সংযুক্ত আরব আমিরাতঃ এলেক্সের জন্য বিচার

আরব দেশে যেখানে যৌন হয়রানি আর ধর্ষনের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয় আর স্থানীয় এবং বিশ্বব্যাপী মিডিয়ার চোখ থেকে লুকানো হয় সেখানে একটি সাম্প্রতিক ঘটনা আন্তর্জাতিক শিরোনাম তৈরি করে ইউএই ব্লগগুলোতে জায়গা করে নিচ্ছে।

এটি একটি ১৫ বছরের ফরাসি ছেলে এলেক্সান্দ্রে রোবার্ত এর চাঞ্চল্যকর ঘটনা যাকে দুবাইতে অপহরন আর গণধর্ষন করা হয়েছিল। বেশী ভীতিকর হচ্ছে তিনজন সন্দেহভাজন ধর্ষনকারীর মধ্যে একজন ২০০৩ সালে এইচআইভি এইডস ভাইরাস পরীক্ষায় পজিটিভ হয়েছিল।

ইউএই কমিউনিটি ব্লগ এই ঘটনার অংশ বিশেষ প্রচার করে সমালোচিত হয়েছে পাঠকদের কাছ থেকে:

“ বাইরে থেকে দুবাইকে ভালো মনে হয় কিন্তু ভেতরে এখনও এটি মধ্য যুগের অন্ধকারে বসবাস করছে। পশ্চিমাদের এখান থেকে দূরে থাকা উচিত যতক্ষন না এরা এদের বিচার ব্যবস্থা আধুনিক করে। বেচারা ছেলেটাকে অমানুষিক ব্যবহার সহ্য করতে হয়েছে আর ডাক্তারও জংলীর মতো আচরন করেছে। বেশীরভাগ মানুষ যা জানে না তা হলো যে ওই অন্ধকার সময়ের মুসলিমদের কাছে কাফের মহিলাদের মতো সহজ খেলার সামগ্রী ছিল,” জানিয়েছেন ক্রিমিনালস ইন দুবাই নামের পাঠক।

আর একজন পাঠক যিনি পরিচয় গোপন করে মন্তব্য দিয়েছেন তিনি জানিয়েছেন এই অপরাধের বিচার পাওয়া যাবে না:

“যদি বিচার বলে কোন জিনিষ থাকতো তাহলে মদ্যপ আর মাদক ব্যবসায়ীদের সবার আগে বিচার হতো কারন তারা রাস্তা আর নাইট ক্লাবে অনেক বেশি ঝামেলা করে। ইন্ডিয়ান/এশিয়ানরা এদের প্রথম লক্ষ্য আর তার পরে পূর্ব ইউরোপিয়ান/আফ্রিকান আর তার পরে অন্যরা (সাদা/স্থানীয়)। অন্য কেসের মতো এই কেসও খারিজ হয়ে যাবে, কেনইবা এই কথা লেখা যখন আমরা জানি যে কিছুই হবে না।”

আর একজন অজ্ঞাত পাঠক দুবাইয়ের জন্য একটা জেগে ওঠার সংকেত পাঠিয়েছেনঃ

“জেগে ওঠো দুবাই, যদি ইউএই সব কিছুর উপরে বা সব কিছুতে ভালো হতে চায় তাহলে মূল জিনিষ দিয়ে শুরু করা উচিত (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিচার) … তারপরে তাদের সব থেকে উচু টাওয়ার আর সব থেকে বড় শপিং মল তৈরির চিন্তা করা উচিত।”

অন্যদিকে বাহারাইনি ব্লগার আম্মারো বলেছেন যে এই ঘটনাকে দুবাইএর ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ব্যবহার করা উচিত না।

“যদিও এটি একটি ভয়ঙ্কর কাজ, কিন্তু এই ঘটনা দিয়ে একচেটিয়াভাবে দুবাইকে বর্ণনা করা উচিত হবেনা, কারন ওদের স্থানীয় সংস্কৃতি খুবই সম্মানজনক আর ভালো। কিন্তু এই ঘটনায় আমিসহ অনেকেই ক্রোধান্বিত আর এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে ইউএই কে এখনো পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ জায়গা মনে করা হয়,” তিনি জানালেন।

রশ একই কথা বলছেনঃ

“খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে এমনটি ঘটেছে। দয়া করে দুবাই বা ইউএইকে তিনটি বিকৃত লোকের আচরন দিয়ে বিচার করবেন না। সব বাদ দিলেও এটি পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ জায়গা- আর মানুষ মানবাধিকার নিয়ে যাই বলুক না কেন- নিরাপত্তা তার মধ্যে সব থেকে বড়। এই নিরাপত্তা অবশ্য নিখুঁত না কিন্তু অনেক জায়গার থেকে ভালো। দুবাইয়ের এখনও অনেক দূর যেতে হবে সবার জন্য সমতা, সচ্ছতা আর বিচার নিশ্চিত করতে হলে (যেটা আমি বিশ্বাস করি কোন দেশেই সম্পূর্ণ ভাবে নেই)। আমি প্রার্থনা করি ওই ১৫ বছরের ছেলেটার যাতে এইডস না হয়। তার জন্য প্রার্থনা করেন আর আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে দেন।”

এলেক্সান্দ্রের মা ভেরোনিকা তার ছেলের সংগ্রামকে অনলাইনে এনেছেন এবং ইংরেজি আর ফরাসি ভাষায় একটি সাইট চালু করেছেন এজন্য।

এই সাইটের পরিচিতিতে ভেরোনিকা রোবার্ত লিখেছেনঃ

“আমি এই ওয়েবসাইট সেই সব বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করছি যাদের প্রতি আঘাত কখনো স্বীকৃতি পায়নি, তাদের কথা কখনো শোনা হয়নি আর তাদের ব্যক্তিগত কষ্টগুলো কখনো জানা হয়নি। আমি এই ওয়েবসাইট সব মাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করছি যার মধ্যে আমার ছেলের উপর যারা হামলা করছে তাদের মাও আছে। (এছাড়াও) সব পাকিস্তানি, ফিলিপিনো আর ভারতীয় মাদের যাদেরকে দুবাই থেকে তাদের মানষিক, শারীরিক আর হৃদয়ে আঘাত নিয়ে ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে একত্রিত সব মাদের জন্য এই ওয়েবসাইট উন্মুক্ত। অশ্রুর কোন পরিচয় বা ধর্ম নেই। আমাদের একত্র হতে হবে যাতে যখন অশ্রু বইবে তখন তা একা একা বইবে না বরং সমগ্র দুনিয়ার সামনে যেখানে তা মোছার জন্য অনেক হাত থাকবে।”

জনাবা রোবার্ত দুবাই কতৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন যেন তারা নিম্নের পদক্ষেপগুলো নেন যাতে একই পরিস্থিতে পড়া বাচ্চাদের বাচানো যায়ঃ

“আমরা দুবাইয়ের কতৃপক্ষকে অনুরোধ করছিঃ

× পুলিশ বাহিনীর স্থাপনার মধ্যে কম বয়সী ধর্ষনের শিকারদের (তা ছেলে হোক বা মেয়ে) জন্য আলাদা একটা অভ্যর্থনা ব্যবস্থা রাখা

× তারা যে শিকার সেটি স্বীকার করা

× ধর্ষনের পর পর সব ধরনের সাবধানতা অবলম্বন করা – সব ধরনের ছোঁয়াছে আর যৌন সংসর্গে সংক্রামিত অসুখের বিরুদ্ধে (এইডস, হেপাটাইটিস, এমএসটি) ট্রাইথেরাপির মতো ব্যবস্থা থাকা

× ধর্ষনের শিকারদের মানসিক সাহায্য প্রদান যতোদিন প্রয়োজন।”

এটি না হলে তিনি পাঠকদের দুবাই বয়কট করার আহবান করেছেন।

“প্রচন্ড বড়লোকের দেশ দুবাইতে যতক্ষন না এই সব প্রাথমিক বিষয়ে আইন করা হচ্ছে আমরা আপনাদের অনুরোধ করবো বয়কট দুবাই (www.boycottdubai.com) নামক এইসব শিকারদের সমর্থন করা দলের সাথে থাকতে। আপনার দৃঢ়তা আর সমর্থনের ফলে ধর্ষনের শিকার এই সব বাচ্চারা আবার একটা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে শিখবে নিজেদেরকে আবার মানসিক আর শারীরিকভাবে গড়ে তুলে। আবার হয়তো তারা হাসতে শিখবে।” বলেছেন জনাবা রোবার্ত।

এই সাইটের সাপোর্ট পেজে সমর্থন জানিয়ে এই পর্যন্ত ৪৩০০টির বেশী মন্তব্য জমা পড়েছে। দুবাই এর একটি কোর্টে এই মামলার শুনানি হচ্ছে, যেখানে আজকে এলেক্সান্দ্রে সাক্ষ্য দিয়েছে

- আমিরা আল হুসাইনি

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .