- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

এল সালভাদরঃ ব্লগার বনাম সাংবাদিক

বিষয়বস্তু: ল্যাটিন আমেরিকা, এল সালভাডর, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, বাক স্বাধীনতা

এল সালভাদরে ব্লগিং আর সাংবাদিকতা বেশ কিছু জায়গায় বিভিন্নভাবে একে অপরের সাথে মিশে যায়। সাংবাদিকরা কখনও নিজেরাই ব্লগার আবার ব্লগাররা কখনও সাংবাদিকদের মতন লেখে। এল সালভাদরে লোকে খুব বেশী সময় অনলাইনে কাটাতে না পারলেও ক্রমবর্ধমান ব্লগারের সংখ্যা নাগরিক বিতর্ককে আস্তে আস্তে প্রভাবিত করতে শুরু করেছে।

ব্লগের ভুমিকা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল যখন রক্ষনশীল পত্রিকা এল দিয়ারিও দো হয় সাইবারনেটিক প্রসেলিটিসাম [1] (স্প্যানিশ) নামক একটি লেখা ছাপিয়েছিল যেখানে ব্লগকে সম্ভাব্য বিপদ বলা হয়েছিল। তাদের অভিযোগের মধ্যে ছিল ব্লগ ভুল তথ্য দেয়, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আর নিমন মানের কথা বলে যা নাকি গনতন্ত্রকে পক্ষপাতদুষ্ট করে বলে তাদের ধারনা। বিশেষ করে ওই লেখক সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে ব্লগকে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ভুলভাবে ব্যবহার করবে।

জরগে আভালস যে ব্লগার এবং একই সাথে এল দিয়ারিও দো হয় এর সাংবাদিক উক্ত লেখার প্রতিউত্তরে [2] (স্প্যানিশ) ডিজিটাল পাক্ষিক এল ফারোতে প্রকাশিত আল্ভার রিভিরা লারিওসের একটি উক্তি দেখিয়েছেনঃ

কিন্তু আমাদের দেশের কিছু অংশ পছন্দ করছে না যে জনগনের একটা অংশ গঠনমূলক সমালোচনা করার যোগ্যতা অর্জন করছেন। এরাই আবার পরস্পরবিরোধী ধারনায় ভাবছেন যে ব্লগ ভুল তথ্য দেবে। এরা যেটি ভয় পাচ্ছেন তা হলো এতো দিন ধরে তারা যে তথ্য আর মতবাদ এবং সালভাদারের জনগনের মতামতকে নিজেরা নিয়ন্ত্রন করেছেন, সেই মনোপলি তারা এখন নতুন প্রয়ুক্তি আর বিভিন্ন উৎসের একাধিক তথ্যের সহজলভ্যতার কারনে হারাতে বসেছেন।

আভালোস এল সালভাদারের বেশ কিছু সাংবাদিকের মতে নিজের আলাদা ব্লগে লেখেন। অন্যান্যদের মধ্যে পাওলো লুয়ারস [3], জুয়ান হোসে ডাল্টন [4] আর আরনেস্তো রিভাস-গালোন্ট [5] আছেন। মজার ব্যাপার হলো লুয়ারস আর রিভাস যে পত্রিকায় হয়ে লিখছিলেন তাদের সাথে মতবিরোধ হওয়ার পর তারা নিজস্ব ব্লগে লেখা শুরু করেন।

সাংবাদিকরা কি ব্লগোস্ফিয়ারে কোন ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে পারেন? এই প্রশ্নটির উত্তর দিতে গিয়ে আভালস লিব্রেওপিনিয়ানডটনেট [6] থেকে পোশাজীবি সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত ব্লগের মুল্যবোধের ব্যাপারে একটি মন্তব্য তুলে ধরেন [7]:

সাংবাদিকদের ব্লগের জগতে থাকার ব্যাপারটি আমি খুব উৎসাহ নিয়ে দেখি কারন এই ভাবে বিভিন্ন ব্যাপারে মিডিয়ার নিয়ন্ত্রনের বাইরে তাদের মতামত পাওয়া যায়। এখানে রিপোর্টিং এর বেশি কিছু নেই বরং খবর শুনে মতামত জানানোর ব্যাপার আছে যেমন একজন সাংবাদিক তদন্ত, ইন্টারভিউ, তথ্য হিসাব করা ইত্যাদি স্তর পার হয়েই আসেন।

এল সালভাদারে সাংবাদিক ব্লগার রিভাস-গালোন্ট বেশ পরিচিত। অন্যান্য জিনিষের সাথে তিনি আমেরিকাতে এই দেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন আর দেশের সব থেকে বড় দৈনিক পত্রিকা লা প্রেন্সা গ্রাফিকাতে তিনি কলাম লেখেন। ওই পত্রিকাতে তার কলাম লেখার জায়গা কমিয়ে দেয়ার পর তিনি নিজের ব্লগ কনভারসেশান্স উইথ নেটো রিভাস [5] লেখা শুরু করেন কারন তার লেখার জন্য আরো স্বাধীন জায়গার দরকার ছিল। সম্প্রতি তার ব্লগের এক বছর পূর্তি হলোঃ

ব্লগের এই ব্যাপারটাই আকর্ষনীয় আর আলাদা। কি বিরক্তিকর হতো যদি আমারা সবাই সব ব্যাপারে একমত হতাম। এই প্রকাশনা কোন মার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ নয়। এটা আপনাদেরকে নিয়ে আপনাদের জন্য একটা প্রকাশনা, যেখানে আমরা সবাই মুক্তভাবে আমাদের মতামত জানাই কোন ভয়ে ভীত না হয়ে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এমনই হওয়া উচিত এবং আমাদের দেশে তা করতে পেরে আমরা প্রশংসাই করি।

(যে সব সাংবাদিক নিজেদের ব্লগ লেখেন তারা লা প্রেন্সা গ্রাফিকার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত ব্লগগুলো থেকে অনেক আলাদা। এই পত্রিকার ওয়েবসাইটে এখন ৭টি বিভিন্ন বিষয়ের ব্লগ প্রকাশিত হয়, যার মধ্যে যৌন পরামর্শ, খেলা, সংঙ্গীত আর আইনের মতো বিষয়গুলো রয়েছে)।

তারপরেও এল দিয়ারিও দো হয় এর সম্পাদকীয়কে বাদ দিলে এল সালভাদরের অন্যান্য মিডিয়া মাঝে মাঝে ব্লগের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ব্লগার হুন্নাহপুহ লিখেছেন যে অন্যান্য ব্লগারদের সাথে তাকে একটি রেডিও গোল টেবিল বিতর্কে অংশগ্রহনের জন্য আমন্ত্রন করা হয়েছিল। তিনি এই বিতর্ক বৈঠকের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন “রেডিওতে এক রাত [8]” শীর্ষক তার লেখায়। ওই শোতে ব্লগারদের প্যানেলকে সামনের নির্বাচন আর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কৌশল নিয়ে মতামত দিতে বলে হয়েছিল।

সালভাদরের ব্লগাররা প্রায়ই সাংবাদিকদের নিয়ে লেখেন। সাম্প্রতিক ২০ সেপ্টেম্বর একটি দু:খজনক ঘটনায় একজন তরুন সাংবাদিককে সোয়াপাঙ্গোতে তার বাড়ীর সামনে গুলি করে মেরে ফেলা হয় [9]সালভাদর সাঞ্চেজ একজন রেডিও সাংবাদিক ছিলেন এবং কাজ করতেন রেডিও মায়া ভিশন, ওয়াইএসইউসিএ আর রেডিও কাডেনা মি জেন্টে তে। তিনি রেডিওতে অনেক বিষয়ে উপস্থাপনা করতো যার মধ্যে সুচিতোততে বিক্ষোভ আর গ্রেপ্তারের ঘটনা, সন্ত্রাসী গ্যাঙ্গের কার্যকলাপ আর রাজনৈতিক বিক্ষোভ ছিল উল্লেখযোগ্য। তার হত্যার কারন আর কারা করেছে তা জানা যায়নি।

যেহেতু সে সাংবাদিক ছিল তাই প্রশ্ন উঠেছে – সে যা রিপোর্ট করতো তার জন্য কি সে মারা গেল? মহল্লার গ্যাং মারামারির সে কি বলি? বাক স্বাধীনতার উপর এটা কি আক্রমন না কি অপরাধিরা অন্য কোন কারনে একজন তরুনকে মেরে ফেলল? ব্লগার হুন্নাহপাহ তার লেখায় তিনজন সাংবাদিক কর্তৃক এই হত্যাকান্ডের বিবরন উপস্থাপন করে শেষ করেছেন এই বলে [10]:

দু:খজনকভাবে এই তদন্ত এখন পুলিশের হাতে যারা বিশাসযোগ্যতা হারিয়েছে আর যারা জনগনের জন্য কাজ না করে বর্তমান সরকারের ইচ্ছামত কাজ করার জন্য বেশি তৈরি। আমরা এটা বলতে পারিনা যে সাঞ্চেজ কন্ঠরোধের জন্যে পাঠানো মৃত্যুদুতের বলি কি না, কিন্তু আমরা তা উড়িয়ে দিতেও পারিনা।

শেষে ব্লগাররা সেই সাংবাদিকের কথা লিখছেন আর লিখবেন যিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হচ্ছেন। মউরিসিও ফুনেস, এল সালভাদরের জনপ্রিয় সাংবাদিক, বামপন্থী এফএমএলএন দল দ্বারা মনোনীত [11] হয়ে সামনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের প্রার্থী হিসেবে দাড়াবেন। যেহেতু মার্চ ২০০৯ এর আগে নির্বাচন নেই, তাই ইন্টারনেটে এই নির্বাচন নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক লেখা হবে।

-টিম মুথ