ভীতি প্রদর্শনের পর ব্লগার উগান্ডা ছেড়ে পালিয়েছেন

উগান্ডার ব্লগার আর রেডিও ব্যক্তিত্ব ডেনিস মাতান্ডা'র আফ্রিকার সংস্কৃতি, ইদি আমিন আর পুন: উপনিবেশন নিয়ে খোঁচা দিয়ে লেখা এর আগেও গ্লোবাল ভয়েসে প্রকাশিত হয়েছে। ডেনিস গত মাসে তার ব্লগে “কিভাবে মরে যাওয়া যায়” নামক লেখা লিখে আবার আলোচিত হয়েছিলেন। তার রেডিও শো নিয়ে এই লেখার ফলে তাকে ভীতি প্রদর্শন করা হয় আর তার বিরুদ্ধে আক্রমনের ভয়ে তিনি উগান্ডা ছেড়ে পালিয়েছেন। অবশ্য তার এই সিদ্ধান্ত অন্যান্য ব্লগাররা সমর্থন, চিন্তা আর প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে দেখেছেন।

ব্লগার তুমঊজিকে তার সাম্প্রতিক ডেটিং এর ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, ”আপনারা যদি সত্যিকার নাটকে ভরা ঘটনা পড়তে চান তাহলে ডেনিস মাতান্ডা'র ব্লগ হচ্ছে ঠিক জায়গা”। টান্ড্রা তার সেপ্টেম্বরের উগান্ডার ব্লগারদের হ্যাপি আওয়ার নিয়ে ব্লগের লেখায় ডেনিসের সমালোচনা করেছেন। তবে দেগস্টারের প্রতিক্রিয়া সব থেকে জোরালো ছিল।

অনেক আগে এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছিলাম আপনার পুরোনো গাড়িতে যেটার গ্লোভ কম্পার্টমেন্টে একটি খেলনা বেরেটা (পিস্তল) ছিল। যেখানে আমি বলেছিলাম যে আপনার জ়াতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছুটা অসংযত মন্তব্যের জন্য আপনাকে কখনো মূল্য দিতে হতে পারে। আর আপনি আপনার কিছু পরোয়া করি না মনোভাব নিয়ে বলেছিলেন, “ … আমি আসলেই তাই বিশ্বাস করি।” … আপনি আসলেই যখন যা বলতে চেয়েছেন তাই বলেছেন। আর আমি যদি ঠিক বুঝে থাকি তাহলে অন্য লোকের যৌন পছন্দের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য শেষ আঘাতটা করেছে যার ফলে গভীর রাতে আপনার বাড়িতে লোক এসেছে।

আপনি কি মনে করেছিলেন? আপনার উকিলের কাছে কোন প্রতিবাদ পত্র আসবে? আপনার নাকাসেরোর পাহাড়ী আফিস ঘেরাও করবে? আপনার রেডিও অনুষ্ঠান বয়কট হবে? আপনার খবরের কাগজের লেখা প্রকাশ্যে পোড়ানো হবে? নাকি মিডিয়া সেন্টারে আপনাকে ডেকে আপনার উগ্র ধারনা আলোচনা করা হবে যাতে একটা সাধারন আর গ্রহনযোগ্য পথ পাওয়া যায়? আমার তা মনে হয়না।

এখন আমেরিকা থেকে ডেনিস তার প্রথম উপন্যাসের উপর কাজ করছেন যার নাম মাস্টার অফ দ্যা স্যাগিং চিক্স যার মাধ্যমে তিনি মনে করেন যে আফ্রিকান নেতাদেরকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাবে। গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে তিনি তার উপন্যাস নিয়ে আলাপ করতে রাজী হয়েছেনঃ

প্রশ্নঃ আপনার উগান্ডা ছাড়ার মুলের ঘটনা কি আপনি বর্ণনা করতে পারেন?

উত্তরঃ মুলত তিনটি বিষয়ে আমাকে উগান্ডা ছাড়তে হয়েছে। প্রথমে, আমি প্রতি সপ্তাহে যে রেডিও অনুষ্ঠান করি তা নিয়ে খুব খারাপ খারাপ অজ্ঞাত ফোন পাচ্ছিলাম যেখানে আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছিল। সমকামিতা নিয়ে ২৪ আগস্ট আলোচনার পর ফোনগুলো আরো ভীতিপ্রদর্শনকারী হয়ে যায়। আমি মুলত: ধর্মজাজক ও আমার সহকর্মীদের সাথে সমকামিতা নিয়ে একমত ছিলাম না। আমি বলেছিলাম পশ্চিমে সমকামিতা খোলা হাতে সাদরে গ্রহন করা হয়না আর তাই আমাদের এমন ধারনা করার কোন কারন নেই যে এটিকে উগান্ডাতে আমদানি করা হয়েছে। তথন আমেরিকা আর ব্রিটেন থেকে সবেমাত্র ছুটি কাটিয়ে আমি উগান্ডায় ফিরেছি যখন আমাকে ফোনে বলা হয় দিনের আলো দেখতে হলে আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানে যেন ফিরে যাই।

দ্বিতীয়ত: আমি ঠিক জানতামনা এরা কারা আর তাই বুঝতে পারছিলাম না যে এরা সরকারের এজেন্ট না অন্য কেউ। আমার সহকর্মীদের কাছে আমি বিষয়টা বললাম – আসলে ফোন যে আসছে তা বলতে না কিন্তু কারা করতে পারে তা আলোচনা করেতে । তাই যা জানতে পারলাম তা হলো যে অনেক নিরাপত্তা বাহিনীর এজেন্ট কাজ করছে আর এছাড়াও অনেকেই প্রেসিডেন্টের কানে পৌছানোর চেষ্টা করছে, যার জন্য কারা ফোন করছে তা জানা প্রায় অসম্ভব।

আর শেষে আমি জানতামনা যে আমার জীবন দিয়ে আমি পুলিশকে বিশ্বাস করতে পারি কিনা, কারন সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললে তারা তার বিরুদ্ধে চলে যায় আর আমি তো সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে বলে থাকি।

প্রশ্নঃ আপনার নাম আছে লোককে উস্কানিমুলক কথা বলার জন্য – আপনার আফ্রিকান নেতা আর ঔপনিবেশবাদের উপর লেখাগুলো আলোচনার ঝড় তুলেছিল। আপনার মতে আপনার সব থেকে বিতর্ক সৃষ্টিকারী অবস্থান কি ছিল?

উত্তরঃ আমার মনে হয় ‘দ্যা কল ফর রিকলনাইজেশান‘ সব থেকে অজনপ্রিয় ছিল। আমার মনে আছে, সরকারের খুব ক্ষমতাশালী একজন আমাকে বলেছিলেন এটা না লিখতে কারন এতে বেশ কিছু স্পর্শকাতর বিষয় আলোচিত ছিল যা প্রেসিডেন্ট মুসেভিনি আর তার নেতৃত্বকে জড়িয়ে আছে। তিনি বলেছিলেন যে যদিও আমি ঠিক আর আমার কথার মানে আছে, কিন্তু তার মতে “যারা দেশ চালাচ্ছে তারা অতীত নিয়ে যারা ঘাটবে আর তাদের পথে যা দাঁড়াবে তারা তা ধংস করবে”। আমি শহর থেকে পালানোর পরে তাকে ফোন করেছিলাম আর আমাদের আলোচনায় তিনি বলেছিলেন যে হতে পারে যে ঐ লেখাগুলোর জন্যই আমাকে চিহ্নিত করা হয়েছে যেহেতু বিষয়টা আফ্রিকা আর তার বাইরে আলোচিত হয়েছে।

প্রশ্নঃ আপনি কি মনে করেন যে আপনার আঙ্গিনার হামলাটা আপনার ব্লগ না আপনার রেডিও এর অনুষ্ঠানের সাথে সম্পর্কযুক্ত?

উত্তরঃ সত্যি বললে আমি ঠিক জানিনা। আমি এখনো জানি না আমার পিছনে কে লেগেছিল আর এটাই সব থেকে ভয়াবহ।

প্রশ্নঃ দেগস্টারের অভিযোগ যে আপনি পালিয়েছেন, এই ব্যাপারে আপনার কি বলার আছে?

উত্তরঃ দেগস্টারের অভিযোগ ঠিক। আমি এমন পরিস্থিতি থেকে পালিযেছি যেখানে আমার দাঁড়ানো উচিত ছিল আর তাদের বিরুদ্ধে লড়া উচিত ছিল। আমার মনে হয় তিনি ব্যক্তিগতভাবে হতাশ হয়েছেন যে আমি পালিয়ে গেছি কিন্তু উনি আমাকে উগান্ডান পাবলিক রিলেশান ফার্ম যা প্রেসিডেন্টের জামাতার মালিকানাধীন, সেখানের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লোকের সাথে লড়তে দেখেছেন। তিনি যা ভুলে যাচ্ছেন তা হলো দেখা যায় বা আমি জানি এমন শত্রুর সাথে আমি লড়তে প্রস্তুত। আমি পালিয়েছি কারন আমি জানতাম না যে কে আমার পিছনে লেগেছে। হয়তবা আমি খুব তাড়াতাড়ি পালিয়েছি, কিন্তু দু:খিত হওয়ার থেকে সাবধান থাকা ভালো।

প্রশ্নঃ বর্তমানের উগান্ডার মিডিয়া সম্পর্কে আপনার মত কি? আপনি কি বিশ্বাস করেন যে উগান্ডার প্রেস মুক্ত?

উত্তরঃ এখনের জন্য গতানুগতিক মিডিয়া নিরাপদ…অন্তত নভেম্বরে কমনোয়েলথ হেডস অফ গভারমেন্টের মিটিং শেষ না হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু ফাঁটল দেখা যাচ্ছে যেমন পশ্চিম উগান্ডার টোরো অঞ্চলের সোচ্চার রেডিও স্টেশানগুলো সব ধরনের ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

ঐতিহ্যবাহী মিডিয়ার এই অস্থায়ী নিরাপত্তার অন্যতম কারন হচ্ছে যে দ্রুত বর্ধনশীল এবং মোটামুটি মুক্ত মিডিয়াকে বাগে রাখার মত কোন একক সংস্থা নেই। মিডিয়া সেন্টারের এটি করার কথা ছিল কিন্তু তার কোন বিশ্বাসযোগ্যতা নেই এবং উগাণ্ডা সম্প্রচার পরিষদ কিছু হুজুগে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলেই সবাই জানে (সমকামিতার উপর মন্তব্যের কারন দেখিয়ে গেতানোকে ক্যাপিটাল রেডিও থেকে বের করে দিল যেখানে সে মন্তব্য করেনি; এবং ব্লেক ল্যাম্বার্টকে দেশান্তরী করতে মিডিয়া সেন্টারের সাথে হাত মেলাল)।

এবং সবচেয়ে বড় বাঁচোয়া যে রাস্ট্রপতি যদি নিজে খবরটি না দেখেন, সম্ভাবনা রয়েছে যে মিডিয়া আউটলেটের উপর কোনও সরাসরি প্রতিশোধ নেয়া হবে না। এ ছাড়াও, মিডিয়ার রাস্ট্রপতির কাজের প্রশংসা সবসময় করে না। পাঁচ মাস আগে, তিনি বড় মিডিয়া সংস্থাগুলোর মালিক এবং ম্যানেজারদের ডেকেছিলেন। তাদেরকে ৭ ঘন্টার ওপর তার অফিসে অপেক্ষা করিয়ে, তাদের উপর লেকচার ঝেড়েছেন কিভাবে তাদের কাজ করতে হবে। তারা এটিকে ভালভাবে গ্রহণ করে নি এবং তিনি তাদেরকে তার বন্ধু করার পরিবর্তে তাদের ভেতরে বিদ্রোহের বীজ বপন করে দিয়েছেন।

সরকার নিজেই, এবং এর নেতারাও মূলস্রোত মিডিয়া থেকে নিজেদের দুরে সরিয়ে রেখেছে বলে মিডিয়া সরকারের ধামা ধরে না। তাই আমি ভাবি উগাণ্ডার রয়েছে একটি মুক্ত সংবাদপত্র। তারা বর্তমানে অনেক কিছুর জন্যে পার পেয়ে যাচ্ছে যা পৃথিবীর অনেক দেশ স্বপ্নেও ভাববে না। তবে চিন্তার বিষয় এমনটি অচিরেই পরিবর্তিত হবে এবং খুব খারাপ ফল বয়ে আনবে।

প্রশ্নঃ ব্লগিং এই পরিস্থিতিটিতে কি ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তরঃ ২০০৮ সালের রাস্ট্রীয় নির্বাচনে, দ্যা ২৭থ কমরেড এবং আর্নেস্ট বাজানী ব্লগগুলো তথ্যসূত্রের কেন্দ্র হতে যাচ্ছে। তারা নতুন ভূমিকা নেবে এবং খবরের অন্যতম উৎস হবে। ব্যাঙাত্বক লেখা, কৌতুকের মধ্য দিয়ে এবং সুতীক্ষ্ন মন্তব্য -ইভান যেরকম তৈরী করে — তা অনেক ব্লগারের পাঠকের কাছে ভালভাবে পৌঁছাবে। ব্লগগুলো হবে দামী তথ্যসূত্র অথবা বেআইনি মাদক যেটি জনগণ খুজে ফিরবে।

Q: আপনার উগাণ্ডাতে ফিরে আসার পরিকল্পনা রয়েছে ?

উত্তরঃ : হ্যাঁ। নিশ্চিতভাবে। আমার উগান্ডার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরিকল্পনা এখনও রয়েছে! এবং সেসময় এবং এখনকার মধ্যে আমার ইচ্ছে রয়েছে কয়কেটি উপন্যাসের উপর কাজ করতে, একটি পি.এইচ.ডি. করতে, একটি স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ফাউন্ডেশন উগান্ডার গ্রামগুলিতে উপস্থাপন করতে এবং বিশেষ করে একটি ওয়াশিংটন লবী তেরি করতে। সুতরাং এখন যেহেতু আমি এখানে, আমি আমার বই ‘মাস্টার অফ দ্যা স্যাগিং চিক্স’ হয়ত শেষ করব। আমার আরও ১৫ পরিচ্ছেদ বাকী, সুতরাং আমি পরবর্তী ছয় মাস লেখালেখিতেই ব্যস্ত থাকব।

ডেনিস, আপনার সময়ের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .