অপহরনকৃত বৃটিশ সাংবাদিক এলান জনস্টনের মুক্তির বিষয়টি আজ (জুলাই ৪) বিভিন্ন ব্লগে ঝড় তুলেছে।। মধ্যপ্রাচ্যের ব্লগগুলোতে তার সম্পর্কে কি বলা হয়েছে তার কিছু উদ্ধৃতি দেয়া হলো এখানে:
গাজায় বিবিসি রিপোর্টার এলান জন্স্টনের অপহরনের ৫ম সপ্তাহে ব্রাসেলস এ মৌন প্রতিবাদ। ছবি কারসান
কাতার:
কাতার থেকে আব্দুর রহমান লিখছেন:
আমি এলান জনস্টনের মুক্তির সংবাদ শুনে খুবই উল্লসিত হয়েছি। চার মাস ধরে তিনি “ইসলামের সৈনিক” নামের একটি দলের দ্বারা বন্দী ছিলেন। এরা আসলে ডগমুশ নামের একটি সহিংস পরিবার। তার এই বন্দীজীবনে একসময় গুজব উঠেছিল যে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে এবং পরে তার একটি ভিডিও দেখানো হয় যেখানে তিনি বোমার বেল্ট পড়ে ছিলেন।
যখন হামাস গাজার কন্ট্রোল নিল তখন তারা বলেছিল যে এলান জনস্টনের মুক্তি তাদের প্রধান কাজ হবে এবং তারা তা করে দেখিয়েছে।
বাহরাইন:
বাহরাইনি ব্লগার মাহমুদ আল ইউসুফ মুক্তিপ্রাপ্ত সাংবাদিকের জন্য একটি প্রস্ফুটিত জলপদ্ম উৎসর্গ করেছেন:
“ এটি আমার যত্নে বেড়ে ওঠা প্রথম জলপদ্ম। আজকে সকালেই এটি ফুটল! আমি খুবই আনন্দিত এবং এর রংটি আমার খুবই ভাল লাগছে। আমার খুব খুশি লাগছে যে ১৪০ দিন বন্দি অবস্থায় থাকার পর এলান জনস্টন গাজায় মুক্তি পেয়েছে । এই পদ্মটি আমি উতসর্গ করছি তাকে এবং অন্য সব সাংবাদিককে যারা তাদের জীবন বাজী রেখে আমাদের সংবাদ পরিবেশন করে,“ –লিখছেন মাহমুদ।
মিশর:
মিশরের ইবন আল দুনিয়াও আনন্দ প্রকাশ করেছেন এবং জনস্টনের প্রফেশনালিজমকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এখানে:
“আমি সত্যিই খুশি হয়েছি এলানের মুক্তিতে। । এই সময়ে সেই একমাত্র পশ্চিমা সাংবাদিক যে স্থায়ীভাবে এখানে থেকেছে এবং অন্যতম সেরা রিপোর্টার হিসেবে এই অন্চল থেকে রিপোর্ট করেছে। তাকে অপহরন করা ছিল গাজাবাসীদের কাছ থেকে ঐ অন্চলের সত্যিকারের ঘটনা সম্পর্কে জানার উপায় কেড়ে নেয়া। তার বাগ্মী প্রতিবেদনগুলো বেশ গুরুত্ব বহন করত লোকের কাছে।
২ লাখেরও বেশী লোক তার মুক্তির জন্যে পিটিশনে সই করেছে। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যারা কোন না কোনভাবে সাহায্য করেছেন তার মুক্তির ব্যাপারে। এটি এলান, তার পরিবার এবং বিবিসির জন্যে একটি বড় দিন ।“ – বলছেন ইবন আল দুনিয়া
মিশরের জেইনোবিয়া লিখছেন:
আমি খুব, খুবই খুশি হয়েছি যে এলান জনস্টন শেষ পর্যন্ত মুক্তি পেয়েছেন। আমি তার এবং তার পরিবারের জন্যে আনন্দিত। অবশ্যই তাকে দেখতে জঘন্য লাগছে, মানে প্রায় ১০০ দিনের চেয়ে বেশী হয়ে গেছে তাই হয়ত। হামাসকে অভিনন্দন। হামাস আবারো প্রমান করতে চাচ্ছে যে অনেকে যেমন একে সহিংস বর্বর দল হিসাবে দেখাতে চাইছে, কিন্তু তারা তেমন নয়। সত্যিই এটি যথেস্ট ইসমাইল হানিয়ার সাথে জন্স্টনকে দেখতে পাওয়া অথবা শুধু পড়া কিভাবে সে মুক্তি পেয়েছে।
বাহবা প্রাপ্য জনস্টন এবং হামাস উভয়েরই এবং লজ্জা প্রাপ্য এই দলটির যারা নিজেদের ইসলামের দল বলে। এটি অবশ্যই ইসলামের রীতিনীতির মধ্য পরে না এভাবে আমাদের দেশে আসা একজন অস্ত্রবিহীন সাধারন নাগরিককে সত্য ধামাচাপা দেবার জন্যে ভয় দেখানো।
ইজরায়েল:
ডেজার্ট পিস জন্স্টনের মুক্তির কিছু তাজা খবর এই পোস্টে দিয়েছেন।
জিউলিসিয়াস এর রাব্বাই ইওহান্নার যদিও কিছু প্রশ্ন আছে:
এবং জিলাদ শালিত, যাকে হামাসরা গাজা স্ট্রিপে বন্দী করে রেখেছে তার খবর কি? সন্দেহভাজন হানিয়েহর জনস্টনের মুক্তির কয়েকঘন্টার মধ্যেই পোজ দিয়ে ছবি তোলা অত্যন্ত নিষ্ঠুর দৃষ্ট। তাকে একটি পতাকা এবং চুমু দিয়ে সম্ভাষন বিরক্তিকর। হামাসের কি কোন লজ্জা নেই? মনে হয় না। এবং লেবাননে এহুদ গোল্ডওয়াসার এবং এলদাদ রেগেভ হিজবুল্লাহ এবং ইরানীদের দ্বারা অপহৃত রয়েছে। ডেনিস লিয়েরিকে উক্ত করে বলতে হয় বিবিসি এখন কোথায়? অন্যায় অপহরনের প্রতিবাদে কোথায় সব মিছিল? আমি বলছি কোথায় এখন বিবিসি। তারা নিজেদের ব্যাকগ্রাউন্ড জিহাদকে অনুসরন করছে।
লেবানন:
লেবানন থেকে সোফিয়ার একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙী রয়েছে ঘটনাটি সম্পর্কে.
“ চরমপন্থী জিহাদী দল কর্তৃক অপহৃত বিবিসির সংবাদদাতা এলান জনস্টন আজ হামাসের সাহায্য মুক্তিলাভ করেছে। হামাস মাত্র দুই সপ্তাহ ধরে গাজা স্ট্রীপের উপর নিয়ন্ত্রন নিয়েছে। ফাতাহর ইজরাইলি চররা এতে ক্ষুব্ধ এবং মনক্ষুন্ন। দ্যা গার্ডিয়ানের দৃষ্টিতে জন্সটনের মুক্তিতে রাজণীতির উর্ধ্বে কোন যুক্তি হয়ত আছে। হামাস সরকারের ইমেজ ধ্বংসের জন্যে ইজরায়েল এবং ফাতাহ আন্তর্জাতিক কমিউনিটির মদদে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু এই নৈরাজ্য এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে হামাসের কোন উপায় ছিলনা এইসব চরদের গাজা স্ট্রীপ থেকে বের করে দেওয়া ছাড়া।
এখন তারা গাজাকে নিয়ন্ত্রন করে. হামাস প্রমান করতে পারবে তারা কি করতে সক্ষম। জনস্টনের মুক্তি একটি ভাল লক্ষন।“ – ব্যাখ্যা করছেন সোফিয়া
প্যালেস্টাইন:
প্যালেস্টাইনি রাজনীতি সরিয়ে রেখে, আমাল লিখছেন:
এলান জনস্টন এখন মুক্ত। হামাস তাকে মুক্ত করার জন্যে কৃতিত্ব নিচ্ছে। তারা দেখাচ্ছে তারা গাজা স্ট্রীপে আইনের শাষন ফিরিয়ে এনেছে। এ নিয়ে বিস্তারিত পরে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন হচ্ছে তিনি মুক্ত এবং নিরাপদ।
সিরিয়া:
মুসতাফা হামিদো সিরিয়া থেকে লিখছেন:
আমি বলতে পারি যে আমি গাজা স্ট্রীপে ১০০ দিনেরও বেশী সময় ধরে অপহৃত ব্রিটিশ সাংবাদিক এলান জনস্টনের জন্য খুব আনন্দিত। তিনি এখন মুক্ত এবং সকালে তার ছাড়া পাবার পর হাসি হাসি মুখ করে ঘুরে বেরাচ্ছেন। আমি তার জন্যে আনন্দিত কারন তিনি একজন মানুষ যার অনুভুতি রয়েছে। তার একটি পরিবার রয়েছে যারা নিশ্চয়ই তার চিন্তায় ছিল এবং তার বন্ধু রয়েছে যারা তার মুক্তির প্রতীক্ষায় ছিলেন। তিনি পৃথিবীতে সবচেয়ে শেষ ব্যাক্তি নয় যাকে সস্স্ত্র ব্যক্তিরা অপহরন করে নিয়ে যাবে। তিনি নির্দোষ। আমি সেটা ভাল করেই জানি। তবে অনেক সাংবাদিক যারা অপহৃত হয়েছে তারা সাংবাদিকতার সাথে গুপ্তচরবৃত্তি মিশিয়ে দিচ্ছেন। এটা সত্যি যে এই দুই পেশার মধ্যে ভেদটা কম দৃশ্যমান। কিন্তু সাংবাদিকদের কিছু নিয়ম নীতি মেনে চলা উচিত এবং অন্যকিছুতে জড়ানো উচিত নয়। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য অনেক অপহৃত সাংবাদিকই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চর হিসাবে কাজ করে থাকেন বলে তাদের অপহরনের ব্যাপারে লোকজন নির্লিপ্ত থাকেন।