ইয়েমেন কিছু মুক্তচিন্তার খবর ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে

সম্প্রতি ইয়েমেনে বেশ কিছু ওয়েব সাইট ব্লক করে দেওয়া হয়েছে (দেখতে দেয়া হচ্ছে না)। আর এই কাজটি করেছে ইয়েমেনের সরকার নিয়ন্ত্রিত আইএসপি (ইন্টারনেট সেবা প্রদান কারী) প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্লক করে দেওয়া ওয়েব সাইটের মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় ওয়েব ইয়েমেন পোর্টাল (এর ইংরেজী সংস্করণ সাইটটি এখানে পাওয়া যাবে)। বর্তমানে ইয়েমেনের প্রথম মাল্টি সোর্স নিউজ ক্রলার (বহু মাত্রিক সংবাদ সংগ্রাহক ও পরিবেশক) ওই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংবাদ সাইটের প্রধান সংবাদ বা হেডলাইন গুলো সংগ্রহ করে পরিবেশন করছে। ইয়েমেন পোর্টাল ইয়েমেন থেকে তার পাঠকদের সাইটে প্রবেশ করার অনুরোধ করেছে ইয়েমেন এরাবিয়া পোর্টাল.নেট নান্মী এক মিরর (বিকল্প সাইট) এর মাধ্যমে ।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার (সীমান্তবিহীন সংবাদদাতা) এর মতে গত অক্টোবর থেকে ইয়েমেনে অন্তত সাতটি এমন ওয়েব সাইট বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে:

ইয়েমেন পোর্টালে ঢোকার সুযোগ ইয়েমেন সরকার বন্ধ করে দেয়। এটি করা হয় ইয়েমেনের প্রধান মন্ত্রী আলি মোহাম্মদ-এর ঘোষণার দুদিন পরে । প্রধান মন্ত্রী এবং অন্যান্য সরকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গত ১৭ জানুয়ারি সংবাদপত্রে তাদের প্রতি অভিযোগ উত্থাপন করে। তারা ঘোষণা দেয় এটি দেশের জাতীয় স্বার্থকে ভূলুণ্ঠিত করছে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের উত্তেজনা ছড়াচ্ছে।

গত বছরের মে মাসে ইয়েমেনের টেলি-যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিরোধী দলীয় দুটি সংবাদ পরিবেশক ওয়েব সাইটে ঢোকার সুযোগ বন্ধ করে দেয় (আল সোরা ডট নেট http://www.al-shora.net/ এবং আলেসতারিকি http://www.aleshteraki.net/)। কারন এই দুটি ওয়েব সাইট দেশের মানবাধিকার নিয়ে তথ্য পরিবেশন করেছিল। একই সাথে তারা উত্তর ইয়েমেনের প্রদেশ সাআ’দা তে শিয়া বিদ্রোহীদের সঙ্গে সৈন্যদের লড়াই সম্বন্ধে সংবাদ পরিবেশন করেছিল।

নীচের সাক্ষাৎকারে আমি ইয়েমেন পোর্টাল.নেট -এর এডমিনিস্ট্রেটর বা পরিচালক ওয়ালিদ-আল-সাফাক এর সাথে কথা বলেছি, তিনি আমাদের বলেছেন দেশটির অনলাইন স্বাধীনতার প্রতি হুমকি সম্বন্ধে।

সামি: ইয়েমেনে কোন ধরনের ওয়েব সাইট ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে এবং সরকার যে আপনার সমস্ত ওয়বসাইট ব্লক করে দিয়েছে এ ব্যাপারে আপনার ব্যাখ্যা কি?

ওয়ালিদ: আমি বিশ্বাস করি আরএসএফ বা সীমান্ত বিহীন সংবাদাদতারা একটি চমৎকার এবং চিন্তাশীল মূল্যায়ন করেছে তাদের প্রকাশিত রিপোর্টে। তারা বলেছে অঞ্চলটি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ও চিন্তা জনিত সমস্যায় ভুগছে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান না করে তারা মিডিয়ার উপরে চড়াও হয়েছে। তবে সংবাদ পরিবেশক ওয়েব সাইট গুলো ক্রমশ: জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তারা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে জনমত গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। ইয়েমেন পোর্টাল. নেটে ইউটিউবে প্রকাশিত এডেনে প্রতিবাদকারীদের উপর নিরাপত্তা রক্ষীদের আক্রমনের ভিডিও প্রচার করা হয়। এই অর্থহীন আক্রমন বা এ ধরনের খবর , দৃষ্টিভঙ্গি এবং আলোচনা, দক্ষিনের বিচ্ছিন্নতবাদী আন্দোলন এবং এর সাথে উত্তরের বিদ্রোহ , এ সব কিছুই স্থানীয় পত্রিকার উপর একটি শক্তিশালি প্রভাব ফেলে। এই স্থানীয় সংবাদ উৎস গুলো ক্রমাগত বেশী পরিমানে অনলাইন মিডিয়া থেকে সংবাদ গুলো নিচ্ছে । এই ঘটনা গুলো তারা আবার নতুন করে শোনাচ্ছে।

জনগনের উপর নতুন মিডিয়ার প্রভাবে সরকার শংকিত । একে চাপে রাখার সে এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেমনটি সে করে ব্রডকাষ্ট (প্রচার মাধ্যমগুলো) এবং প্রিন্ট মিডিয়ার (ছাপানো সংবাদ মাধ্যমগুলোর) উপর। এখানে তার একক কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত। তারা নতুন মিডিয়ার (ব্লগ ইত্যাদি অনলাইন প্রচারমাধ্যম) ক্ষেত্রেও নিজেদের একক কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর এই কাজটি সে করতে চায় লাইসেন্স প্রদান এবং বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে।

সামি: এ ধরনের ব্লক করার বা আটকে দেয়ার পেছনে কে বা কারা দায়ী ? এটা কি সরকার যে ইয়েমেন পোর্টাল এ প্রবেশ ব্ন্ধ করে দিয়েছে?

ওয়ালিদ: এটি অবশ্যই সরকার। কিন্তু এটা আমার কাছে পরিষ্কার নয় সরকারের কোন অংশটি। আমি খুব বিশ্বস্ত সুত্রে শুনেছি যে সরকারের নিরাপত্তা বিভাগ এই নিষেধাজ্ঞা জারিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে সরকারের তথ্য অধিদপ্তরের এক কঠিন মন্তব্যের পরে। ( যা আরএসএফে প্রকাশ করা হয়েছে) কিন্তু এটা শতভাগ নিশ্চিত যে সরকারই এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে মূল চাবিকাঠি নেড়েছে।

সামি: ইয়েমেনে যে এই জেনারেল ফিল্টারিং বা বেছে বেছে ওয়েব সাইট ব্লক করা হচ্ছে এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি।

ওয়ালিদ: একটাই শব্দ, বিপদজনক; কারন আমাদের এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাস করার কথা যেখান সংবিধানে সংবাদপত্র এবং তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। তাই এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ সাইট ব্লক হয়ে যাওয়া র ব্যাপারটি এই এলাকা এবং সারা বিশ্বের জন্য একটি বিশাল আঘাত। এটি সত্যিই বিপদজনক যে দেখা যাচ্ছে সরকার বিশ্বের বিভিন্ন এডভোকেসি (পক্ষ সমর্থনকারী) বিভিন্ন গোষ্ঠীর অভিযোগ সম্বন্ধে থোড়াই মাথা ঘামাচ্ছে। যখনই বিশ্ব এই শাসন ব্যবস্থাকে সমালোচনা করছে ততই এটাকে সে ঘরোয়া ব্যাপার হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছে । অন্য জাতি এবং সংস্থাকে সরকার এ বিষয়ে নাক গলাতে নিষেধ করছে। পর্নোগ্রাফির উপর সেন্সরশীপ বা নিষেধাজ্ঞা জাতি এবং সমাজ মেনে নেয়, কিন্তু সরকার প্রায়শ:ই খবর ও মতামত প্রদানকারী ওয়েব সাইট গুলোকে বেছে যাচ্ছে যা প্রায় এক ধরনের বিপদজনক স্বৈরাশাসকের মনোভাবের মতো।

সামি: এই নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া বা মনোভাব কি?

ওয়ালিদ: একটি বড় অংশ এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। অনেকে আমার কাছে মেসেজে প্রতিবাদ লিখে পাঠিয়েছেন। প্রায় শতজন মানুষ অনুরোধ পাঠিয়েছেন এই সাইটের সদস্য হওয়ার জন্য। এর পাঠকরা চাইছেন পরিবতির্ত ডোমেইন বা অন্য কোন ইন্টারনেট ঠিকানা (yemen.arabiaportal.net ইয়েমেন এরাবিয়া পোর্টাল.নেট)। এটাও যে কোন মুহর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তারা এর সাথে থাকতে চায়। জনগণ জানতে চায় এর আর অন্য কোন ডোমেইন বা ঠিকানা রয়েছে কিনা। যদি প্রথম ডোমেনেইটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তারা দ্বিতীয়টি ব্যবহার করবে।

আমরা নেটে এমন কিছু সমর্থকের আলামত পাচ্ছি যারা নেটকে ফিল্টার করতে সমর্থন করছে। এরা হচ্ছে সংখ্যালঘু এবং আমার মতে তারা ভুল ভাবে পরিচালিত, অথবা আসল ঘটনাটি এমন ভাবে কতৃপক্ষ পাঠকের কাছে তুলে ধরেছে যাতে এরা নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে একমত হয়েছে। তারা মনে করে জাতীয় স্বার্থে এবং এইসব বাজে বিষয়গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত।

আমি এখানে এই বিষয়টি দেখাতে চাচ্ছি যে ইয়েমেন পোর্টালের প্রকৃতি বা কাজটি অনেকটা ছাতার মতো। যেখানে হাজার হাজার উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রচার করা হচ্ছে। এ সব তথ্য প্রকাশ নিষেধ হওয়া মানে হচ্ছে এই সকল তথ্য যে সমস্ত জায়গা থেকে আসছে সেই সমস্ত এলাকা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে যাওয়া। এর সার্চ ইঞ্জিন সন্ধান বের করেছে ইয়েমেন সংক্রান্ত প্রায় ২০০,০০০ বিষয়ের এবং এটি আরো বাড়ছে। এটির একটা ইংরেজী বিভাগ রয়েছে এবং তা ইয়েমেনের বড় এলাকা জুড়ে তাদের কাভারেজের জন্য আগ্রহী রয়েছে। এটা ইয়েমেনে শুরু হয়েছে, কিন্তু তার পরিকল্পনা রয়েছ এরাবিয়া পোর্টাল.নেটের মাধ্যমে এটা পুরো আরবে ছড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের পিছে ঠেলে দিয়েছে।

আমাদের মূল উদ্দেশ্য জনগনকে তার নিষেধাজ্ঞার জায়গা থেকে তাকে মুক্ত করা, যাতে তারা দেখতে ও পড়তে পারে। এক ডজনের বেশী নিউজ ওয়েবসাইট- এর ম্যানেজার এবং কর্মীদের নিয়ে সানায় জানুয়ারীর ২৩ তারিখে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এটা ছিল সমমনাদের নিয়ে এক সভা। সেখানে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । লড়াইয়ের প্রক্রিয়াটি এক নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এবং তাতে এক ভিন্ন প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হবে। যাতে নতুন প্রক্রিয়ার একটা উল্লেখযোগ্য স্থানে ইয়েমেন ওয়েব পোর্টালের ফ্রন্ট বা প্রথম পাতাটি থাকবে এবং তাকে আবার নতুন করে প্রবেশ করানো হবে ওয়েব সাইটের ডিএনএস । বিষয়টি তখনই ঘটবে যখনই ওয়েবসাইটটি ব্লক করে দেওয়া হবে। এই উপায়ে আমরা আশা করি যে সেন্সরশীপের প্রভাব মুক্ত করা যাবে। কারণ ভার্চুয়ালি বা এই কল্পজগতটি সরকারের পক্ষে প্রত্যেকটি ওয়েব সাইট বন্ধ করা অসম্ভব। যা একটা ডাইনামিক ডিএনএসের মধ্যে তৈরী করা হবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .