- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

একজন ভেতরের লোকের দৃষ্টিতে জাপানী মাংস শিল্প

বিষয়বস্তু: জাপান, খাদ্য, নাগরিক মাধ্যম, পরিবেশ, ব্যবসা ও অর্থনীতি, স্বাস্থ্য

যখন মানুষ এমন একটা দেশে বসবাস করে যেখানে খাদ্য নিরাপত্তার ভয়ংকর অভাব [1], যেখানে দেশের সীমানার মধ্যের ৬০% খাদ্য আমদানিকৃত [2] এবং দেশে উৎপাদিত বাকি খাদ্য ব্যাপক ভর্তুকিপ্রাপ্ত [3], তখন এটা নতুন নয় যে জাপানীরা উদ্বিগ্ন থাকবে যে তাদের খাদ্য কোথা থেকে আসে। জাপানের ১৭% খাদ্য আমদানি [4] হয় চীন থেকে, যে দেশে সাম্প্রতিককালে রপ্তানী পণ্যে বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া যাওয়া সংক্রান্ত বেশ কিছু ভয়ানক দুর্নাম রটেছে [5] । যার জন্য এটা আর্শ্চযজনক নয় যে জাপানীরা এই জনবহুল এবং দ্রুত-বর্ধনশীল পূর্ব-এশীয় প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানী নিয়ে ভীত।

আমদানিকৃত খাদ্যের ব্যাপারে এই দুশ্চিন্তা এবং হোক্কায়ডো অঞ্চলে [6] (জাপনের উত্তরের উন্নত ব্যবস্থা সমৃদ্ধ প্রশাষনিক এলাকা যা বিভিন্ন রকম মজার খাবারের জন্য বিখ্যাত [7]) উৎপাদিত খাদ্যর ব্যাপারে শ্রদ্ধার মধ্যে যে বৈষম্য রয়েছে তা বেশ বৃহৎ । এমন গুজ্ঞন শোনা যায় যে, যে কোন খাদ্যদ্রব্যের মোড়কে হোক্কায়ডো শব্দটি লিখলেই বিক্রি দ্বিগুন হয়ে যায় । এমন পরিস্থিতিতে গরুর মাংস নিয়ে সাম্প্রতিক র্দুনামের [8] ব্যাপারে ওদের আঘাত পাবার কারণ বোঝা যায় ।

দুই সপ্তাহ আগে যখন বোঝা গেল যে সুন্দর নামকরনকৃত মিট হোপ কোম্পানী শুকরের মাংশকে গরুর মাংশ বলে চালাচ্ছে [9] (মনে হয় গরুর মাংসের স্টক শেষ হয়ে যাওয়ায়) তখন নিজের দেশের খাদ্য সম্পর্কে মানুষের আস্থা আবার কমে গেল [10]। এই কোম্পানী গৃহপালিত মুরগীর মাংসের বদলে ব্রাজিলিয়ান মুরগীর মাংসও বিক্রি করেছে [11] এবং স্কুলের মধ্যান্ন ভোজের জন্যে সরবরাহ করেছে। জানা গেছে যে এই কোম্পানি গত জুলাই পর্যন্ত ১৮টা কোম্পানির কাছে ৩৬৮ টন মিথ্যা লেবেল লাগানো মাংস বিক্রি করেছে [12]। এর আগে এই ধরনের ঘটনা ১৯৮৩ তে ঘটেছিল।

হ

হোক্কাইডো – জাপানের খাদ্য যোগানদাতা (ছবি তারো৪১৬ [13])

মিট হোপ কোম্পানী এর ঘটনায় জাপানী ব্লগাররা যে বিভিন্ন মন্তব্য করে [14] তার মধ্যে একটি বেশ অভিজ্ঞতাপুর্ন ছিল । ব্লগার হেয়ার, দেয়ার এন্ড এভেরিহোয়্যার জাপানের একটা মাংস প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন [15]:

আমি একটা খাদ্য কোম্পানিতে কাজ করি আর আজকে আমার কোম্পানির বাস্তবতা (যা সত্যি ঘটছে) উপস্থাপন করছি কারন সর্বত্র মিট হোপ কোম্পানীর মিথ্যা আর ধোকাবাজীর ঘটনাই শুধু আলোচিত হচ্ছে। প্রতিদিন মিডিয়ায় (মিট হোপ কোম্পানীর কথা লিখতে গিয়ে) এখন খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কথা হচেছ কিন্তু আমি মনে করি যে খাদ্য কোম্পানিগুলোর বাস্তব অবস্থার আলোকে সুষ্ঠু খাদ্য নিরাপত্তা আশা করা যায় না । এটা সহজেই বোঝা যায় যে এই কোম্পানি এই শোরগোল (মাংশ কেলেন্কারী সংক্রান্ত) থামার অপেক্ষায় আছে । আমার মনে হয় এই ধরনের ভুল লেবেল আর প্রতারণা দেশ জুড়ে অনেক কোম্পানিতে হচেছ্ অবশ্য সব কোম্পানি এমন নয় , কিন্তু ..

আমার কোম্পানি মূলতঃ প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস নিয়ে কাজ করে । ছুরি থেকে কোন ধাতব অংশ মাংসের সাথে মিশে যাচেছ কিনা তা দেখার জন্য কারখানায় একটা মেটাল ডিটেক্টার বসানো হয়েছে কিন্তু তা রোজ ব্যবহার করা হয় না। আসলে মেটাল ডিটেক্টারটা ব্যবহার করা হয় যখন ব্যবসায়িক পার্টনার বা ক্রেতা কারখানা পরিদর্শন করতে আসে । মানুষের শরীরে যদি কোন ক্ষতি হয় (মাংশ দুষিত হওয়া থেকে) তবে তা বাতিল করার কোন উপায় নেই ।

সাধারণতঃ গরুর প্রতিটা অংশ.. নিতম্বের ঊর্দ্ধাংশ বা পায়ের মাংশ পাতলা করে কেটে বিক্রির জন্য তৈরি করা হয়। খাদ্যের কোম্পানিতে পাঠানোর সময় প্রতিটিকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয় মেয়াদ ঊত্তীর্নের তারিখ, ইত্যাদি দিয়ে। আর খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এটা জরুরি যে পন্যের পরিচিতি নম্বর, মেয়াদ ঊত্তীর্নের তারিখ ও অন্যান্য চিহ্ন খাদ্যের কোম্পানির আর মাংস বিক্রেতার একই হয়। কিন্তু আসলে অনেক সময় নকল চিহ্নিতকরণ নম্বর ও মেয়াদ ঊত্তীর্নের তারিখ দিয়ে মাংস সরবরাহ করা হয়। এমনও হয়েছে যে এক বছর আগে তারিখ শেষ হয়ে গেছে এমন মাংস ফ্রিজ থেকে বের করে বিক্রি করা হয়েছে । অনেক সময় মূল পন্য আর সেটা কোথায় তৈরি হয়েছে দুটোর লেবেলই পাল্টিয়ে ফেলা হয়।

এইসব ঘটনার পর আমি চিন্তা করতে বাধ্য হই যে ক্রেতারাই একমাত্র ব্যক্তি যারা এই সম্পর্কে জানে না । আমার কোম্পানিতে আমি অনেক নিচের দিকে যার জন্য এই ব্যাপারে আমার মতামত দিতে পারি না । এই কারণে আমি আজ এই লেখা লিখছি যাতে আপনারা, ক্রেতারা যতজন সম্ভব জানতে পারেন। আমি আশা করি যাতে পরিস্থিতির উন্নতি হয় যাতে আপনারা নিশ্চিন্তে এইসব খাদ্য কিনতে পারেন – এজন্যই আমার এসব বিষয় আপনাদের জানানো।

পোস্টটা এই লিঙ্ক দিয়ে শেষ হয়েছে – একটি লুকআপ ফান্কশন যা দিয়ে খাদ্যপন্যের পরিচিত নম্বর অনুসরন করা যায়। [16]