কেনিয়াঃ জাতিগত ঘৃণার প্রথম অনলাইন শিকার

নির্বাচনের পর যখন কেনিয়াতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ছড়িয়ে পড়ল অনেকে সংবাদপত্র আর রেডিওকে ঘৃণার উৎস হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের দোষ দিয়েছে জাতিগত ঘৃণাকে উস্কিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু কেউ ব্লগ আর অনলাইন ফোরামের দিকে বেশি খেয়াল করেনি। কিন্তু প্রমানিত হল যে অনলাইন ফোরামও যুদ্ধবাজদের আবাদ ভুমি হিসেবে পরিণত হয়েছে।

কেনিয়ার প্রথম অনলাইন চ্যাট রুম, মাশাদা ফোরাম বন্ধ কর দিতে বাধ্য হয়েছে যখন আলোচনা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গিয়েছিল। হোয়াইট আফ্রিকা তার কষ্টের কথা বলছে:

আপনারা হয়তো জানেন, আমার বেশ অসুবিধা হচ্ছে মাশাদা ডট কম নিয়ন্ত্রন করতে যদিও সম্প্রতি লোক নেয়া হয়েছে ফোরামটিকে দেখার জন্য। এখানে বর্তমানে কেনিয়াতে যা হচ্ছে তার প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। আমি অপছন্দ করব এই বিবাদের কারনে আমাদের বর্তমান চেষ্টা যদি ব্যাহত হয়। যেহেতু আমি এর সাথে সরাসরি যুক্ত তাই আমি ফোরামটা বন্ধ করতে চাচ্ছি পরবর্তী ঘোষণা পর্যন্ত। ভদ্র আলোচনা আর বিতর্ক করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে এখানে।

হোয়াইট আফ্রিকা আরো লিখেছে:

কেনিয়ায় নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষ ভয়ানক। বেশীরভাগ লোক যারা মাশাদা ব্যবহার করে তারা আমেরিকা আর ইউরোপে থাকা কেনিয়ার প্রবাসী জনগোষ্ঠীর অংশ, কিন্তু অনেকে কেনিয়াতেই আছে। তাই বেশীরভাগ লোক যারা এটা ব্যবহার করছে তারা তাদের বন্ধু আর পরিবারের সাথে হওয়া ভয়াবহতা দেখছে আর শুনছে আর তারা বিচলিত হচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই।

পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল যে কিছু মন্তব্য মুছে ফেলতে হয়েছে। কেনিয়ান পন্ডিত একটি উদাহরণ দিয়েছেন:

মাশাদায় একজনের ঘৃণাযুক্ত উক্তি সম্বন্ধে অন্য একজনের মন্তব্য আমি মুছে ফেলেছি এই জন্য না যে মতামতের সাথে আমি একমত না বরং এই জন্য যে যেইসব লিঙ্ক এখানে দেয়া হয়েছে তা যারা ঘৃণাযুক্ত কথা বলতে চায় তারা ব্যবহার করবে।

সম্প্রতি ডেভিডের সাথে আমার কথা হয়েছে এই ধরনের কথা যা মাশাদাতে দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে আর তিনি এই ব্যাপারে কি করছেন – আমার বিরক্তি লাগে দেখতে যে লোকে এখানে কি লিখছে- আমি চিন্তিত যে এটা সে উশাহিদি নিয়ে যে চমৎকার কাজ করছে তা দাবিয়ে রাখবে। ডেভিড বলেছেন যে তিনি ক্লান্ত ও অশান্ত আর একই অবস্থা মডারেটরদেরও। তিনি চেষ্টা করেছিলান এক সপ্তাহের জন্য ওয়েবসাইটটি বন্ধ রাখতে কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তিনি মডারেটরদের টাকা দেয়ার কথা ভাবছেন, কিন্তু অন্যদের কাছ থেকে মতামতও চাচ্ছেন ( যদি কেউ মডারেটর হিসাবে তাকে সাহায্য করতে চায়)।

চূড়ান্ত গন্ডগোলের সময় ব্লগাররা আসলে ভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি, কুমেকুচা লিখেছেন ‘কিকিয়ুস সম্বন্ধে সত্যি কথা‘ আর বলেছেন:

কোন অফিসে অপব্যবহার আর নিয়ম ভাঙ্গার জন্য আলোচনা করার চেষ্টা হতে পারে না। এটা করতে চাইলে একটা খারাপ পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। কেনিয়াতে যেসব তথাকথিত উচ্চ মার্গের মধ্যস্থতা কারি আছেন, যারা ২৭ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন আর যাদের উপস্থিতি প্রেসিডেন্ট রায়লা আমোলো ওদিঙ্গা আর কমলা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কাছে মূল্যহীন। এইসব ভাওতাবাজদের কেনিয়াতে অবস্থান আর মধস্থতা করার ভান শুধুমাত্র যারা রায়লা আমোলো ওদিঙ্গা আর কমলা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে ভোট দিয়েছে তাদেরকে ক্ষুব্ধ করে।

অন্যদিকে কেনিয়ান ব্যবসায়ীরা রায়লাকে একজন খারাপ মানুষ বলে যে ক্ষমতা লোভী:

রায়লার এই ধারণা যে কিবাকি মানুষ মেরে সংসদে সংখ্যাগুরু হয়ে আসতে চাচ্ছে তা ফালতু আর এখানেই তার খারাপ বিশ্বাসঘাতকতা ধরা পড়ে। তিনি এইসব মৃত্যু ব্যবহার করছেন রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য আর বিরোধ জিইয়ে রাখার জন্য ( তিনি জানেন কিবাকির সাথে এই মৃত্যুর কোন সম্পর্ক নেই)।

ওয়েরের মৃত্যুর পর তার বক্তব্য দেখেন:

আবেগপ্রবণ রায়লা মৃত সাংসদের জীবন আর রক্ত বৃথা যাবে না বলেছেন। “তার রক্ত মুক্তির সংগ্রামকে সিক্ত করবে…আমরা আরো শক্ত হয়ে দাড়াবো, আমরা পাহাড়ের চূড়ায় তার স্মরনে একটা পতাকা লাগাবো – ওয়েরেকে মনে রাখা হবে…আমরা তোমাকে মনে রাখবো ভাই।” দয়া করো নিগ্রো, দয়া করো।

রায়লা আর রুতো ঠিক করেছে যে তারা যদি ক্ষমতা না পায়, তারা দেশটাকে বিরোধের দিকে ঠেলে দেবে (কিন্তু অবশ্যই তারা মারামারি করবে না, তারা অন্যদের আনবে তাদের জন্য এটা করতে)। আমার বিশ্বাস কিবাকিকে বলা হয়েছে এই দুই গুন্ডার সাথে কোন সমঝোতায় না যেতে। শেষ পর্যন্ত তাদের সাথে লড়ে তাদেরকে পর্যদুস্ত করতে হবে (আর উইলিয়াম রুসোকে শেষ ধরাশায়ী করতে হবে)।

সাইসা দুনি জানিয়েছেন কিভাবে প্রেসিডেন্ট কিবাকি নির্বাচনে চুরি করেছেন আর কিবাকি আর বুশ শাসনের মধ্যে একটা তুলনা করেছেন:

এইসব ঘটনা বুশ প্রশাসনকেও ভীষণ বিচলিত করেছে, কারন তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে কেনিয়ার উপর নির্ভর করেছিল আর এটাকে পশ্চিম আফ্রিকার একটা স্থায়ী দেশ। সরকারি হিসেবে কিবাকি ২৩১,৭২৮টা বা ২% ভোট পেয়েছে ১০ মিলিয়নের মধ্যে। আমেরিকার আন্তর্জাতিক রিপাব্লিকান ইন্সটিটিউট দেখিয়েছে যে রায়লা ওদিঙ্গা ৮% ভোটে জিতেছে। নির্বাচন অফিসাররা ৫ জন স্বীকৃত কেনিয়ান পর্যবেক্ষককে ভোট গণনার শেষ পর্যায়ে কেন্দ্রে ঢুকতে দিয়েছে আর ৩ জন তাদের হিসাব ভাগ করেছে: সবাই বলেছে যে ওই কামরায় ভয়ঙ্কর জালিয়াতি হয়েছে, যেখানে কিবাকি নিযুক্ত কমিশনাররা রিটার্নগুলো ঘোষণার আগে একসাথে করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .