পারলে অন্যেরা পারবে না কেন?

উপরের প্রতিক্রিয়া গুলো সার্বিয়ার ব্লগোস্ফিয়ারে যা লেখা হচ্ছে তার কিন্চিত প্রতিফলন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .