সারা বিশ্বের মুসলমানেরা এখন ঈদুল আজহা উদযাপন করছে যে দিনটিতে ইব্রাহীম (আব্রাহাম) নবীর নিজ সন্তান ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানী করার ইচ্ছাকে স্মরণ করা হয়। এই উৎসব হজ্জ্বের (মক্কায় বাৎসরিক তীর্থযাত্রা) কার্যক্রমের শেষ অংশ। এ বছর হজ্জ্বে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২০ লাখেরও বেশী মুসলমান সমবেত হয়েছিল। নিন্মে উদ্ধৃত হয়েছে বিভিন্ন আরবদেশে এই দিবসটি কি ভাবে উদযাপিত হয়েছে।
প্যালেস্টাইন:
গাজায় অবস্থানকারী ড: মোনা এল ফারা গরীবদের সহায়তার জন্যে নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে লিখেছেন। তার ভাষ্যে:
আমি যখন এটি লিখছি তখন স্বেচ্ছাসেবীরা গাজা স্ট্রীপ, জাবালিয়া, গাজা সিটি, বেইথ হানুন, মাগাজী ক্যাম্প, শাতি, নুসিরাত, এবং খান ইউনিসের প্রায় ১৫০০ পরিবারকে কোরবানীর মাংস বিতরন করে চলেছে। এর কিছু অন্চলে স্বেচ্ছাসেবীরা বেশ বিপদের মধ্যেই এই কাজটি করছে কারন গাজার বিরুদ্ধে ইজরায়েলী সামরিক বাহিনীর একটি অপারেশন চলছে।
আমরা সবচয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোর কাছে পৌছানোর চেষ্টা করেছি এবং বর্তামনে দেখা যাচ্ছে যে গাজার প্রায় ৭৫% পরিবারই দরিদ্রসীমার নীচে অবস্থান করছে। আমাদের এই প্রকল্পে বিভিন্নভাবে সহায়তা দানের জন্যে এর সংশ্লিস্ট সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এল ফারা এ অন্চলের অবরুদ্ধ জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করছেন:
বড়দিনের সময় কাছিয়ে এসেছে, গাজা থেকে আমি আমার ভালবাসা এবং শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছি শুভ বড়দিন এবং সুখী নতুন বছর উপলক্ষ্যে। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি এই উৎসবগুলো উদযাপন করার সময় গাজায় অবস্থানরত আমাদেরকে ভুলে না যেতে এবং হাজার হাজার পুরুষ, মহিলা এবং শিশু যারা চলমান অসম যুদ্ধের ফলে খুবই কষ্ট ভোগ করছেন তাদের স্মরণে রাখতে। আমি চাই আপনারা সত্যকে সবার কাছে পৌছে দেবেন এবং শামিল হবেন, গাজায় প্রতিনিয়ত ঘটা বিভিন্ন যুদ্ধপরাধ সম্পর্কে বিশ্বের বিবেককে নাড়া দেয়ায়, আমার জনগনের বিরুদ্ধে অমানুষিক ও রুঢ় সমস্টিগত শাস্তি (গুটিকয়েক অপরাধীর জন্যে পুরো সমাজকে শাস্তি দেয়া) সম্পর্কে জানানোয় এবং ইজরায়েলের নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অযুহাতে যে দখলদারী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায়। যখন অনেক দেরী হয়ে যাবে তখন যেন বিশ্ববাসীদের কাছ থেকে না শুনতে হয় গাজায় কি হচ্ছে তা আমরা জানতাম না।
লিবিয়া
লিবিয়া থেকে খাদিজা তেরী জানাচ্ছেন যৌথ পরিবারের সবার সাথে ঈদ উদযাপনের চেয়ে এককভাবে ঈদ উদযাপন অনেক শান্তির। তার ভাষ্যমতে:
এটি আমাদের জন্যে প্রথম, আমাদের পরিবারের এককভাবে ঈদ উদযাপন (গত ১৯ বছরে)। আমরা সবসময়ই ঈদ আমদের বিশাল যৌথ পরিবারের সবাইকে নিয়েই করেছি। প্রতি বছরই যৌথ পরিবারটির মনে হয় কলেবর বৃদ্ধি পায়, এবং বেশী কোলাহলপূর্ণ হয়। যার ফলে ঈদ পালন বেশ যন্ত্রনাদায়ক হয়ে পরে। এ বছর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এককভাবেই উদযাপন করব এবং এটি বেশ শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কোন বদমেজাজী ভাবী বা ক্রন্দনরত বাচ্চা নেই এবার, এবং সবচেয়ে সুখের হচ্ছে কোন দেবর বা ভাসুর নেই আশেপাশে যার জন্যে আমি ও অন্য মেয়েরা যা ইচ্ছা তাই পড়ে ঘুরতে পারছি ও চুল খোলা রাখতে পারছি। কি আনন্দের!
লেবানন:
লেবাননে সিইটস্কে ঈদ উদযাপন করেছে একটি নৌকা ভ্রমন দিয়ে এবং তার ব্লগে ছবিসহ এর বর্ণনা দিয়েছে:
বৈরুতে আজ ঈদ। সবই বন্ধ। সেডার পর্বতমালায় স্কি স্লোপগুলো আজ খুলে দেয়া হয়েছে। বৈরুত থেকেই পাহাড়ের চুড়ায় বরফ দেখা যাচ্ছে। বেশ আগেই মওসুম শুরু হলো, সাধারনত: জানুয়ারীতে এটি শুরু হয়।
এবং এমন বলাও মনে হয় ঠিক না। আমি আজ সলিডের মারিনাতে রোদ পোহাচ্ছিলাম। তাদের কিছু সুন্দর ইয়ট ভেড়ানো আছে এখানে। আমি একটি ১ কোটি ডলার দামী ইয়ট ঘুরে দেখলাম, বেশ সুন্দর। একজন বলল “তোমার যদি এতই পছন্দ হয় তবে তোমার স্বামীকে বলো একটি কিনে দিতে।” হ্যা পাঁচ লাখ ডলার ডলার হলে হয়ত আমি কিনতাম।
এরপর তিনি একটি নৌকা ভ্রমনে যান
ছবি: সিইটস্কের সৌজন্যে
লেবাননের আহমেদ কারন দর্শাচ্ছেন কেন ঈদ সারা বিশ্ব জুড়ে একই দিনে উদযাপিত হচ্ছে না। তিনি লিখছেন:
আমি সবার জন্যে একটি সুখী ও সৌভাগ্যশালী ঈদ উৎসব কামনা করছি। যদিও ঈদ কোন দিন শুরু হবে (বুধবার, বৃহস্পতিবার, শুক্রবার বা আরও পরের কোন দিন) এ নিয়ে বিভেদ রয়েছে মুসলমানদের মধ্যে। আমার তাই মনে হয় একটি নির্দিষ্ট দিনে ঈদ পালন করার কি সমস্যা রয়েছে?
তিনি যে কারনগুলো বলছেন তা হলো:
১ম ব্যাখ্যা:
আমার মতে সৌদি আরবের প্রভুত্বব্যন্জক শেখ যিনি আবার সৌদি রাজার কর্মচারী একটি খুঁতযুক্ত নির্ণায়ক ব্যবহার করছেন…৩য় ব্যাখ্যা:
আমার মনে হয় সব জ্ঞানীগুনীরা একই চাঁদকে দেখছেন না..৫ম ব্যাখ্যা:
তারা চাঁদ ছাড়া অন্যকিছুকে নির্ণায়ক বানাচ্ছেন
কুয়েত:
কুয়েত থেকে ফন্জি ঈদের লাগামহীন কেনাকাটার সচিত্র প্রতিবেদন দিচ্ছেন। তিনি এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন:
গত দুই দিন আমি বগ্গীর দিকের রাস্তায় গিয়েছি। প্রথম দিন একটি পার্কিংয়ের জায়গা পেতে ১৫ মিনিট লেগেছে। গতকাল আমার লাগল ৩০ মিনিট এবং একেবারে দুরে ইকিয়ার দিকে আমি পার্কিংয়ের জায়গা পেলাম। শপিং মলের মধ্য দিয়ে হাঁটার সময় প্রচুর ধাক্কাধাক্কি হলো লোকের সাথে। সবাই শপিং ব্যাগ হাতে বিভিন্ন দোকানে যাচ্ছে। এছাড়াও উঠতি বয়সী ছোকড়ারা ধুমপান করছিল ও মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছিল। যদিও বেশ ভিড় এবং গোলমাল ছিল এটা দেখে ভালই লেগেছে যে এরা সবাই ঈদের আনন্দের জন্যে কেনাকাটা করতে বের হয়েছে।
সিরিয়া:
আমাদের শেষ গন্তব্য সিরিয়া যেখান থেকে হোভিক ঈদ এবং বড়দিনের সময়ে আলেপ্পোর ছবি দেখাচ্ছে।
- আমিরা আল হোসাইনি