- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

নাসের থেকে মোবারক পর্যন্ত এবং তারপর, আধুনিক মিশরের বর্তমান অবস্থা

বিষয়বস্তু: মিশর, ইতিহাস, নাগরিক মাধ্যম, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, রাজনীতি

মিশর

বিদেশী শোষকদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাবার পরে মিশরের চেহারা অনেক পাল্টিয়ে গেছে। জামাল আব্দেল নাসের [1] এর তৈরি করা মিশর থেকে জামাল মুবারকের [2] পাওয়া মিশর – এই সময়ের মধ্যে মিশরের ব্লগাররা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, বিরোধ আর ব্লগের কারনে বন্দি হওয়ার কথা বলেছেন।

নাসের যখন প্রেসিডেন্ট হলেন, মিশরের বিপ্লবের পর দেশের লোকের জন্য জীবন অনেক পালটিয়ে গিয়েছিল, আর ক্ষতিগ্রস্তরা পৃথিবীর বিভিন্ন কোনায় ছড়িয়ে পড়েছিল, যেমন মারিয়ান স্ট্রাঊড গাব্বানি [3] বর্ণনা করেছেন…

নাসেরের দ্বারা মিশরের সমাজতন্ত্রীকরন অনেক ইউরোপ আর ইহুদি বংশভূত মিশরবাসীদের জন্য ভীতিজনক ছিল বিশেষ করে তাদের জন্য যারা ব্যবসায় তখন খুব ভালো করছিল। ইজরাইল অনেক আশা করেছিল যে কিছু ইহুদি মিশরী ওখানে মাইগ্রেট করবে আর তাই তারা উৎসাহ দিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত: তেল আবিব কায়রোর তুলনায় কিছু ছিল না (এখনো মনে হয়না) আর তাই দেশান্তরীরা লন্ডন, প্যারিস, জেনেভা, নিউ ইয়র্ক অথবা মন্ট্রিয়ালে যেতে পছন্দ করেছে। ৫০ আর ৬০এর দশকে দেশ ছেড়ে যাওয়া মিশরীদের দিয়ে কানাডা ভরা আর এখন আমি তাদের ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে ই-মেইল পাই যারা তাদের বাবা-মার ছেড়ে যাওয়া অপূর্ব দেশ সম্বন্ধে জানতে চায়।

তখন থেকে এখন সরকারের কাজের ধারা, বিশেষ করে মেয়েদের ব্যাপারে খুব বেশি পাল্টায়নি কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া। কানাডায় পড়ালেখা করা মিশরী উকিল ফরসুথসেয়ারের [4]নথিতে দেখা যায়ঃ

মিশরের সংবিধানে আছে “দেশ সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগের ব্যবস্থা করবে।” একটা কঠিন ব্যবস্থা যা সমাজতন্ত্রের সময়ের থেকে যাওয়া একটা অংশ। ভাগ্যক্রমে সংবিধান প্রায়শ: এসব পাশ কাটিয়ে যায়। এখানে বলে রাখা ভালো যে মিশর শরিয়া আইন খুব সংকীর্ন ভাবে প্রয়োগ করে বলে মূল ধারার কিছু পন্ডিত ব্যক্তি যে ব্যাখ্যা করেন সেটা ভুল। যেমন, পারিবারিক আইনে শরিয়া পুরুষ-মহিলাদের মধ্যে সামন্জস্য আনার চেষ্টা করেনা, খুব কম আইনী ব্যবস্থায় তা সম্ভব। একজন পুরুষ খুব অসুবিধায় পড়বে যদি শরিয়া ঠিকমত বলবত করা হয় শুধুমাত্র লোক দেখানো না হয়ে। যাই হোক, স্বামী-স্ত্রীর সব অধিকার আর দায়িত্ব মিশরের আইনে আসেনি…

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে হোসনে মোবারাকের [5] শাসন আমলে সব থেকে বেশি ঘরোয়া বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে সরকারের সাথে বিরোধী মতের ব্লগ লেখকদের বিতর্ক। এই সময়ে মিশরের ব্লগার কারিম আমের [6] তার ব্লগের মন্তব্যের জন্য ৪ বছরের জেলের সাজা পেয়েছে। ফ্রি কারিম ডট অর্গ [7] ওয়েবসাইটে জানাচ্ছে যে স্কুলের বাচ্চারা তার জন্য পয়সা তুলছে আর তার মুক্তির জন্য বিক্ষোভ করছে:

জুলিয়া জানান যে এটি হচ্ছে সরকারের দমন নীতি থামানোর আর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করার প্রচারনা। এই বছরের থীম হচ্ছে ইন্টারনেটকে দমন আর ইন্টারনেটে প্রকাশের স্বাধীনতার বাধাগুলো দুর করা। তিনি বলেছেন যে এটা কারিম আমেরের উপর ভিত্তি করে হচ্ছে যাকে সরকারের ব্যাপারে তার মতামত প্রকাশের জন্য বন্দি করা হয়েছে।

অনেকেই মিশরের ভবিষত আর খারাপের দিকে যে পরিবর্তন হচ্ছে তা নিয়ে চিন্তিত। জন এফ কেনেডি বলেছিলেন,”পরিবর্তন জীবনের অংশ, আর যারা অতীত বা বর্তমানের দিকে শুধু দেখে তারা অবশ্যই ভবিষ্যত হারাবে।” তাহলে, মিশরের ভবিষ্যত কি? জেইনোবিয়া তার ভবিষ্যৎবাণী আমাদের জানিয়েছেন [8]

মনে হয় যে মিশরে খুব শীঘ্রি আমরা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখব, যে পরিবর্তন বাবা থেকে ছেলের উত্তরাধিকারের প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ হবে – বাবা হোসনে মোবারাক থেকে ছেলে জামাল মোবারক। সব রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এটাই আশা করছেন।

দুটি পরিবর্তন খুব তাড়াতাড়ি হবে, প্রথমটি নাজিফ ক্যাবিনেট আর দ্বিতীয়টি এনডিপির নেতৃত্বের নির্বাচন।

সরকারের বিরুদ্ধে মিশরের ব্লগারদের বিরোধিতা এগিয়ে যাচ্ছে আর পরিবর্তন, তা জামাল মোবারাক বা মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্বের সরকার‌ যে দিকেরই হোক না কেন, যত কাছিয়ে আসবে এর গতি তত বাড়বে। যে কোন ক্ষেত্রে মিশরের ব্লগগুলো আরো আকর্ষনীয় হবে তাই পরের সপ্তাহে এদিকে খেয়াল রাখুন যে কি কি ঘটছে।