- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভসে বলিভিয়ানার কৃস্টিনা কিসবার্টের সাথে স্বাক্ষাৎকার

বিষয়বস্তু: ল্যাটিন আমেরিকা, বলিভিয়া, আদিবাসী, জাতি-বর্ণ, রাইজিং ভয়েসেস

ভসে বলিভিয়ানা [1] (বলিভিয়ার কন্ঠ) হচ্ছে গত জুলাইয়ে রাইজিং ভয়েসেস [2] ক্ষুদ্র অনুদানপ্রাপ্ত প্রথম পাঁচটি নাগরিক মিডিয়া প্রসার প্রকল্পের [3] একটি। মারিও ডুরান [4], এডুয়ার্ডো আভিলা [5] এবং হুগো মিরান্ডার [6] উদ্যোগে দু’ মাস ব্যাপি এই পাইলট প্রকল্পে বলিভিয়ার এল আল্টো শহরের একটি ইন্টারনেট ক্যাফেতে চারটি পাক্ষিক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। পৃথিবীর অন্যতম উচ্চতম শহর এল আল্টো আরও পরিচিত এর আদিবাসী জনসংখ্যার জন্যে যারা ২০০৩ এর বলিভিয়ার গ্যাস বিবাদের [7] জন্যে খবরের শিরোনাম হয়েছিল। যদিও এল আল্টোতে যে কোন বিদেশী পর্যটক প্রথম পা রাখে [8] এটি দেশের অন্য স্থান থেকে প্রায়ই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এল আল্টোতে ভসে বলিভিয়ানার পাইলট প্রকল্প [9] এ পর্যন্ত ২৩ জন অংশগ্রহনকারীকে শিখিয়েছে কি করে ব্লগে লিখতে হয়, ডিজিটাল ছবি প্রকাশ [10] করতে হয়, এমনকি ভিডিও ছবি [11] তুলতে হয়। এই দল থেকে সবচেয়ে নিয়মিত ও বলিষ্ঠ কন্ঠ হচ্ছে কৃস্টিনা কিসবার্টের। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী এবং বলিভিয়া ইন্ডিজেনা [12] (আদিবাসী বলিভিয়া) ব্লগে লিখে থাকে। তাকে ধন্যবাদ যে সে ইমেইলের মাধ্যমে এই স্বাক্ষাৎকারে সম্মত হয়েছে।

ভসে বলিভিয়ানাতে যোগদান করার জন্যে তোমার অনুপ্রেরনা কি ছিল? কি করে এ সম্পর্কে তুমি জানলে?

আমি ভসে বলিভিয়ানা সম্পর্কে জেনেছি ইন্টারনেট থেকে। সময়টি ছিল যখন তারা ভসে ব্লগিভিয়ানো [13] সম্মিলনের আয়োজন করছিল। আমি এর সাথে কাজ করতে আগ্রহী ছিলাম কারন কারন এটি এমন একটি জায়গা যেখানে আমাদের নতুন নতুন চিন্তা ধারা সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি। এটি রেডিওতে কথা বলার মত অনেকটা, যেখানে একজন বলেন এবং অনেক শ্রোতা শোনেন।

ভসে বলিভিয়ানা সম্পর্কে এবং সাধারন ব্লগিং সম্পর্কে তোমার প্রথম কি অনুভুতি হয়েছিল?

আমার মনে হয় ভসে বলিভিয়ানা হচ্ছে ব্লগের ভার্চুয়াল বিশ্ব সম্পর্কে সম্যক ধারনা দেয়ার ব্যাপারে পথপ্রদর্শক। আমার কাছে ভসে বলিভিয়ানা হচ্ছে অন্যদের সাথে যোগাযোগের একটি সেতু।

ব্লগিং হচ্ছে নতুন, উদ্বুদ্ধকারী, ফলপ্রদানকারী এবং চলমান একটি মাধ্যম যা সমস্ত বাধা অতিক্রম করে। আপনি ছবি, রং, শব্দ ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষা ও খেলা করতে পারেন। আমি যে ব্লগিং করছি এটি একটি বিষ্ময়কর ব্যাপার কারন আমি কখনই কল্পনাও করিনি যে আমি একটি ব্লগ তৈরি করতে, লিখতে, আমার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অপরকে জানাতে পারব।

ভসে বলিভিয়ানাতে মেয়েদের আধিক্য আমি লক্ষ্য করছি। তোমার কি মনে হয় ব্লগিং মেয়েদের জন্যে অধিক পছন্দের?

গ্রামান্চলে মেয়েরা তাড়াতাড়ি স্কুল ছাড়ে। স্কুলের পড়া শেষ করতে পারে এমন ছাত্রীদের সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় বেশ কম। এ কারনে মেয়েদের শিক্ষার হার ছেলেদের চেয়ে কম। টেকনোলজী ব্যবহার এবং অনলাইন মিডিয়ার ক্ষেত্রেও এই ব্যবধানটি থেকেই যায়। আমার মনে হয় ব্লগিং এখনও অনেক মেয়েদের কাছেই অজানা একটি বিষয়। এটি নতুন বিষয় বলে অনেকেই জানেনা এটি দিয়ে তারা কি করতে পারে।

তুমি কেন তোমার ব্লগের নাম বলিভিয়া ইন্ডিজেনা (আদিবাসী বলিভিয়া) রাখলে?

বলিভিয়ায় বিপুল সংখক আদিবাসী রয়েছে। ৩০টিরও অধিক আদিবাসীদের মধ্যে আইমারা, কেচুয়া এবং গুয়ারানী হচ্ছে সর্ববৃহৎ। এছাড়া অন্যান্য ছোট আদিবাসী সমাজও রয়েছে। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ৬২% বলিভিয়ান আদিবাসী বংশভূত এবং এই সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আমার কাছে আমার পূর্বপুরুষের পরিচয় জানা গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় বলিভিয়া ইন্ডিজেনা শিরোনামটি এ দেশের বাস্তবতাকে তুলে ধরে।

দেখা যাচ্ছে যে প্রথম মাসগুলোতে তুমি তোমার ব্লগে শুধু এল আল্টো শহর নিয়েই লিখেছ। কিন্তু এখন তুমি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখ। এই বিষয়বস্তুর পরিবর্তন কিভাবে হলো?

সত্যি প্রথম দিকে আমি শুধু এল আল্টো শহরে জীবন যাপন নিয়েই লিখেছি। এর পরে বিষয়বস্তুতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আমি এল আল্টো নিয়েই লিখেছি। তবে আরও অনেক বিষয় তার সাথে এসেছে যেমন আদিবাসীদের নিয়ে বলিভিয়ার বাস্তবতা এবং অন্যান্য দেশের আদিবাসী প্রসঙ্গ। আমি যখন শুরু করি মনে করেছিলাম যে ইতিহাসকে আমি বেশী করে তুলে ধরব। কিন্তু বিষয়বস্তুর বৈচিত্রতা বাড়তে লাগল এবং দৈনন্দিন জীবন যাপনের ব্যাপারগুলো প্রাধান্য পেল।

তুমি তো ব্লগিভিয়ানো সম্মিলনে উপস্থিত ছিলে। তোমার উপলব্ধি কি হলো বল।

ব্লগিভিয়ানো সম্মিলনে [14] উপস্থিত থাকা এক চমৎকার অভিজ্ঞতা। ওখানে যাওয়ার আগে ব্লগ সম্পর্কে জানে এমন কোন বন্ধু ছিল না আমার। তাই সেখানে এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ অন্য ব্লগারদের সাথে পরিচয় হওয়াটা মনে হচ্ছিল যেন এমন একটি বাড়ীতে উপস্থিত হওয়া যার প্রতিটি দরজাই নতুন নতুন বিষ্ময় নিয়ে অবস্থান করছে। আমি বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্লগারদের সাথে পরিচিত হয়েছি যাদের মধ্যে রয়েছে এন্জেলসাইডো [6], এনিমালডেসিউডাড [15], পেরোরাবিওসো [16], আরবানডিনোস [17], রেসিক্লার্টে [18], পালাব্রাসলিব্রে [19], এবং টেভেলিসোঁ [20]

সান্তাক্রুজে নারীদের উপর একটি সম্মিলনেও তুমি অংগ্রহন করেছ। ঐ সম্মিলনের উদ্দেশ্য কি ছিল? তোমার কি মনে হয় ব্লগিং বলিভিয়ার নারীদের জন্যে একটি শক্তিশালী টুল হতে পারে?

সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখে সান্তা ক্রুজে [21] বলিভিয়ার নারী ব্লগারদের ৬ষ্ঠ সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়। আমার কাছে এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে অন্যান্য শহরের নারী ব্লগাররা কি চিন্তা করছে। আমার মনে হয় ব্লগিং আমাদের, নারীদের বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অপরকে জানানোর জন্যে একটি কার্যকরী প্রযুক্তি। কিন্তু এটিও মাথায় রাখা দরকার যে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এখনও মানুষের জন্যে একটি বড় বাধা। বড় শহরগুলোতে ইন্টারনেট সহজলভ্য কিন্তু মাঝারী বা ছোট আকারের শহর বা গ্রাম গুলোতে এটি এখনও দুস্প্রাপ্য ও আয়ত্বের বাইরে। এটি অনেক মানুষের মধ্যে যোগাযোগের বাধা সৃষ্টি করে।

তোমার জীবন এবং তোমার সমাজ সম্পর্কে ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেখা ও অপরের সাথে ভাগ করে নেয়ার ব্যাপারে তোমার মধ্যে কি প্রণোদনা কাজ করে?

ব্লগিংয়ের মাধ্যমে আমি যা চিন্তা করি, আমি কিভাবে থাকি এই বাস্তবতাগুলোকে সহজে জানাতে পারি। আমি উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম বলিভিয়ার আদিবাসীদের বিভিন্ন ঘটনা জানানোর প্রেরনায়। এ সম্পর্কে খুব কম ব্লগই লিখে থাকে। ফলে আমি অনেক সময় লিখতে বাধ্য হই।

গ্লোবাল ভয়েসেসের পাঠকদের প্রতি তোমার কোন বক্তব্য রয়েছে?

গ্লোবাল ভয়েসেসের পাঠকরা, আমি সমুদ্রপৃষ্ঠের ৪০০০ মিটার উঁচু থেকে লিখছি। আমরা এখান থেকে উড়ে এসে আপনাদের কম্পিউটারে দেখা দেই যাতে আপনারা এই ভার্চুয়াল সেতুর মাধ্যমে আমাদের সম্পর্কে কিছু জানতে পারেন।

- ডেভিড সাসাকি

ভিডিও স্বাক্ষাৎকার: এডুয়ার্ডো আভিলা কৃস্টিনার একটি ভিডিও স্বাক্ষাৎকারের ইংরেজী অনুবাদ করেছে [22]। (আর এর বাংলা অনুবাদটি করেছি আমি যা নীচে দেখতে পাবেন। আপনারা ভিডিও প্যানেলের নীচের দিক থেকে সাবটাইটেলের ভাষা পরিবর্তন করতে পারবেন)