ইরানঃ ১১ বছর জেলে থাকার পর এক ব্যক্তিকে পাথর নিক্ষেপ করে মারা হয়েছে

গত ৫ই জুলাই কাজভিন প্রদেশের তাকেস্তান শহরে ১১ বছর জেল খাটার পর জাফর কিয়ানি নামক এক ব্যক্তিকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলা হয়েছে। তার অপরাধ ব্যভিচার। তার সঙ্গিনী মোকারামেহ এব্রাহিমি তার দুই ছোট সন্তানসহ ১১ বছর ধরে জেল খাটছে আর এই পাথর মারার লিস্টে তার নাম এবার আসতে পারে। মনে হচ্ছে যে শুধুমাত্র নিরাপত্তা কর্মীরা এই পাথর মারার ঘটনায় যুক্ত ছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারনেশেনাল আর অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা এই ঘটনার নিন্দা করেছে। তারা ইরানি সরকারকে অনুরোধ করেছে যাতে এব্রাহিমিকেও পাথর মারা না হয়। এই খবর মূল আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে আর সিটিজেন মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছে।

পাথর মারার ঘটনার বিবরনঃ

আসিয়ে আমিনি নামক একজন ব্লগার এবং সাংবাদিক ওই গ্রামে গিয়ে লোকের সাথে কথা বলে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। তার এই রিপোর্ট মাইদান সহ বেশ কিছু ব্লগ আর ওয়েবসাইটে পুন: প্রকাশিত হয়েছে

তিনি লিখেছেনঃ

গ্রামটা এমনিতে শান্ত, শুধুমাত্র কয়েকজন বৃদ্ধ মানুষ রাস্তায় বসে আছে। একটি বাচ্চা দেয়ালের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে। প্রথম যাকে আমি পাথর মারার ঘটনাটা জিজ্ঞাসা করি সে শুধু হাসে কিন্তু কিছু বলে না। পরে আমি বুঝতে পারি যে সে কানে কম শোনে। আমি যখন জোরে জোরে আমার প্রশ্নটা করছি তখন ওই ছেলেটা শুনতে পায়। তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে কাঁধ ঝাকায়। একজন মোটর সাইকেল চালক যাচ্ছিলেন। হাত নাড়াতে সে থামে। সে বিনা দ্বিধায় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আর পাহাড়ের পাদদেশ দেখিয়ে দেয়। আমি জিজ্ঞাসা করি “আপনি সত্যি বলছেন?”।

- নিজে দেখেছি।

- কাছ থেকে?

- না (হেসে) দূর থেকে। তারা কাউকে কাছে আসতে দিচ্ছিল না।

- কেন?

- (দূরে দেখিয়ে) পুরো এলাকায় এজেন্ট ছিল। ওই রাস্তা দুই দিক থেকে বন্ধ করে দিয়েছিল যাতে কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ না যেতে পারে।

- কতো জন ছিল?

- জানিনা। অনেক। ৫০-৬০ হয়ত।

- তাহলে তুমি নিশ্চিত যে গ্রামের কেউ পাথর মারে নি?

- হ্যা, আমি নিশ্চিত। কেউনা।

“ভালবাসার শহীদ”

জেইতুন এই গল্পের নানা রকম ব্যাখ্যা দিয়ে কিয়ানিকে ‘ভালবাসার শহীদ’ বলেছেন। এই ব্লগার কয়েকটা দৃশ্য কল্পনা করেছেনঃ ১)এবব্রাহিমির স্বামী তাকে বেশ্যাবৃত্তিতে জোর করে নিয়োজিত করেছে। ২) সে তালাক চেয়েছে কিন্তু ইরানে মহিলাদের তালাকের অধিকার নেই। ৩) এই দুইজন মানুষ পরষ্পরকে ভালবেসে পালিয়ে গেছে। ৪) তার নিজ শহরের কেউ তাকে পাথর মারতে রাজি ছিলনা বলে কর্তৃপক্ষ তাকে দূরের গ্রামে নিয়ে গেছে।

পাথর মারা আর আন্তজাতিক সম্পর্ক:

মোহাম্মাদ আলি আবতাহি নামক একজন ব্লগার আর ধর্মিয় নেতা ওই বিচারকের কথা বলেছেন:

এটা চিন্তা করতে অবাক লাগে যে আইন আর ধর্মে এ সম্পর্কে নিরুৎসাহী করা সত্তেও কেউ কি করে অন্য কাউকে পাথর মারতে বলতে পারে। আবতাহি মনে করেননা যে যেহেতু বিদেশিরা পাথর মারার বিরুদ্ধে তাই এই রায় দিয়ে বিচারক বিদেশিদের বিরোধিতা করছেন। তিনি মনে করেন যে বিদেশিরা পছন্দ করে না বলেই কিছু করে দেখানো যেন তাদের অনুরোধ অন্ধভাবে মেনে চলারই অনুরুপ আর দুটোই দেশের স্বাধীনতার জন্য বিরুপ।

তিনি বলেন যে সময় আর স্থানের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা ইসলামের আছে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে ইসলামের নামে কারো হত্যা আমরা চাই কিনা।

হত্যা আর দারিদ্রের গল্পঃ

শাহারজাদ এই ঘটনার উপর মন্তব্য করেন যে এই দেশে শুধুমাত্র গরিবরা পাথর মারার শিকার হয় আর ধনীরা পার পেয়ে যায় যে কোন উপায়ে।

অনেকেই ভিউ ফ্রম ইরানের মতোই বলবে যে পাথর মারা সোজা কথায় খুন

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .