জাপানঃ ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রন বিষয়ক বিতর্ক, কিন্তু কেউ বিতর্ক করছে না

কেউ যখন খেয়াল করছিল না তখন জাপানের যোগাযোগ ও আভ্যন্তরীন বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের একটি গবেষনা দল জাপানে ইন্টারনেট এর নিয়ন্ত্রনের নীতিমালা সংক্রান্ত একটি অন্তর্বর্তীকালিন রিপোর্ট পেশ করেছে, যা একজন ব্লগারের ভাষ্য অনুযাযী ব্যক্তিগত ব্লগ আর হোম পেজকেও নিয়ন্ত্রন করবে।

ঐ রিপোর্টে হিততশুবাসি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস হরিবে মাসাও এর নেতৃত্বে “যোগাযোগ ও প্রচারের আইনগত দিক নিয়ে কাজ করা গবেষণা” দলটি আলোচনা করেছেন সরকারের দ্বারা বর্তমানের প্রচার আইনকে কিভাবে ইন্টারনেটের বলয়ে প্রয়োগ করা যায় এবং ওয়েবে যা আসে তা নিয়ন্ত্রন করা যায়। রিপোর্টের পরামর্শ অনুযায়ী এই ব্যাপারে জণগনের মতামত চাওয়া উচিৎ এবং ইতিমধ্যে মন্তব্যগুলো সংগ্রহের জন্যে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের একটি পাতা জুন ২০ -জুলাই ২০ পর্যন্ত খুলে দেয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব সত্তেও প্রচার মাধম আর ব্লগারদের অধিকাংশ এ ব্যাপারে জানে না। এ ব্যাপারে এ পর্যন্ত শুধু সর্বোচ্চ ৭টি লেখা দিয়েছেন (এ রিপোর্ট লেখার সময়) তোকিওডো – ২০০৫ নামে একজন উকীল আর মিডিয়া বিষয়ক ব্লগার যিনি পূবে সাংবাদিক ছিলেন। এখানে তিনি সাবধান করে দিয়েছেন যে এই আইন শুধু সাধারণ নয় বরং ব্যক্তিগত ব্লগ আর হোম পেজকেও নিয়ন্ত্রন করবে। উনি বলেন যে রিপোটে পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে সাইটগুলোর কাজ ও উদ্দেশ্যর উপর ভিত্তি করে যেসব জিনিষ বেআইনি বলে ধরা হবে তা জাপানী সংবিধান অনুযায়ী প্রকাশের স্বাধীনতার গন্ডির মধ্যে পড়বে না। যার ফলে এই নিয়ন্ত্রনে কোন সাংবিধানিক বাধা থাকবেনা।

এই বিষয় প্রথম লেখায় উনি বলেন:

আপনারা যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পূর্ব জাপানের ফ্যাসিস্ট সংগ্রামের দিকে তাকান তবে সরকার দ্বারা তথ্য নিয়ন্ত্রনের বিপদটি বুঝতে পারবেন।

একই বিষয়ে তৃতীয় লেখায় উনি বলেন যে একটা বিষ্ময়কর জিনিস হল যে ১২টি মিটিং এর মধ্যে ৩টি রুদ্ধদার বৈঠক হয়েছে ‘মুক্ত ও সপ্রতিভ আলোচনার’ জন্য:

মুক্ত ও সপ্রতিভ আলোচনার জন্য রুদ্ধদার বৈঠকের প্রয়োজন? অবশ্য নির্যাতিত কাউকে জিজ্ঞাসা করার সময় তার পরিচয় গোপন করার জন্য (ইন্টারভিউ নেয়ার সময়) বন্ধ কামরা দরকার।

এই গবেষণা দল বাক স্বাধীনতা সংক্রান্ত আইনগত বিধিবিধান নিয়ে কাজ করছে কিন্তু তাদের আলোচনা মানুষের জন্য উন্মুক্ত না, এটা কি একে অপরের সাথে বিরোধ করে না?

জনগনের সামনে আলোচনা করা যায় না এমন কি মতামত তারা দিচ্ছিলেন? নাকি এখানে গোপন কোন সমঝোতা হচ্ছিল?

চতুর্থ লেখাতে উনি মান্চুরিয়ার ঘটনা যাকে মুকদেন ঘটনাও বলা হয় তার সাথে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করেছেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা যেখানে জাপানী প্রচারমাধ্যমগুলো গুরুতপূণ ভূমিকা পালন করেছিল বলে তিনি মনে করেন:

এখনই কি সময় না যে আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে চিন্তা করি আর তার থেকে শিক্ষা গ্রহন করি? আমি চাই যে প্রচার মাধ্যমগুলো বুঝুক যে আবার সময় এসেছে তাদের মান্চুরিয়ার ঘটনার সময় যেমন বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল এখনও সেরকম করতে।

তাদের উচিত কর্তৃপক্ষের কাজগুলো মনিটরিং করা যা মিডিয়ার কাজ, কিন্তু তারা প্রচারের স্বাধীনতার উপর আরোপিত হতে যাওয়া এই বাধাকে উপেক্ষা করছে এবং ইন্টারনেট বাজারে তারা নিজেদের অংশগ্রহন ও লাভকে বড়ো করে দেখছে। আমি চাই তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করুক যাতে ১০ বছর পর আমাদের আফসোস করে না বলতে হয় যে, “তখন অন্তর্বর্তীকালিন রিপোর্টটির প্রতিবাদ করলে আজকে যোগাযোগ/প্রচার এর উপর সেন্সরশিপকে আটকানো যেত…” আমি আমার সন্তান আর নাতিদের আমাদের ব্লগের লেখা গর্ব সহকারে দেখাতে চাই।

আমরা, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এ ব্যাপারে শুধু নাগরিক মতামতই প্রদান করব না, আমাদের উচিৎ টেলিভিশন, রেডিও আর সংবাদপত্রকেও প্রশ্ন করা যে ওরাও কেন এই ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রন আইনের প্রতিবাদ করছে না।

দয়া করে এই তথ্যটা যত লোকের কাছে সম্ভব পৌছে দিন কারণ আমাদের হাতে সময় খুব কম – নাগরিক মতামত দেয়ার সময়সীমা ২০শে জুলাই।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .